- ধা | রা | বা | হি | ক রোব-e-বর্ণ
- মে ১৫, ২০২২
দশ ইঞ্চি প্রজাপতি
পর্ব ৩

অলঙ্করণ: দেব সরকার
উ প ন্যা স
গত তিনদিন আগে শহরে যে-বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল, নিয়মিতভাবে সচেতনতার জন্য মাইকিং বাহাত্তর ঘন্টা ধরে যা নিয়ে, চূড়ান্ত মেয়াদ আজ রাত বারোটায় শেষ হয়ে যাবে । একটি বুলডোজার বেলা এগারোটার মধ্যেই হাজির হয়েছিল, বাকি যন্ত্রটি বিকেলের দিকে হাজির হবে। ফোর্স ও এসে পড়বে। এমনই খবর ফুটের দোকানদারের কাছে । তবু, গতকাল অবধি ক্ষীণ আশ্বাস ছিল, ব্যাপারটা চল্লিশ বছর আগেকার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
কেবল যদুনাথ ঘোষালই রহস্যের উত্তেজনায় বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন । চল্লিশ বছর আগের অভিজ্ঞতাতে সে পরের আগুনে রুটি স্যাঁকার মধ্যে নেই।
ঘরের মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে, হৃষ্টপুষ্ট চোখমুখ বলে, কি বিপদ! …তোমাগো সমিতির লিডাররা কে?
ফুটের ফুডই চালু ছোটট গুমটির সায়া-ব্লাউজ বিক্রি করছে আঠার বছর ধরে—পুষ্পা বলল, ঐ তো পরিমল রায় আছে সামনে … আপনাকে পরামর্শ দেবে ।
যদুনাথ পুষ্পার মুখে ঢ্যাবডিবিয়ে তাকায়। চিনা চিনা লাগছে । বেশ ছিপছিপে, চোখেমুখে বুদ্ধিমত্তার ছাপ । দেহখানার উপর দিয়ে ঝড়ঝাপটা গেলেও, বোঝা যায় এখন কাঁধ ও মুখে মাংস ও লাবণ্য ফুটছে।
সামান্য হেসে বলে, তুমি না খগেনের বউ?
পুষ্প মওকা বুঝে সম্মতি জানিয়ে দীর্ঘশ্বাসের মধ্যে মুখটা নিচু করে রাখে ।
মুড়ি, চিড়া গুড়ের দোকানদার, গলায় তুলসীকাঠের মালা প্যাকানো হরিপদ বলে, যেবার প্রথম ভাঙা
পড়ছিল… আপনি ফুট ঈশ্বরের কিরপায় পাশে জমি কিনা ফেলাট বানালেন…
অত কথায় কাজ কি? যদুনাথ বাধা দিয়ে বলে, কানাঘুষায় খবর পাইছি খগেনের নাকি গলায় ক্যান্সার হইছিল… কপাল! কপাল কে নিবে?…
তারপর ফের হরিপদকে বলে, ভাইরে, যা মাপা আছে ঘটবেই! …মিছিমিছি আমরা হাইহুঙ্কার করি।
হরিপদর একটাই দোষ, কোনো কিছু বলতে গেলেই গন্ধমাদন পর্বত ধরে টান মারে। সকলেই তাই থামিয়ে দিয়ে উত্তরটুকু জানতে চায়।
দোকানটা পেয়েছিলাম বলে জ্যাঠামশাই চার ছেলেমেয়ে নিয়াসংসার টেনে গেছি…এখন বুদ্ধি বাতলান । ‘আমি তো এখন দোকানদার সমিতির কেউ না’ বলেই যদুনাথ ঘোষাল ডাকল, ও পরিমল!
বলেন ঘোষাল দা!
ফুটের ইউনিয়ন তিনখানা শুনেছি, তিন লিডারের মধ্যে যোগেশ আর মাধাই কোথায়? …আমাদের মাতব্বর, ডি.এস, থাকা অফিসার সঙ্গে রাস্তা ভাঙচুর নিয়া যে মিটিং হইল দুমাস আগে…কী পাক্কা সিদ্ধান্ত হইছিল?
পরিমল হেসে ইঙ্গিত করে, মাতব্বর জানায়নি আপনাকে?
