- গ | ল্প রোব-e-বর্ণ
- মার্চ ৯, ২০২৫
একটি অদৃশ্য জগতের উদ্দেশ্যে

অলঙ্করণ: দেব সরকার
শোনো !
চেরাগাঁও সরকারি আপেল বাগানের প্রধান মালি দজি চিনঝেজি তার কোয়ার্টারের ছোটো গেটটা খুলতে যাচ্ছেন, তখনই স্ত্রী বালেকমুরের গলা শুনে ঘরের দিকে ফিরে তাকালেন। দেখলেন, স্ত্রী তাড়াহুড়ো করে ভেতর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় আসছেন।
কী হল আবার ?— খানিকটা বিরক্তি নিয়েই বললেন দজি ।
সাহেবের কাছ থেকে আগামীকাল ছুটি নিতে ভুলে যেও না আবার– স্মরণ করিয়ে দিলেন বালেকমুর।
হবে না। আপেল তোলার কাজ চলছে। এই সময়ে সাহেবের কাছ ছুটি চাওয়া যায় ? তুমি তো জানই, এবছর ফলন ভালো হয়েছে। শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি আপেল তোলার কাজ শেষ না হয়, তবে ওপরওয়ালা আমাদের এমনিতেই ছুটি করে দেবে।
একদিনের ছুটি নিলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে না। গত বছর নরবুর অ্যানুয়াল স্কুল ফাংশনে যাওয়া হয়নি। সেজন্য সে যে কত দুঃখ প্রকাশ করেছিল।
কিন্তু আমরা তো তার মা-বাবা নই— কথাটা প্রায় বলেই ফেলেছিল, কিন্ত শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়েছিল দজি। তাদের কোনো সন্তান নেই । বালেকমুর নিজের সমস্ত ভালোবাসা, স্নেহ তার ভাইপোর ওপর উপুড় করে দিয়েছে। চেরাগাঁওয়ের বিবেকানন্দ স্কুল হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে নরবুর। ওর বাবা পুলিশে কাজ করেন, দূরে থাকেন ।তাই জ্যাঠা জেঠিমা নরবুরের স্থানীয় অভিভাবক। শুধু অভিভাবক নয়, তারাই যেন নরবুরের আসল মা বাবা। বালেকমুরের কাছে তো নরবু চোখের মণি, হৃদয়ের মুক্তো।
হবে ! হবে ! মুখ ফুলিয়ে থাকতে হবে না।আগামীকাল স্কুলে যাবার জন্য তৈরি থাকবে।— স্ত্রীর মান ভাঙাতে কথাগুলো বলে বেরিয়ে গেলেন দজি ।
স্বামীকে রাজি করাতে পেরে মুখে যুদ্ধ জয়ের হাসি নিয়ে রান্নাঘরে ফিরে এলেন বালেকমুর। মনে মনে ভাবলেন, মানুষটা যে কী ধরনের ? একদিনের জন্য কাজ থেকে ছুটি নিতে চায় না। নিজের বাড়ির সমস্ত কাজকর্ম অবহেলা করে অনবরত সরকারি খামারের উন্নতির কাজে ব্যস্ত !
বত্রিশ বছর ধরে দজি চিনঝেজি চেরাগাঁওয়ের এই সরকারি আপেল খামারে কাজ করছেন। প্রথমে ঢুকেছিলেন ক্যাজুয়াল লেবার হিসেবে। এখন প্রধান মালি। সত্যি কথা বলতে গেলে তিনিই যেন বাগানের সর্বেসর্বা । খামারের ম্যানেজার থেকে আরম্ভ করে অন্যান্য সাহেব এবং প্রায় একশো জনের মতো মালি, লেবার সবাই তাঁকে ভরসা করে। সব কাজেই তাঁর পরামর্শ চায়। এমনকী কর্মীদের মধ্যে মনোমালিন্য, ঝগড়াঝাটি হলেও তা মেটাতে ডাক পরে দজির। প্রত্যেকের সুখ-দুঃখ, জন্ম মৃত্যু, অসুখ-বিসুখে সাহায্য করতে নিঃস্বার্থভাবে এগিয়েও যায় দজি, তাই হয়তো সবাই তাঁকে এতো মান্নি করে। আপেল তোলার এই ভরা মরসুমে, ব্যক্তিগত কাজে ছুটি নেওয়াটা পছন্দ করে না দজি। স্বামীর সেই কর্তব্যপরায়ণতার কথা ভেবে বালেকমুরের মন কোমল হয়ে গেল। একসময় চোখ জোড়া ভিজে উঠল। চোখটা মুছতে যাবেন, সেই মূহুর্তে একটা পরিচিত কন্ঠস্বর শুনতে পেলেন। তাকে উদ্দেশ্য করে ডাকছে— মা ! মা !
