- ধা | রা | বা | হি | ক রোব-e-বর্ণ
- নভেম্বর ২৬, ২০২৩
মাটি ব্রতের আখ্যান । দ্বিতীয় পর্ব
ঠাকুর মশাইও ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললেন, সামলে কোনোরকমে বললেন, - ভয় পাসনে। মাভৈঃ। তোরা গেলি আমারে পাওয়ারফ এটন্নি লিখি দে যাবি। দেখি, গোখেগোগুলানের কতখান দোঃসাহস যে হেন্দোর জমি খায়...তারপর
অলঙ্করণ: দেব সরকার
ধা রা বা হি ক · উ প ন্যা স
॥ এলায়া তোফান ॥
হেমসশীর কাজে মন বসছে না কিছুদিন ধরে, সব বেভভোল হয়ে যাচ্ছে। বুকের ভিতরে দমকা চাপ।
পুত্রবধূর গর্ভ তিনমাসের। বছর চারেক আগে বিয়ে হলেও গর্ভাধানের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিলো না। কাজেই এখন শাশুড়ি মাঝে মাঝেই উচাটন হয়ে উঠছেন। গর্ভের এ সময়ে বধূকে মা বাপের কাছে পাঠানোই রীতি, বিশেষ প্রথম সূতিকার। অথচ অসহায় রেধ করছেন হেমশশী। দেশের চারধারে যে বেসামাল অবস্থা ! বউকে পাঠাবেন কী করে ! দেরি করাও ঠিক নয়। পেট পা ভারী হয়ে উঠলে ঘরের বাইরে গর্ভবতীর হাঁটাচলা কষ্টের। দৃষ্টিকটুও।
বেয়াই বেয়ান যে এখন আবার এ দেশে নাই।
সে এক মহাবেত্তান্ত! দেশ ভাগাভাগির আগেই যাদবলাল দেবশর্মা খুলনা টাউনের পাট উঠিয়ে মালদায় চলে গেলেন সপরিবারে। শহরে এক সরকারি দফতরে জেলা অফিসের বড়োবাবু ছিলেন। করিতকর্মা মানুষ ! ছেলেকেও ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন এই অফিসেই। লোকে বলে যাদবচন্দ্ৰ দূরদর্শী, টাউনের হিন্দু মহাসভার সঙ্গে তার ওঠাবসা ছিলো।
যাওয়ার আগে বেয়াই মশাই মেয়ের বাড়িতে এসেছিলেন। কথায় কথায় বলেছিলেন— বেয়ান। আমার আর আপনের পুতব়্যার ট্রানেসফারটে করি নিয়া গেলো। ডি পি ঘেষের ধরিছিলাম,অনার সুপরেশ ডেরেকটর ফেলতি পারে নাই। বই কী, আপনেরাও জমিজিরিত জলদি দলদি বেবুস্থা করি এ দেশবাড়ি ছাড়ি চলেন। শ্যামা মুকুজ্জে। লক্ষ্মী মৈত্রেয়েরা কয়ে দেছেন হিন্দু বাঙালিরে রক্ষা করতি হবে, দরকারে দেশ ভাঙ্গে হিন্দু বাংলা তোয়ের করি দিতি হবে।
হেমশশী এ জাতের ওজনদার কথার খেই পান না। তিনি আসন্ন আত্মীয়বিয়োগের বেদনায় কাতর। তার ঘরের লক্ষ্মী মা হারা বপ নাই হয়ে যাবে। তার কান্না আসে।
যাদবলাল এবার চন্দ্রমোহনকে ধরেন। —বেয়াই মশয়, আপনের কী মনি হয় ? এ দেশির পাঠ না তুললি বেপদ যে ঘরের দ্বারে, সিটা তো বুঝতিই পাত্তিছেন। শেষে বঙ্গালেরে কুনো বিশ্বেস নাই। তিনি তলে তলে লিগে চলি গেছেন। পষ্ট করি অনার এসট্যান্ড কয়েছেন কবি? কী বলিছেন, ইটা হিন্দুর দেশ, পাকিস্তান হবে না। কচ্ছেন না বেয়াই মশাই, কচ্ছেন না। দীর্ঘশ্বাস পড়ে যাদবলালের,পায়ের তলার লোক মাথার উবরে নাচতি শুরু করিচে ! সত্তন যায় ! তার অকাট্য যুক্তি দেশ টুকরো করার আগেই নিশ্চিত হিন্দুস্থানের মানচিত্রে চলে গেলে জান মান ধর্ম তিনটেই রক্ষা পায়।
চন্দ্ৰমোহনের অন্দরের এই হাঁড়ির খবরটা কীভাবে যে চাউর হয়ে গেছিলো কে জানে ! বিকেল নামার আগেই মাতবরেরা হাজির হয়েছে তাঁর বৈঠকখানায়। মনে হয় নস্কর মাস্টারই এই ষড়যন্ত্রের নায়ক।
চন্দ্ৰমোহন তখনও স্বপদে আসীন, বৈবাহিককে বলেছিলেন—মাথায় এট্টা ঝাপই লাগিছে, বেয়াই মশয়। তাই…। কাটি যাবে। ম্যাঘ যে চেরটাবাল থাকে না। তাই না?
