- ধা | রা | বা | হি | ক রোব-e-বর্ণ
- জুলাই ৭, ২০২৪
ভোর ভয়ি। পর্ব ১২: কলেজের লড়াই থেকে কৃষকের যুদ্ধে

১১ নভেম্বর ১৯৬৭, শহিদ মিনারের নীচে সমাবেশে চারু মজুমদার। সঙ্গে সুশীতল রায়চৌধুরী এবং সরোজ দত্ত
বায়োস্কোপের বাকসো। রঙের নকশা চটে খসে এখানে-ওখানে বেরিয়ে পড়েছে মৃত্যু-প্রস্তাব। বাকসোর গোল জানালার ঢাকনা কবে যেন হারিয়ে গিয়েছে। সেখানে তাকিয়ে আছে একজোড়া চোখ। চোখের পর্দায় আসে শূন্য খেয়াঘাট, দূরে দূরে সবল ডানার চিল, অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র, চাহে কোই মুঝে জংলি কহে, আরও কত রক্ত চাই তব প্রীতি তরে, ধানের ক্ষেতে মশাল আগুন, লকআপের আর্তনাদে বাতাস কাঁপে, শিক্ষকদের চেয়ারে ভাঙনের শব্দ, রং ও রেখায় জাগে পুরাণপ্রতিমা, উন্নয়ন আর উৎসব শুষে খায় জলাভূমি, কুয়াশার ওপারে পলিথিনে মোড়া চাঁদ, জোড়া চোখ ঘটনার ঢেউয়ে ঢেউয়ে সাঁতরায়, দূরে কোথাও আগুনবরণ আকাশে বাজে ‘ভোর ভয়ি’।
♦ পর্ব বারো ♦
ছাত্র সংসদের নির্বাচন৷ কলেজের আবহাওয়া উত্তপ্ত হচ্ছে ৷ গলির ভেতর কলেজ ৷ দেওয়ালগুলো গায়ে গায়ে ৷ বেশি নয়, পাঁচ-সাতজন গলা খুলে স্লোগান দিলে সেটা এ-দেওয়ালে সে-দেওয়ালে ধাক্কা খেতে খেতে গমগমিয়ে ওঠে, প্রবল হয় কলরব ৷ কলেজের ভোট এখন আর ইউনিয়ন দখলের লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, হয়ে উঠেছে মতাদর্শগত যুদ্ধের ক্ষেত্র, কৃষকের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের সংগ্রাম প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ছাত্রদের উচ্চারণে ৷ একদিকে ‘কৃষিবিপ্লবের আগুন দিকে দিকে ছড়িয়ে দাও, নকশালবাড়ির আগুনে সংশোধনবাদীদের পুড়িয়ে ফেলো, আধাঔপনিবেশিক আধাসামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে ফেলো গুঁড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি ৷ অন্যদিকে ‘শ্রমিক কৃষক ছাত্র ঐক্য জিন্দাবাদ, জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব জিন্দাবাদ, প্রতিবিপ্লবী হঠকারীরা নিপাত যাক, সিআইএ-র দালাল দূর হটো’ ইত্যাদি ৷ এই যুদ্ধের প্রেক্ষিত রচিত হয়েছে প্রেসিডেন্সির ছাত্র আন্দোলন এবং বসন্তের বজ্রনির্ঘোষের প্রভাবে ৷