কী হল ? এভাবে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছ কেন ?— রান্নাঘর থেকেই চিৎকার করে জিজ্ঞাসা করলেন বালেকমুর।
মেমে কোথায় গেল ? – জানতে চাইলো ঘরের বাইরে দাড়িয়ে থাকা নেপালি মালি।
কোথায় যাবে আবার ! খামারে…।– জানালা থেকে এবার মুখ বাড়িয়ে জবাব দিলেন বালেকমু।
কিন্তু তিনি তো আজ বাগানে আসেননি। মেমে এখন পর্যন্ত কাজে আসেননি, তাই সাহেব আমাকে দিয়ে ডাকতে পাঠিয়েছেন।
মাঝপথে কোথাও গিয়েছে বোধহয়। যান, গিয়ে খোঁজ করুন, জবাব দিল বালেকমুর
নেপালি মালিটি দ্রুত খামার অফিসে ফিরে সাহেবকে জানাল, দজি ঘরে নেই । গুদামের চাবি গুলি সাধারনত দজির হাতে থাকে। অন্যদিন বাকিদের আসার আগেই তিনি এসে গুদাম থেকে কোদাল-বেলচা-দা বের করে ঠিকঠাক করে রাখেন এবং শ্রমিকরা কোথায় কী কাজ করবে সেটা বুঝিয়ে পাঠিয়ে দেন। এখন আপেল তোলার সময়। ঝুড়ি এবং কাঠের ঘোড়ার দরকার। সঙ্গে প্যাকিং বাক্স। সবই এই গুদামে আছে আর চাবি আছে দজির সঙ্গে।সবাই অপেক্ষা করছে, অথচ দজি না এসেছে খামারে না আছে বাড়িতে । ফার্ম ম্যানেজার শ্রমিকদের তৎক্ষণাৎ দজিকে খুঁজে বের করার জন্য নানা দিকে পাঠিয়ে দিলেন। তারা সম্ভাব্য সমস্ত জায়গায় তাঁকে খুঁজে বেড়াল। খামারের মুখ্য বিরাট লোহার গেটে এখনও তালা ঝুলছে, চৌকিদার গেটটা খোলার প্রয়োজন অনুভব করেনি, কেউ তাকে লোহার গেটটা খুলে দেবার জন্য অনুরোধ করেনি, তাই বাগনের কম্পাউন্ড ছেড়ে বাইরে যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না। দুশো ষাট হেক্টর বিস্তৃত এই জায়গা। তার ভেতরে বাগান, নার্সারি, অফিস এবং স্টাফ কোয়াটার। চারপাশে পেজ এবং বার্ব ওয়ারের ডাবল বেড়া, পার হয়ে যাবার কোনো ফাঁক-ফোঁকর নেই।মালি-শ্রমিক প্রত্যেকেই তাঁর নাম ধরে চিৎকার করল, ফার্মের কোণে কোণে, গুদামঘর, কোয়ার্টার, সমস্ত কিছু তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখল। নেই, দজি নেই। কেউ তাকে দেখেনি।এমনকি নিজের স্ত্রী বালেকমু বাড়ির গেট পার হয়ে যাওয়ার পরে আর তাকে দেখেনি।
প্রশ্নের উত্তরে মায়া শুধু তাদের দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে ছিল, মুখ থেকে কোনো উত্তর বের হচ্ছিল না।।যখন বালেকমুর বলল যে সে মায়াকে তার স্বামীর পেছন পেছন ফার্মের দিকে যেতে দেখেছিল, তখন প্রত্যেকেই তাকে ঘিরে ধরে নানা প্রশ্ন করতে লাগল। এক অজানা ভয়ে মায়া তখনও কাঁপছিল, চোখ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল এবং মুখের ভেতরে কী সব বিড়বিড় করছিল
