Advertisement
  • এই মুহূর্তে খাস-কলম
  • নভেম্বর ৩, ২০২৫

জয় বই ঈশ্বর

বাহার উদ্দিন
জয় বই ঈশ্বর

‘বই পড়ুন, বই বুকে নিয়ে হাঁটুন, বুকে বই বেঁধে ঘুমাতে যান’— আবেগ-আপ্লুত উচ্চারণে এ আহ্বান জানালেন অসমের শিক্ষামন্ত্রী রণজ পেগু। রবিবার, উত্তর লখিমপুরে অসম বইমেলা শাখার উদ্বোধন করে রণজ বললেন, বই আমাদের শিক্ষার, আমাদের ভাবনা-চিন্তার, আমাদের সংস্কৃতির ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। বই ছাড়া মানুষের মেধা-সম্পদের বৃদ্ধি অসম্ভব। অতএব মুদ্রিত বইকে গুরুত্ব দিতেই হবে।

অসমের প্রায় প্রতিটি জেলায় আর মহুকুমা শহরে শীতের প্রাক্কালে পরিযায়ী পাখির মতো বই ডানা মেলে মানব জমিনের সমতলে, পাহাড়ি অঞ্চলে। কেন্দ্রীয় বইমেলা উদযাপিত হয় সংস্কৃতিনগরী গুয়াহাটিতে। পাঠকের সঙ্গে হিল্লোলিত বোধ করেন লেখক আর প্রকাশকরা। অসম প্রকাশনা পরিষদ আর সারা অসম বুক পাবলিশার্স সমিতির উদ্যোগে জেলায় জেলায় বইমেলার বিস্তৃতির সঙ্গে বহুভাষিক সমাজের সংযোগ বাড়ছে। অসম সাহিত্যসভার মতো বইমেলাও বৃহত্তর অসমের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অবিভাজ্য, অখণ্ড অঙ্গ হয়ে আছে। বহমান ব্রহ্মপুত্রের মতো অসম সাহিত্যসভার স্রোত উজান থেকে ক্রমশ নিম্নে, আরও নিম্নে ছুটছে। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে গৌরবোজ্জ্বল বইমেলাও। সাহিত্যসভার বহুমুখী মননকর্মের প্রসারের সঙ্গে গণ-উৎসাহের জোয়ার দেখে বিস্মিতবোধ করেছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। কয়েক বছর আগে। কলকাতায় ফিরে এসেও এ বিষয়ে মনোজ্ঞ প্রবন্ধ লিখেছিলেন বিংশ-একবিংশ শতাব্দীর প্রজ্ঞার অন্যতম সেরা প্রতিনিধি।

সাহিত্যসভার ভাবাবেগ, তার যুক্তিবোধ, অসমিয়া জাতিসত্তার আত্মনিয়ন্ত্রণের আকাঙ্খার উদ্ধারোহনের সঙ্গে অসম বইমেলাও দেখতে দেখতে জড়িয়ে গেল। পশ্চিম বাংলা ও ত্রিপুরা ছাড়া, দেশের আর কোনো রাজ্যে বইমেলার এরকম ক্ষমতায়ন নজরে পড়ে না। এক্ষেত্রে অসম সমগোত্রীয় আদর্শ আর জনতরঙ্গের উৎস। আমরা আশাবাদী, মুদ্রিত বই সবধরনের কৃত্রিমতা আর সারহীন যান্ত্রিকতার মুখোশ খুলে দেবে। বহুভাষিকতাময় প্রক্রিয়ার ভেতরে ও বাইরে তৈরি করবে বই প্রকাশের, বই পড়ার সাবলীল গণতান্ত্রিকতা। আরেকটি কথা, মানুষ বই পড়ছে না, বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, পাঠকের অস্বচ্ছ তাড়াহুড়ো আর আক্ষেপকে ‘ফুঃ’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছে মুদ্রিত বইয়ের সৌষ্ঠব, বিষয় বৈচিত্র, প্রকাশক আর পুস্তক বিক্রেতারাও বইয়ের আত্মতা আর গৌরবকে উঁচিয়ে ধরে ক্রমাগত বলছেন, বই অপরাজেয়। তার গাত্রদেহে উইপোকার দংশন আর সন্ত্রাসের প্রবেশ রুখতে সবশ্রেণির পড়ুয়ার উদ্বুদ্ধ। ঐক্যবদ্ধ।

শুকনো ও সংকীর্ণ চিন্তার মৃত্যু অনিবার্য। বই যাবতীয় নৈরাজ্য, ফাঁকা আওয়াজ আর নির্বোধ চিন্তার অপ্রতিদ্বন্দ্বী, আপসহীন এবং সমবেত সেপাই। মানুষের ‘নির্মাণ আর সৃষ্টির’ সবচেয়ে বড়ো উপকরণ যে পুস্তক, একথা যুগ যুগ জুড়ে প্রতিষ্ঠিত সত্য এবং আবহমানের স্বপ্ন আর গতিরও অপ্রতিরোধ্য শক্তি। সম্ভবত এরকম শক্তিপুজোকেই স্বাগত জানালেন হিমন্ত মন্ত্রিসভার প্রায় ষাট ছোঁওয়া সদস্য রণজ পেগু। বহুজনের সংস্কৃতি রক্ষায় অক্লান্ত অনড় যার সামাজিক রণ আর পণ। প্রকারান্তরে সেই পণসঙ্গ নিয়ে, বইয়ের জয়যাত্রার ধ্বনি আর প্রতিধ্বনির ডেসিবেল বৃদ্ধির ডাক দিলেন একজন মন্ত্রী, একথা বলতে, ভাবতেও আমরা নির্মল আনন্দ অনুভব করছি। জয় বই ঈশ্বর।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!