যাদবলাল বিমর্ষ বোধ করলেন—যিটা ভালো বোঝেন। আপনের ফেমিলি সেদ্ধান্তও আপনের। আপনজন মনি করিই কলাম। লম্বা আর্তনাদী নিঃশ্বাসটিকে রোধ করতে পারলেন না— কিবল আমার মায়িটার জন্যি…। তবু করে যাই। যদি মত ফেরান, কখুনো, কনুদিন, বেয়ানের কাছে। জামায়ের কাছে টেকানা দিয়া রইলো, এখান পত্তর লেখবেন। আমি আছি। যিভাবে হোক বন্দাবস্ত করি দিবার পারবানে।
ঘরের বাইরের, শহর দেশের, যেটুকু সংবাদ তার কানে যায়, সে শিউরে ওঠে। যাওয়ার সময় বাবা যদি জোর করেও তাকে নিয়ে যেতো। পেটেরটাকে বাঁচানো যাবে তো? ঢাকার শাঁখারি পট্টিতে নাকি গুন্ডারা এক গর্ভবতীর পেটে শাবল মেরে বাচ্চাটারে…! উঃ । স্নেহলতা কাঁপতে কাঁপতে চোখ বোজে, দেখে এক বীভৎস দানব দাঁত কিড়মিড় করে হাসছে।
স্নেহলতা তখন থেকেই ক্ষুণ্ণ। শ্বশুরকে মনে হয় নিষ্ঠুর শাসক। শাশুরি নাকি মায়ের মতো। কই তারও তো একমাত্র ছেলের বউয়ের দুখিমুখটার দিকে চেয়ে দেখার ফুরসত হলো না ! স্নেহের বাবা কি কম জ্ঞানী? হেডমাস্টারি নাই বা করলেন ! স্বামী নীলাম্বরের উপরে অভিমান সবচেয়ে বেশি। বাপের কথায় ওঠে বসে! নাবালক ! পুরুষই বা কেমন সে? বউয়ের কথা একবারও ভাববে না, তাহলে কীসের পতিদেবতা ! স্নেহলতার চোখ ভেঙে শ্রাবণের বিষ্টি নামে। মাঝে মাঝেই চাপা বিরক্তি গোপন করতে গিয়ে রাগ ফোঁস করে উঠতে চায়, বিশেষ করে এখন সেটার বাড়াবাড়ি হচ্ছে। পেটে ভ্রুনটা যখন তখন নড়েচড়ে জানান দিতে শুরু করেছে। ভয় লাগছে তার। নিজের শরীরটাও এলোমেলো ঢালে বাঁক নিচ্ছে। নীলাম্বরের মুখে অস্থিরতার রেখাটান সময়ে অসময়ে চোখে আসে। বেতালে কাজকর্ম নিয়ে ওর শিকড়ছাড়া চিন্তার কুচি বউয়ের কাছে খুলতে গেলে স্নেহ আরো বেসামাল হয়ে পড়ছে। ঘরের বাইরের, শহর দেশের, যেটুকু সংবাদ তার কানে যায়, সে শিউরে ওঠে। যাওয়ার সময় বাবা যদি জোর করেও তাকে নিয়ে যেতো। পেটেরটাকে বাঁচানো যাবে তো? ঢাকার শাঁখারি পট্টিতে নাকি গুন্ডারা এক গর্ভবতীর পেটে শাবল মেরে বাচ্চাটারে…! উঃ । স্নেহলতা কাঁপতে কাঁপতে চোখ বোজে, দেখে এক বীভৎস দানব দাঁত কিড়মিড় করে হাসছে।
হেমশশী এমনিতে বউমাকে কিছু বলেন না। কখনো তার পিঠে হাত বোলান – বউমা, শান্ত থাকো, মা। পেটিরটার কথা ভাবো। বড়ো অসুমায় চলতিছে দেশির। এট্টুখান সামাল দিক। তোমার ঠাকুর কয়েচেন। মেজিসট্রেটির কাগুদ নিয়ে নীলু তোমারে বাপের বাড়ি রাখ্যে আসবে।
একা হলে হেমশশী নিজের মানুষটার কথা ভাবতে বসেন। তিরিশ রত্তিরিশ বছর কেটে গেলো একসঙ্গে আছেন। তবু সবটা কি চেনা গেলো! তাঁকে! পাহাড়ের মতো উঁচু মনে হয় লোকটা, আকাশের মতো ছড়ানো। বাইরে কী কঠিন! ভিতার যেন কচি তালশাঁস।
স্কুলে ছাত্রকে কঠিন শাস্তি দিয়ে ঘরে ফিরে এসেছেন। পর থেকেই গম্ভীর। সন্ধে হলে বাড়ির খাস চাকর সাধনকে পাঠিয়ে সে ছেলের বাপকে ডেকে এনেছেন। তখন তার চোখে জল ভাসছে। বলেছেন, – উয়েরে বেত মারি নাই, উয়ের অপরাধটারে মারিচি। ইয়াকুব, তুমি বুঝদার। এট্টু বোঝো।
সে বাপও তাঁর দুহাত জড়িয়ে কাঁদে— মাস্টের ছায়েব আমি জানি … জানি।
দুপুরে বাপে বেটায় কথা কাটাকুটি হলো।
