- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫
গত এক বছরে দুর্নীতির হার ! বিশ্ব দুর্নীতি সূচকের দেশভিত্তিক তালিকায় কত নম্বরে ভারত ?
অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা বা অস্বচ্ছতা নিয়ে বিভিন্ন সূচকের উপর সমীক্ষা চালিয়ে তৈরি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক রিপোর্ট জানাচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিমুক্ত দেশ ডেনমার্ক। ভারত রয়েছে ৯৬তম স্থানে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশেরা কে কোথায় রয়েছে?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুর্নীতির বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই জারি রাখার কথা বলেন প্রায়শই। কংগ্রেসের জমানার দুর্নীতি নিয়ে কোণঠাসা করেন বিরোধী দলের নেতামন্ত্রীদের। এনডিএ সরকারের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ফুটিয়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেরুয়া শিবির। কিন্তু আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অন্য কথা বলছে। দুর্নীতি বিরোধী লড়াই বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলির ধারেকাছেও নেই ভারত। মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে ২০২৩ সালের ‘বিশ্ব দুর্নীতি সূচক’ বা করাপশন পারসেপশন্স ইনডেক্স বা সিপিআই। ১৮০টি দেশের এই তালিকায় ভারতের স্থান ৯৬। ট্রান্সপারেন্সি অর্গনাইজেশনের এই সমীক্ষায় ভারতের প্রাপ্ত নম্বর মাত্র ৩৮। এদিকে ভারতের সঙ্গে একই নম্বর পেয়ে সমস্থানে আছে মালদ্বীপ। অপরদিকে আগের বছর ভারতের প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৩৯। এবছর ১ নম্বর কমেছে ভারতের।
বস্তুত, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) -এর বার্ষিক রিপোর্ট জানাচ্ছে, গত এক বছরে দুর্নীতির ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান আরও নিম্নগামী হয়েছে। ২০২২ সালে এই রিপোর্টে ভারতের স্থান ছিল ৮৫। অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা বা অস্বচ্ছতা নিয়ে বিভিন্ন সূচকের উপর সমীক্ষা চালিয়ে তৈরি রিপোর্ট জানাচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিমুক্ত দেশ ডেনমার্ক। পরের তিনটি স্থানে যথাক্রমে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড এবং নরওয়ে। অর্থাৎ, বিশ্বের দুর্নীতিমুক্ত প্রথম চারটি দেশের মধ্যে তিনটিই ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভীয় অঞ্চলের। সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্থ দক্ষিণ সুদান। দীর্ঘ দিন ধরেই এই সমীক্ষা চলে আসছে। তবে এবারের সমীক্ষায় বেশ কিছু গণতান্ত্রিক দেশের অবস্থান বেশ কিছুটা খারাপ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইংল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসের মতো দেশ। প্রথম দেশটি রয়েছে ২০ নম্বরে আর দ্বিতীয়টি ৮ নম্বরে। পতনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ডে ব্যক্তি স্বার্থে ধ্বংস করা হচ্ছে পাবলিক অফিস। আর নেদারল্যান্ডসে অপরাধীদের হাতে আক্রান্ত হচ্ছেন বিচারকরা। এর কোনও সুরাহা হচ্ছে না। সেই কারণেই এই দুই দেশ তালিকায় অনেক খানি নেমে গিয়েছে।
জার্মানির বার্লিন-ভিত্তিক ওই দুর্নীতি পর্যবেক্ষণ সংস্থার রিপোর্ট বলছে, অর্থনৈতিক স্বচ্ছতার নিরিখে দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি পড়শি দেশও ভারতের চেয়ে এগিয়ে ! তবে আর্থিক মন্দায় বিপর্যস্ত পাকিস্তান (১৩৩) এবং শ্রীলঙ্কার (১১৫) হাল ভারতের চেয়েও খারাপ। ২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১৪তম। ২০২৩ সালে এই অবস্থান ছিল ১০ম। বাংলাদেশের চার ধাপ এগিয়ে যাওয়ার কারণ এ দেশে দুর্নীতি কমেছে, তা নয়। বরং বাংলাদেশ নম্বর আরও কম পেয়েছেদুর্নীতির পাশাপাশি ভারতে মৌলিক অধিকারে সরকারি হস্তক্ষেপেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে রিপোর্টে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘ভারতে টেলিকমিউনিকেশন বিল পাশের মাধ্যমে নাগরিক অধিকারের পরিসর আরও সংকীর্ণ করা হয়েছে। যা মৌলিক অধিকার রক্ষার পথে একটি ‘গুরুতর সমস্যা’ হয়ে উঠতে পারে।’’
সিপিআই অনুযায়ী, দুর্নীতির ধারণার মাত্রাকে ০ (শূন্য) থেকে ১০০ (এক শ)–এর স্কেলে নির্ধারণ করা হয়। এই পদ্ধতি অনুসারে স্কেলের ০ (শূন্য) স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতা সর্বোচ্চ এবং ১০০ স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতা সর্বনিম্ন বলে ধারণা করা হয়। কোনও দেশের পাবলিক সেক্টর বা সরকারি বিভাগে দুর্নীতির হার কেমন, সেটির উপর নির্ভর করেই এই সমীক্ষা চালানো হয়। ভারত এই সমীক্ষায় ৩৯ নম্বর পেয়ে নিজস্ব অবস্থানে রয়েছে। চিনের অবস্থান সেখানে ভারতের চেয়ে বেশ কিছুটা উপরে। চিন রয়েছে ৭৬ নম্বরে। তালিকা অনুসারে, ২০২৪ সালে, ভারতের সামগ্রিক স্কোর ছিল ৩৮ যেখানে ২০২৩ সালে এটি ছিল ৩৯ এবং ২০২২ সালে ৪০। ২০২৩ সালে ভারতের র্যাঙ্ক ছিল ৯৩।
রাশিয়ার র্যাঙ্কিং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। গত বছর আরও চার পয়েন্ট কমিয়ে ২২-এ পৌঁছেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখ করেছে যে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে মস্কোর পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন “কর্তৃত্ববাদকে প্ররোচিত করেছে।” ইউক্রেনের স্কোর ৩৫-এ নেমে এসেছে, কিন্তু সেখানে বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং উচ্চ-স্তরের দুর্নীতি মামলার বিচারের ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৬৯ পয়েন্ট থেকে ৬৫ এ নেমে গেছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের শক্তিধর দেশটির দুর্নীতি সূচকে ২৮ তম স্থানে রয়েছে। অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলির মধ্যে ফ্রান্সের চার পয়েন্ট কমে ৬৭ হয়েছে, স্থান ২৫, জার্মানীড় ৩ পয়েন্ট নেমে ৭৫ হয়ে ১৫ নাম্বারের স্থান অধিকার করেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, বিচার বিভাগ বড় দুর্নীতির মামলায় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় মেক্সিকোও পাঁচ পয়েন্ট কমে ২৬-এ নেমে এসেছে। এদিকে ভারতের প্রতিবেশী দেশ ভুটান এই তালিকায় ১৮তম স্থানে আছে। তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৭৪। জাপান, ব্রিটেন আছে ২০তম স্থানে। তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৭১। সংযুক্ত আরব আমিরাত আছে ২৩তম স্থানে, তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮।
❤ Support Us