- এই মুহূর্তে বি। দে । শ
- মার্চ ২৬, ২০২৫
ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ মার্কিন ধর্মীয় স্বাধীনতা প্যানেলের

যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন, ভারতের সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ খারাপ হওয়ার অভিযোগে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে। প্যানেল একই সাথে ভিয়েতনামকে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের জন্য ‘বিশেষ উদ্বেগজনক দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
মার্কিন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন জানিয়েছে, ভারতে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ ক্রমাগত অবনতি ঘটছে। বিশেষ করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং, শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, কমিশন ‘র’-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্যানেলের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কমিউনিস্ট শাসিত ভিয়েতনাম, ধর্মীয় বিষয়গুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। প্যানেল, ভিয়েতনামকে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের জন্য ‘বিশেষ উদ্বেগজনক দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ভারত, ভিয়েতনামের সঙ্গে চিনের প্রসঙ্গেও একই উদ্বেগ ফুটে উঠেছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন তাঁর বার্ষিক রিপোর্টে বলেছে, ‘২০২৪ সালে, ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতি অব্যাহতভাবে খারাপ হতে থাকে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ আর বৈষম্য ক্রমাগত বাড়ছে।’ রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, ‘ গত বছরের নির্বাচনী প্রচারে হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ভারতীয় জনতা পার্টি — ‘মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে লাগাতার ঘৃণা ছড়িয়েছে , মিথ্যা তথ্য প্রচার করেছে। বিশেষত, গত বছরের এপ্রিল মাসে মোদি মুসলমানদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, মুসলিমদের জন্মের হার বেশি, যা ভারতীয় জনগণের জন্য হুমকি। মোদির এ ধরনের বক্তব্য নির্বাচনী স্বার্থে ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে আক্রমণের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।’ এছাড়াও প্রতিবেদনে, ভারতীয় সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতন ও ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘনের উদাহরণও তুলে ধরা হয়েছে, যার মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করা, মুসলিম সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব আইন ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত উল্লেখ রয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ করে আসছেন। তাঁরা একাধিকবার অভিযোগ করেছেন , ভারতে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য, ধর্মান্তর বিরোধী আইন আর মুসলমানদের মালিকানাধীন সম্পত্তি দখল করার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বুধবার নয়াদিল্লি এই রিপোর্টের দাবিকে সম্পূর্ণভাবে নস্যাৎ করে বলেছে, ‘এই রিপোর্ট পক্ষপাত দুষ্ট এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। ভারত সরকার দাবি করেছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি ও তাঁর সরকারের নীতি, যেমন বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি, ভর্তুকি স্কিম সহ নানান জনমুখী প্রকল্প সবার জন্য উপকারী। দেশের সকল সম্প্রদায়কে সমানভাবে উপকৃত করছে। ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে থাকা মোদি এসব অভিযোগের অস্বীকার করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জইয়সওয়ালএক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইউএসসিআইআরএফ দীর্ঘদিন ধরে, ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যে ও ভ্রান্তিমূলক অভিযোগ আনছে। বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে ভারতের বৈচিত্র্যময় সমাজের উপর আক্রমণ করছে। এটি ইচ্ছাকৃতভাবেই নির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে তাঁরা করছে। এর সাথে ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত প্রকৃত উদ্বেগের কোনো সম্পর্ক নেই।’
রয়টার্স জানিয়েছে, বিশ্লেষকদের বরাতে জানা যাচ্ছে, এশিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় দীর্ঘদিন ধরে নয়াদিল্লিকে সহায়ক শক্তি হিসেবে দেখছে ওয়াশিংটন। সে কারণে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বরাবরই এড়িয়ে গেছে। তবে এই সংস্থা সুপারিশ বাধ্যতামূলক না হওয়ায় ‘র’-এর ওপর মার্কিন সরকার যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না, তা জোর দিয়েই বলা চলে। ২০২৩ সালের পর থেকে, যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডায় বসবাসকারী শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ভারত যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক আরো জটিল হয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন, ভারতের এক সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিকাশ যাদবকে, একটি অক্ষম হত্যার ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত করেছে। তবে ভারত বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখে আসছে দেশটি। কমিশন সুপারিশ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ভারতকে ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘনের জন্য ‘বিশেষ উদ্বেগজনক দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করুক। পাশাপাশি, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস-এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে। ভারতের গুপ্তচর সংস্থা আর অ্যাণ্ড ডাব্লিউ, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি মূলত বিদেশী সরকার, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করে। তবে এই কমিশন, একটি দ্বিদলীয় মার্কিন সরকারী পরামর্শক সংস্থা, যারা বিদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ করে ও নীতিগত সুপারিশ প্রদান করে। ফলে তাঁদের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভারতকে চটাতে চাইবে না বলেন মনে করা হচ্ছে।
❤ Support Us