হেমশমী চেয়েছিলেন, বাকরুদ্ধ। এমনটা যে ঘটতে পারে। কোনদিন, সেটা তার স্বপ্নেরও অগোচর ছিলো। মনে হলো আচম্বিয়া ঠাঙা পড়লে ঘরের ভিতরে। খাক হয়ে গেলো সাজানো জগত।
নীলু কথা বলছে গলা চেপেই, কিন্তু তাপ যে ছিলো ঠাসা, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। অনেকদিন বাপের ছায়ায় নিজেকে দমিয়ে রেখে এখন বে-আগল বেতরিবতি। নীলু বলছে — বাবা, আপনি জানেন না, মুক্তোকান্দি গ্রামে এখন ছাড়াভিটে কয়খান। পাকড়াশি, দত্ত, সেন, পোদ্দারেরা কেউ নাই।
ওর কথাটা মিথ্যা নয়। রাতারাতি বিক্রিবাট্টা সেরে ওরা চলে গেছে। ওরা ছাড়াও অনেকেই। কেউ কেউ ঠিকমতো বিক্রিও সারতে পারেনি, নামমাত্র আগাম হাতে নিয়েই রওনা। ভবিষ্যৎ সকলের নিশ্চয়তার খোঁজ নাও দিতে পারে জেনেই।
—গুঝাঁই কত্তা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিয়ে সকলের যাওয়ার আয়োজন গুছিয়ে দিচ্ছেন।…
চন্দ্রমোহন ভাবছিলেন, ভাগাড়ের চিল চিন্তাহরণের হঠাৎ ধর্মোদয়।
নীলু ভাবছে, ওর কাজের দফতরের কথা। ছেচল্লিশ জন মোট কর্মচারি, তেত্তিরিশ জনই হিন্দু। এখন সাতজন আছে। যারা নেই, তারা কি বদলি নিলো, নাকি চাকরিতে ইস্তফা দিলো, কেউ বলতে পারছে না। বাবা জয়নাল লিডারের নাম বলবেন। লিগের কোনো নেতাই যে ভরসার যোগ্য নয়। উপরে আর তলে তারা কি এক? বাবা জয়েন খুড়োসশাইসের উদাহরণ দেবেন। দুনিয়ায় জয়েনকাকা একজনই হন, দুখানা মানুষ তো পাওয়া যায় না। বাবা নমশূদ্রপাড়ার প্রসঙ্গ তুলবেন। সত্যি, এখন ওদের কোনো সংকট নেই। যোগেন মণ্ডল আছেন। কিন্তু, কাল, কী পরশু?
হেমশশী ভাবছিলেন, বাপের কথা ঠিক, ছেলের কথাও ঠিক। কোনটা বেশি ঠিক? নাকি দুজনেই বেঠিক?
—বাবা, আপনি জিদ ধরে বসে আছেন। আমার কিছু বলার নাই। থাকেন। আমি আপনার বউমারে নিয়ে চলি যাই। অনুমতি করেন। আপন পরিবরেরে রক্ষা করা স্বামীর দায়, কর্তব্য। ঠিক কি-না বলেন।
চন্দ্রমোহনের চোখ মাসটারি লাল হয়ে জ্বলে উঠলো, কিছু বলতে যাচ্ছিলেন।
হেমশশীর কি দুঃমাহস হলো! এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ালেন, স্বামীর মুখ চাপা দিলেন হাত দিয়ে, বললেন ধারে ধারে, কিন্তু ঋজু তার ধার, – নীলু, ঘরে যা, বাবা, পরে কথা কস।
কেউ খেয়াল করেনি এই আবলাতাবলির মাঝে কখন আতালির মা এসে বরান্দায় দাঁড়িয়েছিলো, জয়েন উদ্দিনের ঘরের খাস বাঁদী। তার মালকিন বিবি তাকে পাঠিয়েছে হেমশশীর কাছে, বড়ইয়ের আচার আনবে। অবস্থা বেগতিক বুঝে সে চলে গেছে।
সন্ধে নেমে গেলে জয়েন উদ্দিন এলেন, প্রায় সপরিবাের। এমন যাতায়াত দুবাড়িতেই চালু। কুলসুম বেগম নাতি সজলের হাত ধরে ঢুকে গেলেন অন্দরে। সেখানে সই হেমশশীর সিংহাসন। জয়েন উদ্দিন প্রবেশ করলেন বন্ধুর কামরায়। দরজায় দাঁড়িয়ে হাঁক দিলেন, নীলু, বাপ আমার! ইদিকপান আইসো তো। বসলেন চেনা তক্তপোষে, হাতটি এলিয়ে দিলেন চন্দ্ৰমোহনের বাহুমূলে, বললেন,কথাকান শোনো, আচাজ্জি। বউমা পোয়াতী। কাল আমি একরামেরে নিয়ে সদরে যাচ্ছি। নীলুরেও নেয়ি যাবো।
চন্দ্রমোহন চেয়ে থাকেন।
—সোনাবেরেরে মনে পড়ে? তোমার প্রিয় ছাত্তর?