দজিকে স্ত্রী বিদায় দেওয়ার পরে আর যে কেউ দেখেনি, তা কিন্তু নয়। পাশের বাড়ির নেপালি মেয়ে মায়া দজিকে দেখতে পেয়েছিল। কিন্তু সে এতটা ভয়ে ভয়ে ছিল যে নিজে এগিয়ে এসে সে মুখ খুলে কোনো কথা বলছিল না।তাকে বালেকমুর স্বামীর পেছন পেছন যেতে দেখেছিল। যখন মানুষগুলি ‘মেমে মেমে’ বলে চিৎকার করে গোটা খামার জুড়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিল, তখনও সে বজ্রপাতের মতো বাগানের মাঝখান দিয়ে যাওয়া পথটাতে দাঁড়িয়েছিল। মেমে কে সেকি দেখতে পেয়েছিল ? এ প্রশ্নের উত্তরে মায়া শুধু তাদের দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে ছিল, মুখ থেকে কোনো উত্তর বের হচ্ছিল না।।যখন বালেকমুর বলল যে সে মায়াকে তার স্বামীর পেছন পেছন ফার্মের দিকে যেতে দেখেছিল, তখন প্রত্যেকেই তাকে ঘিরে ধরে নানা প্রশ্ন করতে লাগল। এক অজানা ভয়ে মায়া তখনও কাঁপছিল, চোখ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল এবং মুখের ভেতরে কী সব বিড়বিড় করছিল। প্রত্যেকের কাছ থেকে অভয় পাওয়ার পরে অবশেষে তার ভয় কমেছিল। অস্ফুট কাঁপা কাঁপা স্বরে সে বলতে শুরু করল ’ …আমি… আমি … মমে …মমে হঠাৎ নাই হয়ে …যাওয়া’ পুনরায় ভয়ে কাঁপতে আরম্ভ করল।
বল মায়া বল। ভয় করিস না আমরা আছি তো। ভয় করিস না।— তাকে তার মা-বাবা দুজনেই অভয় দিল।
আমার চোখের সামনে মেমে আস্তে আস্তে নাই হয়ে গেল।— সে অতি কষ্টে বলল ।
নাই হয়ে গেল ? কীভাবে মানুষ একজন চোখের সামনে নাই হয়ে যেতে পারে ?— অবিশ্বাসে বালেকমু চিৎকার করে উঠল।
আমার চোখের সামনে মেমে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল। সত্যি… আমি নিজের চোখে দেখেছি।— মায়া এবার দৃঢ়তার সঙ্গে বল উঠল।
মিথ্যা ! তুমি মিথ্যা কথা বলছ ?
সত্যি, মা কসম সত্যি কথা বলছি। আমি মেমের পেছন পেছন যাচ্ছিলাম। তিনি আমাকে গাছ থেকে খসে পড়া আপেলগুলি কুড়োতে দেবেন বলেছিলেন ।— মায়া ক্রমশ মুখর হয়ে উঠল।
ঘুরিয়ে পেচিয়ে না বলে তাড়াতাড়ি বল কী হয়েছিল তারপরে ? —মায়ার পিতা অধৈর্য হয়ে চিৎকার করে উঠল।
মেমেই আমাকে বলেছিল গাছ থেকে ভালো আপেলগুলি চুরি না করার জন্য। শুধু নিচে খসে পড়া আপেলগুলি কুড়োনোর জন্য…কিন্তু তিনি কথা শেষ করার আগে আমি সেখানটিতে…ঠিক সেই জায়গায় তাকে ক্রমান্বয়ে সামনের দিক থেকে নাই হয়ে যেতে দেখলাম।
কীভাবে ?
ও…মানুষ একজন ঘরে ঢুকলে যে ভাবে না দেখা হয়ে যায় সেভাবে ?
তার কথা বিশ্বাস করবে না।ও খুব কথা সাজিয়ে বলতে পারে।— মায়ার মা বলে উঠল।
কে তোর কথা বিশ্বাস করবে। মিথ্যাবাদী মেয়ে কোথাকার ! — মায়ার বাবা মেয়েতে গালিগালাজ করতে শুরু করল।
মেয়েটিকে বলতে দে তো। ফার্ম ম্যানেজার মায়ার বাবাকে আদেশের সুরে বলে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলেন— আচ্ছা, আর একবার বলতো, মেম ঠিক কোন জায়গাটায় নাই হয়ে গিয়েছিল ?
রাস্তার ঠিক মাঝখানে, বলেই অঙুল উঁচিয়ে দিয়ে দু মিটার সামনের জায়গাটা দেখাল মায়া । বলল, আমি এখানেই ছিলাম। বা পা টা তুলে মাটিতে আঘাত করে দেখাল।
মেয়েটির কাছ থেকে মাত্র দুই মিটার আগে দজি ছিল। সেই সময়ই দজি অদৃশ্য হয়ে পড়েছিল তার চোখের সামনে। অবিশ্বাস্য। তথাপি ফার্ম ম্যানেজার শেষবারের জন্য চেষ্টা করলেন তার কাছ থেকে আরও কথা বের করার জন্য— মেমেই হয়তো তোর সঙ্গে লুকোচুরি খেলেছিল ?
