- গ | ল্প রোব-e-বর্ণ
- মার্চ ২, ২০২৫
ভাইরাল

কিছুতেই দুই চোখের পাতা এক করতে পারল না খুদু। চোখ বুজে এলেই মনে মনে বলে উঠছে, ‘আলাদা কিছু একটা কর খুদু। যা আজ পর্যন্ত কেউ করে দেখাতে পারেনি।’ আর তখনই ঘুমটা ফুড়ুৎ করে কোথাও উধাও হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চললে তো শরীর থেকে সবটুকু মাংস শুকিয়ে যাবে ! চোখ ঢুকে যাবে খুঁটলে ! ‘সেরকম পেন্দা শরীর নিয়েও তো নতুন কোনও কায়দা করা যেতে পারে ? তাতেও লোকে বাহবা দেবে। দুনিয়ায় আজকাল সবকিছু নিয়েই মজা করা যায়।’ — মুছা তার লিকলিকে শরীরটাকে নিয়ে ঠাট্টা করেছে। কুলসুমও বাপের বাড়ির দিকে এক পা বাড়িয়ে আছে। এমন উচ্ছিন্নে লোকের সঙ্গে কে সংসার করে ? কুলসুম রেগে বোম হয়ে বলে, মিনশেকে নটংকি ভূতে ধরেছে। নটংকিই যখন করবে, তখন মাগ-ছেলে করতে কে বলেছিল ?
হ্যাঁ, খুদু নটংকি করে। নটংকি বলতে হাসির ভিডিও বানায়। ইউটিউবে একটা চ্যানেলও আছে খুদুর। স্বপ্ন, তার ভিডিও একদিন ভায়রাল হবে। খুদুর চ্যানেলটার নাম মন্দ নয়। নামটা শুনলেই ঠোঁটে অর্ধেক হাসি এমনিতেই এসে যায়। সবাই একবাক্যে ‘চমৎকার’ বলেছিল। সে থেকেই তার ইউটিউব চ্যানেলের নাম ‘পাকামু টিভি’।
পেটের ভাতে তো সবাই বাঁচে, শখ বাঁচিয়ে ক জন বাঁচতে জানে ? এরকম ‘বাঁচার’ জন্যেই চ্যানেল খুলেছে খুদু । বউয়ের ভয়ে মুখে যতই বলুক, টাকা রুজগার করার জন্যেই সে এসব নটংকিপনা করে, আসলে খুদু তার স্বত্বাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যেই এত কায় খাটে
খুদুর একটা দল আছে। দলের লোকেরা কেউ আগে ‘পঞ্চরস গান’, কেউ আলকাপ দলে ‘ছুকরি’র পাট করত। কেউ কেউ আবার ‘শব্দগান’ এর কেপেও ছিল। খুদুও এক জীবনে যাত্রাদলের শিল্পী ছিল। ‘রূপবান যাত্রা’ ‘গুনায় যাত্রা’য় হাসির পাট করত। প্রথম জীবনে কয়েক বছর সার্কাস দলেও জোকারি করত। তখন সার্কাসে বাঘ সিংহ থাকত। হাতি থাকত। রিং মাস্টারের সঙ্গে কতদিন বাঘের লেজ ছুঁয়েছে খুদু। কুলসুমের কাছে সে বাহাদুরির কথা মাঝেমধ্যে বলে নিজেকে মস্ত বড়ো পালোয়ান জাহির করে। ইউটিউবে চ্যানেল খোলার বুদ্ধিটা মুকাজুদ্দিই দিয়েছিল। যাত্রাদলের নায়কের পাট করা মুকাজুদ্দি তাকে বলেছিল, ‘যাত্রা-টাত্রা তো দেশ থেকে উঠেই গেল, চল না