- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩
গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে জাতিসংঘের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে ভারত
ভারত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি সমস্ত বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়েছে এই প্রস্তাবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য সর্বসম্মত প্রস্তাব পাশ হয়েছে। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৫৩টি রাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়েছে। এই প্রস্তাব মেনে চলার কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই, তবে এই প্রস্তাবের রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এই প্রস্তাব পাশের মধ্য দিয়ে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ সম্পর্কে বিশ্বের মতামত প্রতিফলিত হয়েছে।
গাজায় অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির দাবিতে এই প্রস্তাবটি আলজেরিয়া,বাহেরিন,ইরাক, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরবশাহী এবং ফিলিস্তিন সহ বেশ কয়েকটি দেশ দ্বারা প্রস্তাবটি সমর্থিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলসহ ১০টি দেশ এর বিপক্ষে ভোট দেয়, আর ২৩টি দেশ বিরত থাকে।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেছেন, “সাধারণ পরিষদ থেকে পাঠানো শক্তিশালী বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে এটি একটি ঐতিহাসিক দিন।”
খসড়া প্রস্তাবে হামাসের কথা উল্লেখ করা হয়নি, ইসরায়েলের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র যুক্তরাষ্ট্র অনুচ্ছেদের সাথে খসড়াটিতে একটি সংশোধনী প্রস্তাব করার জন্য প্ররোচিত করে: “৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ইসরায়েলে সংঘটিত হামাসের জঘন্য সন্ত্রাসী হামলা, নিরীহ মানুষদের বন্দি করাকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান এবং নিন্দা করে।”
জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রুচিরা কাম্বোজ জানিয়েছেন, ভারত সবেমাত্র সাধারণ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। মর্যাদাসম্পন্ন এই সংস্থাটি যে পরিস্থিতির বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে তার অনেক মাত্রা রয়েছে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল এবং সেই সময় থেকে বন্দিদের জন্য উদ্বেগ ছিল। এই যুদ্ধে একটি বিশাল মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে এবং বেসামরিক মানুষের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব পরিস্থিতিতেই আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলার বিষয়টি রয়েছে এবং একটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তিপূর্ণ ও দ্বি-রাষ্ট্র প্রচেষ্টা রয়েছে যা ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজছে। কাম্বোজ আরও বলেন, ভারত এই অঞ্চলে যুদ্ধের গুরুতর প্রভাব মোকাবেলার জন্য অভিন্ন ভিত্তি খুঁজে বের করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দেখানো ঐক্যকে স্বাগত জানায়।
কাম্বোজ আরও জানিয়েছেন, “আমাদের চ্যালেঞ্জ, এই অস্বাভাবিক কঠিন সময়ে, সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কীসের মুখোমুখি হচ্ছে তার গুরুত্ব এবং জটিলতা জাতিসংঘের সনদের ৯৯ অনুচ্ছেদ আহ্বান করে মহাসচিব দ্বারা উল্লিখিত হয়েছে। তাই আমরা এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই। সত্য এটাই যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্য এই মুহূর্তে এই অঞ্চলের মুখোমুখি একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য একটি সাধারণ ভিত্তি খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছে।”
অক্টোবরে ইসরায়েল-হামাস সংঘর্ষে অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো অনুরূপ প্রস্তাবে ভারত বিরত ছিল। বিরত থাকা সত্ত্বেও, ভারত গাজা উপত্যকায় নিরবচ্ছিন্ন মানবিক প্রবেশের আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একই ধরনের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেওয়ার কয়েকদিন পর গতকাল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভোট হয়। সংযুক্ত আরব আমিরশাহী দ্বারা উত্থাপিত ইউএনএসসি রেজোলিউশন এবং ৯০ টিরও বেশি সদস্য রাষ্ট্র দ্বারা সমর্থিত ১৩টি অনুকূল ভোট পেয়েছে, যেখানে যুক্তরাজ্য বিরত ছিল।
৭ অক্টোবর হামাস একটি চাঞ্চল্যকর স্থল-সমুদ্র-বিমান আক্রমণ শুরু করার পর ১২০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি, বেশিরভাগ বেসামরিক লোক নিহত হয়। প্রতিশোধ হিসাবে, ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় হামাসের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে, এটা ভেবে অবিরত বিমান হামলার মাধ্যমে ১৮০০০ জনেরও বেশি মানুষকে প্রাণে মেরেছে যার মধ্যে ৭০ শতাংশ ঘনবসতিপূর্ণ ফিলিস্তিনি ছিটমহলে বসবাসকারী নারী ও শিশু রয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে ১৩ সদস্য দেশ যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল, যুক্তরাজ্য ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল। প্রস্তাবটি উত্থাপন করে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। এরপরই সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটির পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
এবারের প্রস্তাবে গাজায় দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি দু’টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছিল আমিরশাহী। প্রথমত, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সব অসামরিক লোকজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দ্বিতীয়ত, অবিলম্বে ও শর্তহীনভাবে সব বন্দিকে মুক্ত করা।
❤ Support Us