এম. এল.এ যদুনাথের সৎভাই, দশজনের মধ্যে ‘মাতব্বর’ বলে ডাক তাই ।একসংসারে কোনো কালেই ছিলনা। এমন কি কলোনিজীবনেও না—যখন টালি, বেড়ারঘর কিংবা সামান্য দালানকোঠা নিয়ে স্টেশনের এত কাছের কলোনিটি গড়ে উঠেছিল ।
এখন তাদের আধুনিক ছেলেমেয়েরা প্রমোটারের হাতে দিয়ে জমি ছেড়ে আকাশে উঠে গেছে ।
পুষ্প বলে, বলব জ্যাঠা? ফুটের দোকানদারদের উঠে যেতে হবে ।
পুনর্বাসনের কথা হয় নাই?
চওড়া স্টেশন রোডটা প্রথম বৃহৎ চওড়া হয়েছিল যখন, যদুনাথ ছিল ইউনিয়নের অন্যতম নেতা । সে আমলেই প্রথম ভাঙচুর, রাস্তা চওড়াকরণ।
স্টেশন রাস্তাটা তখন ছায়াঘেরা, নিম-কার্পাস, মেহগানির সোজা সার সার ছাড়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকান সৈন্যদের ছাউনি ছিল এ শহরে। তখন তো শহর বলা চলতনা —মফস্বল এলাকা। কলকাতা ছেড়েই তো, শোনা যায় জাপানি বোমার ভয়ে বহু মানুষ সব কিছু ছেড়ে পালিয়ে ছিল । ঐ সময়তেই ছোটখাট সখেরপুর রেলস্টেশনটার রাস্তাঘাট ভারি গাড়ি চালানোর জন্য দুপাশে গাছ লাগান হয়েছিল । তখন সন্ধ্যার পর রাস্তা নির্জন ।
দেশটা ভাগের পরই তো ফুট ব্যবহার যোগ্য হয় এবং সারি সারি দোকান গড়ে ওঠে । সেবার বাঁশবেড়া টালির দোকান ব্যাপক ভাঙার পর অনেকেই ধাক্কা খেয়ে দুহাত পেছনে সরে গিয়ে কিছু কিছু পাকা করে নেয়। যদুনাথ বুদ্ধিমানসে তার কাঠের চেয়ার টেবিল আলমারির দোকানটিকে পাকা করল না। একেবারে পেছনে সরকারি ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে এসেছিল ।
পুষ্প বলে, আর পাকা দোকান যাদের, ইউনিয়ন কী ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা করছে, জানিনা যদুনাথ ফোঁশ করে ওঠে।
তাদের আর কী ক্ষতিপূরণ? …মিউনিপ্যালিসিতো পেছনে জমি কিনা কমপ্লেস বানিয়েছে !
উঠে যায়নি কেন তারা?
সবাই তো সেখানে দরখাস্ত করতে পারবে না! পুষ্পা ভেতরের আইনের প্যাঁচটুকু ফাঁকা করে দেয়।
যদুনাথ চোখ পাকিয়ে তাকায়।
ক্যান পাবে না? তখন তো দোকানদার সমিতিগুলার কাছে নান্টু মিত্তির এমন কথা বলে নাই তখনকার চেয়ারম্যান ছিলেন নান্টু মিত্তির। এখন কৈলাশ পাল ।
কৈলাশ পাল কি এখন মাতব্বরের পকেটে থাকে?
পরিমল চুপ। মিটিমিটি হাসে । সে রাজনীতিতে ‘মাতব্বর’-এর বিপরীত গোষ্ঠির ।
পুষ্প বেচারিকে মনে হল আধা ব্যাপারি হয়ে জাহাজের খবর রাখতে গেছল। তাই সাহস হল না।
যদুনাথকে জানাতে, তলায় তলায় টাকার হিস্যা হয়ে গেছে।
যদুনাথ চুপচাপ মাথা নাড়ায়। অনুমানেই সব টের পেয়ে গেছে ।
হঠাৎ চেয়ারের হাতলটা চাপড়ে বলে, আজ তবে আর ক্যাচাল জানাতে এখানে এলে কেন?
ভাঙার রায় তো দুমাস আগেই ঠিক হয়েছিল। …অনেক উঁচু ডালের প্লান এটা…মন্ত্রী, ম্যাটিস্ট্রেট, এমজি, এমএলএ, সবগুলান দোকানদার সমিতি—মিটিংয়ে রায় মাথা পায়তা নেয় নাই? তবে এখন কেত্তন গাইতে আমার কাছে কেন?