রাস্তার মাঝখানে কি লুকোচুরি খেলা যায় ? তার মধ্যে যে লুকোনোর মতো কিছু নেই। – কথাটা বলে উঠে সে জিভ বের করল, তারপরে পুনরায় বলল… হতেও পারে, মেমেই হয়তো আমার সঙ্গে লুকোচুরি খেলার জন্য ম্যাজিক করে লুকিয়ে পড়ল।
মায়ার কিছু বদভ্যাস আছে। খারাপ হয়ে খসে পরা আপেল কুড়োনোর নামে গাছ থেকে ভালো আপেল ছিঁড়ে গ্রামে সস্তায় বিক্রি করা, মিথ্যা কথা বলা, ঝগড়াঝাঁটি করা ইত্যাদি । এজন্য খামারে তার বদনাম আছে। তাই তার কথায় কেউ বিশ্বাস করল না। দিনদুপুরে একজন রক্তমাংসের মানুষ ভূতের মতো অদৃশ্য হয়ে যাবে ? এটা মায়ার মনগড়া গল্প ছাড়া আর কিছু নয়।
খামারের ম্যানেজার গ্রাম তথা বাজারে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য লোক পাঠাল। কিন্তু কেউই দজির কোনো সন্ধান দিতে পারল না। থানায় খবর যেতেই অনুসন্ধান শুরু করল পুলিশ । দজির নিরুদ্দেশের খবর পেয়ে তাঁর গ্রাম জগাং এবং আশেপাশের গ্রাম মুচাকচিং মুখুথিং ইত্যাদি থেকে দলে দলে মানুষ এসে উপস্থিত হল। গুম্ফায় গিয়ে লামার সঙ্গেও দেখা করল তাঁর স্ত্রী এবং গ্রামবাসীরা। লামা গণনা করে বললেন দজি মরেনি। সে বেঁচে আছে।
গ্রামের যুবক ছেলেদের নিয়ে একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হল। তারা বন জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত-গুফা, নদীর কূল-উপকূল খুঁজে বেড়াল, জীবিত না হোক অন্তত দজির মৃতদেহটাতো খুঁজে পাওয়া যাবে। এই ধরনের ঘটনা এই প্রথম নয়। কয়েক বছর আগে ঞিমা মাস্টার নিরুদ্দেশ হওয়ার পরে তার মৃতদেহ গ্রামের পরিত্যক্ত হেলিপ্যাডের পাশের একটা ঘর থেকে উদ্ধার করেছিল সন্ধানী দল। দোফোলো নদীতে স্নান করতে গিয়ে নিরুদ্দেশ যুবক লামার শব উদ্ধার হয়েছিল পাঁচ মাইল নীচের একটি খুলি থেকে। একজন মানুষ কতদিন সন্ধানহীন হয়ে থাকতে পারে ?
নেতান, জোম, কেজাং ইত্যাদি দুই এক বছরের ভেতরে এ অঞ্চল থেকে বিদায় নেওয়া মানুষগুলির আত্মার সঙ্গে কথাবার্তা বলে জানা গেল সে জগতে দজি আসেনি। দর নরবু সমগ্র অঞ্চলের সুউচ্চ পাহাড়, জমুলা জংগুলা, গুহা, গাছের খোড়ল ইত্যাদিতে থাকা ডাকিনি জখিনি, ভূত-প্রেতের মধ্যে তন্ন তন্ন করে খুঁজল, কোথাও দজিকে খুঁজে পেল না। র’মাতের ইষ্ট দেবতা শুধু বলল, একটি ছোটো মেয়ে দজির সন্ধান জানে
রুপা থানার পুলিশ এসে খামারের সবাইকে জেরা করল, বাড়ি বাড়ি গিয়ে খানা তল্লাশি চালাল, যেখানে সেখানে মাটি খুঁড়ল, কিন্তু কোথাও কোনো সূত্র পাওয়া গেল না।দজিকে কেউ হত্যা করবে এমন কাউকেই পাওয়া গেল না। আর তাঁকে হত্যা করবেই বা কেন ? তাঁর কোনো শত্রু ছিল না, কারো সঙ্গে ঝগড়াঝাটি ছিল না। পতি-পত্নী দুজনে একটি পবিত্রময় জীবন যাপন করত। প্রত্যেকেই তাদেরকে ভালোবাসত এবং শ্রদ্ধা করত।
যখন দজিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না, তখন মুচাকচিং গ্রাম থেকে র’মা পুরোহিতকে আনা হল। ভালো করে সাজগোজ করে পূজাস্থলে বসে, মৃত আত্মাকে নিজের শরীরে ধারণ করে, আত্মার সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনদের কথোপকথন করে দেওয়াই র’মাতদের কাজ। মুচা কচিং গ্রামের দর নরবু একজন ভালো র’মাত। তার সঙ্গে বালেকমুরের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। তাই দর নরবু দজির আত্মা খুঁজতে খামারের ভেতরেই পুজো শুরু করল। নেতান, জোম, কেজাং ইত্যাদি দুই এক বছরের ভেতরে এ অঞ্চল থেকে বিদায় নেওয়া মানুষগুলির আত্মার সঙ্গে কথাবার্তা বলে জানা গেল সে জগতে দজি আসেনি। দর নরবু সমগ্র অঞ্চলের সুউচ্চ পাহাড়, জমুলা জংগুলা, গুহা, গাছের খোড়ল ইত্যাদিতে থাকা ডাকিনি জখিনি, ভূত-প্রেতের মধ্যে তন্ন তন্ন করে খুঁজল, কোথাও দজিকে খুঁজে পেল না। র’মাতের ইষ্ট দেবতা শুধু বলল, একটি ছোটো মেয়ে দজির সন্ধান জানে। লামার গণনাও অবশ্য সেই কথাই বলেছিল ।
