Advertisement
  • ধা | রা | বা | হি | ক রোব-e-বর্ণ
  • ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪

মাটি ব্রতের আখ্যান। পর্ব ১৪

সেই ধ্বনিই যেন সংকেত। নড়ে উঠল মিছিলদেহটা, পা নড়লো। এবার হাঁটা। অতি ধীরে। চত্বর ছাড়িয়ে তিনমুখো রাস্তা, দুপাশে অতিবপু অট্টালিকার দল পরপর দাঁড়িয়ে....তারপর

সুধীরকুমার শর্মা
মাটি ব্রতের আখ্যান। পর্ব ১৪

।। ছ্যাতলাকান্ড ।।

পাচির ফোড় চিক কোইর

স্টেট জেনারেল হাসপাতালের মেটারনিটি ওয়ার্ডে ভিড় সর্বক্ষণ থাকেই।

   উদ্বেগ মাখা মুখে যাদবচন্দ্র দাঁড়িয়ে আছেন, স্ত্রী চারুশীলাও। এই বারান্দায় ভিতরের রোগীদের আত্মীয়স্বজনের বসবার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। ঘন্টাখানেক হল কন্যা স্নেহলতাকে ভর্তি করেছেন ওঁরা। ডাক্তারবাবু সাবধান করে দিয়েছিলেন আগেই — প্রসববেদনা মনে হলেই দেরি করবেন না। হাসপাতালে নিয়ে যাবেন।অবহেলায় বিপদ হতে পারে। তখন মুশকিল। — উনি কম কথার মানুষ, যা বলেছেন তাই ঢের। তাও একটু যোগ করেছিলেন — গর্ভবতী মায়ের সেবাযত্ন ঠিকমত করেননি নাকি ? এরকম হল ?

   চারুশীলার মুখ শুকিয়ে গেছিল। কোনওরকমে সামাল দিতে ভাঙা ভাঙা জবাব দিয়েছিলেন— আমরা ছাপোষা মানুষ। সাধ্যিমত চেষ্টা করিছি। বাকিটা মেয়ির কপাল।

   আজ স্নেহ একটু বেসামাল বোধ করতেই রিক্সা ডেকে সোজা…। এখানকার ডাক্তারবাবু, নার্স দিদিমনিদের চোখে চোখে থাকবে। শুনতে পেয়েছেন স্নেহর ব্যাথাটা এখন উপশমে আছে। চিন্তা লাঘব হওয়ার কথা, হল না। নার্স দরজা খুলে বেরিয়ে বলে গেছেন এখানেই থাকতে। যখন তখন রোগীকে রুমে নিয়ে যেতে হতে পারে।

   চারুশীলা এদিক ওদিক চোখ ফেরালেন। তারই মতো তিন চারজন। হাঁটার জায়গা কমে গেছে বারান্দায়। উত্তেজনা, ভয় প্রত্যেকেরই চোখে মুখে। মনের চাপ এড়াতে ইচ্ছে হল ওদের সঙ্গে একটু গল্পগাছা করেন। ভাবলেন, পরস্পরের খোঁজ নিলে ওদেরও জট সামান্য হলেও ঢিলে হতে পারে। ভিড়ে বেশ কয়েকটা যুবকও ছিল। এক মহিলার দিকে এগিয়ে গেলেন চারুশীলা — দিদি, আপনার মেয়ি?

   — হ্যাঁ। নিয়ে গেছে লেবার রুমে। এখনও খবর পাইনি। চিন্তা হয় তো ! বাড়িতেই জল ভাঙতে শুরু করেছিল। তবু কেন যে এত দেরি হচ্ছে !

   — ভাববেন না, দিদি। ভগবানের ইচ্ছিতে সব ঠিক হয়ি যাবে।

   — তাই যেন হয়, দিদি। আপনার ?

