Advertisement
  • গ | ল্প
  • মার্চ ১৩, ২০২১

লোহার শিকড়

সঞ্জীব দেবলস্কর
লোহার শিকড়

চিত্র: তমজিৎ ভট্টাচার্য

আমাদের গল্পের শেষ পর্বটি ঘটেছে এই মাত্র সেদিন। গিয়েছিলাম এক অভিনব বিদায়ী অনুষ্ঠানে। এ বিদায়ী সভা অবশ্য আমাদের চিরপরিচিত সেই ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠান নয়। সভায় বসে আমার মন চলে গেছিল সেই ছাত্রজীবনের অনুষ্ঠানের দিনগুলোতে, যখন পাঁজিপুথি  দেখেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ফেয়ারওয়েলের দিনক্ষণ ঠিক করতেন আমাদের পন্ডিতমশাই, তর্কসরস্বতী শ্রী মধুসূদন ভট্টাচার্য, বিদ্যাবারিধি, বিদ্যাবিনোদ। সকালবেলা পূজাপাঠ সাঙ্গ করে পুষ্পপাত্র হাতে তিনি সটান হাজির হতেন সভাগৃহে। বিশুদ্ধ সংস্কৃতমন্ত্র উচ্চারণ করে  বিদায়ী ছাত্রদের কপালে চন্দনের টিপ পরিয়ে, হাতে আশীর্বাদী ফুল দিলে পর শুরু হত সভার অন্যান্য কাজ। আমি রেল স্টেশনে অনুষ্ঠিত মিটারগেজ-বিদায় অনুষ্ঠানটিতে বসে মনে মনে সেই সব দিনের কথাই ভাবছিলাম।

অনুষ্ঠান ক্রমে জমে উঠল। স্মৃতিচারণ, প্ৰথম রেলভ্রমণের অভিজ্ঞতা, রেলের রোমান্স, ফেরিওয়ালাদের ডাক, কু ঝিকঝিকের কথকতা— এর ফাঁকে ফাঁকে কবিতা, গান, নৃত্য, নাটিকাও। এসব শুনছি আর ভাবছি, হোক না সে লোহার রেল, এর শিকড়ও তো আমাদের প্রাণের গভীরে চলে গেছে। একে এত সহজে উপড়ে ফেলা কি যাবে? শতবর্ষ পূর্বেকার সেই মহা-অভিযান, গভীর অরণ্য ঘেরা পাহাড় কেটে রেললাইন পাততে গিয়ে কত বিদেশি প্রাণ হারিয়েছে, এদের হাড় আজ মিশে আছে এদেশের পাহাড়ি মাটিতে, এদের দীর্ঘশ্বাস কি আজও বাঁশবনের ভেতর দিয়ে ঘুরে ঘুরে বেসে যায়…এসব ভাবছি, আর কেবলই আশ্চর্য হচ্ছি আজকের এ অত্যাশ্চর্য সংযোগের জন্য। মঞ্চে বসা আমার সহপাঠী রেলের উচ্চপদাধিকারী আজকের বিশেষ অতিথি হয়তো এসব কিছুই আঁচ করতে পারে নি। না পারারই কথা। কিন্তু আজকের এ বিদায়ী অনুষ্ঠানে যে আমার কাছে আরেক অন্তিমযাত্রা, একথা বললে আমার বাল্যবন্ধুর কাছেও ব্যাপারটি নিতান্ত অবিশ্বাস্য ঠেকবে। তবু আজই কথাগুলো বলে নেবার শেষ সুযোগ। রেল লাইন উপড়ে নিলে শেষ চিহ্নটিও আর থাকবে না। কিন্তু ওল্ড অর্ডার চেঞ্জেত ইন্ডিনং প্লেস টু নিউ/অ্যান্ড গড ফুলফিলস হিমসেলফ ইন ম্যানি ওয়েস, লেস্ট ওয়ান গুড কাস্টম কোরাপ্ট দ্যা ওয়াররড…বলে যাচ্ছেন মুখ্যবক্তা, এতদঞ্চলের বিশিষ্ট পন্ডিত।

