- ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র
- সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫
বলরাম ঘোষ স্ট্রিটে এবার ‘ভদ্র কথা’, বিশেষ থিমের পুজোয় বাঙালির নস্টালজিয়া

‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে’ বেজে উঠবে আলোক-মঞ্জীর। আর আপামর বাঙালির ‘মহালয়া’-র চিরন্তন এ ধ্বনির নেপথ্যে যিনি, সেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের জীবন ও তৎকালীন কলকাতার ঐতিহ্যে বুকে নিয়ে সেজে উঠছে উত্তর কলকাতার সার্বজনীন দুর্গোৎসব। এবারের থিম—‘শুধু ভদ্র কথা, মহা-আলয়ে মা।’ বলরাম ঘোষ স্ট্রিটের বীরেন্দ্র মঞ্চে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে প্রাচীন কলকাতার চিত্র, স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতি ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের জীবনের মুহূর্ত দিয়ে। মণ্ডপে থাকবে নদীর ঘাটের ছবি, তর্পনের দৃশ্য, এবং সাবেকি সংস্কৃতির ছোঁয়া।
জানা গেছে, মহালয়ার ভোরেই শিল্পী সুশান্ত পাল দেবী দুর্গার চক্ষুদান করবেন। মণ্ডপজুড়ে বাজবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ। সাবেকি ঢঙে গড়া প্রতিমা, এলইডি স্ক্রিনে প্রাচীন কলকাতার দৃশ্য, এবং ভদ্রের কণ্ঠের জাদু, সব মিলিয়ে আয়োয়জকরা এ পুজোতে দিতে চাইছেন অতীত-ভরা নস্টালজিয়ার মিশ্রণ।
প্রবাদপ্রতিম কণ্ঠশিল্পী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯০৫ সালের ৪ আগস্ট উত্তর কলকাতাতেই। পিতা কালীকৃষ্ণ ভদ্র ছিলেন বহুভাষাবিদ, মাতা সরলাবালা দেবী শিক্ষিত নারী। ঠাকুমা যোগমায়া দেবীর কাছ থেকেই তাঁর সংস্কৃত শিক্ষা শুরু। ইন্টারমিডিয়েট এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক হয়ে ১৯২৮ সালে যোগ দেন ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়েতে। কিন্তু তাঁর আসল দুনিয়া ছিল রেডিও। আর তাতেই মোহিত হয়ে নৃপেন মজুমদারের আহ্বানে চাকরি ছেড়ে তিনি সম্পূর্ণ জীবন উৎসর্গ করলেন বেতারের জন্য। মেঘদূত’ ছদ্মনামে ‘মহিলা মজলিশ’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর কণ্ঠ জনপ্রিয়তা পেল। এরপর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র দুর্গাপুজোর কাহিনীভিত্তিক ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। প্রথমে লাইভ, পরে রেকর্ডেডভাবে, তাঁর গুরুগম্ভীর কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ বাজে আজও মহালয়ার ভোরে। ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানকে বাঙালির জীবনের চিরস্থায়ী অঙ্গ করে তোলার কৃতিত্ব তাঁর। ১৯৩২ থেকে মহালয়ার ভোরে তাঁর চণ্ডীপাঠ বাজে আজও। উদ্বেলিত, স্মৃতিকাতর হয়ে পরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। সে কণ্ঠের জনপ্রিয়তা এতোটাই যে অনেকে অনুষ্ঠানটির নামকেও ‘মহালয়া’ ভাবেন। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ছিলেন আকাশবাণীর প্রধান, নাট্য প্রযোজক এবং প্রবর্তক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধানচন্দ্র রায়, উত্তমকুমার শেষযাত্রার ধারাবিবরণী, বহু নাট্য প্রযোজনা, সবই তাঁর কণ্ঠে সজীব।
১৯৯১ সালের ৪ নভেম্বর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র নিজেই প্রয়াণ করেন। মৃত্যুর ৩৪ বছর পরও, এবার তার পাড়ায় ফিরে এলেন। উত্তর কলকাতার এ পাড়ায় পুজোর শুরু মহালয়ার ভোরেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে। শুভাশিস চক্রবর্তী জানান, ‘যাঁর কণ্ঠ শুনে আমরা বড়ো হয়েছি, সে অনাবিল কণ্ঠ এবার আবার আমাদের পাড়ায় ফিরে এসেছে। ভদ্রর কণ্ঠের সঙ্গে পুজো মানেই উত্তর কলকাতার নস্টালজিয়া। পরবর্তী প্রজন্মকে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের পাঠ দেওয়া।’ এভাবেই এবছর শুরু হতে চলেছে ৯৪ বছর ধরে চলা উত্তর কলকাতার সাবেকি পুজোর নতুন অধ্যায়। থিম, ইতিহাস, কণ্ঠ এবং স্মৃতি, সব মিলিয়ে মহালয়ার ভোরে ফিরে আসবে এক অতুলনীয় বাঙালি ধারা।
❤ Support Us