   — আমারও মেয়ি — বললেন চারুশীলা — পেথম বাচ্চা। বেডেই রাখিছে। নেয় নাই এখনো। কপালে করজোড় — ঠাকুর, সকলেরি ভালো রাখো, সোস্থ রাখো।

   হঠাৎ পাওয়া সঙ্গিনীও নমস্কার করে।

   — দিদি, আমার মেয়িটারে আশেব্বাদ করেন। ও বড়ো রুগা। ডাক্তার বলিছেন রক্তও নাকি কম। — চারুশীলা ভেঙে পড়ছিলেন।

   মহিলাটি তার হাত ধরলেন — ভেবেন না, দিদি, কিছু ভেবেন না। ভালো হবে, স–অ–ব ভালো হবে।

   — ও ছেলেটি কে, দিদি ? জামাই?

   — না,না — হেসে ফেললেন মহিলা এবার — আমার ছেলে। বোনকে খুব ভালোবাসে তো। ঘরে থাকতে পারলো না। চলে এসেছে।

   মুষড়ে পড়লেন শ্রীমতী যাদবচন্দ্র।

   গত তিন চারদিন ধরেই স্নেহলতার অতিভার শরীরটার থিরথিরানি দেখা যাচ্ছিল। একেবারে ভরা মাস। অভিজ্ঞতার জোরে মা বুঝতে পেরেছিলেন, এবার মেয়েকে হাসপাতালে নিতে হবে। কাল না হয় পরশু।

যাদবচন্দ্রের এসব কথা বলা হয়নি। এখন মনে হচ্ছে— কী এমন হতো! একটু অন্য গোল হতো হয়তো। তেমন হলে এই না ভূমে পরবাসী হয়ে এমন নিরাকার হয়ে বেঁচে থাকতে হতো না। ক্লান্ত মনে হয় নিজেকে, রাশ টানতে পারছেন না, বড় নিঃসঙ্গ লাগছে, —আমরা হিন্দু না, মোচলমানও না, কেবল বাতাসে উড়াউড়ি করতেছি, আমাগের পাকিস্তান হিন্দুস্তান কিছুই নাই, আমরা আস্থানী। — ভাসমান বুদবুদের মতো চিন্তাজটের সরটা ছিঁড়ে গেল হঠাৎ শোরগোলে

   তখনই হরীশকে মনে পড়েছিল। একটু বউঘেষা হয়ে পড়েছে সত্যি, তবু ছেলে যে মায়েরই নাড়িছেড়া ধন। যুক্তি সাজাতে বসেছিলেন মনে মনে। আসলে সময় খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।ওর বাবার হাতে আর আগের মত টাকা পয়স ভাঁড়ার ছিল না। বিভুঁইয়ে এসে থিতু হওয়ার পালায় মেয়ে জামাইয়ের হঠাৎ প্রবেশ অন্য এক সমস্যার হিজিবিজি তৈরি করে ফেলেছিল। এদিকে জামাইএর কাজকম্ম নেই, আয় একেবারে শূন্য। শ্বশুরের আশ্রয়ে থাকতে হয় তাকে। জামাইএরও কি ভালো লাগতো ? কী করবে ? নিরুপায় ছিল। হরীশের উপার্জনের উপর চাপ বাড়ছিল।মাথাটা কাঁধের উপরে ঠিক জায়গায় রাখতে পারেনি বেচারা।

   বউমার দোষও বড়ো করে ধরলে চলে না। তার স্বামী সন্তান আছে। তাদের কথা যে তাকেই ভাবতে হয়। তিনি যেমন স্নেহলতার কথা, যাদবচন্দ্রের কথা ভাবেন এখন স্নেহর জন্যও চিন্তা করছেন। সে সময়ে বউমার মুখটা একটু পাতলা হয়ে পড়েছিল। চারুশীলার নিজেরও কি সংবেদনশীল হওয়ার প্রয়োজন ছিল না ! একটু ছাড়, একটু মানিয়ে নেওয়া! যেত নিশ্চয়ই। শ্বাশুড়ি তিনি। মায়েরই মতো। যে দেশের যেমন রীত। পুত্র পুত্রবধূ এদেশের জলবাতাসে টপাটপ মানিয়ে নিয়েছে। বদলে যাওয়া দুনিয়ায় তিনি আর তার স্বামী পড়ে রইলেন ফেলে আসা খুলনার জগতে। টানাটানিতে সুতোটা ছিঁড়ে গেছে। আজকে এই অবসরে ছেলেটাকে আবার বুকে টানা যায় না!