|২|

পাঠককে একটু পিছনে টেনে নিয়ে যাই। যে পন্ডিতমশাইয়ের কথা বলছি, আমার গল্পের কেন্দ্র ভূমিতে তিনিই, যদিও আজকের অনুষ্ঠানের উপলক্ষ নিষ্প্রাণ কিছু রেলওয়ে ট্রাক। সে প্রায় চল্লিশ বছর আগের কথা। মধুপন্ডিত এ অঞ্চলের এক বর্ধিষ্ণু গ্রামের হাইস্কুলে সংস্কূত পড়াতেন। আমরা ছিলাম তাঁর ছাত্র। গ্রামের নামটি এমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়, এরকম গ্রাম এতদঞ্চলে অনেকগুলো রয়েছে। যে সময়ের কথা বলছি তখন এরকম পন্ডিতমশাইদের জন্য সরকারি হাই স্কুলগুলোতে সামান্য বেতনের একটা সংস্থান ছিল। এদের বয়সের কোন গাছপাথর ছিল না। এদের ছিল না কোন সার্টিফিকেট। পূর্ববঙ্গের কিংবা নদীয়া-শান্তিপুর অথবা কাশির কোনও না কোনও টোল থেকে ওরা বিরাট বিরাট সব উপাধির বোঝা মাথায় নিয়ে আসতেন। কিন্তু সাংসারিক জ্ঞান ওদের প্রায় কিছুই ছিল না। যে যৎসামান্য মাইনে ওরা পেতেন এতে উপোষ যাওয়া থেকে কোনওক্রমে রক্ষা পেতেন। এবং এতেই ওরা তৃপ্ত। ষাট পঁয়ষট্টি কিংবা আরও বেশি বয়স পর্যন্ত পন্ডিতকুলকে অবসর দেওয়া হত না। কারণ ওদের কোনও এজ সার্টিফিকেট ছিল না, আর এ নিয়ে সরকার বাহাদুরের খুব একটা  দুশ্চিন্তাও ছিল না।

মধুপন্ডিতকে চেনেন না এরকম লোক অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এমনিতে যথেষ্ট খ্যাপা হলেও তাঁর পান্ডিত্য, নিয়মনিষ্ঠা, শাস্ত্রজ্ঞান সম্পর্কে গ্রামবাসীরা নিঃসন্দেহ।  আর হবে নাই বা কেন? তাঁর নামের আগে এবং পিছে অনেকগুলো উপাধি। তিনি সিলেটের টোল  চতুষ্পাঠীর কথা বলতেন, যেখানে সংস্কূত ছাড়া অন্য ভাষায় শাস্ত্রলোচনাই হতো না। গৌরবের সঙ্গে বলতেন—

‘সর্বত্র ত্রিবিধা লোকঃ উত্তমাধম মাধ্যমঃ
শ্রীহট্টে মধ্যমোনাস্তি চট্টলে নাস্তি চোত্তমাঃ’।

শুনতে শুনতে মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল শ্লোকটি। পন্ডিতমশাইর দেশে সবই উত্তম, যা মধ্যম তা আছে এই ভূমিতে, অর্থাৎ কাছাড়ে, যেখানে এসে ব্যাচারি আছাড় খেয়ে পড়েছেন। আর বলবেন না’ই বা কেন? এখানে এসে তিনি সত্যি কী পেয়েছেন? না একটা সমাজ, না দুটো শাস্ত্রকথা আলোচনা করার মহল। আর ছাত্রদের অবস্থা তো তথৈবচ। তাঁর সবচেয়ে ক্রোধ ছিল ব্রাক্ষ্ণণদের উপর। এদের না আছে, আচার না আছে বিচার। যে জিনিসটা তাঁকে নিরতিশয় পীড়িত করত  তা হল এদের সংস্কৃত উচ্চারণ। মিনিমিনি করে সংস্কৃত পাঠ শুনে বলতেন, ‘শুধু চাল কলা খেয়ে  সংস্কৃত পাঠ হয় না রে হতভাগার দল, পাঠার মাংসও খেতে হয়।’ তাঁর ভয়ে আমরা বাংলা রচনায় তদ্ভব শব্দ ব্যবহার করতে সাহস পেতাম না। তিনি শেখাতেন—‘কথাটি শুনিয়াছিলাম’ নয়, লিখবি ‘কথাটি তাঁহার কর্মকুহরে প্রবিষ্ট হইল’; আর ‘তাঁহার’, ‘আমার’এ শব্দগুলো স্থলে লেখা উচিত ‘তদীয়’, ‘মদীয়’। তাঁকে ভয় করতাম কারণ তিনি নাকি একসময় বোমাওয়ালাদের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। এখন বুঝতে পারছি পন্ডিতমশাই অগ্নিযুগের  সংগ্রামীদের সাঙ্গাৎ ছিলেন। বোমাবাজির কোনও প্রদর্শনী তিনি অবশ্য করেন নি, কিন্তু একবার লাঠিচালনা দেখিয়ে আমাদের আক্ষরিক অর্থেই ভড়কে দিয়েছিলেন। কোমরে কাঁচুটি মেরে বাঁশের লাঠি নিয়ে সে কী উদ্দামতা সারা মাঠময়। এই ছিলেন এখানে, নিমেশে মাঠের অন্যপ্রান্তে, লাফ দিয়ে চার হাত ওপরে উঠে আবার দক্ষিণে, সেই  কী জাদুকরি কান্ড! আমরা অবাক হয়ে কেবল দেখেই গেলাম। শিক্ষকরা পর্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গেলেন বৃদ্ধলোকটির ভেতর এত আগুন লুকনো ছিল দেখে। আরেকবার দেখেছি ছাত্র বোঝাই নৌকোতে পন্ডিতমশাইয়ের সে কী বৈঠা চালনা। তখন তো তিনি একেবারে অন্য মানুষ। বয়সের ব্যবধান ঝেড়ে ফেলে হয়ে উঠতেন তরুণ। আমরা তখন ভুলেই যেতাম ক্লাসে তাঁর ‘তাম আতাম অন্তাম থা সাতাম ধাম’ বলে বিরাশি সিক্কার সেই ঘুষি আর ‘ওই আব হৈ’ বলে সমাপ্তি কান মোলার কথা।