বামপন্থী ছাত্র সংগঠন বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল স্টুডেন্টস ফেডারেশন (বিপিএসএফ) দু-ভাগ হয়ে গেছে ৷ সেই মুহূর্তে তারা পরস্পরের প্রতিপক্ষ ৷ বঙ্গবাসী কলেজে কংগ্রেস-পোষিত ছাত্র পরিষদ (সিপি) ছিল না ৷ ছিল ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া (এনএসইউআই)৷ ছাত্র পরিষদের নামান্তর ৷ ষণ্ডামার্কা বর্ষীয়ান পড়ুয়ারা (বছর বছর একই ক্লাসে থেকে যাওয়া) এই সংগঠনের অ্যাসেট ৷ ভোটে ওরাও লড়ত ৷ ওদের স্লোগানে দেশপ্রেমের চেনা চড়া বুলি আর ‘রাশিয়ার দালাল, চিনের দালাল’ ইত্যাদি ৷ সে একটা সময়, যখন ছাত্র-যুবরা ধান্দা ছাড়া কংগ্রেস করত না ৷ পরিস্থিতি থেকে যুবকরা জেনেছে কংগ্রেস সাধারণ মানুষের শত্রুপক্ষ ৷
১৬ ডিসেম্বর ১৯৬৭, নকশালবাড়ির কৃষক সংগ্রাম অবলম্বনে উৎপল দত্তের ‘তীর’ নাটক মঞ্চস্থ হল মিনার্ভায়৷ অনেক সন্ত্রাস, ব্যাপক ধরপাকড় সত্ত্বেও নাটক বন্ধ করা যায়নি৷ সেদিনের স্মৃতিচারণায় সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সে এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা৷ একটা শ্বাসরুদ্ধ প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি৷ রাজ্যে ব্যাপক ধরপাকড়, খুনজখম চলছে৷ প্রতি মুহূর্তে থিয়েটার আক্রান্ত হবার আশঙ্কা৷ অভিনেতা-অভিনেত্রীগণ আতঙ্কগ্রস্ত৷ কিন্তু আমার দায়িত্ব রয়েছে৷ থিয়েটার চালিয়ে যেতে হবে৷ গ্রেফতার হবার পর উৎপলদা চিঠি লিখে পাঠালেন—নাটক যেন বন্ধ না হয়৷ কারণ পেশাদার থিয়েটার বন্ধ হতে পারে না৷’ উৎপল দত্ত গ্রেপ্তার হবার পরও ‘তীর’ বন্ধ হয়নি৷
বিপিএসএফ-এর অফিসিয়াল অর্থাৎ সিপিএম-অনুগামী অংশটি গোড়ায় বৃহদাকার ছিল ৷ পরে শক্তিক্ষয় হয় ৷ নকশালবাড়ির রাজনীতিতে বিশ্বাসীরা ক্রমে প্রবলতর হয়ে ওঠে ৷ এই হয়ে-ওঠার মূলে কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে ৷ এক. ১৪ জুন ১৯৬৭, রামমোহন লাইব্রেরি হলে গণকনভেনশনে গঠিত হল নকশালবাড়ি ও কৃষক সংগ্রাম সহায়ক কমিটি ৷ এই কনভেনশন সফল করার ক্ষেত্রে ছাত্র-যুবদের বড়ো ভূমিকা ছিল ৷ ভালোভাবে বাঁচবার মতো একটা পরিবেশের ইশারা যেন পাচ্ছে ছাত্রসমাজ ৷ দুই. ৫ জুলাই ১৯৬৭, প্রকাশিত হল বিপ্লবীদের মুখপত্র ‘দেশব্রতী’৷ তিন. ১১ নভেম্বর ১৯৬৭, মনুমেন্টের নীচে ময়দানের সমাবেশে হাজির হলেন চারু মজুমদার ৷ বললেন, আমি নকশালবাড়ির নেতা নই৷ নকশালবাড়ির নেতা কমরেড কানু সান্যাল, কমরেড জঙ্গল সাঁওতাল, কমরেড খোকন মজুমদার, কমরেড কদম মল্লিক ও আরও অনেক কৃষক নেতা৷ এক ব্যতিক্রমী নেতার কণ্ঠস্বর শুনল যুব-জনতা৷ চার. ১৬ ডিসেম্বর ১৯৬৭, নকশালবাড়ির কৃষক সংগ্রাম অবলম্বনে রচিত উৎপল দত্তের ‘তীর’ নাটক মঞ্চস্থ হল মিনার্ভায়৷ অনেক সন্ত্রাস, ব্যাপক ধরপাকড় সত্ত্বেও নাটক বন্ধ করা যায়নি৷ সেদিনের কথা বলেছেন সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতিচারণায়: ‘সে এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা৷ একটা শ্বাসরুদ্ধ প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি৷ রাজ্যের টালমাটাল অবস্থায় ব্যাপক ধরপাকড়, খুনজখম, সন্ত্রাস চলছে ৷ প্রতি মুহূর্তে থিয়েটার আক্রান্ত হবার আশঙ্কা৷ নাটক বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷ অভিনেতা-অভিনেত্রীগণ আতঙ্কগ্রস্ত ৷ মাঝে মাঝেই বিভিন্ন কলাকুশলীগণ বলছেন—কাল থেকে আমি আর আসব না৷ একটা মধ্যবিত্তসুলভ ভীতি৷ কিন্তু আমার দায়িত্ব রয়েছে৷ থিয়েটার চালিয়ে যেতে হবে৷ গ্রেফতার হবার পর উৎপলদা আমাকে চিঠি লিখে পাঠালেন—নাটক যেন বন্ধ না হয় ৷ কারণ পেশাদার থিয়েটার বন্ধ হতে পারে না ৷’ উৎপল দত্ত গ্রেপ্তার হবার পরও ‘তীর’ বন্ধ হয়নি ৷

নকশালবাড়ির নেতা কমরেড কানু সান্যাল, কমরেড জঙ্গল সাঁওতাল, কমরেড খোকন মজুমদার, কমরেড কদম মল্লিকের ভাই কুদন মল্লিক। আলোকচিত্র সৌজন্য নাজেস আফরোজ
শৈবাল মিত্র লিখছেন, ‘নকশালবাড়ির ঘটনার সময়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকারের শাসন চলছিল ৷ এই ফ্রন্টশাসিত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শরিক ছিল দুই কমিউনিস্ট পার্টি ৷ প্রবীণ কমিউনিস্ট ও বামপন্থীরা মন্ত্রী হয়েছিলেন ৷ দারুণ প্রত্যাশা আর আবেগ নিয়ে রাজ্যের মানুষ এই কমিউনিস্ট বামপন্থী নেতৃত্বের দিকে তাকিয়েছিল ৷ কিন্তু নকশালবাড়ির ঘটনার পর এক উত্তাল যুদ্ধের আবির্ভাব আসন্ন বুঝে কমিউনিস্ট নেতৃত্ব নিয়মতান্ত্রিক, আপসমুখী হয়ে গেল ৷ দক্ষিণপন্থীদের মতো তারা হয়তো বলল না যে, ঈশ্বর থাকেন মন্দিরে আর ভাঁটিখানায়, মানিব্যাগ আর পতিতালয়ে, তার বদলে এই বামপন্থীরা নতুন কৌশল নিল ৷ বাঁ-দিকে ফিরে জঙ্গি কথা এবং ডাইনে ঘুরে আপসের চুক্তি তারা একই সঙ্গে সেরে নিল ৷ তারা বলল, আমরাও সংগ্রাম চাই, কিন্তু আপাতত সংসদীয় গণতন্ত্রই একমাত্র পথ ৷ কেউ প্রশ্ন করলে জবাব তৈরি- সময় হয়নি ৷ সময় কবে হবে ? এই প্রশ্ন যে তুলল, তাকেই হঠকারী, ষড়যন্ত্রী সিয়া, পুলিশের চর এবং আরো নানা অভিযোগে চিহ্নিত করা হল
সেই সময়টা বুঝে নেবার জন্য বিপ্লবী নেতা ও লেখক শৈবাল মিত্রের লেখা থেকে একটা অংশ পড়া যেতে পারে ৷ শৈবালদা লিখছেন, ‘নকশালবাড়ির ঘটনার সময়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকারের শাসন চলছিল৷ এই ফ্রন্টশাসিত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শরিক ছিল দুই কমিউনিস্ট পার্টি ৷ প্রবীণ কমিউনিস্ট ও বামপন্থীরা মন্ত্রী