- স | হ | জ | পা | ঠ
- মে ৭, ২০২৪
সমু্দ্রের তাপ বৃদ্ধিতে, স্রোত পরিবর্তনে কী ভূমিকা আন্টার্টিকার বিরাট বরফ গহ্বরের ? অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীরা

অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্রের বরফে তৈরি হওয়া বিশাল গহ্বর নিয়ে বাড়ছে গবেষকদের কৌতুহল। ১৯৭০-এর দশকে বরফে ঢাকা সমুদ্রের মাঝে হঠাৎ তৈরি হওয়া বরফ বেষ্টিত খোলা জলাশয়ের সন্ধান পান বিজ্ঞানীরা, একে পলিনিয়া নাম অবিহিত করেন তারা। ওয়েডেল সাগরের মড রাইজ মাউন্টে এটি প্ৰথম দেখা গেছিল বলে এর নামকরণ করা হয় ‘মড রাইজ পলিনিয়া।‘
১৯৭০ এর দশক থেকে বিক্ষিপ্তভাবে এই জলাশয় দেখা যেতে । তবে ২০১৭ সালে শীতের সময় গহ্বরটি আকারে বাড়তে থাকে, এবং এর স্থায়িত্বও বানতে থাকে। নাসার আর্থ অবজারভেটরি রিপোর্ট অনুসারে এটি সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ৯৫০০ বর্গকিলোমিটার থেকে অক্টোবরের শেষের দিকে প্রায় ৮০,০০০ বর্গকিলোমিটার বৃদ্ধি পায়।
বরফ বেষ্টিত খোলা জলাশয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আদিত্য নারায়ণন গবেষণা করেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘২০১৭ সালের পর আর নতুন করে কোনো পলিনিয়া তৈরি হয়নি। শেষবার আমরা এত দীর্ঘস্থায়ী এবং বৃহৎ আকারের পলিনিয়া পেয়েছি ১৯৭০ এর দশকে। খোলা সমুদ্রের পলিনিয়াগুলি বেশ বিরল !’
সম্প্রতি সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়, গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ক্যালিফোর্নিয়া সান দিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা খুঁজে বের করেছেন, এই পলিনিয়া গঠনে বায়ু এবং সমুদ্রের স্রোতের মধ্যে মিথস্ক্রিয়াগুলির একটি ভূমিকা রয়েছে। ‘সমুদ্রের তলদেশের জটিল প্রাকৃতিক পরিস্থিতির কারণে তাপ এবং লবণ বৃদ্ধি পেলেই পলিনায়া দেখতে পাওয়া যায়। অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্র প্রতি শীতকালে বরফে পরিণত হয়, কিন্তু এই শক্তিশালী উপকূলীয় বাতাস মহাদেশ থেকে দূরে সরে যেতে এবং বরফকে বিভিন্ন দিকে ঠেলে দেওয়ার কারণে পলিনিয়া তৈরি হয়।
বিজ্ঞানী নারায়ণের মতে, ‘এই ধরনের মিশ্রণের প্রভাব কয়েক দশক ধরে রয়েছে আঞ্চলিক মহাসাগর এবং বায়ুমণ্ডলীয় সঞ্চালন এবং সমুদ্রের গভীরতায় সঞ্চিত তাপের জন্য ।’ তিনি জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক গবেষণায় মড রাইজ পলিনিয়া গঠন প্রক্রিয়ায় একটি নতুন কারণ খুঁজে পেয়েছি যা সীমাউন্টের সাথে ওয়েডেল গায়ার জেটের মিথস্ক্রিয়ার যোগসূত্র রয়েছে।’
২০১৬ এবং ২০১৭ এর শীতকালে, যখন মউড রাইজ পলিনিয়া বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে, তখন এই অঞ্চলে সমুদ্রের স্রোত অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এর ফলে উষ্ণ, নোনতা জল বাড়তে থাকে, পরবর্তীকালে ভূপৃষ্ঠের জলের সাথে মিশে যায়।গথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল ওশানোগ্রাফির অধ্যাপক ফ্যাবিয়েন রোকেট এক বিবৃতিতে বলেছেন,’মিশ্রণটি শুধুমাত্র একটি কারণেই ঘটছে না। এর অন্য আরও একটি প্রক্রিয়া ঘটে থাকতে হবে। কোথাও থেকে লবণের একটি অতিরিক্ত ইনপুট থাকতে হবে।’
লবণ কোথা থেকে আসছে সে সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য, গবেষকরা অটোনমাস ট্র্যাক থেকে তথ্য পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ট্র্যাক করেছেন। তারা সমুদ্রের একটি কম্পিউটার মডেলও তৈরি করেন এজন্য। সেই গবেষণায় তাঁরা দেখতে পেলেন, মড রাইজ মালভূমির চারপাশে স্রোত প্রবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর মধ্যে লবণ মিশ্রিত হচ্ছে, এবং মউড রাইজের উত্তরাঞ্চলে চলে যাচ্ছে।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া সান দিয়েগো থেকে সারাহ গিল, বলেছেন পলিনিয়া গঠনের পরেও জলের উপর স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি তারা কীভাবে জলের স্রোত প্রবাহিত হয় এবং কীভাবে স্রোত তাপ বহন করে তার পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যার অর্থ এই অঞ্চল সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের আরও গভীর গবেষণা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।গিল যোগ করেছেন: ‘১৯৭০ এর দশকে পর্যবেক্ষণ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো দেখা যায়, দক্ষিণ মহাসাগরে সমুদ্রের বরফের একটি নেতিবাচক প্রবণতা রয়েছে, যা ২০১৭ সালের দিকে শুরু হয়েছিল। এর আগে এটি কিছুটা স্থিতিশীল ছিল।
❤ Support Us