এ হেন পন্ডিতমশাইকে হেডমাস্টার মশাই এবং অন্যরাও বেশি ঘাঁটাতেন না। তিনি নিজের ইচ্ছেমতই চলতেন। আমাদের খাতায় মার্কস দিতেন মেধার ভিত্তিতে নয়, চালচলনের ভিত্তিতে। পরীক্ষার মাস খানেক আগেই ঘোষণা করতেন, ‘ওহে দেওয়ান, এবারের পরীক্ষায় তোমাকে পঁয়ত্রিশের বেশি দেওয়া যাবে না’। …ওহে গোকুলের চতুষ্পদ তোমার জন্য থাকবে এগারো… আর শ্রীমান আমুক, অষ্টাশি পর্যন্ত উঠবে এবার তোমার খাতায়।’ এসব কথা তিনি মুখে বলতেন। কোন খাতায় লিখে রাখার ব্যবস্থাই তাঁর ছিল না। কিন্তু কী আশ্চর্য, একমাস পর পরীক্ষার খাতায় ওই মার্কসগুলোই উঠত। আমরা প্রশ্ন মিলিয়ে থাকাগুলো দেখে আশ্চর্য হতাম কী অলৌকিক ক্ষমতায় পন্ডিতমশাই তাঁর যোগ অঙ্কগুলো সঠিক জায়গায় এনে মেলাতেন। এত দক্ষ পন্ডিতমশাই অবশ্য জীবনের অঙ্ক মেলাতে পারলেন না বলেই আজ এত কথা।

ইতিপূর্বে বলছিলাম না তাঁর ক্রোধ ছিল ব্রাক্ষ্ণণদের উপর। অন্য ক্লাসের কথা তো জানি না, তবে আমাদের ব্যাচে ছিল গোটা সাত আষ্ট্রেক ব্রাক্ষণ সন্তান। এদের তিনি দুই বছর ধরে লক্ষ করে আসছিলেন। ক্লাস নাইনে উঠেও এদের যখন মতিগতি আর ঠিক হল না তিনি আর সহ্য করতে পারলেন না, তিনি রাগে ফেটে পড়লেন। নিয়ম করে দিলেন, এখন থেকে তাঁর ক্লাসে ওদের উপস্থিত থাকুক কিন্তু যতক্ষণ তিনি পড়াবেন, এরা সবাই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে, কিচ্ছুটিই করতে হবে না। নিয়মটি চালু করতে দিনকতক কিঞ্চিৎ অসুবিধা হয়েছে, কিন্তু এরপর কেমন যেন স্বাভাবিক হয়ে গেল। তিনি ক্লাসে এসে বলতেন, ‘বামুনরা দাঁড়িয়ে পড়ো, আমি তাহলে পাঠ শুরু করি’। এরপর অবশ্য অত কথা বলারও প্রয়োজন রইল না। তিনি ক্লাসে ঢুকে হাতলওয়ালা চেয়ারটিতে ঠিকমত বলে হ্যাল্পস স্টাডি বা ব্যাকরণ কৌমুদী, কিংবা সংস্কৃতপাঠমের পাতা খোলার আগে একটা মৃদু ইশারা করতে না করতেই ওরা কেমন যন্ত্রবৎ দাঁড়িয়ে পড়তো আর তিনি শুরু করতেন, ‘অস্তি কস্মিশ্চিত বনপ্রদেশে নানা জলচরসমেত মহোৎসর…অস ধাতু লট তি, কিম শব্দে সপ্তমী , অনিশ্চয়ার্থে চিৎ কস্মিশ্চিৎ, বনপ্রদেশে অধিকরণে সপ্তমী…’ ইত্যাদি। বিদ্যাস্থানে ভয়েবচঃ সহপাঠীদের অবস্থা দেখে আমাদের যে অনুকম্পা হতো না তা নয়, কিন্তু পন্ডিতমশাইয়ের বিরাশি সিক্কার কিলের ভয়ে আমরা ওদের পক্ষে ওকালতি করতে এগোইনি। আসলে আমাদের অবস্থাও যে ওদের চেয়ে খুব ভাল তা নয়, নেহাৎ ব্রাক্ষ্ণণ পরিবারে জন্মাইনি তাই ক্লাসে বসে থাকার অধিকার লাভ করেছি। প্রথম প্রথম তো পন্ডিতমশাই হাসির গল্প বললে ওদের হাসতে বারণ করতেন। কিন্তু সারা ক্লাস হাসবে আর রামগোড়ুড়ের ছানা হয়ে বসে থাকবে কেমন করে? তিনি একটু প্রশ্রয় দেওয়া শুরু করলেন। অবস্থা বিবেচনায় আমরা ব্যাচারাদের বললাম, ‘তোরা কেন একটু পড়াশুনা করিস না? পন্ডিতমশাই তো আর এমনি এমনি রাগ করেন না। কী আর এমন পড়া…?বদতি বদত বদন্তি…আর মা কুরুধনজন যৌবন গর্বম নিমেষাৎ হরতি কাল সর্বমঃ, নদীনাং শস্ত্রপানিনাং নখিনাং শূঙ্গিনামস্তথা…! এসব মুখস্থ করতে কতদিন লাগে রে?’ কথাটি তাদের মনে ধরল। ওরা সিদ্ধান্ত নিল,’আনরা পড়বই পড়ব। পন্ডিতমশাইয়ের পাগলামোর জবাব দিতে হবে। বল, কালকের লেসন কী? বলে দে, কাল একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাবে। রোজ রোজ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ঘাড় ব্যাকা হয়ে গেছে।’ আমরাও উৎসাহ দিলাম। সেদিন বিকেলে খেলার মাঠ ব্রাক্ষ্ণণশূন্য। উঁকিঝুঁকি দিতেও কেউ আসেনি। আর সন্ধ্যেবেলা এবাড়ি ওবাড়ি থেকে সেই কী চেঁচিয়ে পড়ার ধুম। মা সরস্বতী বুঝি সেদিন অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে হাসছিলেন…এরপ্রমাম অবশ্য পাওয়া গেল পরদিন।

