Advertisement
  • কে | রি | য়া | র-ক্যা | ম্পা | স ধা | রা | বা | হি | ক রোব-e-বর্ণ
  • ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩

ধারাবাহিক আত্মকথা: আমাদের বিদ্যানিকেতন

জাকির হোছেন্
ধারাবাহিক আত্মকথা: আমাদের বিদ্যানিকেতন

 
কেউ ঈশ্বরের সন্ধানে, ধর্মীয় নীতিবোধ নির্মাণ করে।কেউ বা সামাজিক সংগঠনে। সংগঠনের স্বরূপ গড়ে তুলে। এসব কর্মের অপর নাম ধর্ম। বিভিন্ন পরিবেশে, আবহে ধর্মের পরিচিতি স্বতন্ত্র। কিন্তু লক্ষ্য এক আর অভিন্ন।
দর্শনের শিক্ষা আর সংগঠনের প্রাথমিক লক্ষ্য কীভাবে তাঁকে, তাঁর যুগোপযোগী নির্মাণকে ছুঁয়ে আছে, জানালেন সে অব্যক্ত, ব্যতিক্রমী বৃত্তান্ত ।

সম্পাদক

৩১.১২.২০২৩

 

 

• পর্ব-২০ •

দূর শিক্ষাসূচিকে ( ডিসটেন্স এডুকেশন) কেন্দ্র করে, ধীরে ধীরে বৃহৎ বিদ্যানিকেতন গড়ে তুলবার প্রয়াস এই উপমহাদেশে সম্ভবত বিরল। প্রায় শুরুতেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই, একই প্রতিষ্ঠানের আওতায় বহুমুখী ও আধুনিক বিদ্যাচর্চার একাধিক মহাবিদ্যালয় তৈরি করতে হবে। না হলে সমাজের গতানুগতিকতা বদলাবে না, সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়েদের একাংশ চিরবঞ্চিত হয়ে থাকবে।
 
দ্বিতীয়ত, মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তের সন্তান সন্ততির মেধা পাচার বন্ধ করা অসম্ভব। তাঁদের লক্ষ্য, পেশাদারি শিক্ষা। গন্তব্য স্বাভাবিক কারণে বেঙ্গালুরু, দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই এবং কলকাতা। সরকারি প্রতিষ্ঠান ভরসা জোগাতে ব্যর্থ। শিক্ষাব্যবস্থা যথাযোগ্য পরিকাঠামো নির্মাণ করতে পারেনি। সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের লক্ষণ নেই।সেকেলে ধ্যান ধারণায় অনেকেই আটক। এই বন্দিদশা থেকে বের হওয়া জরুরি। এজন্য বেসরকারি প্রয়াস আর সমাজের, প্রাগ্রসর, স্বপ্নময় নেতৃত্ব দরকার। যাঁরা স্বপ্ন দেখবেন, অন্যদেরও দেখাবেন। এক অর্থে তাঁদের রোমান্টিক, কল্পনাপ্রবণ এবং বাস্তবমুখী হতেই হবে।
 

সভ্যতার ভিত্ তৈরিতে যে সকল মহাজন নিজেদের উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের সবাই স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে সংযোগ তৈরি করেছেন। সংযোগের অন্য নাম যদি সেতু হয়, সে সেতুর নীচের শূণ্যতাকে মেনে নিয়ে ইহজাগতিক কর্মের সঙ্গে মনের, মননের বন্ধন গড়ে তুলে কখনো দার্শনিকের কন্ঠে, কখনো সহজিয়া উচ্চারণে বলে গেছেন, ভাবনা আর কাজই মানবজীবনের পূণ্য অর্জনের সেরা রাস্তা। 

 
রোমান্টিকতা ছাড়া বাস্তবের নির্মান সম্ভব নয়। আবার বাস্তবহীন স্বপ্নময়তার স্থায়িত্ব নেই। ঘুম ভাঙলেই তার ঘোর কেটে যায়। আমার বিশ্বাস, রোমান্টিকতা আর বাস্তবের সমন্বয়ে দুঃসাধ্য কাজও সহজের পথে এগোতে পারে। সভ্যতার ভিত্ তৈরিতে যে সকল মহাজন নিজেদের উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের সবাই স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে সংযোগ তৈরি করেছেন। সংযোগের অন্য নাম যদি সেতু হয়, সে সেতুর নীচের শূণ্যতাকে মেনে নিয়ে ইহজাগতিক কর্মের সঙ্গে মনের, মননের বন্ধন গড়ে তুলে কখনো দার্শনিকের কন্ঠে, কখনো সহজিয়া উচ্চারণে বলে গেছেন, ভাবনা আর কাজই মানবজীবনের পূণ্য অর্জনের সেরা রাস্তা। পাপ আর পুণ্যের সঙ্গা তৈরি করে গেছেন তাঁরা।কেউ ঈশ্বরের সন্ধানে, ধর্মীয় নীতিবোধ নির্মাণ করে।কেউ বা সামাজিক সংগঠনে। সংগঠনের স্বরূপ গড়ে তুলে। এসব কর্মের অপর নাম ধর্ম। বিভিন্ন পরিবেশে, আবহে ধর্মের পরিচিতি স্বতন্ত্র। কিন্তু লক্ষ্য এক আর অভিন্ন। শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহনকেও আমি উপাসনার মতো গুরুত্ব দিই। যে সমাজ শিক্ষার বাইরে থেকে যেতে চায়, সে সমাজ ঝলমলে আলোর পাদদেশে অবস্থান করেও অন্ধকারের বাইরে বেরুতে পারে না। বেরুতে চাইলেও পারিপার্শ্বিকতার দাসত্ব থেকে মুক্তি নেই তার। কেবল সরকারি প্রচেষ্টায় এই দাসত্বমুক্তি সহজ নয়, প্রায় অসম্ভব। এ কারণেই আমরা ১৯৯৩ সালের গোড়ার দিকে ন্যাশেনাল এডুকেশন ফাউন্ডেশন (এন ই এফ) নাম দিয়ে, ক্ষুদ্র বেসরকারি সংস্থা গড়ে তুলি।
 