   হরীশকে নিয়ে হঠাৎ ভাবনঢেউয়ের অন্তরালে চারুশীলার সামান্য বিষয়ভাবনাও ছিল নিশ্চয়ই। এখন জামাই, যা হোক কিছু উপার্জন করছে। পরিমানে ততটা নয় যে প্রসূতি স্ত্রী ও নবজাত সন্তানের ঠিকঠাক পরিচর্যা করার পক্ষে যথেষ্ট। রোজগার কাল পরশু বাড়বেই। স্নেহর বাবা বলেছেন, জামাই বাবাজি অধ্যাবসায়ী। সাফল্য আসবেই। চারুশীলা বিশ্বাস করেন তার স্বামীর ভবিষ্যৎ দৃষ্টি কখনও ভুল হয় না। ডি পি ঘোষের মত মানী মানুষ তাকে আদর করেন।যাদবচন্দ্র বলেছেন — কোন বংশের ছেলে ও। বেয়াই বেয়ানের মত গিয়ানী স্বামীস্তিরি সংসারে কয়টা পাওয়া যায়? — দেশ ছেড়ে চলে না এলে মেয়ে যে তার রাজরানি ছিল। চারুশীলার দুশ্চিন্তা ওজনদারি হয়ে তারই বুক ধড়ফর করাচ্ছে। ডাক্তারবাবু বলেই রেখেছেন, পুষ্টির অভাব আছে মেয়ের। এখন প্রসবকাল শিয়রে। যদি বিপদ আসে ধেয়ে! অনেক টাকার দরকার। দামী দামী ওষুধ কিনতে হবে। তার লক্ষ্মীর ঘটে কি অতটা মজুত আছে! অঙ্কটা কত পরিমান, চারুশীলার কল্পনায় রেল ইনজিনের ধোঁয়ার মত ভকভক করে ফুলে উঠতে থাকে।

   হরীশের বেতন ভালো। গরমেন্টি চাকরী। নানা মাপের উপরি আছে, শুনেছেন চারুশীলা। মায়ের এই অসময়ে ছেলে পাশে থাকলে জোর পেতেন মনে। প্রথম সন্তান। যতই বলে থাকুন, হাতের পাঁচ-আঙুলই সমান, এখন মনকে চুপিসারে জবাবদিহি না করে পারলেন না যে ছেলের উপর দরদ একটু বেশিই ছিল। সে ছেলেও যে বাপের চেয়ে মায়ের নেওটা ছিল। এগুলোও নয় বাদ গেল। বোনটা তো তারই। পিঠোপিঠি দুজনের মিষ্টি খুনসুটি কি একবারও মনে পড়বে না? দাদা হয়ে!

   সাত পাঁচ পাটিগণিতে শেষ পর্যন্ত যাদবচন্দ্রকে অন্ধকারে রেখে এক কান্ড করে বসলেন চারুশীলা। ইনিয়ে বিনিয়ে হরীশকে একটা চিরকূট পাঠিয়ে দিলেন। ছেলের বাসা এই শহরেই, পশ্চিমডাঙায়। দূতী করেছিলেন সরলাকে, ও-পাড়া ওর বাড়ি যাওয়ার পথে পড়ে।

   দূতীর চোখে হরীশের বাস অপরূপ লেগেছিল, কেননা ফিরে এসে ও বর্ণাঢ্য বর্ণনা দিতে ভুল করেনি। চাকরির মানুষদের ঘরকন্নার অলিগলিতে আলাদা স্বাদের স্বাচ্ছন্দ্য থাকে, যেন সুগন্ধি ধূপকাঠি পোড়ার মিষ্টি গন্ধ।