খুদু, মোবাইলে আমরা একটা চ্যানেল খুলি। শুনছি, ওতে নাকি প্রচুর ইনকাম ! লোকে বলে সব লাখপতি কোটিপতি হয়ে গেল ! আমাদের অত টাকা রুজগার না হলেও মনের শখটা তো টিকে থাকবে। দু ঘণ্টা তিন ঘণ্টার যাত্রাপালা না হোক, দু মিনিট তিন মিনিটের কেপেপনা তো দেখাতে পারব ? লোকেও জানবে ‘বেঁচে আছি’। দইয়ে না হোক ঘোলে তো টিকব ?’ কথাটা মনে গেঁথেছিল খুদুর। পেটের ভাতে তো সবাই বাঁচে, শখ বাঁচিয়ে ক জন বাঁচতে জানে ? এরকম ‘বাঁচার’ জন্যেই চ্যানেল খুলেছে খুদু। বউয়ের ভয়ে মুখে যতই বলুক, টাকা রুজগার করার জন্যেই সে এসব নটংকিপনা করে, আসলে খুদু তার স্বত্বাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যেই এত কায় খাটে। ঢাউস লাউয়ের মতো ভুঁড়ি ফোলায়। আবার তাওয়ার মতো পেট চামটি করে পিঠের শিরদাঁড়ার সঙ্গে গাঁথে। তারপর দাঁত বের করে খিখি করে হাসে। হনুর মতো অঙ্গভঙ্গি করে। বাঁদরের মতো নাচে। আরও কত কত ভড়ং করে খুদু ।
বেশ কিছুদিন পর আজ গাঁজার ঠেকে এল খুদু। সব ছাড়লেও এই নেশাটা ছাড়তে পারেনি। ভেতরে ভেতরে এহেন নেশা নিশপিশ নিশপিশ করে। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে গাঁজায় টান মারে খুদু। সেটা হল ভাবনা । এই যেমন আজ দু টান দিতেই চট করে নতুন আইডিয়া মাথায় খেলে গেল ! খুদু মুখ ফুটে যেই ‘আইডিয়া !’ বলে চিৎকার জুড়ল, অমনি জুল্লু যুদ্ধজয়ের মতো বলল, ‘দেখলি, দেখলি, গাঁজার ক্যারিশ্মা ! গোটা দুনিয়া ঘেঁটি যা পাচ্ছিলে নে, গাঁজার দু টানই সে আইডিয়া এনি দিল।’
খুদুর চোখ ছিল ক্ষয়াটে মাঘি চাঁদটার দিকে। চাঁদটার গায়ে মিহি থান কাপড় মেলে দিয়েছে প্রথম রাতের কুয়াশা। নিচে, জমিনের গায়ে জুবুথুবু জাড়। এই জাড়ে থোক হওয়ার কথা খুদুর। লেপে মাথা গুঁজে পোঁটলা হওয়ার কথা । গাঁজার নেশায় সে জাড় পগার পার। শরীরের ভেতরে এখন চৈত্রের তাপ। ওস্তাদ বেঁচে থাকাকালীন হুঁকোয় গাঁজা টানত খুদু । এখন কল্কেয় টান
