Advertisement
  • ধা | রা | বা | হি | ক
  • ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২

অন্য ভাষা ভিন্ন স্বর

পর্ব-৫

অংশুমান কর
অন্য ভাষা ভিন্ন স্বর

annya-bhasa-bhinnya-swr


গত শতাব্দীর ত্রিশের দশক থেকে, বিদেশি ভাষার বহু স্বর, বহু সুর, নানা রকম ভাষাভঙ্গি আর বহুমাত্রিক বিষয়ের সংযোজনে ঋদ্ধ হয়েছে আমাদের কবিতা পাঠের মগ্ন চেতনা। কিন্তু এই উপমহাদেশের উত্তর আর দক্ষিণ, পূর্ব আর পশ্চিমের কবিতা, কবিতা ভাবনা দূরে পড়ে রইল এখনও । কেন ? ভারতীয় ভাষাচর্চায় বাঙালির অনীহা, না এক প্রতিবেশীর সঙ্গে আরেক প্রতিবেশীর, আরোপিত প্রকান্তরে অনুশাসিত দূরত্বই তৈরি করেছে অপরিচিতির চৌহদ্দি ? যুক্তিপ্রসূত জিজ্ঞাসা নিয়ে উপমহাদেশের বিভিন্ন ভাষার কবিতার ধারাবাহিক তরজমায় প্রতিস্পর্ধী, সমান্তরাল চিন্তার বিশিষ্ট সহযোগী অংশুমান কর


টেমসুলা আও

আসামের জোড়হাটে তাঁর জন্ম । শৈশব থেকে যৌবন কেটেছে উত্তরপূর্ব ভারতের নানা অঞ্চলে । কর্ম জীবনের শুরু শিলং-এর নর্থ ইস্টার্ন হিলি বিশ্ববিদ্যালয়ে । ইংরেজি এবং বিদেশি সাহিত্য নিয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি উত্তর পূর্ব ভারতের আঞ্চলিক সংস্কৃতি কেন্দ্রেরও ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন । মূলত ইংরেজি ভাষার কবি হিসেবে পরিচিত হলেও, টেমসুলা নাগা আও সংস্কৃতির লোকচার, সাহিত্য নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন । পেয়েছেন পদ্মশ্রী এবং সাহিত্য আকাদেমি সম্মান । তাঁর সাহিত্য সৃষ্টিকে, স্বর্ণপদক দিয়ে সম্মান জানিয়েছে মেঘালয় সরকার ।

 

 

পর্যটকরা ১

জানলার পাশের সিটে
কুণ্ডলী পাকিয়ে ও বসেছিল।
একটা টেডি-বিয়ারকে আদর করছিল।
ভাল্লুকটার একটা চোখ ছিল না।

আমি ওর পাশে বসেছিলাম
একটা নীল রংয়ের ভয়ংকর কাপুরুষের সেবা করছিলাম
কারণ কানাডা থেকে ছেড়ে আসা এয়ার ইন্ডিয়ার কণিষ্ক বিমান
তখনও খবরকাগজের হেডলাইনে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছিল।

কিন্তু ও আমার পাশে বসেছিল
কণামাত্র ভয় না-পেয়ে, চিন্তিত না-হয়ে।
কেবল একটু বিরক্ত হচ্ছিল
কারণ ভাল্লুকটার যে-চোখটা হারিয়ে গিয়েছিল সেই চোখের গর্তটা
বন্ধ হতে চাইছিল না
যখন ও আদর করে
ভাল্লুকটাকে ঘুম পাড়াতে চাইছিল
একটা ঘুমহীন পৃথিবীর থেকে কয়েক হাজার মাইল উঁচুতে।

 

চন্দ্রোদয়

ক্রমশ পিছু হটতে থাকা রাতে
ক্ষয়াটে চাঁদের নীচে
তুমি কখনও দাঁড়িয়েছ কি?
আর ভেবেছ তার কষ্টের কথা?
যাকে ছেড়ে গেছে তার তারারা
আর ভয় দেখাচ্ছে
একটু পরে যা উদিত হবে, সেই সূর্য?

দূর থেকে ভেসে আসা মোরগের ডাকের প্রতিধ্বনি
আর ব্যগ্রতার সঙ্গে উজ্জ্বল হতে থাকা দিগন্তের মাঝে
নিঃসঙ্গ হয়ে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে
অস্থির ভাবে বাতাসে ভেসে বেড়ানো
ক্রমশ ক্ষীণ হতে থাকা চাঁদকে
তুমি কখনও দেখেছ কি?

এভাবেই ওই যে সে দাঁড়িয়ে আছে,
তার রোমান্টিক পোশাক ছিঁড়ে গেছে
তার বশীকরণের ক্ষমতা আর নেই
আর সে মিলিয়ে যাচ্ছে
অনিচ্ছাকৃত বিস্মৃতির ভেতরে
যতক্ষণ না
পরের চাঁদ ওঠে।

 

মারা যাওয়া 

মারা যাওয়ার একটা গন্ধ আছে
পরিব্যাপ্ত, অনমনীয়
নাসারন্ধ্রকে মেরে ফেলার জন্য
সবচেয়ে কড়া জীবাণুনাশকের চেয়েও
বেশি ক্ষমতাধর।

মারা যাওয়ার একটা বুনন রয়েছে
ভঙ্গুর, স্বচ্ছ
করাত-সৃষ্ট-কাঠের-ধুলোর মতো
যা কথোপকথনের সময় দেওয়া
কাগজের চেয়েও রোগা
বিস্কুটের চেয়েও পাতলা।

মারা যাওয়ার একটা চেহারা রয়েছে
অতল একটি কুয়োর মতো
অদৃশ্য এবং অন্ধকার।

এবং এটা হল একজোড়া শূন্য চোখের মতো
যেখান থেকে
আত্মা
ইতিমধ্যেই উড়ে গেছে।

 

শূন্যস্থানগুলি 

আমার আত্মার
শূন্যস্থানগুলিতে
ছায়ারা দীর্ঘ
বাতাস
বরফের মতো ঠাণ্ডা
আর ক্রমশ দীর্ঘ হতে থাকা ছায়াগুলো
হত্যা করছে
স্মৃতিকে।

আমার আত্মার
শূন্যস্থানগুলিতে
প্রতিধ্বনিগুলি
হল ফাঁপা।
স্মৃতি
মারা যাচ্ছে
আর ফাঁপা প্রতিধ্বনিগুলি
তীব্র বেগে ঠিকরে উঠে
এই হত্যাকে সম্পূর্ণ করছে।

 

♦–♦♦–♦


❤ Support Us
error: Content is protected !!