পন্ডিতমশাই ক্লাসে ঢুকে যথারিতী তাঁর হাতলওয়ালা চেয়ারখানায় সমাসীন হয়ে কন্ঠনালীর দুটো রগ উত্থিত করে, ঠোঁট দুটো একবার জোড়া করে সামনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলেন দ্বিজবংশদ্ভুতদের প্রতি। কিন্তু ওদিকে কোন ভাবান্তর নেই। পন্ডিতমশাই পাঠ শুরু করতে পারছেন না, তাঁর ধৈর্যচ্যুতিও ঘটছে। ‘তোমরা বাবারা দাঁড়াও, আমার পাঠ শুরু হোক।’ না ওদিকে সবাই বেঞ্চে লেপ্টে আছে। ‘কী হল, আজ ক্লাস কী ব্রাক্ষ্ণণশূন্য হয়ে গেল। না কি পৈতে খসিয়ে কায়েতের দলে ভিড়ে গেল সবাই? অত সহজ নয় বাবু কুলধর্ম পরিত্যাগ। নাও ব্রাক্ষ্ণণদের কর্তব্য সম্পাদন কর, স্ট্যান্ড আপ। বি স্টেন্ড আপ নাও।’ তাঁর ইংরেজিরও একটা কায়দা ছিল। ব্যাকরণের নিয়মের প্রতি নিষ্ঠাই বুঝি এর কারণ, তাই ছাত্রদের বলতেন ‘বি নিল ডাউন, বি স্ট্যান্ড আপ।’ মানে নিল ডাউন হও, স্ট্যান্ড আপ হও। এবারে ওদিক থেকে তাদের প্রতিনিধিস্থানীয় সহপাঠিটি দাঁড়িয়ে বলল, ‘স্যার, আজ আমরা পড়া শিখে এসেছি। জিজ্ঞেস করে দেখুন, বিশেষ্যস্য য বিভক্তি…’। আর বলতে হল না। পন্ডিতমশাইয়ের ধমকে সে বেচারা থমকে গেল। ‘কে বলেছে রে হতভাগা তোকে পড়া শিখতে, ময়ুরবংশজ পতাকা (আসলে তিনি বলতেন কোথাকার, আমরা শুনতাম পতাকা)!… যা বাইরে যা, লাইন দিয়ে দাঁড়া ওখানে, যা যা।’ পন্ডিতমশাই খেপে গেছেন, তাঁর রুদ্রমূর্তি দেখে সবাই ভয় পেয়েগেছে। একে মারবেন, তাকে ধরবেন! সেদিনের সেই চেহারাটা আজও ভুলতে পারি না। আমাদের সহপাঠীরা বাইরে দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁপছিল, আর আমরা ভেতরে। সেদিন কেনও পড়া হয় নি। ঘন্টা বাজা অবধি পন্ডিতমশাই গুম মেরে বসে রইলেন। ওর রাগটা ঠিক কার উপর, কেন এ ক্ষোভ সেটা বোঝার ক্ষমতা তখন ছিল না, আজও সঠিক ভাবে উপলব্ধি করতে পারিনি। সেদিনের তিরস্কৃত ছাত্ররা সারাটা পিরিয়ড বাইরে দাঁড়িয়ে রইল, আর সারা স্কুল নীরবে দৃশ্যটি দেখে গেল। এমনিতেই দিনটি ছিল কেমন গুমোট, পন্ডিতমশাইয়ের এ রাগ সারা স্কুলে রাষ্ট্র হল এবং সারা স্কুলে সেদিন টিফিন পরবর্তী দুটো পিরিয়ড কেমন  অসহ্য এক নীরবতা। কোন ক্লাসেই পড়া হল না, ছুটির ঘন্টা হলে সবাই নীরবে বাড়ির পথে হাঁটা দিল। আমাদের হতভাগা সহপাঠীদের চোখের দিকে তাকানোর সাহসও আমাদের হয়নি। অবশ্য পরদিন থেকে পন্ডিতমশাইয়ের ব্যবহার একেবারে স্বাভাবিক, শাস্তিপ্রাপ্ত ছাত্ররা আগের দিনের ধকল কাটিয়ে পূর্ববৎ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্লাসটি কাটিয়ে দিল।

