Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • জুন ২৪, ২০২৫

প্রথমবারের মতো এসডিজি সূচকে শীর্ষ ১০০-তে ভারত, উন্নয়নের স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক মঞ্চে

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
প্রথমবারের মতো এসডিজি সূচকে শীর্ষ ১০০-তে ভারত, উন্নয়নের স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক মঞ্চে

এক দশকের প্রচেষ্টা ও পরিকল্পিত উন্নয়নের পর অবশেষে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ভারতের অগ্রগতি পেল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ২০২৫ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৩টি দেশের মধ্যে ভারত এখন ৯৯তম স্থানে। গত বছর ছিল ১০৯তম, তার আগের বছর ১১২তম। অর্থাৎ পরপর চার বছরে ভারত নিজের অবস্থান ক্রমাগত উন্নত করেছে।

আন্তর্জাতিক এই র‍্যাঙ্কিং তৈরি হয় ১৭টি নির্ধারিত লক্ষ্যের ভিত্তিতে—যেমন দারিদ্র নির্মূল, ক্ষুধামুক্ত সমাজ, স্বাস্থ্য, শিক্ষার সমতা, লিঙ্গ সমতা, বিশুদ্ধ জল ও পয়ঃনিষ্কাশন, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি, সাশ্রয়ী বাসস্থান, অবকাঠামো উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, এবং শক্তিশালী ও স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান। ২০২৫ সালে ভারতের এসডিজি স্কোর ৬৭। গত কয়েক বছরে ক্রমশ উন্নত হয়েছে ভারতের অবস্থান। ২০১৭ সালে ছিল ১১৬তম, ২০১৮-তে ১১২, এরপর ২০১৯-এ ১১৫, ২০২০-এ ১১৭, এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে ১০৯। এ বছর এক লাফে ১০ ধাপ উঠে ভারতের প্রবেশ ‘টপ ১০০’-তে। এই স্কোরের স্কেল ০ থেকে ১০০ পর্যন্ত হয়; যেখানে ১০০ মানে সংশ্লিষ্ট দেশ সব ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে, আর ০ মানে কোনও অগ্রগতি হয়নি। চিন ৭৪.৪ স্কোর নিয়ে ৪৯তম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৭৫.২ স্কোর নিয়ে ৪৪তম স্থানে রয়েছে। ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভুটান রয়েছে ৭৪তম স্থানে, নেপাল ৮৫তম, বাংলাদেশ ১১৪তম ও পাকিস্তান আছে ১৪০তম স্থানে। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান পিছিয়ে থাকলেও নেপাল ও ভুটান সামান্য এগিয়ে। ভারত মহাসাগরের প্রতিবেশীদের মধ্যে মালদ্বীপ ৫৩তম, শ্রীলঙ্কা ৯৩তম স্থানে রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উন্নতি করা দেশগুলির তালিকায় আছে বেনিন (+১৪.৫), উজবেকিস্তান (+১২.১), ইউএই (+৯.৯), সৌদি আরব (+৮.১)। তবে এগিয়ে থাকা দেশগুলির সিংহভাগই ইউরোপীয়—শীর্ষে ফিনল্যান্ড, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে সুইডেন ও ডেনমার্ক। শীর্ষ ২০-এর মধ্যে ১৯টি দেশ ইউরোপের।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত যে শুধু নিজের অবস্থান উন্নত করেছে তাই নয়, বরং পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল হিসেবে এসডিজি অগ্রগতিতে বিশ্বের অন্য সব অঞ্চলকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। এই অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। নেপাল, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, মঙ্গোলিয়া এবং কাম্বোডিয়ার মতো দেশগুলো ২০১৫ সালের পর থেকে দ্রুত অগ্রগতি করেছে। তথ্য অনুযায়ী, ভারত সহ বহু উন্নয়নশীল দেশ এসডিজি-র কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। যেমন মোবাইল ও ব্রডব্যান্ডের ব্যবহার বেড়েছে, বিদ্যুৎ পরিষেবা গ্রামেগঞ্জে পৌঁছেছে, ইন্টারনেট প্রবেশাধিকারে বিস্তার ঘটেছে, শিশু মৃত্যুহার ও নবজাতক মৃত্যুহারে স্পষ্ট হ্রাস এসেছে। এই উন্নয়নের পেছনে কাজ করেছে ডিজিটাল ভারত, স্বাস্থ্য মিশন, সৌভাগ্য যোজনা, এবং ‘উজ্জ্বলা’, ‘জল জীবন’ প্রকল্পের মতো সরকারি উদ্যোগ।

তবে একইসঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়েও পড়েছে ভারত সহ অনেক দেশ। যেমন জনসংখ্যা বিপদজনকভাবে বেড়েছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কমেছে, নাইট্রোজেন ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য নেই, বিপন্ন প্রজাতির সংখ্যা কমেছে, এবং দুর্নীতির ধারণা সূচকে অবনতি হয়েছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সূচক তৈরি কর কর্মকর্তারা । রিপোর্টে কড়া ভাষায় সমালোচনা করা হয়েছে বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামোর, যা এখনো ধনী দেশগুলোর দিকেই মূলধন প্রবাহ ঘটাচ্ছে। অথচ উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোতে মূলধনের প্রবাহ বেশি প্রয়োজন। জুনের শেষে সেভিলেতে অনুষ্ঠিত হতে চলা উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয়ই হবে এই বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামোর সংস্কার। উল্লেখযোগ্যভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় বছরের মতো ১৯৩টি দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে একেবারে শেষ স্থানে। কারণ, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এসডিজি ও ২০৩০ এজেন্ডা থেকে সরে এসেছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে তারা। অন্যদিকে, সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেশ হিসেবে উঠে এসেছে ছোট ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলি—বার্বাডোস, জামাইকা ও ট্রিনিদাদ ও টোবাগো। চিলি সবচেয়ে উচ্চ র‌্যাঙ্কিং প্রাপ্ত লাতিন আমেরিকার দেশ।

ভারতের এই সাফল্য নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে এখানেই থেমে গেলে চলবে না। যেসব ক্ষেত্রে এখনও অনেকটা পিছিয়ে—বিশেষত পরিবেশ সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার, লিঙ্গ সমতা, গুণগত শিক্ষা এবং সংবাদমাধ্যম ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির স্বাধীনতা—সেখানে আরো সচেতন, সাহসী ও পরিকল্পিত উদ্যোগ দরকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, যতটা গুরুত্ব ভারত অবকাঠামো এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিকে দিয়েছে, ততটাই প্রয়োজন সামাজিক ক্ষেত্রেও। টেকসই উন্নয়নের এই র‍্যাঙ্কিং শুধুই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নয়, দেশের ভিতরের অগ্রগতির এক বাস্তব চিত্র। তাই এই পথ ধরে এগিয়ে যেতে হলে চাই দীর্ঘমেয়াদী নীতি, স্থায়িত্বশীল এবং জনসম্পৃক্ত পরিকল্পনা। ভারতের ৯৯তম স্থান শুধুই একটি সংখ্যা নয়। এটি প্রতিফলন দেশের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, নীতিগত স্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক লক্ষ্যের সঙ্গে নিজেদের সমন্বয়ের। তবে পথ দীর্ঘ, আর লক্ষ্য ২০৩০। সেদিকে এগিয়ে চলার দিশা দেখাল এই রিপোর্ট।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!