- দে । শ
- মে ২৭, ২০২৩
গাজীপুর সিটি-ভোটে জাহাঙ্গিরি চমক ! সরে দাঁড়াল বিএনপির ধানের শীষ। পরিত্যক্ত মাঝির কাছে পরাজিত নৌকোর নির্দল। জয়ী ভূমিমাতা জায়েদা
ইঙ্গিত, আসন্ন জাতীয় ভোটেও 'তরী' আবার তীরে ! দুর্ভেদ্য হাসিনার উন্নয়নমুখী রাজনীতির অভিমুখ। কেন ? উত্তর বেরিয়ে এল একান্ত বিশ্লেষণে

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগেই থমকে গেল বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী পার্টি(বিএনপি)। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোটে তারা দাঁড়ায়নি। অন্য কোনো দলের হয়ে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে ভোট প্রচারও করেনি। প্রার্থী দিয়েছিল প্রয়াত হুসেইন মহম্মদ এরশাদ -প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি ও ইসলামি আন্দোলন প্রার্থী। আওয়ামি লিগের নৌকো প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন আজমতুল্লাহ খান। হেরে গেছেন ১৬ হাজার ভোটে। লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন নির্দল প্রার্থী জায়েদা খাতুন। তাঁকে সামনে রেখেই প্রকারান্তরে ব্যক্তি আজমতুল্লাহর বিরুদ্ধে লড়তে হল প্রাক্তন মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে। জনপ্রিয় আর আওয়ামি লিগের একসময়ের তরুণ তুর্ক । ছাত্রাবস্থা্তেই তাঁর রাজনীতি যাপনের সূচনা। একসময় দলের ভেতরে ও বাইরে জাহাঙ্গীরের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে ঈর্ষণীয় হয়ে ওঠে। পছন্দ করতেন খোদ নেত্রী শেখ হাসিনা ও দলের প্রথম সারির নেতারা। গাজীপুরে প্রশ্নাতীত তাঁর প্রভাব। তৃণস্তরের কর্মী থেকে ক্ষমতাবান নেতারা সবার আপনজন হয়ে ওঠেন। সফল ব্যবসায়ী এবং গাজীপুরের ভূমিপুত্র। বিএনপি তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৮-য় প্রার্থী খাড়া করেও পাত্তা পায়নি। নেত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদ ধন্য জাহাঙ্গীর তখন স্বতঃস্ফূর্ত হাসির মতো অপ্রতিরোধ্য। উন্নয়নের কাজে তাঁর আত্মনিয়োগ এবং মুক্তিযুদ্ধের ভাবাবেগের সহযোগী রাজনীতি তাঁকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে তোলে। দলীয় কোন্দল আর পরশ্রীকাতরতায় একসময় হঠাৎ বিদ্ধ হতে হল। অভিযোগ, তাঁর কোনো কোনো মন্তব্যকে ‘দলবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে তাঁকে মেয়রের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দল তাঁকে বহিষ্কারও করে দেয়। তবু, দলের নিষ্ঠাবান সৈনিক হিসেবে তাঁর শ্রম ও একাগ্রতায় ভাঁটা পড়েনি। জাহাঙ্গীর জানতেন, আওয়ামি লিগ ও অন্যান্য দলও জানত যে, প্রাক্তন ছাত্র নেতা ও ভূতপূর্ব মেয়রকে আটকানো অসম্ভব। দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েও সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে দাঁড়াতে চাইলেন। পথের কাঁটা হয়ে উঠল নির্বাচন বিধি। ‘ঋণ খেলাপি’-র অভিযোগের শিকার, ভোটে দাঁড়াতে পারলেন না। দাঁড় করালেন তাঁর মা জায়েদা খাতুনকে। স্বতন্ত্র প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মায়ের হয়ে প্রচারে ঝড় তুললেন জাহাঙ্গীর। প্রচারে তাঁর ইস্যু ছিল উন্নয়ন, বিএনপি-র ‘স্বাধীনতা বিরোধী’ ভূমিকা এবং ইসলামি আন্দোলনের সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ। জনপ্রিয় তরুণ নেতাকেই বকলমে ফিরিয়ে আনল শিল্পনগরী গাজীপুরের গরিষ্ঠ সংখ্যক ভোটার। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হলেও বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধীদের কাছে এটা ছিল আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রাক-পরীক্ষা। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামি দল বুঝতে পারল, তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা এখনো তলানিতে। আওয়ামি লিগও বুঝতে পারল, জাহাঙ্গীরকে নিয়ে তাদের নতুন করে ভাবতে হবে।
বিদেশের ঘরোয়া মামলায় হস্তক্ষেপমূলক শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবি তুলে আমেরিকা সম্প্রতি যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, সে নীতিকেও প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোট এবং জাহাঙ্গীর জননী জায়েদা খাতুনের জয়। ফল ঘোষণার পর জাহাঙ্গীর বলেছেন, গাজীপুরের ভোটে নৌকো প্রতীকধারীর হার আওয়ামি লিগের পরাজয় নয়। এই পরাজয়ে একজন ব্যক্তি ও লিগ মনোনীত নির্দল প্রার্থীর। যিনি দলের ভাবাবেগের সঙ্গে বিশেষ পরিচিত নয়। আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল কাদের বলেছেন, গাজীপুরে গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। অতএব, ছবি পরিষ্কার, আওয়ামি লিগের ভাবাবেগ থেকে জাহাঙ্গীর আলম বিচ্যুত হননি । দলের নেতারা এবার সম্ভবত অন্যরকম ভাবনাচিন্তা শুরু করবেন। ফোনে যোগাযোগ করা হলে জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, আজন্ম আমি আওয়ামি পরিবারের সদস্য। কখনো অন্য কোনো রাজনীতি করিনি। করার প্রশ্ন ওঠে না। শীঘ্রই মাকে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। তাঁর আশীর্বাদ নিয়েই পুরোদমে কাজ শুরু হবে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোট দিয়ে বাংলাদেশে পুর নিগমের নির্বাচন শুরু হল। ১২ জুন বরিশাল ও খুলনায়, ২১ জুন সিলেট ও রাজশাহিতে ভোট হবে। গাজীপুরের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রমাণ করল, ব্যালট ছিনতাই, ভোট প্রয়োগে বাধা ইত্যাদি যে সব অভিযোগ তুলে সংসদীয় ভোটের আগে যারা জল ঘোলা করত কিংবা ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছে, তাদের অপবাদ অসত্য। দ্বিতীয়ত, তদারকি সরকারের অধীনে জাতীয় ভোট করানোর দাবি ধোপে টিঁকবে না। তৃতীয়ত, জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও তাঁদের সহযোগীরা বিশেষ ফায়দা তুলতে পারবে না। লক্ষ্য তাঁদের অস্পষ্ট। শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নমুখী রাজনীতিই হয়তো বা শেষ কথা বলবে। বিরোধীদের ঐক্যের ভিত নড়বড়ে। তুলনায় আওয়ামি লিগ অনেক বেশি সংহত, ঐক্যবদ্ধ। ‘নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্র’-এর তকমা দিয়ে শেখ হাসিনার ১৯ বছরের উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ডকে চেপে রাখা আরো এক দুর্ভেদ্য প্রবণতা। মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী, গ্রামীণ কৃষক, বিভিন্ন জনজাতি এবং যুবছাত্রদের বাঁ দিকে, ডান দিকে শেখ হাসিনার মধ্যমপন্থা ছাড়া দ্বিতীয় বিকল্প দানা বাঁধে নি। আমাদের ধারণা, শেখ হাসিনার রাজনীতির ছত্রছায়ায় বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতাকে আরো কয়েকবছর বসবাস করতে হবে।
❤ Support Us