মায়াকে পুনরায় জেরা করা শুরু হল, কিন্তু তার একটিই কথা, পথের মাঝখান থেকে মেমে দজি তার চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।রহস্যজনকভাবে সন্ধানহীন হয়ে পড়া দজির ঘটনায় বিমূঢ় হয়ে পড়া মানুষগুলি ধীরে ধীরে মায়া নামের সেই ছোট্ট মেয়েটি বলা কথাটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল।
আমার মায়ার কথা সত্যি বলেই মনে হচ্ছে।রহস্যের বই পত্র পড়তে পছন্দ করা গেলং নামের শিক্ষক, খামারে জমায়েত হওয়া সন্ধানী দলের সমস্ত সদস্যের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করল— আমার মনে আছে ঠিক এই ধরনের ঘটনার কাহিনি আমি বহুদিন আগে ‘রিডার্স ডাইজেস্ট’না কোথায় যেন পড়েছিলাম। মনে হয় আপনারাও কাহিনিটি পড়েছেন।পশ্চিমের কোনো একটি দেশে, দেশটির নাম সঠিক আমার এখন মনে নেই, একবার না দুবার ঠিক এরকম ঘটনা ঘটেছিল।পথে যেতে যেতে নয়, মাঠে যেতে থাকা একজন মানুষ পরদার আড়ালে নাই হয়ে যাওয়ার মতো হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।অনেক খুঁজেও মানুষটাকে উদ্ধার করা যায়নি। কখনো বা সেই জগতের খোলা দরজায় মানুষ কোনোভাবে ঢুকে পড়লে সে অদৃশ্য হয়ে যায়।
হ্যাঁ, সত্যিই এরকমটা হতে পারে।রহস্যের জালে কূল কিনারা না পেয়ে মানুষগুলি মাস্টারের কথায় যৌক্তিকতা খুঁজে পেল।
কিন্তু একজন মানুষ ইহসংসার থেকে নাই হয়ে গেল, শ্রাদ্ধের আয়োজন করতে হবে না কি ? দজির ভাই চিরিঙ মতামত জানতে চাইল।
মানুষটার মৃত্যু হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। কে জানে কোনো একদিন এসে উপস্থিত হলে হতেও পারে । অন্য একজন বলল।
আচ্ছা গেলং স্যার, সেই অদৃশ্য জগতে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলি কখনও ফিরে এসেছিল কি ?—চিরিঙ জিজ্ঞেস করল।
অনেক দিন আগে পড়া, সঠিক মনে নেই, ফিরে আসেনি বলেই মনে হচ্ছে– মাথা চুলকে গেলং মাস্টার মনে করার চেষ্টা করল
যদি ফিরে আসে তাহলে শ্রাদ্ধ করাটা উচিত হবে না, যদি না আসে তাহলে অন্তত একটা শ্রাদ্ধের আয়োজন করতে হবে– চিরিঙ বলল।
একটা মজার কথা মনে পড়ছে। নরেন্দ্র শর্মা নামে আমাদের একজন স্যার ছিলেন। চিনা যুদ্ধের সময় তার পোস্টিং ছিল ঙকমাদুং গ্রামে। তিনি পালিয়ে যাবার সময় চিনারা ধরে নিয়ে গেল। স্যারের বাড়ি ছিল অসমের নলবাড়িতে। স্যার বাড়িতে না আসায় তার বাড়ির মানুষগুলি ভেবেছিল স্যারের চিনাদের হাতে মৃত্যু হয়েছে । এইভেবে তাঁর শ্রাদ্ধের আয়োজন করেছিল। স্যারের স্ত্রী মাথার সিঁদুর মুছে বিধবার পোশাক পরেছিল। চিনারা স্যারকে কিন্তু মেরে ফেলেনি বরং অসমিয়া শেখানোর জন্য শিক্ষকের নিযুক্তি দিয়ে দিরাঙে রেখেছিল। পরে তারা ফিরে যাবার সময় স্যারকে ছেড়ে দিয়েছিল। স্যার বাড়িতে ফিরে আসায় বাড়ির মানুষ আনন্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লজ্জাও পেয়েছিল।– গেলং মাস্টার কাহিনিটা শোনাল।
