- এই মুহূর্তে বি। দে । শ
- ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকারে অনাস্থা, বাংলাদেশে আবার ধর্মঘট অবরোধ শুরু

বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে অবরোধ ও ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং নাগরিক নিরাপত্তাহীনতা মতো একাধিক বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নামবে শেখ হাসিনার দল৷ ‘এই কর্মসূচী করতে দেব না’, পাল্টা দাবি মুহাম্মদ ইউনূসের।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদত্যাগ ও ‘অপশাসন-নির্যাতনের প্রতিবাদে আগামী ১৬ই ফেব্রুয়ারি ও ১৮ই ফেব্রুয়ারি হরতালের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার রাতে দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তাতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এবং হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকেই মাঠে নামার ঘোষণা করা হয়েছে।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি শনিবার থেকে ৫ই ফেব্রুয়ারি বুধবার পর্যন্ত দাবির লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি করবেন লীগের সদস্যরা। ৬ ফেব্রুয়ারি, সারা দেশে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ১০ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। সর্বশেষে ১৬ই ফেব্রুয়ারি রোববার অবরোধ এবং ১৮ই ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক ‘কঠোর’ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। দলের তরফে বলা হয়েছে, দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের এ সকল কর্মসূচিতে কোনো প্রকার বাধা প্রদান করা হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
তাঁদের দাবি, ‘অবৈধ’ অন্তর্বর্তী সরকারের দেশে মূল্যবৃদ্ধির হার কমে তো নি বরং বেড়েছে। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। গত নভেম্বর মাস থেকে হিন্দুদের উপর অত্যাচার লাগামছাড়া হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় প্রভুর গ্রেপ্তারির পর দিকে দিকে হিন্দুদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বেশ কয়েকজন সংখ্যালঘুকে পিটিয়ে মারারও অভিযোগ ওঠে। তাই দেশে শান্তি ফেরাতে পদত্যাগ করতে হবে প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসকে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ অন্যান্য মামলা প্রত্যাহার এবং ‘প্রহসনমূলক বিচার’ বন্ধেরও দাবি জানানো হয়। বিতর্কিতভাবে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শেখ হাসিনাকে “প্রধানমন্ত্রী” হিসেবে উল্লেখ করেছে ক্ষমতাচ্যুত দলটি।
মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বুধবার প্রশাসনের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের পতাকার নীচে কেউ ‘অবৈধ বিক্ষোভ’ করার সাহস দেখালে তাঁকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি বলেছেন,’ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামি লিগ যত দিন না ক্ষমা চাইছে, যত দিন না তাদের নেতৃত্বকে বিচারের মধ্যে আনা হচ্ছে এবং যত দিন না তারা জবাবদিহি করছে, তত দিন তাদের কোনও প্রতিবাদ কর্মসূচি করতে দেওয়া হবে না।’ প্রধান উপদেষ্টার সাবধানবাণী — বাংলাদেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার কোনও ধরনের চেষ্টাকে সুযোগ দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে কোনও ‘ন্যায্য’ বিক্ষোভের বিরোধী নয়, এ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনো ন্যায্য বিক্ষোভ বন্ধ বা নিষিদ্ধ করেনি। আমরা সমাবেশের স্বাধীনতা এবং সাংগঠিনক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।’
বাংলাদেশে জুলাই ও আগষ্ট মাসে ব্যাপক গণআন্দোলনের চাপে ৫ অগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়।দেশ ছেড়ে তিনি আশ্রয় নেন ভারতে। গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার, প্রধান উপদেষ্টা করা হয় ড.ইউনূসকে। শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠে। নিষিদ্ধ করা হয় দলের ছাত্রশাখা বাংলাদেশ ছাত্র লীগকে। যদিও বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যায় নি। হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে কূটনৈতিক বার্তা পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। ওই কূটনৈতিক বার্তার প্রাপ্তিস্বীকার করলেও এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ প্রকাশ্যে জানায়নি নয়াদিল্লি।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের কোথাও আওয়ামী লীগের সক্রিয় কোন কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি। দলের বেশিরভাগ শীর্ষ নেতাই হয় দেশের বাইরে কিংবা পলাতক। কেউ কারাগারে রয়েছেন। দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঝুলেছে ডজন ডজন মামলা। এর আগে গত ১০ই নভেম্বর রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েও নামতে পারেনি লীগ। এমন অবস্থার মধ্যেই মঙ্গল হরতাল, অবরোধ, সমাবেশ ও বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। গত শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ দাবিতে তার লিফলেট বিতরণের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েলে আলোচনা শুরু হয়। এই ঘটনায় লালমনিরহাটের পাটগ্রামের সরকারি জসমুদ্দিন কাজী আব্দুল গণি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুকিব মিয়াকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুকিব ছাত্রলীগের সোহাগ-নাজমুল কমিটির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়েছেন ইউনুস। ভোট নিয়ে বিএনপি, অন্তর্বর্তী সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মধ্যে প্রবল মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। ৫ আগস্টের পর আওয়ামি লিগ কোণঠাসা হয়ে গেলেও এই সুযোগে তারা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। লীগের হরতাল-অবরোধ করমসূচি নিয়ে কটাক্ষ ছুঁড়েছে ‘চিরশত্রু’ বিএনপি। জনগণের সাড়া না পেয়ে আওয়ামী লীগ এখন অনলাইনে হরতাল-অবরোধ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
❤ Support Us