‘উস্তাদের নিদান। এ নিদান কি কখনও ঠকায় ?’ মাথা ঝুঁকে হাত কপালে ঠেকিয়ে তাদের আলকাপের ওস্তাদ ঝাঁকসুর নাম নিল মুকাজুদ্দি। খুদু ফুঁক ফুঁক করে ফুঁকল। তারপর চোখ-মুখ ধোঁয়াটে করে বলল, ‘ওই যে আমি দেখতে পাচ্চি, উস্তাদ আমাকে বুলচে, খুদু কিছু একটা কর। আমাদের বাঁচা। লোকে যে আমাদের ভুলে গেল !’ নেশায় চুর হয়ে আছে খুদু। ‘কই দেখি’ বলে জুল্লু খুদুর কাঁধের ওপরে থুতনি রেখে যে দিকে তাকাল, খুদু সে দিকে ধেরিয়ে চোখ ফেলল। খুদুর চোখ ছিল ক্ষয়াটে মাঘি চাঁদটার দিকে। চাঁদটার গায়ে মিহি থান কাপড় মেলে দিয়েছে প্রথম রাতের কুয়াশা। নিচে, জমিনের গায়ে জুবুথুবু জাড়। এই জাড়ে থোক হওয়ার কথা খুদুর। লেপে মাথা গুঁজে পোঁটলা হওয়ার কথা । গাঁজার নেশায় সে জাড় পগার পার। শরীরের ভেতরে এখন চৈত্রের তাপ। ওস্তাদ বেঁচে থাকাকালীন হুঁকোয় গাঁজা টানত খুদু । এখন কল্কেয় টান। সব জোগাড়-ব্যবস্থা করে জুল্লু। সে জুল্লুই কথাটা বলল, শুধু বলল না, সুর করে গায়ল, ‘পায়ের তোঁরা হাতের বালা, থাকে যদি সিটি গোল্ডের চেন, দিয়ে যাবেন, তাতে সমান সমান তোমরা বাদাম পাবে, বাদাম বাদাম, কাঁচা বাদাম, আমার কাছে নাই কো বুবু ভাজা বাদাম, আমার কাছে পাবে শুধু কাঁ-চা বা-দা-ম।‘ আর অমনি রাগ মটকায় উঠে গেল খুদুর। একটা কাঁচা খিস্তি দিয়ে খুদু বলল, ‘শালোর মানুষের রুচি কতি গিয়ি পৌছিচে! মানুষে এখন গু-গোবরও গিলচে! কিষ্টির বারোটা বাজিয়েই ছাড়বে বেরুচি কু-রুচির লোকেরা।’
‘এখন ছাগলের মুতন ভ্যাবালেও গান, ব্যাঙের মুতন ডাকলেও গান।’ মুকাজুদ্দিও তার ভেতরের ক্ষোভটা প্রকাশ করল। তারপর বিদ্রুপ করে পাঠি ছাগলের মতো কেমন একটা শব্দও করল। জুল্লু বাদামওয়ালার ওপর খচল না। উল্টে খুদু আর মুকাজুদ্দিকে ঠেস দিয়ে বলল, ‘শুধু, ছাগল ব্যাঙ ক্যানে, গরুর হাম্বাও এখন হিট গান। কাকের ডাকও টপার হিট। মুরোদে না পারলে, আঙুর ফল টক আর কী। আরে ওরকমই একটা ‘ব্যা’ ‘ব্যা’ ‘হাম্বা’ ‘হাম্বা’ গান ভাইরাল করে দেখা না ? তবেই বুঝব, তোরাও উস্তাদের উস্তাদ।’ খুদু দাঁত কটমট করে উঠল। তার রগ-রক্ত এমন করছে যে পারলে জুল্লুর মুখে দুম করে এক ঘুসি মেরে দেয়। কিংবা জামার কলার ধরে বলে, শালো গাঁজা খেয়ে খেয়ে দুনিয়ার সবকিছুকেই গাঁজা দেখছিস ? নাহ, ঘুসিও মারল না, জামার কলারও ধরল না খুদু। উল্টে সে বাদামওয়ালার ভাইরাল হওয়া গানের সুর নকল করে বিদ্রুপের সুরে গাইতে লাগল, ‘পায়ের শিকল হাতে থাকবে, যদি ফাঁস দেওয়া চেন, দিয়ে যাবেন, তাতে সমান সমান, তোমরা মাহাল পাবে, মাহাল মাহাল, আসল মাহাল, আমার কাছে নাই কো বুবু ভেজাল মাহাল, আমার কাছে পাবে শুধু আ-স-ল মা-হা-ল।’ অভিমান হবেই বা না কেন খুদুর ? এত কসরত করেও তার একটাও ভিডিও ভাইরাল হল না ! গায়ের রক্ত জল হয়ে গেল। শরীর লড়ি-খড়ি হয়ে গেল ! জুল্লু যখন বলেছিল, ওভাবে বিড়ালের মতো ম্যাও ম্যাও করলে হবে না, ফাটা বাঁশ হও, খুদু ফাটা বাঁশ বনে গেল। কখনও কখনও সে কন্ঠ ঢাকও হয়েছে। ঢোল হয়েও বেজেছে। তবু কিছুতেই কিছু হয়নি। তার চ্যানেল যে তলানিতে ছিল, সে তলানিতেই পড়ে থাকে। ‘ভাইরাল হতেই হবে’ বলে কী না করেছিল খুদু ! ক-দিন জামাকাপড়ের বদলে বুন-জঙ্গল গাছপাতা লতাপাতা গায়ে পরল। তাতেও যখন সেরকম সাড়া পেল না, নিজেকে মেয়েরি রূপে হাজির করল। কত ঢং ! কত ভড়ং করে দেখাল। তাতেও যখন বাহবা পেল না তখন ঝুঁকিপূর্ণ কিছু ভিডিও বানাল। কখনও ছাত থেকে লাফ মারল, কখনও ব্রিজ থেকে ঝুলল তো কখনও কুয়োতে ডুব মারল। পাড়া-পড়শি বলতে লাগল, খুদুকে বদ জিনে ধরেছে। কুলসুম গোপনে গোপনে পানিপড়া নুনপড়া খাওয়াতে লাগল।সুযোগ পেল না, তা না হলে খুদুর হাতে তাবিজপড়াও বেঁধে দিত। ওসব কিছুতেই কিছু করতে পারল না। ‘ভাইরাল’ ব্যামুটা ধরেই থাকল খুদুকে।
এত ভালো আইডিয়া আগে কখনও আসেনি।শুনেই জুল্লু বাঁদরের মতো লাফিয়ে উঠল। মুকাজুদ্দি চোখ পুঁতে দেয় খুদুর মুখে। খুদু আইডিয়াটা বলার আগে একবার পেট খুলে হাসল। জুল্লুর আর তর সয়না। সে তিড়বিড় করে উঠল। হাসি থামাল খুদু। তার আইডিয়াটার এক আনা বলল, ঠিক বলল না, আভাস দিল, ‘মগডাল।’
জুল্লু চোখ কপালে তুলে বলল, ‘মগডাল !’
‘হ্যাঁ, মগডাল। তাও আবার যে সে গাছ নয়, বটগাছ।’ বুকের সিনা ফুলিয়ে জানান দেয় খুদু। খুদুর আইডিয়া শুনে জুল্লু হাঁ বনে গেল। মুকাজুদ্দি খচে গেল। সে চোখ উল্টিয়ে বলল, ‘মগডালে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলবি নাকি ? হেঁয়ালি করার আর জায়গা পাস নে না ?’
‘সেরকমই ব্যাপারটা’, আলগোছে বলল খুদু। এবার তড়াক করে উঠল জুল্লু। দাঁত চিবিয়ে বলল, ‘ফুট্যেনি বন্ধ কর। আসল কথাটা বল।’ খুদু জুল্লু আর মুকাজুদ্দির হাবাগোবা মুখ দেখে হো হো করে হাসতে থাকে। তারপর সুবোধ বালকের মতো বলল, ‘যা বলেচি তাতে কিচ্ছু হেঁয়ালি নেই। বাকিটা বটগাছের নিচে গিয়িই দেখতে পাবি।’
মুকাজুদ্দি ভাবল, শেষখানে মালটা মাটিই না হয়ে যায়!