চন্দ্ৰমোহন মাথা নাড়েন।
—সে এখন ওথায় ডিপুটি কালিকটর। তারে ধরি দিনাদিনি পারমিট বায়ের করি আনবানে। অমত করবা না, হেডমাসটার। নীলু বউমা একা যাবে না, একরামও তার বিবিরে নিয়ে যাবে। মালদয় আমার বেটার ছোটো মামুশউরের ঘড়। এই মওকায় ঘুরি আসুক।
—কিন্তুক যাবে কেমনে? পথঘাটির হালচাল…
—জয়নাল চ্যারসেন্টের সাথে কথা হয়ি গেছে। একখান সরকারি গাড়ি দেবে, কয়েচে। মাসটারিতে রিটার করিচি বলি বেবাক খ্যামতাই গেচে?
—চন্দ্ৰমোহনের চোখ তরল আরশির মতো ভাসছে। দেখলেন তিনি, নাড়া দিলেন হাতে, আচাজ্জি !
দু চোখ ঢাকলেন চন্দ্রমোহন, বললেন, – দেখিছো, ভাই, তোমার ভাবীদানের কাণ্ডকারখানা! গপ্পো পালি সব ভুলি মারে। এক গিলাস সরবত দেবে…!
॥ দধাচির তনু ॥
গোঙানিটার পাগলামির মাত্রা বেড়ে গেছে। যখন তখন শুনতে পাওয়া যায়। সময় অসময় বলে কিছু নেই। কখনো ফিসফিস, কখনো ঢেঁকিপাড়ের ঢেকুস কুচ ঢেকুস কুচ ধ্বনি প্রতিধ্বনি। এক নাগাড়ে বেজে চলেছে, থামা নেই।
— উঁ…উঁ…উঁ। গান্ধি বুড়োের। উঁ…উঁ…উঁ। গোলি করি। উঁ…উঁ…উঁ। মারি ফেলিচে। উঁ…উঁ…উঁ। কায়িদি আজম। উঁ…উঁ…উঁ। মরি গিচে গো…। উঁ…উঁ…উঁ।
তখনই চন্দ্রমোহন কান ঢাকেন। চিৎকার করতে চান- বন্ধ করো, বন্ধ করো এ আবাজখান। বন্ধ করো।-চান বটে, কথা ফোটে না। বুকের শ্বাস বন্ধ হয়ে হাঁঁস লাগে।
কেবল তিনিই নন, আরো কেউ কেউ সেটা শুনতে পাচ্ছে, অন্তত তাদের সায় দেখ দেওয়ার নানা মুদ্রায় সেটা প্রকাশ পায়।
হেমশশী ঠাকুর ঘরে একঝাঁক দেবদেবীর ছবির সামনে নিঃশব্দে হাহাচার করেন— তেনার মাথাটারে বশে আনি দাও, ঠাকুর; আমি মানসি দেবো।
বেয়াদপি কান্ডকারখনা শহরের সীমা ছড়িয়ে মুক্তোকান্দিকেও বেন আলতো হাতে ছুঁতে শুরু করেছে।
চারদিন হলো চব্বিশ ঘন্টার কারফু। বাজার হাটের জন্য সকালে দুঘন্টা বিকেলে একঘন্টার ছাড়। সমস্ত দেশটাই, মনে হয়, ভিতরে কুলুপ এঁটে খিলবন্দী।
কারফুর সঙ্গে দাঙ্গা ফ্যাসাদের বাড়াবাড়িও সমান তালে। যে যশোর সদরে লড়কে লেঙ্গের সময়েও কোনো অশান্তি ঘটেনি, সেখানে পরশু রাতে কুমেরডাঙা জ্বালিয়ে সাফা করে দিয়েছে। কোতল হলো নির্বিকারে। কোলের শিশু, গর্ভের প্রাণকণা কিছুই বাদ গেলো না। কত রমনীর শুচিতা যে নষ্ট হলো ইয়ত্তা নেই।