ও, এই ধরনের ঘটনার খবর মাঝেমধ্যে পড়ে থাকি। তাই মেমে দজির শ্রাদ্ধের আয়োজন করলেও খারাপ হবে না, একটু লজ্জা পাবেন, ব্যস এতোটুকুই। যদি একেবারে ফিরে না আসেন, তাহলে মানুষটা শেষ পুজোটুকুও পাবে না কি ?– জাগাং গ্রামের পঞ্চায়েত মেম্বার পরামর্শ দিল।
তর্কবিতর্ক চলার পরে প্রত্যেকেই একমত হল যে, দজির শেষ শ্রাদ্ধ যথা নিয়মে পালন করতে হবে।
বালেকমুর কোনো আপত্তি করল না। তিনি জাগাঙ গিয়ে নিজের বাড়িতে স্বামীর শ্রাদ্ধের আয়োজন করলেন। সমস্ত কাজ সমাধা হওয়ার পরে সে খামারে ফিরে ম্যানেজারের কাছে গেল। স্বামীর প্রাপ্য টাকা এবং ফ্যামিলি পেনশন দেবার জন্য দরখাস্ত করল। দয়ালু বাগান ম্যানেজার তৎক্ষণাৎ তাকে সাহায্য করার জন্য আশ্বাস দিলেন।বললেন, বালেকমুরকে মাত্র সাকসেশন সার্টিফিকেট দিলেই হবে, সঙ্গে সঙ্গে তিনি সমস্ত কাজ করে দেবেন।
দেওর চিরিঙকে সঙ্গে নিয়ে সে বমডিলায় গেল এবং উপায়ুক্তের অফিসে দরখাস্ত করল।
ওহো, শুধু দরখাস্তের ফর্ম ভর্তি করে দিলে হবে না। দজির যে মৃত্যু হয়েছে তার প্রমাণস্বরূপ ডেথ সার্টিফিকেটটা লাগবে।– জবাব দিল কেরানি।
এইবার বালেকমুর চেরা গ্রামের ডাক্তারের কাছে এল। ডাক্তার তার প্রতি সহানুভূতিশীল, কিন্তু তিনিও দজির সার্টিফিকেটটা লিখে দিলেন না। বললেন, তোমার স্বামীর সমস্ত ঘটনা আমি জানি। তিনি কোথাও হারিয়ে গেছেন, মারা তো যাননি। যেহেতু মারা যাননি, মারা গেছে বলে আমি কীভাবে লিখে দেব ? আমার অধীনে চিকিৎসাধীন হয়ে থেকে না মরলেও তার মৃতদেহটা কেউ দেখতে পেয়েছিল, এমন কেউ নিশ্চিচ করলে সার্টিফিকেটটা চোখ বুজে দিতে পারতাম। সেরকম কোনো মানুষ আছে কি ?
না, সেরকম কেউ নেই।— চিরিঙ বালেকমুর হয়ে উত্তর দিল।
যেহেতু সেরকম কোনো মানুষ নেই, তিনি যে মারা গেছেন তার প্রমাণ কোথায় ?
কাল যদি দজি সশরীরে ফিরে আসে আমার প্রফেশনের কি হবে। তোমাদের বোধহয় এই ক্ষেত্রে পুলিশই সাহায্য করতে পারবে।
এইবার বালেকমু রুপার পুলিশ স্টেশনে গিয়ে উপস্থিত হল।
হ্যাঁ, আপনার স্বামীর কেসটা আমরা জানি। বড়ো রহস্যজনক কেস। জীবনে কত কেস সলভ করলাম, এই ধরনের কেস কিন্তু পাইনি।বললেন, থানার ওসি
আপনি একমাত্র মানুষ যিনি আমাকে সাহায্য করতে পারেন।– ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে চাওয়া কান্নাকে অতি কষ্টে দমন করে বালেকমু বলল।
আপনার কি সাহায্য চাই বলুন। কোথাও কিছু সূত্র পেয়েছেন কি ?– ওসি উৎসাহিত হয়ে উঠল।
আমার মানুষটার ডেথ সার্টিফিকেট চাই।
কিন্তু আমরা তো ডেথ সার্টিফিকেট দিই না।
আপনি আমাকে সাহায্য করতে পারবেন।– দজির স্ত্রী অনুনয় করে বলল।
আমরা আর কি করতে পারি। কেস রেজিস্টার করতে হয় তা করে দিয়েছি, যেখানে সেখানে খোঁজ করা দরকার করেছি। আপনারা এত খোঁজ খবর করলেন, না তাকে পেলেন, না তার মৃতদেহ পেলেন। তাকে আমরা মিসিং বলে ঘোষণা করলাম। কি জানি কোথাও হয়তো তাকে জীবিত বা মৃত পাওয়া যেতে পারে। আপনারাওকোনো সূত্র পেলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের খবর দেবেন।
বালেকমুর কোয়ার্টারে ফেরার পথ ধরলেন। আপেল বাগানের মাঝখান দিয়ে হেঁটে আসার সময় সে স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার জায়গাটা আরেকবার তাকিয়ে দেখলেন। একদিন এই বাগানটাই তার সবচেয়ে প্রিয় ছিল। নিজের গ্রাম নিজের চাষবাসের চেয়েও এই জায়গাটা তার কাছে বেশি আপন বলে মনে হতো। কিন্তু এখন এই শীতের দিনে আপেল গাছগুলির মতো তার জীবন শীর্ণ হয়ে পড়েছে