হয়েছিলেন ৷ দারুণ প্রত্যাশা আর আবেগ নি্য়ে রাজ্যের মানুষ এই কমিউনিস্ট বামপন্থী নেতৃত্বের দিকে তাকিয়েছিল ৷ কিন্তু নকশালবাড়ির ঘটনার পর এক উত্তাল যুদ্ধের আবির্ভাব আসন্ন বুঝে কমিউনিস্ট নেতৃত্ব নিয়মতান্ত্রিক, আপসমুখী হয়ে গেল ৷ দক্ষিণপন্থীদের মতো তারা হয়তো বলল না যে, ঈশ্বর থাকেন মন্দিরে আর ভাঁটিখানায়, মানিব্যাগ আর পতিতালয়ে, তার বদলে এই বামপন্থীরা নতুন কৌশল নিল ৷ বাঁ-দিকে ফিরে জঙ্গি কথা এবং ডাইনে ঘুরে আপসের চুক্তি তারা একই সঙ্গে সেরে নিল ৷ তারা বলল, আমরাও সংগ্রাম চাই, কিন্তু আপাতত সংসদীয় গণতন্ত্রই একমাত্র পথ ৷ কেউ একজন প্রশ্ন করল, কেন? জবাব তৈরি, নেতৃত্ব বললেন, সময় হয়নি ৷ সময় কবে হবে? এই প্রশ্ন যে তুলল, তাকেই হঠকারী, ষড়যন্ত্রী সিয়া, পুলিশের চর এবং আরো নানা অভিযোগে চিহ্নিত করা হল৷ বোঝা গেল, মূল লড়াইকে এড়াবার জন্যই এরা চিরকাল বিপ্লবী কথা বলেছে ৷ …সাধারণ মানুষ দেখল, আদর্শ আর আমলাতন্ত্র একাকার হয়ে গেলে কী নিদারুণ শূন্য হয়ে যায় চারিপাশ ৷ আদর্শবাদী হাতের মার আদর্শবিহীন হাতের মারের চেয়ে আরও নিষ্ঠুর, হৃদয়হীন, প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে ৷…কেন্দ্রের কাছ থেকে বাড়তি দু-ছটাক চাল আর একছটাক চিনি পাওয়ার জন্য ছেষট্টি সালের খাদ্য আন্দোলনে প্রায় পঞ্চাশজন মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছিল ৷ নতুন প্রজন্ম বুঝতে শিখল ভদ্র ভালো কথায় কোনো কাজ হবে না ৷ চোখ লাল, মুঠো শক্ত করে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে ৷ তাদের হাড়ে, মজ্জায়, রক্তমাংসে, নিশ্বাসে প্রশ্বাসে হিংসা ঘনীভূত হতে থাকল ৷’ (ফিরে দেখা) উদ্ধৃতি দীর্ঘ হলেও সেইসময়ের রাজনীতির দ্বন্দ্বগুলি বুঝে নেবার পক্ষে, বিপ্লবভীরু বাম প্রবীণদের বিপ্লবী বুকনি আর তরুণ প্রজন্মের ক্রোধ আক্রোশ অস্থিরতা অসহিষ্ণুতার সংঘাতময় চিত্রটি অনুধাবন করবার পক্ষে মনে হয় প্রয়োজনীয় ৷
১৯৬৮ সালের প্রথমদিকে বঙ্গবাসীতে নির্বাচন হল ৷ অবিশ্বাস্য গরিষ্ঠতায় জয়ী হল নকশালবাড়ির অনুগামী স্টুডেন্টস ফেডারেশন ৷ দীপাঞ্জন রায়চৌধুরীর স্মৃতিচারণায় পাই, ৬৮টি আসনের মধ্যে ৬০টি আসনে নকশালপন্থী প্রার্থীরা জিতেছিল৷ এই ফলাফল সেদিনের তরুণদের ভাবনার গতি-প্রকৃতির গ্রাফটি তুলে ধরে৷ নির্বাচনের কয়েকদিন আগে কলেজে একটি ঘটনা ঘটে ৷ বিপ্লবী রাজনীতির অনুগামী ছাত্রদের একজন অপহৃত হয় ৷ কলেজে আসার পথে তাকে তুলে নেওয়া হয় বলে জানা যায় ৷ প্রথমে ভাবা হয়, এটা সরকারি এসএফ-এর কাজ ৷ কিন্তু তাদের তরফে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এধরনের বোকামি তারা করবে না ৷ প্রতিপক্ষের কাউকে অপহরণের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তারা সেটা জানে ৷ বিশেষ করে কলেজের ভোটের মুখে ৷ পরে জানা গেল, কাজটা করেছে এনএসইউআই ৷ ছাত্র-সমর্থনহীন এই সংগঠনটি সন্ত্রাস সৃষ্টি করে ভোট বানচালের ফন্দি এঁটেছিল ৷ নকশালপন্থী ছাত্র সংগঠনের একটি অংশ কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করা, পুলিশে অভিযোগ জানানো এরকম নিয়মতান্ত্রিক পথে চলার কথা ভাবে ৷ অন্য অংশ সরাসরি ‘পালটা মারে’র কথা বলে ৷ এনএসইউআই-এর কাউকে তুলে নাও, সঙ্গে সঙ্গে মীমাংসা হয়ে যাবে ৷
নিজেদের মধ্যে উত্তেজিত আলোচনা চলছে যখন, প্রেসিডেন্সির কয়েকজন ছাত্রনেতা হাজির হলেন ৷ তাঁদের মধ্যে ছিলেন অসীম চট্টোপাধ্যায় ৷ সবার ‘কাকা’৷ প্রেসিডেন্সি কলেজে তাঁকে দেখেছি বারদুয়েক ৷ অচিন্ত্যদার সঙ্গে কথা বলতে ৷ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ৷ এদিন একেবারে পাশে ৷ একমাথা কোঁকড়া চুল ৷ গালভরতি দাড়ি ৷ পরনে পায়জামা পাঞ্জাবি ৷ কাকাকে ঘিরে তৈরি হয় জমায়েত ৷ সম্ভাব্য অপহরণকারীদের খবরাখবর নেওয়া হতে থাকে ৷ একটা সংঘর্ষ আসন্ন হয়ে উঠতে থাকে ৷ কাকা যখন এসেছে, কিছু একটা হবেই ৷ ছাত্রসমাজে ‘কাকা’ তখনই মিথ ৷ তাঁকে নিয়ে বন্ধুরা গল্প বানায়, কিছু শোনা, কিছু কল্পনা ৷ বিস্তর হাঁকডাক, ছোটাছুটির পর সঙ্ঘর্ষের মেজাজ হঠাৎই মিলিয়ে গেল ৷ স্কট লেনের বাজারের দি্ক থেকে ভেসে এল ‘নকশালবাড়ি লাল সেলাম’৷ গোটা কলেজের মুখ ঘুরে গেল দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ৷ অপহৃত ছাত্রনেতা ফিরছেন ৷ সঙ্গে কয়েকজন ছাত্র ৷ কাকা এগিয়ে গেলেন ছাত্রনেতার দিকে ৷ স্লোগান চলছে ৷ কংগ্রেসিদের গুন্ডামির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে স্লোগান ৷ কলেজ গেটে কাকার সঙ্গে আলোচনা হল বঙ্গবাসীর ছাত্রনেতাদের ৷ কিছুক্ষণের মধ্যে শান্ত হয়ে গেল পরিবেশ ৷
অচিন্ত্য গুপ্ত তখন খুব সম্ভবত জেলে ৷ তাঁকে দেখিনি সেদিন ৷ ভোটের সময়ও দেখিনি ৷ ইউনিয়ন দখলে এল নকশালপন্থীদের ৷ কিন্তু পুরো সময় তাঁরা কাজ করতে পারেননি বোধহয় ৷ গ্রামে যাবার ডাক দিয়েছে পার্টি ৷ কৃষকদের লড়াইয়ের পাশে দাঁড়াতে হবে ৷ সিপিএম যাদের সিআইএ-র চর বলে কুৎসা করত, তারা গৃহকোণের যাবতীয় সুখ শান্তি ছেড়ে সম্পূর্ণ অচেনা গ্রামজীবনের সশস্ত্র লড়াইয়ে চলল ৷
♦—♦♦—♦♦—♦♦—♦
ক্রমশ…
আগের পর্ব পড়ুন: পর্ব ১১
❤ Support Us