পরিমল শান্তগলায় হেসে বল্ল, রায়ের পাল্টা রায় তো হয় দাদা! …বদলও হয়!
মরণ কালে হরির নাম? …রাইত বারোটায় মেয়াদ শেষ, ভাঙা শুরু হবে আর তুমি এখন বদলের কথা পাতবার আসছ?
মেট্রোরেল পাতার সময়…শুনেছি বড় বাজারের গোপন চাপে পুরানো নকশার অনেক কিছু বদল ঘটানো হয়েছিল ।
তোমরা কি তেমন চাপ দিয়েছিলে? গা করনি!…ভাবলা যাহা বাহান্ন, তাহা তিপান্ন।…
পুরানো দিনের ভাঙা চুরার মতো, এ যাত্রাও বুঝি তাই হবে ।
রোগা কালো মাঝবয়সী ভবশঙ্কর বসে ছিল । সে কখনই বেশি কথা বলে না । যদুনাথদের পুরনো বিউটিফিকেশনের পরিকল্পনা হয়েছে—ভবশঙ্করের বাপ কালিশঙ্কর যখন বেড়া-টালির ঘরে থাকত, প্রায়ই জলঢোঁড়া সাপ রান্না ঘরে ঢুকে পরত ।
এখন দালান, বাঁধানো গ্রিলের–দক্ষিণ জানলা দিয়ে ঝিলের শীতল বাতাস ঢোকে।
কালিশঙ্কর ফুটে কাঁসা-পিতলের বাসন বেচত। ভবশঙ্কর তা বদলে ইমিটেশনের দোকান করায়, আঙুল ফুলে কলা গাছ। ভবশঙ্কর বিশেষ মুখ খুলতে যায় না। যখন খোলে, মোক্ষম যুক্তিটি আসরে ফেলতে। দ্বিধা করেনা।
বুঝলেন কালু জ্যাঠা (যৌবনে কলোনিতে থাকাকালীন যদুনাথের চলতি নাম) তিন তিনবার তো ভাঙনের কবলে পড়ছি…তিন গভমেন্টের আসনে …ফের কিছুদিন গেলে দিব্যি যে-কেসেই বসছি…এবারও তা-ই ভাবলাম। …বুলডোজার, ট্যাংক, বন্দুক যে নামবে বুঝি নাই।
বু-ঝি-না-ই! নকল ব্যাঙ্গের স্বরে যদুনাথ বলে, তোমার ন্যাতাগো বলো গিয়া …সব্বাই ভেতরের খবর জানে এ যাত্রা উঁচু মহলের চাপা …শুনছি ওয়াল্ড ব্যাঙ্ক …ডবল ফ্লাইওভার হবে, তার মুখে চল্লিশ ফুট রাস্তা হবে ।
ক্যান যুদ্ধ বাধব নাকি?
যুদ্ধ? কারলগে যুদ্ধ? বাংলাদেশ? …ভবা, তুইও আছিস! …উন্নয়নের যুদ্ধ এখন বড়যুদ্ধ …
শুনছি মেদিনীপুর সমুদ্রে বন্দর হবে… সোজা মেদিনীপুরের রাস্তা হবে!
ভবশঙ্কর হাঁ করে থাকে।
গঙ্গা খান মধ্যে আছে না?
ধূর! …শুধু গঙ্গা ক্যান, শুনছি পথে আরও নদী পড়ে… সেতু বানানো এখন জলভাতিয়ে ভবা!