মুক্তোকান্দির মুখগুলি তরাস মেখেছে। মুখে মুখে নাকাল মানুষের সংখ্যাটা রূপসার বুক কেটে ধেয়ে যাওয়া স্টিমারের চিমনি ওগরানো ধোঁয়ার মতো বলকে বলছে বেড়ে চলছে। সত্যি মিথ্যা বিচারের অবকাশ কারো নেই।
হাওয়ায় ভেসে চলেছে নানা কথার বুড়ির সুতো।
করাচি থেকে নাকি হুকুম জারি হয়েছে যে দেশে যেন একজন কাফেরও না থাকে। পাকিস্তান শুধুমাত্র মোচলমানের দেশ।
ইন্ডের হিন্দু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বিধেন রায় নাকি পেত্যেকদিন দুটো করে উড়েজাহাজ পাঠাচ্ছেন ঢাকায়, যতদিন না ওখানকার সব হিন্দু চলি যাচ্ছেন। রোজই পাঠাবেন। কিছু ঢাকার বাইরের হিদুগেরে কে নেবে? তার কথা বিধেন রায় ভাবছেন কি? মুক্তোকান্দি গালে হাত দিয়ে সে কথা ভাবতে বসেছে দিনকয়েক হলো।
বল্লভ প্যাটেল চরমপত্র দিয়েছেন, বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে হিন্দু নেধন বন্ধ না করলে তিনি মেলিটারি পাঠায়ে পাকিস্তান দখল করে নেবেন। মুসলমানদের তাড়িয়ে দেবেন আরব দেশে। নেজামের কপালটা যেন মনে রাখে পাকিস্তান।
হিন্দু মুসলমানের রায়ট নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাবে শিগগিরই।
মুক্তোকান্দির মানুষেরাও এখন হাসতে ভুলে যাচ্ছে, চেনা মানুষের দিকে তাকাতেও শিরশিরানো ভয় পায়, তফাত রেখে আড়চোখে দেখে।
এরই মাঝে মাথায় বিপদ বেঁধেই রাখাল কর্মকার বউ ছেলে মেয়ে, ছেলের বউ নাতি নাতনি সায় কোমরভাঙ্গি বৃদ্ধা মা সব ঝেঁটেপুটে পালিয় গেছে, ছোটো মাথাগোঁজার আদরের ঘরটির মায়াও একলহমায় ছিঁড়ে ফেলতে পারলো সে। পুলিস ভারে বারবার বিরক্ত করছিলো, দাঙ্গার অস্তর শস্তর তার কামারশালায় তৈরি হয় কিনা…এইসব। রাখালের গ্রামত্যাগ অন্যদের যেমন অসহায় করে তুলছে, আবার সাহসী করেও তুলছে,
– যাতি যখন হবেই, তবে আমরাও পারবানে। কিন্তুক মাটির টান যে নাড়ীর টান। তারে ছাড়ি যাওয়া? –তখন সকলের চোখে ধূসর মলিনতা ঠুকরে রক্তের লাল আনে।
ছুটে যাচ্ছে পুলিশের জিপ কাঁচা রাস্তায় পাশে পিছনে ধুলোর আকাশ। ধুলোয় পেট্রলের গন্ধ, ক্ষণভাঙা গোধূলি। গাড়ির মুখে লাউড স্পিকারের চোঙ নারকেন কাতায় শক্ত আঁটুনি বাঁধা, কথা আসছে ভিতর থেকে, গিরামের সকল মানষেরি জানান হছে, কারফু জারি করা হইচে, কেও ঘরের বাইরে বেরাবেন না। কারুরি সন্দিহভাজন মনে হলি গোলি করার হুকমত দিয়া আছে। শান্তি বজায় রাখেন। খুদা হাফিজ!