নিরাশ হয়ে বালেকমুর আপেল খামারে ফিরে এলেন। সঙ্গে বোনকে নিয়ে এল পোঁটলা -পুঁটলি বাঁধার জন্য। পুরো তিন মাস শ্রাদ্ধ পেনশনের পেছনে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে পার হয়ে গেল। এখন শেষবারের জন্য বাগান ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করবে।
দজির কেসটার সম্পূর্ণ বিবরণ আমি ডাইরেক্টরের কাছে পাঠিয়েছি।— বালেকমুরকে সামনের চেয়ারে বসতে বলে ফার্ম ম্যানেজার বললেন– তোমার প্রাপ্য টাকা পয়সার মামলা এবং ফ্যামিলি পেনশনের কেসটা স্পেশাল কেস হিসেবে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেছি। একবার ইটানগরে যেতে পারলে পার্সোনালি আমি কথাটা তাকে বুঝিয়ে বলব। কী বলবেন বলতে পারছি না। তুমি যদি ইচ্ছা কর এখানে কেজুয়াল লেবার হিসাবে কাজ করতে পার। আর যতদিন ইচ্ছা কোয়ার্টারে থাকতে পার।
আমার এখানে থাকার ইচ্ছা নেই। গ্রামে ফিরে যাব বলে ঠিক করেছি। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে বাড়িটা ছেড়ে দেব। আপনার কাছে একটা শেষ সাহায্য চাইতে এসেছি।
বল।
জিনিসপত্র গুলি নিয়ে যাবার জন্য খামারের ট্রাকটা দিতে পারবেন ?
নিশ্চয় নিশ্চয়।
তোমার কবে লাগবে বলবে।
চার দিনের দিন। এই তিন দিনে এখনকার কাজকর্ম গুলি সামলে নেব।
বালেকমুর কোয়ার্টারে ফেরার পথ ধরলেন। আপেল বাগানের মাঝখান দিয়ে হেঁটে আসার সময় সে স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার জায়গাটা আরেকবার তাকিয়ে দেখলেন। একদিন এই বাগানটাই তার সবচেয়ে প্রিয় ছিল। নিজের গ্রাম নিজের চাষবাসের চেয়েও এই জায়গাটা তার কাছে বেশি আপন বলে মনে হতো। কিন্তু এখন এই শীতের দিনে আপেল গাছগুলির মতো তার জীবন শীর্ণ হয়ে পড়েছে। বসন্তকাল এলেই এই আপেল গাছগুলি সাদা সাদা ফুলে ভরে উঠবে, গাছে গাছে সবুজ কচি পাতা বের হবে, ডাল ভরে ফল ধরব্ কিন্তু তার জীবনে কখনও ফুল ফুটবে না,ফল ধরা তো দূরের কথা।
জীবনের বহু মূল্যবান বত্রিশটা বছর ফল গাছ লাগিয়ে লালন পালন করে বড়ো করে ডালে ডালে লক্ষ লক্ষ ফল ধরিয়ে সময় অতিবাহিত করে দিলেন, ভগবানের কাছে হাজার কাকুতি মিনতি করার পরেও ভগবান কিন্তু তার গর্ভে কোনো ফল দিল না। তথাপি যার আশ্রয়ে সে জীবিত ছিল, তাকেও ভগবান না জানিয়ে নিয়ে গেল,কোথাও কোনো চিহ্ন না রেখে।
এখন মালি, শ্রমিকরা আপেল গাছে কলম করা, চুনা লাগানো, নতুন চারা রোপন করার জন্য গর্ত খোঁড়া আদি কাজে ব্যস্ত। ওরা আগের মতোই চিৎকার চেঁচামেচি করে সকালবেলা কাজে বেরিয়ে যায়, বিকেলে ফিরে আসে। এখন তাকে সকালে কাউকে বিদায় জানাতে হয় না। বিকেলে কারও জন্য পথ চেয়ে থাকতেও হয় না। এই সময়ে তার বাইরে বের হতে ইচ্ছা হয় না। খামারে ফিরে আসার পরে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য মানুষ কিন্তু আসছেই। বুড়ো-বুড়ি, যুবক-যুবতী, ছেলে-মেয়ে প্রত্যেকেই। প্রত্যেকেই যেন তার দুঃখে দুঃখী। মাত্র মায়া নামের সেই নেপালি মেয়েটি তার কাছে আসেনি।প্রত্যেকেই তাকে বলেছে মায়া প্রত্যেকদিন সকালবেলা গিয়ে সেই জায়গাটাই দাঁড়িয়ে থাকে, যেন কারও জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে। জিজ্ঞেস করলে কিছুই বলে না। লোকেরা বলতে শুরু করেছে সে পাগল হয়ে গেছে। মেমে দজির মতো সেও একদিন অদৃশ্য হয়ে যাবে।
