- বৈষয়িক
- জুন ২৯, ২০২২
প্যাকেটের চাল-ডাল, আটা, দই, মুড়িতেও ৫% জিএসটি ! ১৮ শতাংশ কর বসছে চেকবইতেও ।

সাধারণ মানুষের অস্বস্তি বাড়িয়ে একাধিক পণ্যকে করের আওতায় আনল জিএসটি পরিষদ। তুলে নেওয়া হল ওই সব পণ্য থেকে কর ছাড়ের সুবিধা। ফলে এবার প্যাকেটবন্দি তথা সংস্থার লেবেল সাঁটা দই, লস্যি, পনির, চাল, ডাল, আটা, গুড়, মধু, মুড়ি, মাছ, মাংসের মতো পণ্যের উপরে বসানো হল ৫ শতাংশ হারে জিএসটি। এমনকী ব্যাংকের চেকবই পেতেও গ্রাহক দিতে হবে কর। সেক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ জিএসটি চাপল। এছাড়াও কর ফাঁকি রোধেও একাধিক ভাবনা রয়েছে জিএসটি পরিষদের।
রাজ্যগুলির মন্ত্রীগোষ্ঠীই বেশ কিছু পণ্যের উপর থেকে কর ছাড় তুলে নেওয়ার সুপারিশ করেছিল। সেই মতোই দই, পনির, চাল, ডাল, আটার মতো পণ্যের উপর কর চাপানোর সিদ্ধান্ত। চণ্ডীগড়ে চলছে জিএসটি পরিষদের দু’দিন ব্যাপি বৈঠক। মঙ্গলবার শুরু হওয়া বৈঠকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ । সেখানে হোটেলের ১০০০ টাকার কম ঘর ভাড়ার উপরেও ১২ শতাংশ কর বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইসিইউ বাদে, হাসপাতালের যেসব কক্ষের ভাড়া ৫০০০ টাকার উপরে সেগুলির উপরেও ৫ শতাংশ জিএসটি ধার্য করা হল। তবে আগের মতোই কর ছাড় পাবে মোড়ক এবং লেবেলড ব্র্যান্ড নেম ছাড়া পণ্যগুলি।
এখনই না বাড়লেও মনে করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে দাম বাড়তে পারে ভোজ্য তেল, ছাপার কালি, এলইডি আলো, ছুড়ি, ব্লেড, বিদ্যুতচালিত পাম্প, চামচের। কারণ এইসব পণ্যের কর কাঠামো বদলেরও সুপরিশ করেছে জিএসটি পরিষদ। এক্ষেত্রে জিএসটির হার ১২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৮ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে মন্ত্রীগোষ্ঠী। অন্যদিকে পোস্টকার্ড, ইনল্যান্ড লেটার, বুক পোস্ট এবং ১০ গ্রামের কম ওজনের খাম বাদ দিয়ে পোস্ট অফিসের বেশকিছু পরিষেবার উপরে কর ধার্য করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ বারের বৈঠক রাজ্যগুলিকে জিএসটি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্নে উত্তপ্ত হতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। জিএসটি চালু করার সময় মোদি সরকার সমস্ত রাজ্যকে কথা দিয়েছিল, তা আদায়ের ক্ষেত্রে তাদের ঘাটতি মেটাতে পাঁচ বছর ক্ষতিপূরণ দেবে তারা। চলতি মাসেই ফুরোচ্ছে সেই সময়সীমা। কেন্দ্রের যুক্তি, এর মেয়াদ আরও বাড়ানোর মতো আর্থিক ক্ষমতা তাদের নেই। কিন্তু বিরোধী রাজ্যগুলির দাবি, জিএসটি আদায়ে এখনও ঘাটতি হচ্ছে তাদের। ফলে ক্ষতিপূরণের মেয়াদ বাড়ানো হোক। সে ব্যাপারে আলোচনা হবে আজ । সেই সঙ্গে ঘোড়দৌড়, জুয়া খেলা (ক্যাসিনো) এবং অনলাইনে খেলার উপরে ২৮% কর বসানোর প্রস্তাবও উঠবে।
সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য উপদেষ্টা অমিত মিত্র জিএসটি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সময়সীমা বাড়াতে অনুরোধ করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে। এ দিন তিনি বৈঠকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আর্জি জানিয়ে চিঠি দেন নির্মলাকে। বলেন, সিদ্ধান্তগুলি যেন সংখ্যার জোরে নয়, সর্বসম্মত ভাবে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের কথাও। যেখানে বলা হয়েছিল, আইনত জিএসটি পরিষদের সিদ্ধান্ত রাজ্যগুলি মানতে বাধ্য নয়। এ ব্যাপারে কেন্দ্র এবং রাজ্য, দু’পক্ষই আইন তৈরি করতে পারে। তবে সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সকলে যাতে পরিষদের সিদ্ধান্ত মেনে চলে, সেই চেষ্টা করা হয়। তাই তাদের উচিত সকলের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে তাদের সিদ্ধান্ত যাতে সর্বসম্মত ভাবে মেনে চলা হয়, তা নিশ্চিত করা । ক্ষতিপূরণ চালানোর পাশাপাশি ছত্তীসগঢ়ের মতো বিজেপি বিরোধী রাজ্যের এটাও দাবি, রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে জিএসটির ভাগ বাড়িয়ে ৭০-৮০ শতাংশ করুক কেন্দ্র। এখন তা ৫০%। বিভিন্ন রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের একটি গোষ্ঠীকে কর কাঠামো সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোমাইয়ের নেতৃত্বের সেই মন্ত্রীগোষ্ঠীই গতকাল জিএসটি পরিষদের বৈঠকে একাধিক সুপারিশ করে।
❤ Support Us