  হরীশ ঘরে ছিল না। বউ চিঠিখানি একমনে পড়ে, ঠোঁটটা এমন বাঁকায়, মনে হয় কথা বলবে স্যাঁকরার বাঁকনলের ফুটো দিয়ে, বলে সে, — বাব-বা অ্যাদ্দিন পর ছাওয়ারে মনি পড়িছে! এ দুনিয়েটায় স্বাথ-থো ছাড়া কেউ চলে না। গভ-ভো ধারিনীরও স্বাথ-থো। এতক্ষণে ঠোঁট সাবলীল হল, — শোনো বউ, তেনারে গিয়ি কয়ো মামা যখন হতি যাতিছে, ভাগনা ভাগনী যাই আসুক, তখন তোমার দাদাবাবুর তো কত্তব্যবুদ্ধি আছে। ঠাকুরজ্জি বিয়োলি পরে খবুর পাঠাতে কয়ো, মামা মুখ দেখালি দিয়ি আসবে। এয়ির মধ্যি মামির কুনু বেয়াপার নাই। শেষি আমিদুধি মিশি যাবে, আমি হেন পড়বো রাবণ দুয্যুধনে। শোনো, তোমারে কলাম, সুনাদানা দিতি পারবানে না। গরমেন এত টেকা মাস গেলি দেয় না তারে। সাপের পাঁচ পা দেখিছে য্যান !

   প্রতিক্রিয়ায় বুকভাঙা ব্যথা প্রতিমার কাঠামো তৈরি হয়েছিল চারুশীলার। খুব একা লাগছিল। সহায়হীন মনে হচ্ছিল। চমক ভাঙতেই চমকে উঠলেন, স্নেহের বাপ কোথায় যে গেলেন ! সারাজীবন মানুষটা এমনতরো অগোছালো। অঙ্ক নিয়েছিলেন, তাকে নিয়েই থাকতেন, সংসার করার কী দরকার ছিল ! যখন তখন দরকার পড়তে পারে। এদিকে ওদিকে চেয়ে পেলেন না, ভিড়ে ইতিউতি খুঁজতে চাইলেন।

   যাদবচন্দ্র দূরে যাননি। বারান্দাতেই ফাঁক খুঁজে খেলানো শরীরটাকে এলিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। উদাস। এখানে ইঁটের রেলিংএর উপরটা খোলা। বিলডিংয়ের সামনের দিকটাতে গ্রিলজালিকা বন্ধনের কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে আসতে বিলম্ব হবে। এখন কাজ নেই তার। অথচ ভাবনাগুলোও দানা বাঁধছে না।

   জামাই পরশু রাতের ট্রেন ধরে কলকাতায় গেছে। সঙ্গে ফার্মেসির ডাক্তার ছেলেটি। কী না কী কাজ আছে সেখানে। জরুরি। কাল রাতেই ফিরতি গাড়ি ধরার কথা। এতক্ষণে এসে পড়া উচিত। স্নেহের মা বাড়িওয়ালী দিদিকে বলে এসেছেন হাসপাতালের খবরটা যেন দেন। নিঃসহায় লাগছে যাদবচন্দ্রের। ডাক্তার মেয়ের স্বামীর খোঁজ করছিলেন।

   মেয়ে। স্নেহলতা। রাজকন্যা তার। রাজবধূ। অথচ আজ সেই আদরের ধনকে ভিখারিনীর মতো আশ্রিত হয়ে থাকতে হচ্ছে। বাপের বাড়ি। হলই বা। গোত্রান্তরের পর সে ঘর মেয়ের নিজস্ব নয়। কান্না আসবে বলে চোখের মণির নিচে অপেক্ষা করছিল। পুরুষের কি কান্না সাজে? বাপও যে পুরুষ!