|৩|

এরপর পুরো একটি দশক কেটে গেল। আমারা নানা দিকে ছিটকে পড়লাম। মধুপন্ডিত, ইশকুলের দিনগুলো সবই মনের ফাইলে চাপা পড়ে গেল, যদিও কিছু কিছু খবর নিজেই ধরা দিত মাঝে মধ্যে। পন্ডিতমশাই একেবারে রিক্তহস্তেই রিটায়ার করেছেন ওই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বছর। স্কুল থেকে দেওয়া একখন্ড গীতা, একপ্রস্ত ধুতি-চাদর আর একটি সুদৃশ্য লাঠি উপহার পেয়েই তিনি খুশি। তখন তো তুচ্ছ জাগতিক বিষয় আশয়ে মন দেবার অবকাশ নেই। তাঁর চোখে অন্য স্বপ্ন। –‘বাংলাদেশ জেগে উঠেছে।— তোমাদের বলিনি, বাঙালিকে কেউ আলাদা করতে পারবে না। পাকিস্তানিদের হঠিয়ে দিচ্ছে মুক্তিসেনারা।’ সন্দেহপ্রবণদের দিকে মুখ খিঁচিয়ে বলতেন, ‘বাঙালির আবার জাত কী, ধর্ম কী? বাঙালি তো বাঙালি।’ একেবারে শিশুর সারল্যে বলতেন ‘আমার পঞ্চখন্ডের চতুষ্পাঠীকে ওরা রক্ত দিয়ে টিকিয়ে রেখেছে, প্রতিটি মন্দির গড়ে দেবে মুসলিম ভাইরা। বাঙালি শিখে গেছে ধুতি, লুঙ্গি, টিকি, তকি সব বাইরের আভরণ। আমাদের বুকের ভেতর এক প্রাণ, শিরায় এক রক্ত, মুখে এক ভাষা’–।’ এখানে ওখানে পন্ডিতমশাই অযাচিত ভাবে, যখন তখন এসব বক্তৃতা করে যাচ্ছেন। এখন তো আর রুটিন মাফিক স্কুলে যাওয়া নেই। ডাক্তারবাবুর কোয়ার্টারে সন্ধ্যাবেলা স্বাধীনবাংলা বেতার, আকাশবাণীর সংবাদ পরিক্রমা, পোস্ট অফিসে গিয়ে আনন্দবাজার পাঠ– এ নিয়ে তাঁর দিন কাটছে। গ্রামের জমিদার, যিনি আবার স্কুল কমিটির সভাপতিও, তাঁকে একটুকরো জমি দিতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন, পন্ডিতমশাই একটা ঘর বানিয়ে থাকবেন। কে শোনে কার কথা?—‘ না মশাই আপনাদের অনেক খেয়েছি, আর আমাকে ঋণী করবেন না। এবার দেশে যেতে দিন। মায়া বাড়াবেন না আর।’যেন ওপারে তাঁর জন্য সবাই বসে আছে, গিয়ে চাবি দিয়ে ঘর খুলবেন।

