- এই মুহূর্তে দে । শ
- নভেম্বর ১৭, ২০২৩
কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে রদবদল । অভিষেকের স্লোগানকে সামনে রেখেই তৃণমূলে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত
পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে দলের ব্লকস্তরে একগুচ্ছ সাংগঠনিক রদবদল করতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস

সিপিএম-এর এক সময়ের রাজ্য সম্পাদক প্রয়াত অনিল বিশ্বাস বলেছিলেন, “বামফ্রন্টের বিকল্প উন্নততর বামফ্রন্ট”, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক সেই একই সুরে বলেছেন, “নতুন তৃণমূল বা তৃণমূলের নবজোয়ার”। এই “নতুন তৃণমূল বা তৃণমূলের নবজোয়ার”-এর ধারণাতে নির্ভর করেই এবার জেলা স্তরের পর ব্লক স্তরে পারফরম্যান্স দেখে তৃণমূলে নয়া দায়িত্ব পেতে পারেন অনেক নেতা। আর এর ফলেই নিষ্ক্রিয় তৃণমূল নেতাদের অনেকেই পদ হারাতে পারেন। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এখন জনসংযোগ ও কর্মসূচী পালনে দলের নীচুতলার নেতাদের ভূমিকা যাচাই করছে। লোকসভার আগে পারফরম্যান্সই শেষ কথা, এই বার্তা দলের নেতাকর্মীদের বুঝিয়ে দিতে চাইছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। এই পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে জেলা থেকে রিপোর্ট আসতে শুরু করেছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। প্রসঙ্গত নবজোয়ার যাত্রায় পুরো কর্মসূচি ধরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “পারফরম্যান্স হচ্ছে শেষ কথা। কাজের ভিত্তিতেই আগামী দিন তৃণমূল পরিচালনার নেতৃত্ব তৈরি হবে। কর্মীরাই দলের সম্পদ। তবে সেই কর্মীদের সক্রিয় থাকতে হবে। মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হবে।” তৃণমূলের এই কাজের জন্য অভিষেকের বক্তব্যই যে শিরোধার্য করে দল এগোচ্ছে সেটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাজেই বোঝাই যাচ্ছে, তৃণমূলে নবজোয়ার আরও প্রবল গতিতে আসতে চলেছে।
তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছে এটা প্রমাণ করতে যে পারফরম্যান্স শেষ কথা। তাই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে সক্রিয় নেতাদের বাড়তি গুরুত্ব দায়িত্ব দিতে চাইছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এই পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে দলের ব্লকস্তরে একগুচ্ছ সাংগঠনিক রদবদল করতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে একই লক্ষ্যে নীচেরতলায় পরিবর্তনের কাজ মসৃণ ভাবে করতে চাইছেন দলীয় নেতৃত্ব। দলীয় সূ্ত্রে খবর, নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে যত দ্রুত সম্ভব ব্লক স্তরে সাংগঠনিক রদবদলের কাজ করে ফেলতে চাইলেও এই পরিস্থিতিতে পারফরম্যান্স দেখেই সাংগঠনিক রদবদল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তৃণমূল সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।
তাই প্রত্যেকটি তালিকা ধরেই সংশ্লিষ্ট জেলা, ব্লকের নেতৃত্ব এবং স্থানীয় বিধায়কের সঙ্গে কথা বলছেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব।ইতিমধ্যেই প্রায় সব জেলা থেকেই প্রস্তাবিত সেই তালিকা জমা পড়েছে। তবে তা নিয়ে জেলা ও ব্লক স্তরে মতপার্থক্যের আঁচও টের পেয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব।সূত্রের খবর, যে সব জায়গায় সভাপতির ভাবমূর্তি বা সক্রিয়তা নিয়ে সমস্যা আছে, সেখানে বদল করতেই হবে। দল সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজন মতো সেই সিদ্ধান্ত নেবে।
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি পদে রদবদলে একাধিক নাম আসছে দলের কাছে। সাংগঠনিক রদবদলের প্রক্রিয়ায় নতুন ব্লক সভাপতি বাছাই প্রক্রিয়ায় দাবিদারদের পারফরম্যান্স যাচাই করছে তৃণমূল কংগ্রেস। জেলা থেকে আসা তালিকায় এমন অনেকের নাম রয়েছে, যাঁদের ভাবমূর্তি নিয়ে সংশয়ের কথা আগেই দলকে জানিয়ে রেখেছে তৃণমূলের বিশেষ টিম। পারফরম্যান্স না থাকলে অনেক পুরনো সংগঠকই বাদ যেতে পারেন। ২০২১ এর বিধানসভা, ২০২২ এর পুরসভা ও ২০২৩ এর পঞ্চায়েত ও দলের কর্মসূচীতে এই নেতাদের ভূমিকা ও অংশগ্রহণ কতটা ছিল সেটা দেখা হচ্ছে। সংগঠনে যারা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন তাদেরকেই দায়িত্ব দিতে তৎপর তৃণমূল কংগ্রেস৷
তবে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের মুখে দলের এই ঝাড়াইবাছাই ব্লক স্তরে করা হলে তৃণমূল দলে ভাঙন আস্তে পারে বলে দলেরই কেউ কেউ মনে করছেন। যে ভাবে জেলায় জেলায় তৃণমূলের মধ্যে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, মাদার ও নতুন তৃণমূলের সম্পর্কে যে তিক্ততা তৈরী হয়েছে সেখানে দাঁড়িয়ে এ ভাবে ব্লক স্তরে পারফরম্যান্স দেখে নেতৃত্ব নির্বাচন করলে তাদের সঙ্গে ব্লক তৃণমূলের সক্রিয় নয় এমন তৃণমূল নেতাকর্মীদের যে সংঘাত হবে না তার গ্যারিন্টি কোথায়? সেই প্রশ্নও তৃণমূলের কোনও কোনও নেতৃত্ব তুলছেন। তবে দলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তই এখন প্রধান গুরুত্ব পাচ্ছে, তাই সেই দিকে তাকিয়ে কেউ ব্লক স্তরে এখনই কোনও বড় রকমের পরিবর্তন চাইছেন না। রাজ্যের সব জেলার সব ব্লকেই তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল এখন প্রকাশ্যে আসছে। তাই এই সময় দাঁড়িয়ে ব্লক স্তরে সাংগঠনিক নেতৃত্বের পরিবর্তন কতটা সময়োপযোগী সেটা ভাবার দরকার আছে। বিশেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগে বড় অংশের নেতৃত্বকে হঠাৎ করে সরিয়ে দলের কোনও সংস্কারের কাজ করেননি। তাই মমতা ঘনিষ্ট তৃণমূল নেতানেত্রীরা চাইছেন এই বিষয়ে “ধীরে চলতে”।
❤ Support Us