Advertisement
  • ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র
  • জানুয়ারি ১৩, ২০২৫

ছোটোদের চরিত্রে এবার বড়োরা, বসিরহাটে অবসর প্রাপ্তদের নিয়ে অভিনব আয়োজন

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
ছোটোদের চরিত্রে এবার বড়োরা, বসিরহাটে অবসর প্রাপ্তদের নিয়ে অভিনব আয়োজন

বয়স হার মেনেছে তাঁদের উৎসাহ আর ইচ্ছাশক্তির কাছে। না হলে এই বয়সে এসে কারও কী সাধ জাগে মুখে রঙ মেখে, মাথায় পরচুল খাটিয়ে নাটক করতে। জীবনে প্রথম। তাও আবার ছোটদের নাটক। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন রাজ্য সরকারে শিক্ষা দফতরের অবসর প্রাপ্ত ডেপুটি সেক্রটারি অরবিন্দ সরকার। অনাথ রায়, দিলীপ অধিকারি, বিশ্বনাথ দাস, ভাস্কর আচার্য, প্রদীপ ঘোষ, বরুণ অধিকারি, প্রদীপ চৌধুরি এঁরা সকলেই ষাটোর্ধ্ব। ৬২ থেকে ৬৭ বছর। এখন অবসর যাপনের বয়স। এঁদের কেউ কোনদিন কোন মঞ্চে ওঠেননি। কেউ চাকরি করতেন। অবসর নিয়েছেন। কেউ ব্যবসা করতেন। কেউ এখন অবসরের দোরগোড়ায়। কারও দিন কেটে যায় ঘরে বসেই। কেউ সময় কাটান তাস খেলে কিংবা চায়ের দোকানে সমবয়স্কদের সঙ্গে গল্প গুজবে।

এঁদের এক জায়গায় করে নাটকে টেনে এনেছেন অরবিন্দ সরকার। রাজ্য সরকারে শিক্ষা দফতরের ডেপুটি সেক্রটারি পদ থেকে অবসর নিয়েছেন ২০২১ সালে। বুড়োদের দলে তিনিও। অরবিন্দবাবু তাঁর সমবয়সীদের এই বয়সে অভিনয় করার প্রস্তাব দিতেই সকলেই রাজি হয়ে যান। শুরু হয় সুকুমার রায়ের ‘‌আবাক জলপান’‌ ‌বুড়োদের দিয়ে ছোটদের নাটকের রিহার্সাল। এখন এটাই ধ্যানজ্ঞান বসিরহাট গোয়ালপোতার মহুয়া নাট্য সংস্থার প্রবীণ সদস্যদের। এই নাটকের নির্দেশক শঙ্কর রায় অধিকারি, আলোক সম্পাত করছেন দিলীপ মন্ডল, বয়সে তরুণ। রোজ ঠিক সময় মহলাকক্ষে হাজির হচ্ছেন প্রবীণের দল। যিনি চায়ের দোকানে আড্ডা দিতেন তিনি আর যাচ্ছেন না আড্ডায়, যিনি তাস খেলে সময় কাটাতেন তাসের আসরে তাঁকে দেখা যাচ্ছেনা। যিনি অবসরের পর ঘরবন্দী হয়ে পড়েছিলেন তিনি আর সন্ধের পর ঘরে বসে থাকতে পারছেন না। ওঁরা বলছেন, মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পেয়েছি। বলছেন, নতুন আবেগ অনুভব করছি। কেউ বলছেন, যেখানেই এক জায়গায় হচ্ছি সেখানেই নাটকের সংলাপ চলছে। এমনকী সহ অভিনেতার রোলে বাড়িতে স্ত্রীরা প্রক্সি দিচ্ছেন। আগে এঁরা কেউ মঞ্চে অভিনয় করেননি। তাই তর সইছে না দর্শকের সামনে কখন মঞ্চে নামার। শিক্ষা দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারি থেকে অবসর নেওয়ার পরে অরবিন্দবাবুর দিনের বেশির ভাগ সময়টা কাটে নাটক নিয়ে। তিনি আবার বসিরহাট নাট্য সমন্বয়ের সভাপতি। অরবিন্দবাবু বলেন, ‘‌নাটক তো শুধু বিনোদন নয়। নাটক সামাজিক দায়িত্ব বোধ জাগায়। নাটক করতে এসে এই মানুষগুলোর নতুন যেন নিজেদের সত্ত্বা খুঁজে পেয়েছেন।’‌ অরবিন্দবাবুকে থামিয়ে পাশ থেকে ৬৭ বছরের অনাথ বায় বলে উঠলেন, ‘‌আরে দূর দুর !‌ তুমিও যেমন ! জিজ্ঞেস করার আর লোক পাওনি ?‌ ও হতভাগা জানেও–‌বা কি, আর বলবে–‌ই বা কি ?’‌‌ হাসির রোল ওঠে মহলাকক্ষে। একটা শো হয়ে গেছে নিজেদের নাট্যোৎসবে। দর্শকের তারিফ এতটাই পেয়েছেন যে এখন তাঁরা কোথাও ডাক পেলে সেখানে ছুটবেন অভিনয় করতে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!