- দে । শ
- এপ্রিল ৬, ২০২৪
ভক্তের শ্রাদ্ধে স্বয়ং ভগবান ! কী ইতিহাস লুকিয়ে ৪৫০ বছরের পুরনো বাংলার ঘোষ ঠাকুরের মেলায় ?
২৪ বছর ধরে এখানে আখড়া বসাচ্ছেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। আখড়ার নাম শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য সেবাসমিতির আখড়া

ভক্তের শ্রাদ্ধ করছেন ভগবান। এমনই অভিনব দৃশ্যের দেখা মেলে কাটোয়ার অগ্রদ্বীপে ভাগীরথী লাগোয়া গোপীনাথ মন্দিরে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এখানে বাঁশি ছেড়ে কাছা পরে তাঁর পরমভক্ত পদকর্তা গোবিন্দ ঘোষের শ্রাদ্ধ করেন। করেন পিণ্ডদান। ফি-বছর চৈত্র মাসের কৃষ্ণা একাদশী তিথিতে এই শ্রাদ্ধবাসরকে ঘিরে বসে সপ্তাহব্যাপী মেলা। ৪৫০ বছরের পুরনো এই মেলা ‘ঘোষ ঠাকুরের মেলা’ নামেও পরিচিত।
জনসমাগমের ভিত্তিতে ২ বর্ধমান জেলার সবথেকে বড় রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় (গঙ্গাসাগরের পর) মেলা এটি। সমাবেশ হয় প্রতিবেশী বাংলাদেশ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের অন্তত ৫ লক্ষ মানুষের। বসে সার সার বাউল ও কীর্তনের আখড়া। ২৪ বছর ধরে এখানে আখড়া বসাচ্ছেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। আখড়ার নাম শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য সেবাসমিতির আখড়া। এখানে আসা পুণ্যার্থীদের চিঁড়েভোগ ও অন্নভোগেরও ব্যবস্থা করেন স্বপনবাবু। তাঁর সাফ কথা, ‘আমার আখড়ায় কোনওরকম রাজনীতির আলোচনা নিষিদ্ধ। শুধু নাম-গান হয়।’
মেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিকঠাক রাখতে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানালেন কাটোয়ার এসডিপিও কাশীনাথ মিস্ত্রি। ভাগীরথীর ২ পাড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। মোট ১৬টি ফেরিঘাট তৈরি হয়েছে। পারাপারের জন্য ২০টি নৌকা ও ২টি ভেসেল রাখা হয়েছে। কোনও সমস্যা হলে চটজলদি ব্যবস্থার জন্য রয়েছেন সিভিল ডিফেন্সের কর্মী।
মেলার উৎপত্তি সম্পর্কে কাটোয়ার প্রাচীন ইতিহাস গবেষক রণদেব মুখার্জির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গোবিন্দ ঘোষ ছিলেন পরম বৈষ্ণব ও চৈতন্য মহাপ্রভুর অন্যতম পার্ষদ। একমাত্র সন্তান গোপীনাথের মৃত্যুর পর শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন গোপীনাথ। শুধু ভাবতে থাকেন, তাঁর মৃত্যুর পর কে মুখাগ্নি করবে, কেই-বা শ্রাদ্ধকর্ম করবে! ভক্তের এমন অবস্থা দেখে স্বপ্নে সাড়া দেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। অভয় দেন, গোবিন্দর মৃত্যুর পর তিনিই যাবতীয় শ্রাদ্ধকর্ম করবেন। স্বপ্নাদেশ মেনে গোবিন্দ ঘোষের প্রয়াণের পর আনুমানিক ১৫৮১ সাল থেকে প্রত্যেক বছর কৃষ্ণকে কাছা পরিয়ে শ্রাদ্ধবাসরের আয়োজন করেন ভক্ত-সেবাইতরা।
❤ Support Us