এইসব আসন্ন বিপদমাথায় (লোকজনে) পরামর্শ চাইতে বসেছে যেখানে, পাঁচতলা ফ্ল্যাটটা যদুনাথ ঘোষালের । দলটা তিনতলার ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছিল ।
একতলায় ইংলিশ খাট, আলমিরা, ড্রেসিংটেবিলের মস্ত শোরুম, দোতলায় মিস্ত্রি লেবারদের উৎপাদন কেন্দ্র, তিনতলাটা ছিল জমি কেনাবেচার মন্ত্রনালয়—চার এবং পাঁচতলায় যদুনাথের ব্যক্তিগত সংসার।
জীবনের অতীত পর্বে যদুনাথ এই স্টেশন রোডটার ফুটে বসে ছোটখাট কাঠের সরঞ্জাম বেচে সংসার নির্বাহ শুরু করে। শখের পুরকে তখন শহর বলাই যাবে না, মাত্র বারোটি ওয়ার্ড নিয়ে একটি ঘরোয়া মিউনিসিপ্যালিটি —নদীর দিকের পুরনো বাসিন্দারা বলত ‘গুয়ের অপিস’ ।
স্টেশনে টিকিট কাউন্টার লাগোয়া ছোট রোড, কয়লার ধোঁয়া ছেড়ে লাল রংয়ের কাঠের গাড়িগুলো কত এখানে জলভরত । একটু রাত করে দূর গাঁড়ের যাত্রীরা এলে, অপেক্ষা করত চেনাজানা মুখের জন্য । একসঙ্গে পাঁচসাতজন হলে, হাঁটত নতুন নতুন গড়ে ওঠা বাঙাল পাড়ার দিকে । ছোট্ট একটা লেবেল ক্রসিং। ট্রেন ঢুকবার আগে কেবিন ঘর থেকে একজন চাকার মতো বস্তুটি ঘোরাতে থাকলে, টংটং শব্দ করে ডান্ডা পড়ত। কত দিন ইট বোঝাই গোরুর গাড়ি লাইনে উঠেই বসে গেছে, ডান্ডা পড়ছে না, দূরে ধোঁয়া উড়নো ইঞ্জিন থেকে হুইশেল আসছে ক্লিয়ারেল এর জন্য, শেষে লাগোয়া পুবপাড়ের ফাঁড়ি-টা থেকে দুচারজন লাল পাগড়ি এসে গোরু উদ্ধার করে ফাইনের জন্য আটকে রাখে ।
আর বিকেলের অবসরে সবুজ রংয়ের ডাক গাড়িটা ছুটে গেলে, যদুনাথদের কলোনির দুচারজন বৌ-বুড়ি ছুটে এসে বনতুলসির ঝোপের আড়ালে তাকিয়ে তাকিয়ে অপেক্ষা করত, ও সুশীলের মা যাবা নাকি? এরা জানত গাড়িটা খুলনা মেইল। তাদের ফেলে আসা মুলুকে যায় ।
স্টেশন রোটটার পাকা পিচের অংশটি ছোট, পাশে ধুলোই বেশি আর গাছপালা । সোজা সিকিমাইল গিয়ে একটা ট্রাংক রোডে পড়েছে, যেটি কলকাতার সঙ্গে যুক্ত।
ফুটে ছোট ছোট পিড়ি, টুল, চেয়ার নিয়ে বসবার আগে যদুনাথ হাফপ্যান্ট অবস্থায় ঘাড়ে চাপিয়ে চারপাশে সদ্য গজানো কলোনিগুলোর বাড়ি বাড়ি ঘুরেছে।
সদ্য গড়েওঠা একটা কলোনির জুনিয়র স্কুলে ভর্তি হয়ে কয়েকটা দিন যাবার পর। একদিন ঘরে ফিরে দেখে অরন্ধন। দাদা শুকনো মুখে খেলনার একটি লোহার বাটিতে ভাজা তেঁতুলের বিচি দাঁতে কাটছে, রাঙা দিদি পেছনের ঝিল থেকে বঁড়শিতে একটা মাগুর মাছ ঝুলিয়ে এনে উত্তেজনায় উঠোনে দাঁড়াতে, কে যেন বকছে, ফেইয়া দে! জলে ফেলাইয়া আয়! …ঘরে উনান জ্বলে নাই, মা-ছে-র শখ!