তখন বিকেল অবসাদে ম্রিয়মান। হেমশশী বারন্দায় বসেছিলেন কাটের খোঁটায় মাথা এলিয়ে।
সাধন উঠানের একধারে চট বিছিয়ে পা মেলে কাঠের বড়ো লগাগুলোকে সরু ফালির চেলা বানিয়ে সামনে সাজিয়ে রাখছিলো। এ বাড়িতে কাজের লোক হয়ে ঢুকে বাড়ির একজনই হয়ে গেছে কবে যে। তার হাত-দা চলছে শৃঙ্খলায়, বরবার মুখ তুলে হেমশশীকে দেখছিলো সে। এমনভাবে কখনো হেমশশীকে বসে থাকতে দেখেনি সে। উদ্বেগ ছায়া মেলছিলো সাধনের মনে, – খুড়িমা, কিছু কলা? আমারে? – হেমশশী শুনতে পেলেন না। সাধনও তাকে বিরক্ত করলো না।
আসলে, হেমশশীর আবোঝ মনে এমন কিছু একটা বোধ হচ্ছিলো, বুকের পাঁজরের ভিতর কুঠুরি যেন ফাঁকা ফাঁকা, হু হু বাতাস এফোঁড় ওফোঁড় করছে হাড়গুলোকে, শব্দ হচ্ছে না। বুকের পরদায় ঠেলা মারছে। পুষে রাখা অশ্রুতরল উথলাচ্ছে, কিন্ত পাত্র উপচে গড়িয়ে পড়ছে না। সামনে তার রাজ্যপাট এখন কেমন আবছা লাগে তার চোখে।
বসতবাড়িটি প্রাসাদ নয়, অট্টালিকাও নয়। ঠাকুর ঠাকরুনের বড়ো কামরাটা নীলু বউমার জন্যই বরাদ্দ। বারান্দার কোনটিতে একটা মাঝারি খুপড়ি, সেটায় সাধন থাকে। কত্তামার ঘরখানা এখন ফাঁকা, অতিথিশালা হিসেবে ওঠার ব্যবহার চলে। অতিথি বলতে কুষ্ঠিয়া থেকে হঠাৎ হাজির হওয়া দেওর বিশু, বিশ্বমোহন, ভাজ মাধুরীবালা, ওদের ছেলে মেয়ে পীতাম্বর ও সাবিত্রী। দু চার দিন কাটিয়ে চোখের জলে বিদার নেয়। আগে ঢাকা থেকে হেমশশীর ছোটো ভাইটি প্রায়ই আসতো, এখন তার আগমন স্বচিৎ। তারও যে বয়স হচ্ছে, হেমশশী যেন ভুলেই যান। অতিরিক্ত কামরা দুখানা, একটি হয়তো ভবিষ্যতের সঞ্চয়, অন্যটি ঠাকুরঘর, দেবতারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে ফ্রেমে বাঁধা ছবি হয়ে বিরাজ করছেন। বসতবাটির মাথায় ঢেউ দোলানো করগেট টিন, তার নিচে আকাশরঙি চাটাইয়ের সিলিং। পাকের ঘর বাইরে, উঠোন ভেঙে যেতে হয়। বাদলার দিনে ভিজতে হবেই। সে ঘর দরমার, গায়ে এলামাটি লেপা, কাঠের ধোঁয়ায় কালো হয়ে বিচিত্রবর্ণ, মাথায় টানি। উঠোনের একধারে ছোটো ইঁদারা, তার মাথায় আড়াআড়ি কপিকল, দড়িতে বালতির গিঁট। সে ইদায়ার মাঝখান দিয়ে পাচিল গাঁথা, ওপারের অধিক মেয়েদের স্নানের জন্য আবরু। আরো আছে, আগে বৈঠকখানা ঘরটি ছিলো না। এটি চন্দ্রমোহনের অবদান। কর্তামিনির খাসকামরার কথা হেমশশী প্রায়ই ভুলে যান। সেটা ছোটোই।
হঠাৎ দেখতে পেলেন মাঠের একধার থেকে বেশ দঙ্গলগোছের খুপী ছায়া চলমান অশরীরীর মতো ছুটে যাচ্ছে, জিকির দিচ্ছে চাপা জিভে-আল্লা হু… আল্লা হু। ছ্যাঁত পুড়ে গেলো বুক। দেরি না করে প্যাডেলো জোর দিলেন আবু জয়নাল
বড়ো কামরার অভ্যেস সোড়া হেমশালী এই কামরাতে ঢুকে মনোভাবে দকে গেছিলেন।
—হেম, সে রাতে। প্রথম রাতে, ডেকেছিলেন চন্দ্রমোহন, – ঘর বড়ো হলি ঘরের মানুষটে বড়ো ছোটো হয়ে যায় গো। আমারে মানাতি গেলি আমার এই ঘরখানারেও যে মানাতি লাগবে। পারবা না?