লক্ষ্য তার সুচিহ্নিত, সমাজের অনগ্রসর শ্রেণীর শিক্ষায়ন আর আধুনিকায়ন। পাশাপাশি নির্মীয়মান মধ্যশ্রেণীর মানসিক চাহিদা আর বহুমাত্রিক শিক্ষাগ্রহণের ইচ্ছাপূরণ। উত্তর পূর্বাঞ্চলে, তখন এই ধরণের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব ছিল না, যারা নির্বিশেষের জন্য ভাবে, কাজ করে। মেঘালয়ের শিলং আর অসমের গুয়াহাটিতে খ্রিস্টান মিশনারিদের কয়েকটি স্কুল কলেজ ছিল, মূলত মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তদের শিক্ষা পরিষেবায় নিয়োজিত। কিন্তু সবার জন্য অবারিত দ্বার নয়। আমরা অনেক ভেবে চিন্তে অভিন্ন অথচ অন্যরকম বিকল্প গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। সমাজ সাড়া দেয়, আগ্রহ দেখা‌য় নবীন পড়ুয়ারা। প্রথমে তৈরি হল এনইএফ জুনিয়র কলেজ। পাঠক্রম আধুনিক, সময় উপযোগী। গ্রামীন অঞ্চলের, শহরেরও সুযোগ বঞ্চিত ছাত্রদের ভিড় বাড়ল। বেড়ে গেল আমাদের উৎসাহ। ইতিমধ্যে সম্ভবাবনার ইঙ্গিত দেখে, আগেই যা বলেছি, গুয়াহাটির খ্রিস্টান বস্তিতে আমাদের নিজস্ব ভবন নির্মাণর কাজ শুরু, অর্থ সঙ্কটকে প্রাধান্য দিইনি। দুটো ফ্লোর সম্পূর্ণ হলে এনইএফের বিভিন্ন শিক্ষালয় একই ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হল। বহুমুখী পঠনপাঠন চলছে। অব্যাহত আমাদের উৎসাহ। এনইএফ জুনিয়র কলেজ ছাড়াও, ধারাবাহিকতাকে বজায় রেখে, ট্রাস্টের আওতায় একে একে স্থাপিত হল এনইএফ ল কলেজ (২০০৭), কলেজ অব্ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি, এন ই এফ কলেজ (পিজি), এনইএফ কলেজ অব ফারমাসিটিকাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ( নঁওগা) এন ই এফ কলেজ অফ হেলথ সায়েন্স, এনইএফ ইন্সটিটউট অব নার্সিং, ইকরা অ্যাকাডেমি অফ নার্সিং (নওঁগাও)। বলাবাহুল্য প্রতিটি শিক্ষাকেন্দ্রের অভিমুখ সময় উপযোগী পঠন পাঠন চরিত্র গঠন এবং পেশাদারিত্ব অপরিহার্য সাফল্যের অর্জন আমাদের নতুন প্রকল্প, ব্রক্ষপুত্রের উত্তর পাড়ে অন্তত ১০০ একর জমিতে আয়ুর্বেদিক কলেজ, হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্রের নির্মাণ। নাগরিক ভিড় থেকে দূরে, বনবীথির সান্নিধ্যে এখানে ছাত্রছাত্রীরা পড়বে, গবেষণা করবে, আর তাদের গাইড করবেন আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞরা, যাঁরা এবিদ্যার ঐতিহ্য আর আধুনিক চিকিৎসার বৈচিত্রের সঙ্গে পরিচিত। এরকম চিকিৎসা ব্যবস্থা আর প্রকৃতি সংলগ্ন ক্যাম্পাস গড়ে তোলার স্বপ্ন আমাদের অনেকদিনের। প্রশাসন উদারচিত্তে সায় দিয়েছেন। বিস্তৃত পরিকাঠামো আর ভুবন নির্মাণ শুরু হয়েছে। ঝড়  তুলেছে ব্যস্ততা, যা অচিরে বৃহত্তর,  বহু রং এর সচল ছবি হয়ে ঋদ্ধ করবে দৃষ্টিপাতকে। এখানেও স্বপ্ন আর বাস্তব একে অন্যের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে। এখানেও আমার আত্মতা আমিত্বকে উড়িয়ে দিয়ে নির্বিশেষের ইচ্ছা আর ইহজাগতিকতার নির্দোষ, নির্মোহ বন্ধু হতে  চাইছে। আশা করি, কোনো ধরনের ব্যর্থতা, হতাশা, প্রতিবন্ধকতা প্রশ্রয় পাবে না, নিষ্ঠা আর পরিশ্রম ক্ষুদ্র জল পথে, নদীপথে এগিয়ে, এগোতে এগোতে মিশে যাবে সমুদ্রে, মহাসমুদ্রে।
 

ক্রমশ…

♦—♦♦—♦♦—♦♦—♦

 
লেখক: উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম বেসরকারি কলেজ গোষ্ঠী এন.ই.এফ-এর চেয়ারম্যান। গুয়াহাটির বাসিন্দা
 
আগের পর্ব পড়ুন: পর্ব ১৯

ধারাবাহিক আত্মকথা: আমাদের বিদ্যানিকেতন


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!