দুই
ল্যাকপ্যাক ল্যাকপ্যাক করতে করতে ছুটছে খুদু। পরনে লুঙ্গি। গায়ে খদ্দরের জামা। কাঁধে গামছা। সঙ্গে নতুন ভিডিও বানানোর মালপত্তর। পাটের দড়ি। হ্যান্ড মাইক্রোফোন। আন্ড্রয়েড মোবাইল। মোবাইল ধরার স্টিক। কানে ব্লুটুথ। একটা ছাতা। বউয়ের ছেঁড়া শাড়ি। খুদুর পিছনে লম্বা পা ফেলে ঠ্যাঙ ঠ্যাঙ করে চলেছে মুকাজুদ্দি। হাতে বাঁশের লম্বা লাঠি। থপ থপ করে যাচ্ছে জুল্লু। তার মাথায় ধানের পুয়াল। গাঁয়ের লোকে অবাক হচ্ছে না। তারা খুদুদের কিত্তি দেখে দেখে অভ্যস্থ। যদুর ডিহি জমিটা পেরিয়েই বটগাছ। ঝুরি নেমে নেমে বুড়িয়ে গেছে গাছটা। লোকমুখে চালু আছে, নুরবক্স পিরকে যে বছর এখানে কবর দেওয়া হল, গাছটি নাকি সেবছরই জন্মায়। তার তলাতেই পিরের কবর। তখন থেকে এখানে কেউ ঘোড়া মানত করে কেউ রুটি, পায়েস, মোরগ মানত করে কেউ গাছের পয়লা ফল পিরের কবরে চড়ায়। কেউ সিন্নি বিলি করে। আজ থুত্তুরে এক বৃদ্ধ বাতাসা বিলি করছে। বাচ্চারা তাঁকে ছেকে ধরেছে। কেউ বাঁদরের মতো তিড়িং করে লাফ মারছে, তো কেউ তার জামা ধরে টান মারছে। বটতলায় ঢুকেই এ দৃশ্য দেখতে পেল খুদু। জুল্লু ফট করে তার মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে দৃশ্যটা ফেসবুক লাইভ করতে লাগল। বাতাসা মাথায় লোকটির লেজেগোবরে অবস্থা, এগিয়ে গেল খুদু। হাতের জিনিসপত্তর বাঁধানো শানে রেখে বৃদ্ধ লোকটিকে বলল, ‘সিন্নিগুলো আমাকে দেন। আমি বিলি করি দিচ্চি।’ বৃদ্ধ হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সে ভাবল, নিশ্চয় পীর হুজুর কাউকে পাঠিয়েছেন। বৃদ্ধ হুড়মুড় করে মাথা থেকে সিন্নির ব্যাগটা নামিয়ে খুদুকে দিল। খুদু ব্যাগটা হাতে নিয়ে প্রথমে বাচ্চাগুলোর উদ্দেশ্যে জোর ধমক দিল, ‘লাইন দিয়ি দাঁড়া সবাই। নাহলে কাউকে দেব না।’ বাচ্চারা লাইনে দাঁড়ানো দূরের কথা, খুদুকে ঘিরে ধরল। খুদু বেচক্কর দেখে তড়িঘড়ি বাতাসা ব্যাগ থেকে তার লুঙ্গি দুমড়ে ঢেলে নিল। এক হাতে লুঙ্গির কানা, আরেক হাতে বাতাসা বিলি করতে থাকে। বাচ্চাদের কেউ তখন তার হাত ধরে টান ধরল, তো কেউ লুঙ্গি ধরে টান মারল। সবাই তাকে মাছির মতো ভনভন করে ঘিরে ধরল। একজন লুঙ্গির আঁচলা ধরে হ্যাঁচকা টান মারলে খুদু খেঁকিয়ে উঠল, ‘এই ছাড়, ছাড়, বাপের জন্মে খাতে পাসনি?’ বাচ্চাগুলো খুদুর কোনও কথাই কানে তুলল না। একজন খুদুর গায়ে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ল। খপ করে মারল এক খামচা। খামচার টানে খুদুর লুঙ্গির গিঁট আলগা। খুদুর তখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা’। লুঙ্গি সামলাবে না লুঙ্গির ভাঁজে রাখা বাতাসা সামলাবে, কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। মুখে শুধু ‘ছাড়’ ‘ছাড়’ ‘বেয়াদপ’ ‘বেশরম’ ‘লচ্চর ছেলে সব’ বলে যাচ্ছে অনবরত। ছেলে ছোকরাগুলো এবার সিন্নি বাদ দিয়ে খুদুর পরনের লুঙ্গি ধরে জোর টানাটানি করতে লাগল। খুদুর বেআবরু দশা। সে ছুটে অন্য জায়গায় আশ্রয় নেয়। বাচ্চাগুলোও তার পিছু নিল। শেষে টানাটানিতে অঘটনটা ঘটেই গেল ! খুদুর লুঙ্গিটা খুলে গেল ! ভেতরে অন্তর্বাস নেই। কোনরকমে গায়ের জামা টেনেটুনে ইজ্জত বাঁচানোর চেষ্টা করল। জুল্লু তখনও বেখেয়ালে দৃশ্যটা লাইভ করে যাচ্ছে। খুদুর খিস্তি আর খ্যাঁকানিতে হুঁশ ফিরল জুল্লুর। ‘আরে ছিঃ ছিঃ, আমি অ্যা কি কচ্চি’ বলে নিজের দাঁত দিয়ে নিজের জিভ কাটল জুল্লু। তারপর লাইভ করা থামিয়ে দেয়। ততক্ষণে সে ভিডিও গোটা দুনিয়া ছড়িয়ে গেছে। কোনও গতি না দেখে খুদু দৌড়ে কাইতুল্লার পগারের ভাঁটের বুনে লুকিয়ে পড়ল।
ঘুটঘুটে রাত, উঠোন-বারান্দায় সে শতর পেড়ে বসল। যখন বাড়ির পিছনের ঝাঁপি ঠেলে গাঁজার ঠেকে এসে দেখে, জুল্লু আর মুকাজুদ্দি হুঁকোয় জোর টান দিচ্ছে। রাগে গজগজ করতে করতে জুল্লুর দিকে ট্যাঁরা চোখে তাকিয়ে গালি পাড়ল, ‘শালা, হারামির বাচ্চা…।’ অমনি ড্যাং ড্যাং করে নেচে উঠে মুকাজুদ্দি ‘জিকির তুলে বলতে লাগল, ‘খুদু ভাইরাল, খুদু ভাইরাল…
আধখানা দিন পেরোতেই খুদুর সিন্নি বিলির ভিডিও চারধারে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। খুদু ‘ভাইরাল’ হবার জন্যে এতদিন মাথা খাটিয়ে যে বুদ্ধি বের করেছিল, সে বুদ্ধির গলায় ফাঁস পড়ল। খুদু ভেবেছিল, বটগাছের কোনও মগডাল থেকে দড়িতে ঝুলে পড়বে আর ঝুলতে ঝুলতে সে হাঁড়া গলায় তার প্রিয় আলকাপ গান গাইবে। তারপর, হঠাৎ করে দড়ি ছিঁড়ে নিচে পালা দেওয়া পুয়ালের ওপর ঝাঁপ দেবে। সে দৃশ্য জুল্লু ক্যামেরায় তুলে, ভিডিও ছাড়বে তাদের ইউটিউব চ্যানেলে। এভাবে তার গানের দৃশ্যটাকে ‘ভাইরাল’ হওয়া থেকে আর কেউ আটকাতে পারবে না। সে মোতাবেক আটঘাট বেঁধেই নেমেছিল খুদু ।
লজ্জায় সারাদিন বাড়ি থেকে বের হল না খুদু। ঘুটঘুটে রাত, উঠোন-বারান্দায় সে শতর পেড়ে বসল। যখন বাড়ির পিছনের ঝাঁপি ঠেলে গাঁজার ঠেকে এসে দেখে, জুল্লু আর মুকাজুদ্দি হুঁকোয় জোর টান দিচ্ছে। রাগে গজগজ করতে করতে জুল্লুর দিকে ট্যাঁরা চোখে তাকিয়ে গালি পাড়ল, ‘শালা, হারামির বাচ্চা…।’ অমনি ড্যাং ড্যাং করে নেচে উঠে মুকাজুদ্দি ‘জিকির তুলে বলতে লাগল, ‘খুদু ভাইরাল, খুদু ভাইরাল…।’
♦–•–♦♦–•–♦♦–•–♦
❤ Support Us