আগামীকাল বালেকমুর চলে যাবেন। সে ঘরের বাসনপত্রগুলি সামলে সুমলে একটা বাক্সে ভর্তি শুরু করেছেন। সে আভাস পেল শ্রমিকরা একে অপরকে ডাকাডাকি করে হাসি ঠাট্টা করতে করতে কাজে বেরিয়ে গেছে। দজি থাকলে সেও প্রায় এই সময়েই কাজে বেরিয়ে যেত। এই বছরও নরবুর স্কুলের ফাংশনে যাওয়া হল না। মানুষটা বেরিয়ে যাবার সময় ছুটি নেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিল– চিরদিনের জন্য নিজেরই ছুটি হয়ে গেল– ভাবগুলি মনে আসার সঙ্গে সঙ্গে বালেকমুরের চোখ দুটি ভিজে উঠল।
ও মা।মাগো। বাইরে মায়ার উত্তেজিত স্বর শুনে তখনই চোখের জল মুছে বালেকমু দরজার মুখে বেরিয়ে এল।চোখের সামনে সে যে দৃশ্য দেখল, বিস্ময়ে স্তম্ভিত হয়ে গেল। কোনোমতে সে দরজাটা ধরে পড়ে যাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করল।
দেখ আমি মেমেককে নিয়ে এসেছি। দজি চিনঝেজির হাত ধরে পেছন পেছনে আসতে থাকা মায়া গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করল।
গেট খুলে দজি বারান্দায় উঠে এল। পরনে তার সেই একই জামা প্যান্ট জুতো মোজা এমনকি হাতে পড়া পুজোর সেই নতুন সুতোটা।
বালেকমু দরজা আগলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দজি বলে উঠলেন– কী দেখছ ? রাস্তা ছাড়ো। গুদামের চাবি নিতে ভুলে গিয়েছিলাম।
স্বামীর কণ্ঠস্বর শোনার পরে বালেকমুর সম্বিত ফিরে পেল। হঠাৎ সে জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করে দিলেন– যেন পার ভেঙ্গে বর্ষার ঢল নেমে এল পৃথিবীর বুকে। তার কান্না শুনে প্রথমে আশেপাশের মানুষগুলি, তারপরে খামারের সমস্ত মানুষ তার কাছে দৌড়ে এল।বালেকমুর কী জন্য কাঁদছে বুঝতে না পেরে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দজির কাছে ঘেষতে ভয় করা মানুষগুলি ক্রমান্বয়ে তার কাছে গেল এবং একটা সময়ে তাকে ঘিরে ধরে প্রশ্নের বাণ নিক্ষেপ করতে লাগল।
তুমি কোথায় গিয়েছিলে ?
এতদিন কোথায় ছিলে ?
আমি আবার কোথায় যাব। কিছুক্ষণ আগে আমি কাজের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। রাস্তায় পকেটে হাত দিয়ে দেখি গুদামের চাবি নেই, বাড়িতে ভুলে ফেলে এসেছি, সেই জন্য চাবিটা নিতে এসেছি।— অত্যন্ত স্বাভাবিক কন্ঠে দজি উত্তর দিল।
তুই মেমেক কে কোথায় পেলি ? এবার মায়াকে জেরা করার পালা।
রাস্তায়। তিনি যেখানে অদৃশ্য হয়েছিলেন সেখানে। আমার চোখের সামনে তিনি একটা ঘর থেকে বেরিয়ে আসার মতো বেরিয়ে এলেন।– মায়া আনন্দে এবং গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করল।
♦•–•♦♦•–•♦♦•–•♦♦•–•♦
লেখক পরিচিতি: য়েছে দরজে ঠংছি-র জন্ম ১৯৫২ সালে । কামেং সীমান্তে, বর্তমান অরুণাচল প্রদেশের পশ্চিম কামেং জেলার জগং গ্রামে। গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অসমিয়া সাহিত্যে নিয়ে পড়াশোনা । ১৯৭৭ এ অরুণাচলের প্রশাসনিক পদে কর্মজীবন শুরু করেন । পরে কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিক হিসেবেপদোন্নতি হয় তাঁর । সাহিত্য অকাদেমি এবং ভারতীয় ভাষা সম্মাননা পুরস্কারে সম্মানিত এই লেখকের বহু রচনা বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে।উল্লেখযোগ গ্রন্থ কামেং সীমান্তের সাধু, মৌন ওঠ মুখর হৃদয়, লিংঝিক, বিষকন্যা।
ভাষান্তর: বাসুদেব দাস
❤ Support Us