এরপর কী ঘটল এসব খবর আমি নিইনি। তবে এরও বছর আটেক পর পাহাড়লাইনে রেলের কামরায় এক অপরিচিত কন্ঠস্বর শুনে খবরকাগজ দিয়ে মুখ লুকিয়ে ফেলেছি। এত সুন্দর, শুদ্ধ উচ্চারণে এক ফেরিওয়ালার কন্ঠে কৃষ্ণের অষ্টত্তর শতনাম, পকেটে গীতা, ছোটদের রামায়ণ, যোগব্যায়ামের পদ্ধতি, সহজ মৎস্যচাষ, খনার বচন এসব বইয়ের মাহাত্ম্য ভেসে যাচ্ছে গাড়ির ভেতর। মাত্র দশটাকায় যে কী মহামূল্যবান গ্রন্থ পাওয়া যাচ্ছে— এ কথাটা একঘর ভর্তি প্যাসেনজারকে বোঝানোর বৃথা চেষ্টা করে অন্য কামরার দিকে ব্যক্তিটি এগিয়ে গেলে আমি ভীষণ এক অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেলাম। বুঝতে পারলাম আমাদের বিদ্যাদান করে ব্যর্থ হয়ে পন্ডিতমশাই এখন রেলগাড়িতে জ্ঞানের ফিরিওয়ালা। পাহাড় লাইনের ফুরফুরে হাওয়ায় এবং মহানগরীর স্বপ্নে বিভোর আমি পরবর্তী দশঘন্টায় মনের সমস্ত যন্ত্রণা, লজ্জাবোধ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে গন্তব্য পথে এগিয়ে গেলাম। আমার চোখে তখন অন্য স্বপ্ন, অন্য চিন্তা, গ্রামের স্কুলে মধুপন্ডিতের দুর্দশার কথা ভাববার অবকাশ কোথায়!

|৪|

ফিরে যাই একাত্তরের দিনে। পন্ডিতমশাইকে গ্রামের মাতব্বরশ্রেণীর কিছু লোক বলত পাকিস্তানি। কেউ কেউ বলত রিফ্যু ( রিফ্যুজির সংক্ষিপ্ত কিঞ্চিৎ শ্লেষ রূপ আরকি)। তিনি যে দেশ বিভাগের ফলে এদিকে আশ্রয় নিয়ে এসেছেন শরনার্থী হয়ে। দেশবিভাগ যে কী মারাত্মক অভিশাপ সেটা বোঝার মতো ক্ষমতা তখন আমাদের ছিল না। এখন বুঝতে পারছি, তাঁকে যারা পাকি, রিফ্যু বলতো এরা এসেছিলেন গন্ডোগোলের প্ৰথম ধাক্কায়ই। একটু থিতু হয়ে বসেই পরবর্তী আগন্তুকদের তাচ্ছিল্য করা শুরু করেছেন। পন্ডিতমশাই পঞ্চাশের যাত্রী। আর বঙ্গীয় উত্তরাধিকার সূত্রে যাঁদের স্বাভাবিক বসতি এ ভূমিতে, সেই সাদাসিদা মানুষ এসব ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারতেন না, পন্ডিতমশাইকে নিয়ে রসিকতায় না বুঝেই হে হে করে হাসতেন, সায় দিতেন। গ্রামসুদ্ধ লোক পন্ডিতমশাইকে খ্যাপা ভাবত, এড়িয়ে চলত, তাঁর কথা হয়ত শুনতও, কিন্তু যেচে তাঁর সঙ্গে কেউ কথা বলতে যেত না। আর কথা বলবেই বা কী? কী সব নিধনপুর তাম্রফলকের কথা বলতেন, বলতেন পঞ্চখণ্ডের কথা— ওখানে নাকি কামরূপরাজ ভূতিবর্মা সহস্র ব্রাক্ষণকে ভূমিদান করেছিলেন, ছাতিআইন গ্রামের গোঁসাইয়ের কথা, ইটা পরগনার অভিশাপ, কোন হাওরের ভেতর রয়েছে অগ্নিকুন্ড, কোথাকার লৌড় পরগণায় বিশাল মরুভূমির অবস্থান—এসব কথা।

ইশকুল ছাড়া তাঁর আর কোথাও যাবার জায়গা ছিল না, বিপত্নিক ব্যক্তিটির কোনও আত্মীয়স্বজনও ছিল না কোনকালে। কেমন নিঃসঙ্গ সারাটা বিকেল দাওয়ায় বসে গুড়ুক গুড়ুক তামাক টানতেন। আমরা ওদিকে গেলে ডেকে নিতেন মাঝে মাঝে। কী সব গল্পও বলতেন আমাদের, মাঝে মাঝে স্বগতোক্তি করতেন, ‘আমাদের দেশের সব কিছুই ছিল, কিন্তু অভিশপ্ত ভূমি সবকিছুকে গ্রাস করে ফেলেছে’। গল্প বলছিলেন, একবার নাকি সীমান্তের ওপারে লাল শাড়ি পরা এক রমণী রিক্সো চড়ে এদিকে আসতে চাইলেন। সঙ্গীবিহীন একা এ নারীকে পার করতে রিক্সোওয়ালা রাজি হয়নি, কিন্তু আচম্বিতে এ রমণী হয়ে গেলেন ত্রিনয়নী দুর্গা।