   যেন অযুত অসময়ের সময়গ্রন্থি ফাঁস খুলে শিঁথিল হয়ে পড়ছে। মস্তিষ্কের স্নায়ুকোণের ছিদ্র গলে কীভাবে যে এই অবসরে নিজের ভাবনাও বিলি কাটতে শুরু করে দিয়েছে। দেশ ছেড়ে চলে আসাটা কি হঠকারী হয়ে গেল? মাস্টারমশাই, শ্যামাপ্রসাদ, লক্ষ্মীকান্ত মৈত্রেয়দের লেকচার শুনে, তাদের লেখাপত্র পাঠ করে তিনি কি একটু বেশিই হিন্দু হিন্দু ভাবে ঢলে পড়েছিলেন? শের-এ-বাঙ্গাল, সোওরাবর্দির কন্ঠস্বর শুনতেই পেলেন না ! হ্যাঁ, মাস্টারমশাইয়ের প্রভাব এড়ানো তার পক্ষে কঠিনই ছিল। প্রিয় ছাত্র ছিলেন তাঁর। এরকম তো অনেকেই থাকে। তবে! তাঁর মতো অঙ্কের মানুষ তামাম দেশে কজন? শরৎ বসু, কিরণ রায়েরা স্বাধীন একবাংলার আওয়াজ তুললেন। তখন যে সূর্য পশ্চিমপাটে শোওয়ার জন্য প্রস্তুত। কই, পূর্ব-পাকিস্তান থেকে মুসলমানেরা সব হিন্দুকে আজও তাড়াতে পারলো কি? তাড়াবে। কবে? কাল? পরশু? দূর ভবিষ্যতে? কতদূর?। ভেবে কিনারায় যেতে চাইছিলেন যাদবচন্দ্র — যদি কতেম, ই দেশখান তুমাগেরি মতো আমাগেরও, যারা চলি যাতি চায়— যাক, মাস্টারমশাইও যদি যান—তাঁরে আটকাবো না, আমরা তাঁর অক্ষম ছাত্তরেরা সকলে মিলিজুলি নতুন করি দেশটারে বানায়ে তোলবো। — যাদবচন্দ্রের এসব কথা বলা হয়নি। এখন মনে হচ্ছে— কী এমন হতো! একটু অন্য গোল হতো হয়তো। তেমন হলে এই না ভূমে পরবাসী হয়ে এমন নিরাকার হয়ে বেঁচে থাকতে হতো না। ক্লান্ত মনে হয় নিজেকে, রাশ টানতে পারছেন না, বড় নিঃসঙ্গ লাগছে, —আমরা হিন্দু না, মোচলমানও না, কেবল বাতাসে উড়াউড়ি করতেছি, আমাগের পাকিস্তান হিন্দুস্তান কিছুই নাই, আমরা আস্থানী। — ভাসমান বুদবুদের মতো চিন্তাজটের সরটা ছিঁড়ে গেল হঠাৎ শোরগোলে। ভয় পেলেন নাকি যাদবচন্দ্র?

   আওয়াজটা এসেছে ওয়ার্ডে ঢোকার দরজা থেকে। চারুশীলার আগে দেখা যুবকটি উল্লাস করছে — ও, মা, দেখেছ? ভাগনী যে আমার নাক-উঁচু !

  — আস্তে, আস্তে — চেনা নার্সটি দরজায়, চিৎকারই করে সে, — বারোনম্বর বেডের পেশেন্ট স্নেহলতা আচার্যের বাড়ির লোক কে?

  চারুশীলা কেঁপে উঠলেন, — আমি, দিদিমনি, আমি।

   — পেশেন্টকে টেবিলে নেওয়া হবে এখনই।

   যাদবচন্দ্র ভিড় দুহাতে সরিয়ে হুড়মুড় করে এগোচ্ছিলেন, নার্সটি বাধা দিল — মা, আপনি যান, দেখা করে আসুন।

   পনেরো মিনিট কাটেনি, আকাশ দীর্ণ করে যেন শঙ্খচিলের ডাক। কাঁপছে ভুবন। নার্স তোয়ালে জড়িয়ে প্রায় এলোমেলো অবস্থার এক পুঁটুলি কোলে এখন গেটের মুখে — এই যে দাদু, দিদিমা, আপনাদের নাতি।

   যাদবচন্দ্র আবারও ভিতরে ঢোকার উপক্রম করছিলেন — আমাদের মেয়েটা…।

   — ওকে রেস্টে রাখা হয়েছে। বাবা আপনি না। মেয়েদের ওয়ার্ড। মা, আপনি আসুন।

   — সিস্টার, শুনুন— পুরুষ কন্ঠে তিনজনই পিছনে তাকায়— আমি ওর হাজবেন্ড। এই পিরিয়ডে ওর কাছে আমার প্রয়োজনটাই বেশি। ঠিক,কি না?

   হাসলো নার্সটি — হ্যাঁ আপনিও আসুন।

♦–♦♦–♦♦–♦♦–♦

ক্রমশ…

আগের পর্ব পড়ুন: পর্ব ১৩


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!