না বুঝেই তখন চতুদর্শী নাবালিকা। হেমশশী মাথা নেড়ে সায় দিয়েছিলেন। তারপর কত বছর কেটে গেলো, মানুষটাকে আগলে রেখেছেন। বাপের বাড়ি কতবার গেছেন, কদিন থেকেছেন, কর গুণে বলতে পারবেন।
হ্যাঁ, হেমশশীর বাগান আছে। আমগাছ তিনটে, তার মধ্যে একটা দুধসাগর জাতের। নীলুর বাবা আমের লোভে ছেলে মানুষ, ছেলের পাত থেকেও তুলে খান। মনে পড়লে এককণা হাসি উকি দিলো হেমশশীর কষে। কাশীর পেয়ারা গাছ দুটো, ফলের উপরটা সাদা, ভিতরে টকটকে লাল। কেউ খায় না, পাড়ার ছেলেপিলেরা ডালে, তিনি মগডালে, গাছের তলায়ও দাপাদাপি করে। পূর্বদিকে জামরুল গাছটা, গা গুলোনো দু দুটো কোল বালসী কাঁঠালগাছ ছাড়াও দুতিনটে হাজারি নারকেলগাছ, বাজে ফলের গাছ – ডুমুর, চালতা, আড্ডা, নোনা, ফলসা, রইয়েল। এই বনাঞ্চলের পিছনে ছোটো পুকুর। খুব একটা ব্যবহার হয় না, ইসমাইলের বিবির পোষা হাঁসগুলি প্যাঁক প্যাঁক ঝগড়াঝাঁটিতে সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে।
আছে একটা নিমগাছও। সদর বাঁশের গেট খুললেই বাঁয়ে, কত্তামার হাতে পোঁতা। এখানে মায়ের দয়া ফিবছর। নিমপাতার ঝাড়ন যে একমাত্র ধন্বন্তরি! এ গাছের হাওয়া তার নাতিপুথিরে রক্ষা কররে, এমনটাই ছিলো বুড়ির বিশ্বাস। সেটা এই শীত নতুন সাজ পড়াব বলে অপর্ণা হতে শুরু করেছে। এখন বিশান দেহ নিয়ে ন্যাংটো ডালপালার জাল ছড়িয়ে সে-গাছ দাঁড়িয়ে আছে খড়াই, সমস্ত মারণ থেকে আচার্যবাড়িকে বাঁচাতে পাহারাদার।
এতক্ষণে হেমশশী চোখ ডললেন।
খেয়াল করেননি, এর মধ্যেই সোনার আঁচল খসিয়ে তন্ত্রালসা বিলাসী সন্ধ্যারানী দু সিঁড়ি লাফিয়ে লাফিয়ে দরজায় এসে গেছে।
হঠাৎই যেন এক ঝটকায় চমক ভাঙলো হেমশশীর।
অনেকগুলো পায়ের দাপের আলোড়ন মাটিতে, ছুটে বেরিয়ে গেলো কয়েকজন।
— ই বাচ্চু। কী হইছে রে?- ইসমাইলের আওলাদকে দেখতে পেয়ে শুধালেন তিনি।
— জেটা ! ঘরের ভিতরি চলি যাও। েদারকবাট আঁট করি খিলকোলাপ দে রাখে। গিরাম গরম হতি পারে।
— ক্যানে রে?
— সুমায় নাই বেত্তান্ত বোঝানের। ছ্যারমেনরে মারি ফেলানো।
— সিকী ! কুথায় ?
জবাব দেওয়ার জন্য ক বাচ্চু শেখ সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো না।
পাশের গ্রাম তে মোহানাকে যত পরশু সামান্য উত্তেজনা হয়েছিলে। শাসনকর্তারা আর এলাকার সজ্জনেরা সামলে দিয়েছে খুব জলদি। আজ সেখানে ছিলো শান্তিসভা। পরাক্রান্ত বক্তা হিসাবে ঢাক পড়েছিলো জয়নাল সরকারের।
সভা হয়েছিলো চমৎকার। জনগণ মুহূর্মুহু হাততালিতে যেল জয়নালের গলায় ফুলের মালা চাপিয়ে স্তুপ বানিয়ে দিচ্ছিলেন। সভা ভাঙতে ভাঙতে রাতের কালো নেমে গেিছলো। শীত ঋতু, দিনের কাজের বেলা বড়ো কম।
ভরা মনে এক আউশ জেগেছিলো জয়নালের মনে। তে মোহানার তার ভায়রা শালীর ঘর। একবার ঘুরে আসে। কোর্ট, দল, মিটিং, চেয়ারম্যানগিরি এতসব কাজের চাপে অনেকদিন খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে বিধির কাছে মাঝে মধ্যে ধমকানি। মনখারাপের আবদার জোটে। ভায়রাটা নিরেস। গরমেনি চাকরি, লিগ নিয়ে ভাবে না, দেশ নিয়েও না। ভবিষ্যতে এমন লোকের সংখ্যা বাড়লে দেশের হাল কী হবে কে জানে? জয়নালের উদ্বেগ হয়। সে ভায়রা বাড়িতে থাকলে ভালো, না