রিক্সাওয়ালা কেমন আচ্ছনের মতো টেনে নিয়ে তাঁকে বর্ডার অতিক্রম করিয়ে দিলে তিনি আশীর্বাদ করে তাঁকে ভাড়া দিতে গেলে সে পায়ে পড়ে বলল ‘মা তোমার আশীর্বাদই আমার ভাড়া।’ দেবী অন্তর্হিতা হলেন। যে-পথ দিয়ে দেবী এপারে এলেন ওই পথে ছিল অজস্র কচু গাছ। এরপর থেকে নাকি সমস্ত কচু পাতায় রিক্সোর চাকার দাগ সৃষ্টি হয়েছে। এসব বলেই আমাদের কচু পাতা ছিঁড়ে আনতে পাঠাতেন, আর দেখাতেন ‘এই দ্যাখ রিক্সার চাকার দাগ। সত্যিই তো রিক্সায় চাকার দাগ!’ এটা তো কোনদিন দেখিনি। আমরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতাম এ দেবী কোন মন্দিরে ঢুকেছেন—রণচন্ডী, নিমাতা না দশভূজা! দুপুর বেলা কতদিন বড়দের চোখ এড়িয়ে গ্রামের পড়ো মন্দিরের পাশে
কচুগাছের সন্ধান করতাম। দেবীর রিস্কোর চাকার দাগ মিলিয়ে যদি পাকড়াও করতে পারি একবার। এ বেটির কাছে আমাদের অনেক কিছু চাওয়ার আছে। হেমন্তের মধ্যরাতে বর্ডার পেরিয়ে আসা দেবীদুর্গার ঘুঙুরের শব্দ তো সেদিনও শুনেছি, ভয়ে উঠোনে আসিনি। তবে ভোরবেলা সরুসরু সাদাসাদা কুর্শকাঁটার মতো কাঁটা বাড়ির বাগানের আনাচে কানাচে পড়ে থাকতে দেখে কুড়িয়ে এনে মাকে দিতাম। এখন বুঝছি ওই সজারুর কাঁটার ঝুমঝুমি শব্দই সেই নৃত্যরতা দেবীর ঘুঙুরধ্বনি।

|৫|

সীমান্তের ওপারের ঘটনাবলি ক্রমে এদিকে মুখে মুখে প্রচারিত হতে থাকল। সবাই বলছে যুদ্ধ লাগবে। কার সঙ্গে যুদ্ধ, কেন যুদ্ধ এটা আমরা বুঝতে পারছি না। কেউ কেউ বলত সামনে সাংঘাতিক বিপদ। যুদ্ধের উন্মাদনায় পন্ডিতমশাই পুরো একটি বছর কাটিয়ে দিলেন। শুনেছি তিনি দীর্ঘ পত্র লিখে আশার্বাদ জানিয়েছেন এ অঞ্চলের সন্তান কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার জাঁদরেল সদস্যকে যিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশের হয়ে জনমত গঠন করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেরিয়েছেন। প্রত্যুত্তরে মন্ত্রীমহাশয়ের শ্রদ্ধাভরা চিঠিখানা পকেটে নিয়ে একে ওকে পড়িয়েছেন। তবে যুদ্ধ শেষে দেশে যাওয়া তাঁর হয়নি তা তো পাঠক বুঝতেই পারছেন। তিনি নাকি গ্রাম ছেড়ে শহরের একটি ভাড়া বাড়িতে উঠেছিলেন, যেন ওই পাসপোর্ট ইত্যাদি হয়ে গেলে দেশে চলে যাবেন আরকি। ইত্যবসারে তিনি একটি কমিশনভিত্তিক ছাত্রপাঠ্য নোট বইয়ের ডিস্ট্রিব্যুশনের কাজ জুটিয়ে নিলেন। অবসর কাটানোর ও তো একটা ব্যাপার আছে, এইরকম ধারণা তিনি দিয়েছেন। আসলে বিষয়টি তা নয়। দিনভর স্কুলে স্কুলে ফিরি করে দুচারটি বই বিক্রী করে সামান্য কটি টাকাতে কষ্টেসৃষ্টেই তিনি দিন কাটাচ্ছিলেন। ক্রমে ঘর ভাড়া বাকি পড়ল, ছাত্রপাঠ্য স্বস্তা নোট বই থেকে আর কতটাকা কমিশন আসবে?

