- কে | রি | য়া | র-ক্যা | ম্পা | স ধা | রা | বা | হি | ক
- ডিসেম্বর ১০, ২০২৩
ধারাবাহিক আত্মকথা: আমাদের বিদ্যানিকেতন
আমিত্বহীনতার বৃত্তান্ত
সংগঠিত, পরিকল্পিত জীবনবোধ আর বৃহৎ প্রেমের দর্শন নিয়ে বললেন আদর্শবান শিক্ষাব্রতী । ফলিত দর্শনের শিক্ষা আর সংগঠনের প্রাথমিক লক্ষ্য কীভাবে তাঁকে, তাঁর যুগোপযোগী নির্মাণকে ছুঁয়ে আছে, জানালেন সে অব্যক্ত, ব্যতিক্রমী বৃত্তান্ত ।
সম্পাদক
১০.১২.২০২৩
• পর্ব-১৮ •
ব্যক্তি বিশেষের চিন্তা ভাবন, অর্জিত সঙ্কল্প আর শ্রম কিংবা পরিশ্রমের সম্পর্ক অনস্বীকার্য, এসবের মিলিত সাধনার নাম প্রয়াস অথবা প্রচেষ্টা, অনেকটা যুক্তিময় আবেগের সঙ্গে মহৎ প্রেমের ত্যাগের মতো গন্তব্য তার সুনির্দিষ্ট। যে প্রেম যুক্তি মানে না, যে প্রেম কেবলই ব্যক্তিকেন্দ্রিক, যে প্রেম বাস্তবকে অস্বীকার করে মুগ্ধ অন্ধতা নিয়ে, বাধ ভাঙ্গা স্রোতের চেহারা নিয়ে ছুটতে থাকে, অকালে সে ঝরে যায়, স্থায়ী চিহ্ন রেখে যাওয়ার সুযোগ পায় না, বন্যাক্রান্ত নদীর কবলে পড়ে পথ হারায় ।সহজিয়া দর্শনের এ সত্যকে আমি বরাবর গুরুত্ব দিই, আমার ধর্মবোধে, কর্মযোগেও তেমনি ।
যুক্তিবাদী চার্বাকেরা, প্রশ্ন তুলেছেন, প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন চিন্তা আর কর্মে । আর ভাববাদী দার্শনিক জিজ্ঞাসার মীমাংসা খুঁজেছেন মানব জীবনের যাপন খতিয়ে দেখে । সাধারণ মানুষ উভয় পাঠক্রমের ছাত্র,আমরা কাজের ভেতর দিয়ে উদযাপন করি চিন্তাকে, সংগঠন গড়ে তুলি, বিদ্যানিকেতন নির্মাণ করি অভিজ্ঞতার চার খুঁটিতে ভর দিয়ে
দর্শনশাস্ত্রের বিষয় আশয় নিয়ে আমার বলবার এক্তিয়ার নেই ।প্রকৃতি আর পারিপার্শ্বিক দেখতে দেখতে যা শিখেছি, দর্শনের যে পাঠগ্রহন করেছি, তার ভিত্তিতে এইটুকু বুঝতে পারি, বলতেও পারি যে, দর্শনে তর্কশাস্ত্র, অনুসন্ধান আর পর্যবেক্ষনের অবদান অসামান্য । যে কোনো সাংগঠনিক কাজের পেছনে দর্শনের ভূমিকা সুখী গৃহকোণের গৃহিনীর মতো, যার আকার ইঙ্গিতে গৃহ চলে, পালিত হয় সংসার । আমার ব্যক্তিগত সামাজিক সংসারের ইহজাগতিকতাও ব্যতিক্রম নয়।প্রয়োগিক দর্শন এখানেও সর্বদা জাগ্রত আর সৃজনশীল । আত্মবৃত্তান্তের গোড়ার দিকে আমি আমার স্ত্রীকে কমনওয়েলথের রাণী বলে সম্বোধন করেছি । রাণীর ভূমিকায় আজও তিনি সমানভাবে সক্রিয় । তাঁর হ্যাঁ-না কে উড়িয়ে দিতে পারি না, পেশা আলাদা হলেও ফিরদৌসির সঙ্গ নিষ্ঠা নাকচ করা অসম্ভব । আমার ধারণা, এটাও ফলিত দর্শণের শিক্ষা । যখন কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নিই, তাঁর