- এই মুহূর্তে খাস-কলম দে । শ
- মে ১৫, ২০২৪
অসমে পদ্মদিঘিকে ঘিরে অনাস্থার পূর্বাভাস। রেকর্ড ভোটের হার দেখে পুলকিত কংগ্রেস

অসমের ১৪ লোকসভা কেন্দ্রের চারটিতে ঘুরে বেড়িয়েছেন, খোঁজ নিয়েছেন বিস্তর; ভোটের পরেও তাঁর তথ্য-তালাশ বন্ধ হয়নি। এবার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আর সাম্প্রতিক হাল হকিকত পেশ করছেন ‘আরম্ভ’-র সম্পাদক। খতিয়ে দেখেছেন, কেন, কীভাবে ভোট-প্রয়োগের আগের সব রেকর্ড ভেঙে চুরমার করে রুখে দাঁড়ালো বহুভাষিকের ,বহু সম্প্রদায়ের অসামান্য বাসভূমি। রেকর্ড ভোটের (৮৫.২৮) অভিমুখ কী? পদ্মদিঘিতে অনাস্থার হারবৃদ্ধি ? কংগ্রেসের নব-জাগৃতির পূর্বলক্ষণ?
অসমের ১৪, মেঘালয়ের ২, ত্রিপুরায় ২, নাগাল্যান্ডের ১, মিজোরামের ১, সিকিমে ১ আর মণিপুরের ২ আসনে অপ্রত্যাশিত আবহে ভোট হয়েছে। ভোটের পর হিংসার উৎপাত দেখা গেছে ইম্ফল লাগোয়া পাহাড়ি অঞ্চলে। ভোটের সঙ্গে এসব ঘটনার সম্পর্ক নেই। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিদ্রোহী গেরিলা আর মাদক ব্যবসার সঙ্গে ঘটনাসমূহ জড়িয়ে থাকতে পারে। স্থানীয় কিংবা কেন্দ্রীয় শাসকের কেউই অশান্তিকে বাগে আনতে পারেননি, তাদের ব্যর্থতার কারণ কী, তা তারাই বলতে পারবেন। অশান্তির ঘনঘটাকে নাকচ করে মণিপুরবাসীরা ভোট প্রয়োগে যে আগ্রহ দেখিয়েছেন, তা আগের সব রেকর্ডকে অতিক্রম করে শুধু নতুন ইতিহাস তৈরি করেননি, ডবল ইঞ্জিনের সরকারের কপালে ভাঁজও বাড়িয়ে দিলেন।
অসমের ভোট প্রচারের বিজেপির শীর্ষ নক্ষত্র অবশ্যই নরেন্দ্র মোদি, দ্বিতীয় অমিত শাহ, তৃতীয় হিমন্ত বিশ্বশর্মা । প্রত্যেকেই একাধিক সভা করেছেন , হিমন্ত-র পরিশ্রম প্রত্যাশিত, কিন্তু তিনি ও তাঁর দুই রাজনৈতিক অভিভাবক ভোটারকে কতটা প্রভাবিত করতে সফল হয়েছেন, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ বিজেপি প্রভাবিত বিভিন্ন আসনে তাঁদের শো – আপ, রোড শোয় ভিড় হয়েছে ঠিকই, অথচ ভোটের দিন বিজেপিমুখী তীক্ষ্ণ আবেগ দেখা যায়নি।
অসমের এলাকাভিত্তিক ভোটার খন্ডিত, স্তরে স্তরে বিভাজিত। নাগরিক, গ্রামীণ আর জনজাতীয় নির্বাচকদের ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য যতটা না রাজনৈতিক, তার চেয়ে অনেক বেশি জাতি সচেতক এবং সাম্প্রদায়িকতা । কংগ্রেসও এসব ইস্যুকে একসময় ব্যবহার করেছে, বিভ্রান্তির পথে ঠেলে দিয়েছে বহুভাষিকতার রাজ্যকে। ঢালাও দুর্নীতির প্রশ্রয় কংগ্রেসের অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায় । বেলাগাম কৌশলে ভাষা ও জাতিভিত্তিক বিভাজনকে আমল দেয় । তাঁদের পরোক্ষ প্রশ্রয়ে বারবার দেখা দেয় সংঘর্ষ, আলাদা হয়ে যায় পাহাড়ি অঞ্চলগুলি। নিম্ন অসমেও অসন্তোষ বইতে থাকে। তীব্র প্রতিক্রিয়ায় ভোটার সংশয়াছন্ন হয়ে কংগ্রেসের আপনজন ‘আলি-কুলি’ সরে দাঁড়ায়। বিকল্প রাস্তা খোঁজে , মাথা তোলে দালালরাজ। শরৎচন্দ্র সিনহা, হিতেশ্বর শইকিয়া , তরুণ গগৈ — অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নেতা ছিলেন। তাঁদের উত্তরাধিকার রইল না। চা বাগানে প্রবেশ করল পদ্ম, শহরেও তার দাপট। ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যকার গ্রামীণ, কৃষিভিত্তিক জনপদ আশ্রয় খুঁজল প্রথমে গোলাম ওসমানির ইউ এম এফ-এ। পরে বদর উদ্দিন আজমলের ইউ ডি এফের ছত্রছায়ায়। ইউ এম এফ এখন অতীতের স্মৃতিমাত্র। আজমলের ছড়িতেও হালকা হাওয়ার স্পর্শ । ‘১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিজেপিও সব এলাকার, সব শ্রেণীর, সব জাতির প্রতিনিধি হয়ে উঠতে পারল না। সে সীমাবদ্ধ শহরে, চা বাগানে এবং কিছু সংখ্যক উপজাতি এলাকায়। মন্দের ভালো, দুর্বল হলেও এখনও সমাজের বহু অংশে কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্ব বহাল। এবার, সদ্য সমাপ্ত তিন স্তরের নির্বাচনে কংগ্রেসের ভোটারকে উজ্জীবিত হতে দেখা গেল। পুরনো কংগ্রেস-ছুট ভোটাররা ফিরে এসেছেন । ভোট প্রয়োগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গেছে কংগ্রেস বিরুদ্ধ এবং কংগ্রেসমুখী জনতার মধ্যে। এই প্রথম অসমে ৮৫.৪৮ শতাংশ ভোট পড়ল , সবচেয়ে বড়ো রেকর্ড ধুবড়ি লোকসভা কেন্দ্রে, প্রায় ৯৩ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জ লোকসভা আসন।এখানেও ভোটের হার কোথাও কোথাও ৯০ শতাংশের বেশি।
ধুবড়িতে তিনবারের সাংসদ বদর উদ্দিন আজমলের অস্বস্তি বেড়ে গেছে। ভোট ফেরত জনতার মতামত কানে বাজছে, এবার আতর বাদশাহ আজমলের হেরে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। জিততে পারেন কংগ্রেসের রাকিবুল হুছেইন। প্রাক্তন মন্ত্রী । নওগাঁর বাসিন্দা। তাঁর বাবাও মন্ত্রী ছিলেন। বিত্তবান তরুণ। ভালো সংগঠক। অনেক ভেবেচিন্তে তাঁকে কংগ্রেস ধুবড়িতে প্রার্থী করে। ধুবড়ির আসনে ভোটারের সংখ্যা ২৭ লাখ। জনবিন্যাস অনেকটাই একমুখী। প্রধানত কৃষক এবং বহুভাষী। রাকিবুল হুছেইন মিশ্র রক্তের সন্তান। বাবা বাঙালি। মা অসমিয়া। খেলার প্রতি তাঁর দুরন্ত ঝোঁক। খেলাধুলার স্পিরিটকে ,অর্থবলকে , সাংগঠনিক দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েছেন , হয়তো জিতে যাবেন এবং আজমলকে হারিয়ে অসমের রাজনীতিতে রাকিবুল ‘ মহাতারকা বিজেতা’ (জায়েন্ট কিলার) হয়ে উঠবেন।
ধুবড়ির মতোই আকারে প্রকারে সীমান্তবর্তী লোকসভা কেন্দ্র করিমগঞ্জ। প্রধানত কৃষক ও চা শ্রমিক অধ্যুষিত বহুভাষী এলাকা। এতদিন সংরক্ষিত আসন ছিল। সংরক্ষণের ঢাকনা সরে গিয়ে তা এবার শিলচরের কাঁধে চেপে বসেছে। কংগ্রেসে এখানকার প্রার্থী নতুন, খ্যাতিমান, জনপ্রিয় আইনজীবী। হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী। ভূমিপুত্র। বিদেশে; দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়িয়েছেন, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ। মানবাধিকার কর্মী। পেশায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী। মুখে মুখে খবর উড়ছে ,সংবাদ মাধ্যমও বলছে, রশিদ আহমেদ জিতবেন।
লোকসভা ভোটের মুহূর্তে, আগেও আমাকে বারকয়েক অসমে যেতে হয়েছে। তখনই পূর্বাভাসের গন্ধ শুঁকে মনে হয়েছে, প্রত্যাবর্তনের হাওয়া লাগতে পারে কংগ্রেসের পালে। আশঙ্কা আর অস্বস্তি ছুঁয়ে থাকবে বিজেপিকে। পরে কোথাও ভোট প্রয়োগের অতিরিক্ত আগ্রহ, কোথাও নিস্তেজ প্রবাহ দেখে আমাদের অনুমান, বিজেপি শঙ্কিত। আশান্বিত কংগ্রেস। অসমের সম্ভাব্য ফল এরকম হতে পারে, কংগ্রেস বেশি হলে ৭ আসন। বিজেপি-জোট অন্তত ৬। কংগ্রেস সমর্থিত অসম জাতীয় দল ১। সিপিএম শূন্য ।এসব হিসেব নিকেষের ফল আর তালিকা আরো পেশ করব আমরা । নিরপেক্ষ , নৈর্ব্যক্তিক কৌশলে দেখানো হবে, কংগ্রেস আর বিজেপির জয় পরাজয়ের উৎস আর গতি কোন দিকে ? কেন শঙ্কিত ডবল ইঞ্জিন? কেন উজ্জীবিত কংগ্রেসের তেরঙ্গা ?
❤ Support Us