অগ্নিযুগের স্বাধীনতা সংগ্রামী পন্ডিতমশাই সহজে দমবার পাত্র নন। তিনি সামান্য একটি বিছিনা, রান্নার সামগ্রী আর কাঁধের ব্যাগ নিয়ে আশ্রয় খুঁজে নিলেন রেল লাইনের পাশে জবরদখল কলোনিতে। যুক্তি সহজ-ওখান থেকেচট করে গাড়িতে চড়ে জংশন হয়ে দুটো শহর কভার করা যায়, মাঝে মাঝে পাহাড় লাইনে উত্তর কাছাড় অবধিও এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। ওখানে মানে দামছড়া, ডিকেটছড়া পেরিয়ে হারাঙ্গঝাও হয়ে হাফলং , মাইবং সর্বত্রই বাংলা ইশকুল। একবার ওই বাজারে ঢুকলে…। তবে এখন তিনি স্ট্র্যাটেজি একটু পাল্টেছেন। এবার আর নোটবই নয়—ধর্মগ্রন্থ, পাঁচালি, সহজ মৎস্য চাষ পদ্ধতি, হারমোনিয়াম শিক্ষার বই। গাড়ির যাত্রীদের কাছে এসবের চাহিদাও বেশ। কী ভাবে তিনি গ্রাহক সংযোগ করতে তার কথা তো ইতিমধ্যেই বলেছি।

শুনেছি পন্ডিতমশাইয়ের মৃত্যুটা নাকি রেলস্টশন ইয়ার্ডেই ঘটেছিল। তবে এ মৃত্যুর দায়িত্ব কেউই স্বীকার করেনি। রেলের রেকর্ডে এটা ওঠেনি। বিষয়টি যখন আমার গোচরে আসে ততদিনে আরও দশ পনেরো বছর পেরিয়ে গেছে। এর আগে একবার পন্ডিতমশাইয়ের জন্য কিছু করতে হবে আবেগটা সঞ্চারিত হয়ে কবে যে থিতিয়ে গেছে মনেও করতে পারছি না।

|৬|

পন্ডিতমশাইয়ের সর্বশেষ আস্তানা, সেই জবরদখল কলোনির ঝুপড়ি তো কবেই গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জনৈক ঝুপড়িবাসী বৃদ্ধ এক মাস্টারবাবুর কথা জানিয়েছিল, সে নাকি লাইনের ধারে পড়ে থাকা মৃতমানুষটির শেষ কাজের সময় ছিল। বেওয়ারিশ লাশের দায়িত্ব কেউই নেয়নি। রেলও না। পঞ্চখন্ডের সুসন্তান, সংস্কৃতশাস্ত্রের নিষ্ঠাবান ধারক, অগ্নিযুগের সংগ্রামী, স্বাধীনবাংলার স্বপ্নে বিভোর স্বাভিমানী মধুপন্ডিত, অর্থাৎ তর্কসরস্বতী শ্রীমধুসূদন ভট্টাচার্য, বিদ্যাবারিধি, বিদ্যাবিনোদের শেষকৃত্যেকোনও সংস্কৃতমন্ত্র উচ্চারিত হল না, কোনও শাস্ত্রীয় আচার আচরণ পালিত হল না, জ্বলন্ত চিতায় ঘি মাখা জ্ঞাতিকাষ্ঠ ছুঁড়েদেবার জন্য কেউ, এল না, জবরদখল কলোনির কতিপয় ধাঙ্গড় শ্রেণীর লোকের কাঁধে চড়ে তিনি বরাকের পাড়ে শুয়ে আধপোড়া হয়ে ভেসে গেলেন ভাটির টানে।

|৭|

আগামীকাল লোহার হাতুড়ির ঘা পড়বে শতাব্দী প্রাচীন মিটারগেজ রেললাইনের উপর। আজই লাইনের উপর দিয়ে শেষ গাড়িটি চলে যাবে দূর পাহাড়ের বুক চিরে। যেতে যেতে উপড়ে নিয়ে যাবে এক শিকড় আঁকড়ে ধরে রেখেছিল সেই মাটি যে মাটিতে ঘুমিয়ে আছেন পির শাহজলাল আর তাঁর তিনশো ষাট আউলিয়া, যে মাটিতে ঘুমিয়ে আছেন বৈষ্ণবচূড়ামণি শ্রীচৈতন্যদেবের প্রপিতামহের দল, জগন্নাথ মিশ্রের জ্ঞাতিগোষ্ঠী, যে মাটিতে ঘুমিয়ে আছেন উদাস বাউল হাসনরাজা, রাধাপ্রেমে মাতোয়ারা রাধারমণ গোঁসাই। সেই শ্রীভূমি শ্রীহট্টের সন্তান ভাগ্যের ফেরে এসে আছড়ে পড়লেন নির্বাসিতা বাংলার বুকে কয়েকটি আদিম সর্পিনী সহোদরার মতো আষ্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা লোহার রেললাইনের উপর।

 


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!