বিদেশি মদের দাম না কমিয়ে পেট্রোপণ্যে কর কমান বললেন, পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ।

পেট্রল-ডিজেলের দাম কমানো নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য সংঘাত আরও উস্কে দিলেন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী পেট্রোপণ্যের দাম কমানোর বিষয়ে বিরোধী দলের দখলে থাকা রাজ্যগুলিকে আবার সতর্ক করলেন। পুরীর সাফ কথা, বিরোধীদের দখলে থাকা রাজ্যগুলি যদি বিদেশি মদের দাম না কমিয়ে পেট্রল ডিজেলের দাম কমাত, তাহলে ওই রাজ্যগুলির মানুষ স্বস্তি পেত।

বুধবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিরোধীদের দখলে থাকা একাধিক রাজ্যকে পেট্রল-ডিজেলের উপর চাপানো ভ্যাট কমাতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। গত নভেম্বর মাসে কেন্দ্র যখন পেট্রল-ডিজেলে শুল্ক কমিয়েছিল, সেসময় বাংলা, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরল এবং ঝাড়খণ্ড বাদে বাকি রাজ্যগুলিও ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বুধবার সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মোদি বলেন, সেসময় পেট্রোপণ্যে কর না কমিয়ে অন্যায় করেছে এই রাজ্যের সরকারগুলি। তবে তখন দাম না কমালেও এখন এই সরকারগুলি তাদের রাজ্যের মানুষের কথা ভেবে কর কমানোর পথে হাঁটা উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী ।

যদিও প্রধানমন্ত্রীর সেই পরামর্শে কর্ণপাতও করেন নি এই রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উদ্ধব ঠাকরে, চন্দ্রশেখর রাও-রা বলছেন, পেট্রলের দাম কমানোটা কেন্দ্রের দায়িত্ব। কারণ কেন্দ্র পেট্রল-ডিজেল থেকে রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি কর নেয়। নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী যখন রাজ্যগুলিকে পেট্রোপণ্যের দাম কমাতে অনুরোধ করেছিলেন, সেসময় কংগ্রেসের দখলে যে তিনটি রাজ্য ছিল, তারাও কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেদিক থেকে দেখতে গেলে মোদির বুধবারের আক্রমণের নিশানায় কংগ্রেস ছিল না। তা সত্ত্বেও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বৃহস্পতিবার টুইট করে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাহুলের বক্তব্য, ‘জ্বালানির দামের বাড়ার জন্য, কয়লার অভাবের জন্য, অক্সিজেনের সংকট ইত্যাদি নানা বিষয়ে রাজ্যগুলিকে দোষ দেওয়া কেন্দ্রের একমাত্র কাজ। জ্বালানিতে ৬৮ শতাংশ কর নিচ্ছে কেন্দ্র, অথচ জ্বালানির দাম বাড়ায় প্রধানমন্ত্রী দায় চাপাচ্ছেন রাজ্যগুলির উপর। প্রধানমন্ত্রীর ফেডারেলিজম সমন্বয়মূলক নয়, জবরদস্তিমূলক।’

বিরোধীদের এই সমবেত আক্রমণের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী। তাঁর বক্তব্য, বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি যদি বিদেশে মদে শুল্ক না কমিয়ে পেট্রল-ডিজেলে কর কমাত, তাহলে পেট্রল-ডিজেল সস্তায় পাওয়া যেত। ‘ পুরীর বক্তব্য, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থান সরকার যেখানে পেট্রলে লিটারপ্রতি ৩২.১৫ টাকা এবং ২৯.১০ টাকা কর নেয়, সেখানে উত্তরাখণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশ পেট্রলে কর নেয় মাত্র ১৪ টাকা ৫১ পয়সা এবং ১৬ টাকা ৫০ পয়সা।’

তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও বলেছেন—রাজ্যগুলিকে কর কমাতে বলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয়বার ভাবা উচিত। আমার রাজ্যে ২০১৫ সাল থেকে জ্বালানি করের কোনও বৃদ্ধি হয়নি এবং একথা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি ।কেসিআর এটিকে কেন্দ্রের বিপরীতে রাজ্যগুলিকে আর্থিকভাবে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন, ‘ কেন্দ্র চায় যাতে আমাদের তাদের সামনে ভিক্ষার বাটি নিয়ে দাঁড়াতে হয়’।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন যে তাঁর সরকার গত তিন বছরে পেট্রোল এবং ডিজেলের দামে ভর্তুকি দেওয়ার জন্য ১,৫০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্পূর্ণ একতরফা এবং বিভ্রান্তিকর বক্তৃতা দিয়েছেন। তিনি পেট্রোল-ডিজেলের দাম বানার পরিপ্রেক্ষিতে যে তথ্যগুলি তুলে ধরছেন তা সম্পূরণ ভুল। আমরা গত তিন বছর ধরে প্রতি লিটার পেট্রোল এবং ডিজেলে ১ টাকা ভর্তুকি দিয়ে আসছি। কেন্দ্রের কাছে আমাদের ৯৭,০০০ কোটি বকেয়া আছে। যেদিন আমরা অর্ধেক পরিমাণ পাব, পরের দিন আমরা ৩,০০০ কোটি পেট্রোল এবং ডিজেল ভর্তুকি দেব। ভর্তুকি নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই কিন্তু আমি কীভাবে আমার সরকার চালাব? যখনই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয় তখনই মুখ্যমন্ত্রীদের কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয় না, তাই তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে পাল্টা দিতে পারেননি।

তা না হলে প্রধানমন্ত্রী ৫,০০০ কোটি এবং ৩,০০০ কোটির পেট্রোল এবং ডিজেল ভর্তুকি দেওয়ার জন্য উত্তরপ্রদেশ এবং গুজরাটের মতো বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির প্রশংসা করেন! এই রাজ্যগুলি কেন্দ্র থেকে ভাল আর্থিক সাহায্য পায়, তিনি দাবি করেন, এবং তাঁর বিপরীতে তার রাজ্য খুব কম পেয়েছে।মুখ্যমন্ত্রীর তৃণমূল কংগ্রেস দল টুইটারে পিএম মোদিকে কটাক্ষ করে লিখেছে মিস্টার @ নরেন্দ্রমোদি, আজকে রাজ্যগুলিকে লজ্জা দেওয়া আপনার জঘন্য এজেন্ডা ছিল। জনগণের বোঝা কমাতে কেন্দ্র কী করছে? নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্রমবর্ধমান দাম রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?