সঙ্গে, ছেলে-মেয়ের সঙ্গে, শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে আলোচনার পরিসর গড়ে তুলি । ভাবনা ও স্বপ্নের রূপায়ন শুরু হয় এই ভাবে, এই পথে হাঁটতে হাঁটতে,দেখতে দেখতে । লোকায়ত দর্শনে সম্ভবত একে, পর্যবেক্ষণ আর পর্যালোচনাকে প্রবল মান্যতা দিয়েছেন প্রাচ্যের সুফিসাধক আর ভাবুকরা । যুক্তিবাদী চার্বাকেরা, প্রশ্ন তুলেছেন, প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন চিন্তা আর কর্মে । আর ভাববাদী দার্শনিক জিজ্ঞাসার মীমাংসা খুঁজেছেন মানব জীবনের যাপন খতিয়ে দেখে । আমাদের মতো সাধারণ মানুষ উভয় পাঠক্রমের ছাত্র, কাজের ভেতর দিয়ে উদযাপন করি চিন্তাকে, সংগঠন গড়ে তুলি, বিদ্যানিকেতন নির্মাণ করি অভিজ্ঞতার চার খুঁটিতে ভর দিয়ে।
বয়স তখন অল্প, তবু এনইএফ গড়ার শুরুতেই অনুভব করি, কাজের নেপথ্যে দর্শন, সমাজবিদ্যা, ইতিহাস থেকে শিক্ষাগ্রহন জরুরি।এরকম ভাবনাকে ঘিরে গুয়াহাটির ভাঙ্গাগড়ে যৎকিঞ্চিত সঞ্চয় দিয়ে আমাদের নিজস্ব বাড়ি তৈরি করি ।এটাই এনইএফ এর প্রথম স্থায়ী আয়ের উৎস হয়ে উঠল । আয়ের একাংশ খরচ হত সংগঠনের বিভিন্ন কাজকর্মে । বাকিটা জমা পড়ত সঞ্চয়ের তহবিলে । কেবল লিখলে, লেখা বের করার চেষ্টা করলে যেমন কবি বা লেখকের চলে না, সৃষ্টির স্থায়ী নিদর্শন দরকার, জরুরি গ্রন্থিত সঙ্কলন, ঠিক সেরকম যে কোনো সংগঠনের কাজকর্মের জন্য একটা ঠিকানা প্রয়োজন, দরকার স্থায়ী আবাস বা ক্যাম্পাস। আর ধারাবাহিক, আয়ের মূলাধার।ভাঙ্গাগড়ের বাড়িটি আমাদের ক্ষেত্রে অনুরূপ সংযোজন গড়ে তোলে । শক্তি জোগায় স্বপ্নের ইমারতে । তখন ওই বাড়িটি তৈরি না করলে কাজের গতি হয়তো থমকে যেত । এখানেও ফলিত দর্শনের শিক্ষা আমার কাজকে অবশ্যই ত্বরান্বিত করেছে ।
আমি বিনম্র । বৃহদায়তের কাছে কৃতজ্ঞ । যেসব শিক্ষায়তন গড়েছি, তার শুরুতেই বাড়ি ও ক্যাম্পাস তৈরিকে লক্ষ্য বিস্তারের প্রাথমিক ধাপ বলে চিহ্নিত করেছি । এই পথেই বহুমুখী পাঠশালার সুশৃঙ্খল বিন্যাসকে সাজিয়েছি। ইট, বালু, সিমেন্ট ও রড দিয়ে নয় শুধু, পাশাপাশি বাগান আর মুক্ত হাওয়াকে ছড়িয়ে দিয়ে । এটা আমার অঙ্গীকারের ফসল।মানবজীবনের এই চাষবাস আশা করি কখনো বন্ধ হবে না, জীবনজুড়ে বইবে তার স্রোত, বাইরে তার হাওয়া, বইবে জীবনদীর দুকূল ব্যাপী পল্লবিত, তরঙ্গাশ্রিত অনুভূতির চক্রবাল ।
ক্রমশ…
♦—♦♦—♦♦—♦♦—♦
লেখক: উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম বেসরকারি কলেজ গোষ্ঠী এন.ই.এফ-এর চেয়ারম্যান। গুয়াহাটির বাসিন্দা
আগের পর্ব পড়ুন: পর্ব ১৭
❤ Support Us