জলে ফেলতে যাওয়ার সেই মুহূর্তের রাঙাদির মুখটা যদুনাথের কলজেটাই কে যেন খামচে ধরে মুচড়ে দিয়েছিল। ছাতার মাথা! পইড়গা আমার ব্যাং হইবে! দাদার শতমানা শুনল না। ছোটবেলা থেকেই সে ডাকাবুকো। ঘরে ঘরে পাড়ায় পাড়ায় একজনের বাহক হয়ে ফেরিতে নেমেছে, তারপর স্টেশন রাস্তাটার এক টুকরো ফুটে বসতে পেরে সাময়িক ছাউনি । তখন তো সকাল আর সন্ধ্যা । রাত নামলেই ফুটে কেউ কেউ অ্যাসিটিলিন বাতি জ্বালায়। যদুনাথের তা জুটবে কোত্থেকে। বিকেলের আগে আগেই গিয়ে বসত। সন্ধ্যার পরই পাত তারি গুটনো।
তখন অঞ্চলে বহু বাগানবাড়ি আর বিটি রোডের দিকে সুতাকল। কত রকমের কলের বাঁশি ! কোনটা নটার, কোনোটা বারোটার, বিকাল পাঁচটা-সাতটা—বাঁশির আওয়াজ শুনেই বলে দেওয়া যেত, এটা বঙ্গশ্রী কটন মিলের, ওটা প্রভাতী টেকস্টাইল মিলের , ওটা স্বদেশীর ।
ফুটে বসতে বসতে সাময়িক ছাউনি, ক্রমে স্ট্রাকচার । সেখানে যদুনাথ শুরুতে আকাশের তলায় বসতে পেরেছিল, স্ট্রাকচারটা সেখানেই বানাতে দেয়া হয়নি । ধমকধামক খেয়ে খানিক দূরে অপেক্ষাকূত নির্জনতায় দুটো গাছের ঘন ছায়ায় স্ট্রাকচার তুলতে বাধ্য হয়েছিল। রাস্তাটার ওপাশেই সারাদিন চোখের সামনে বিশাল এলাকা জুড়ে গাছপালা বাগান। ঘানি ঘোরে, চরকা কাটা হয়, ঘাটলা দেয়া পুকুর নানা ফলফলাদির গাছে সীমানা প্রায় দুর্ভেদ্য । যদুনাথ আজও, এই বয়সে পৌঁছে তার খনিষ্ট সেবক হয়ে মুখে সর্বদা ত্যাগের উপযোগিতা বলতে বলতে, দুএকজনের সঙ্গে পুরনো সেইসব মুহূর্তের গল্প ফেঁদে বসে। ‘হালায় কি কমু তোমারে, সবাই ভালো ভালো জায়গা নিয়ে, দিল আমারে ঠেইলা!..চোখের সামনে শুনশান সেই আশ্রয়! …গাছগাছালি, ফলফলালি দিনের বেলায় শিয়াল হাজির হয় মাঝে মধ্যে… শুনি ভেতরে খনিতে তেল হয়, ঘি হয় সুতা কাটা চলে…বিঘার পর বিঘা জমি …আর ছয় সাতখান ঘর…আইজ যে এখানে হাজার দুই তিন দুকান…তখন আর কত? খান তিরিশ! …ইস্টিশনের কাছ থেকে খানিক এগিয়ে দোকান তোলা শেষ…
আমি পইড়া থাকি একা একা…তখন এমুখে গেটও নাই…ভাবতাম, ঐখানে কি হয়? মুখে মুখে শুনলাম ঐটা এখন আশ্রম!… ভিতরে নাকি চাইর-পাঁচখানা খরের ঘর, একখান ছোটখান দালানও আছ!…মনে আছে কলোনির বরোদা জ্যাঠার বিসকুটের বয়াম একটা বান্দরতুইলা নিয়া এক লাফে ঐ বাগানের দিকে দৌড়াইতে, মাথায় হাত দিয়া মাটিতে বইয়া পড়ছিল। হালার গান্ধিআশ্রম। …দ্যাশটার মুসলমানদের দিয়াও শান্তি নাই…
কলোনির মানুষের কাছে আশ্রম ছিল চক্ষুশূল। …পাইলেই ফল পাকুড় পাড়তাম, নর্দমার ওপাশে জমিতে খুটি বসাতাম। এবার আমি সন্ধ্যা সন্ধ্যা -এক কাদি সবরি কলার ছড়া কাইট্টা আনলাম…শুনছি পার্টিশনের আগে গান্ধি দলবল নিয়া আসতেন!…আইজ অবশ্য ‘হালার গান্ধ’ কইনা!
বলেই যদুনাথ কপালে আঙুল ঠেকাত।
যদুনাথ অবশ্য আজও জানে না, শুধু মোহন দাস নয়, এখানে তৎকালীন প্রায় সকল দেশনেতা সংকটে সংগ্রামে মহাত্মার কাছে পরামর্শের জন্য আসতেন।
ক্রমশ..
❤ Support Us