থাকলেও ক্ষতি নেই। শ্যালিকাটি রসবতী, ফস্টিনস্টি কথা চালিয়ে স্থানাভাব হালকা করে দিতে পারে সে। অতএব জয়নাল, সেই গন্তব্যে সাইকেলের হ্যান্ডেল তাক করলেন, নামালেন পিছন মার্ডগার্ডে ধাঁধা ছোটো ডাইনামোর চাবি, চাকা ঘুরালেই সামনের পথ আলোয় আলোয় দিন। জয়নাল ভীষণ ভাবে শ্যালিকা রসিকার ভালো টনিকটাকে কামনা করছিলো। সে জন্যই ছায়ার মতো সঙ্গে থাকা ভলান্টিয়ারদের মুক্তোকান্দি ফিরে যেতে বললেন, ওরা ইস্তত করলেও শুনলেন না। তার ভয় কী? তার যে শত্রু আছে কাকপক্ষীতেও স্বীকার করবে না।
ভায়রার ঘরে পা দিতে ? দরজা খুলে রসবতী।
— বাব্বা, চ্যারমেন সাহেব যে। মনি পড়লো তবে ছোটো বিবিরে! আমি পথ চারি চারি চোখের পানি মুচি, কবে আমার পেরানের খসম আসে (হি হি হি হি)।
— সময় পাতিছি না। ছুটবিবি। ভাজের বড়ো চাপ। তা আমার শত্তুর খান কনে? বাড়িতে নাই বুঝি? তা ভালোই হয়িচে। মিঁয়া বিধিব মাঝখানি ও শালা ভায়রার না থাকাই ওচিত।
— দূরে নাই। চ্যারমেনরে দেখিছে। নাছদোর দে ছোলেমানের ঘরে গেলো। ছোলেমানের মা ছেমুই সাজে ভালো। ঘরে গুঁড়ে দুধ আনি রাখিছে, কলো – ছায়েবের ছেমুই করি দাও। তা এখানে যে আসা হইচে, বিবিজায়েরা জানে? নাকি লুকোয়ে গোলাবকাত্তলি?
—আমার কথা বলি নাই, তখন তো ভাবি নাই। তুই বরং ভাবে এই খবরখান দিছ। আমার বড়ো উবগার হয়।
—কেমনে।
—আমার দিকে তোর বড়োবুনির আর মন নাই রে। আমি পুরেন হয়ি গিচি।
—কে কয়েচে? বড়োবুন? হি হি হি হি। সে জানে চ্যারমেনের চেয়া তাজা কোনো জুয়ান নাই।
অনেক অনেকক্ষণ সে বাড়িতে জয়নাল, সে সুই, শরবত, কথা, হাসি, রঙ্গরসিকতায় ভরে যাওয়া জয়নাল। একা জয়নাল অন্য জয়নাল।
রাত একটু বেশিই হয়েছে। সামনের মাঠটা কোনাকুনি পেরোলে মালাকার পাড়া। অনেকটা সর্টকাট রাস্তা। কিছুদূর গেছেন, হঠাৎ দেখতে পেলেন মাঠের একধার থেকে বেশ দঙ্গলগোছের খুপী ছায়া চলমান অশরীরীর মতো ছুটে যাচ্ছে, জিকির দিচ্ছে চাপা জিভে-আল্লা হু… আল্লা হু। ছ্যাঁত পুড়ে গেলো বুক। দেরি না করে প্যাডেলো জোর দিলেন আবু জয়নাল।
শঙ্কর মালাবারের উঠোনে ওদের মুখোমুখি হলেন তিনি। ওরা এখন মত্ত, জিকিবে হুংকার -আকবর র..র.। মালাকারের ঘরের ভিতর থেকে নারী পুরুষের আর্তনাদ আকাশ বিদীর্ণ করছে। সাইকেল ঝাটতে মাটিতে ফেলে দৌড়ে গেলেন জয়নাল দবদায়,— খ-র-র-দা-র? এক পা আগাবা না। ছিঃ ছিঃ। তোমরা না মোচলমান! দলেরে ইনকার কবি…। এই যে আছো! থানায় গিয়ে খবর দেও, চ্যারমেন ডাকতেছে, জরুরি…।
—চ্যারম্যান ছায়ের! ইটা আপনের গিরাম না। সরি যান, ভালোয় ভালোয় কচ্ছি।
—ই কাফিরের বাচ্চা। মজলিসে বসি কয়েচে ইটা নাকি উয়েগের দেশ!
—কুনু কথা কবা না, – জয়নালও প্রতি হুংকার ছোড়েন, – যাতি বলিচি, যাও।
এই ডামাডোলের মাঝেই শঙ্করের মেজোভাইটা বেরিয়ে এসেছিলো, একখানা দরজা আটকানোর বাটাম হাতে নিয়ে।
তারপর সামান্য ধস্তাধস্তি। সামান্যই, ভেজালির তিন কোপ, বুকে, পেটে, মাথায়।
আধঘণ্টা পরে পুলিশ এসে হিমনিথ শঙ্করের ঘরের সামনে থেকে আবু জয়নাল সরকারের দেহ লাশভ্যানে তুলে নিয়ে যায়।
সাধন তার খুড়িমাকে হাতে ধরে ঘরে নিয়ে যেতে চেষ্টা করছে।
ভিতর থেকে গম্ভীর আওয়াজ এলো, – নীলুর মা!
ক্রমশ…
❤ Support Us