- এই মুহূর্তে দে । শ
- নভেম্বর ৬, ২০২৩
“আমি নির্দোষ, আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে”, আবারও দাবি জ্যোতিপ্রিয়র, তাঁর জামিনের আবেদন করা হয়নি, ফের সাত দিনের ইডি হেফাজত মন্ত্রীর
সোমবার রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী ও বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ইডি হেফাজত শেষ হয়। তাঁকে এদিন সিজিও কমপ্লেক্স থেকে তাঁকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কমান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় মন্ত্রী দাবি করেন, তিনি নির্দোষ। এদিন আদালতে পেশ করার সময় মন্ত্রী দাবি করেন ১১ দিনে ইডি বুঝেছে তিনি নির্দোষ। এদিকে আদালতে জ্যোতিপ্রিয়র তরফে তাঁর আইনজীবীরা তাঁর জামিনের আবেদন করেনি। ইডি এদিন আরও ৭ দিনের জন্য জ্যোতিপ্রিয়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছে। আদালত রায়দান আপাতত স্থগিত রেখেছে। এদিন জ্যোতিপ্রিয় বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে।
এদিন মামলা চলাকালীন জ্যোতিপ্রিয়র আইনজীবীরা আদালতে ইডির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের জন্য কম্যান্ড হাসপাতালে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়নি। জ্যোতিপ্রিয় রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার বলেও মন্তব্য করেন শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত এক আইনজীবী।
সোমবার রেশন বণ্টন দুর্নীতির মামলায় ইডি হেফাজতে থাকা জ্যোতিপ্রিয়কে ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হয়। আদালতে শুনানি চলাকালীন ইডি দাবি করে, বালু তিন দিন বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেই সময় হাসপাতালে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। এর পর মন্ত্রীকে কম্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়। মন্ত্রীর জন্য যতটা সম্ভব করা যায়, তা যথাযথ ভাবে করা হয়েছিল। কম্যান্ড হাসপাতাল নিজেও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। আদালতে ইডির যুক্তি, ধৃত মন্ত্রী তিন দিন হাসপাতালে ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়নি। আর সেই কারণেই তাঁকে আরও সাত দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আর্জি জানিয়েছে ইডি।
এর পরই এদিন জ্যোতিপ্রিয়র এক আইনজীবী দাবি করেন, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বনমন্ত্রীর জন্য কম্যান্ড হাসপাতালে কোনও মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়নি। এই মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করার আর্জিও তিনি আদালতে জানান। তবে জ্যোতিপ্রিয়র তরফে তাঁর আইনজীবী জামিনের আবেদন জানাননি।
অন্য দিকে, শুনানি চলাকালীন আদালতে উপস্থিত এক আইনজীবী দাবি করেন, প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার। ফাঁসানো হয়েছে তাঁকে।
প্রসঙ্গত, সোমবার আদালতে প্রবেশের সময় নিজেকে আরও এক বার নির্দোষ বলে দাবি করেন জ্যোতিপ্রিয়। তবে এ বার এই দাবির সঙ্গে তিনি জুড়ে নিলেন তদন্তকারী সংস্থা ইডিকেও। সোমবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে ঢোকার আগে জ্যোতিপ্রিয় বলেন, “আমি মুক্ত। আমি মুক্ত। ইডি বুঝতে পেরেছে যে, আমি মুক্ত।” তবে কী কারণে তিনি এই দাবি করছেন, তা স্পষ্ট নয়। ইডি সোমবার জ্যোতিপ্রিয়কে আরও ১০ দিন নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল। আদালত আরও ৭ দিন জ্যোতিপ্রিয়কে ইডি হেফাজতে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার সকালেও নিজেকে নির্দোষ বলেও দাবি করেছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। সোমবার আদালতে পেশ করার আগে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য তাঁকে বার করা হয়। ইডির দফতর সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে জ্যোতিপ্রিয় তিন বার বলেন, “আমি নির্দোষ। আমি নির্দোষ। আমি নির্দোষ।”
তার পরই জ্যোতিপ্রিয়কে বলেন, “এরা যা করেছে, অন্যায়, অনৈতিক কাজ করেছে।” এর পাশাপাশি আদালতের উপর ভরসা রাখার ইঙ্গিত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “কোর্ট নিশ্চয়ই বিচার করবে।” তবে কে বা কারা অন্যায় কিংবা অনৈতিক কাজ করেছে, জ্যোতিপ্রিয়ের সোমবারের কথায় তা স্পষ্ট হয়নি। জ্যোতিপ্রিয় জানান, তিনি অসুস্থ।
গত শুক্রবার ইডি-র সঙ্গে হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরীক্ষায় যাওয়ার পথেও জ্যোতিপ্রিয় সংবাদমাধ্যমের সামনে ‘দিন চারেক পরেই সবাই সব কিছু জানতে পারবেন’ বলে মন্তব্য করেন। এর ভিত্তিতেই মন্ত্রী আদালতে ‘বোমা ফাটাতে পারেন’ বলে জল্পনা শুরু হয়।
জ্যোতিপ্রিয় এ-ও দাবি করেছিলেন যে, তিনি নির্দোষ। পাশাপাশি তাঁর দাবি ছিল, বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন। গত শুক্রবার বালু বলেন, “আমি চক্রান্তের শিকার। বিজেপি আমায় ফাঁসিয়েছে। মমতাদি-অভিষেক সব জানে।” তিনি দলের সঙ্গে রয়েছেন কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেছিলেন, “আমি দলের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব।” খুব তাড়াতাড়ি তিনি ছাড়া পাবেন বলেও দাবি করেন জ্যোতিপ্রিয়। নিজেকে ‘মুক্ত’ বলে দাবি করার পর জ্যোতিপ্রিয়কে খাপছাড়া ভাবে বলতে শোনা যায়, “আর চার দিন পর।” এই মন্তব্যটি সম্পূর্ণ না করেই গাড়িতে উঠে যান তিনি। জ্যোতিপ্রিয়কে এ-ও বলতে শোনা যায় যে, “দু’দিনের মধ্যে সব প্রকাশ হবে।” এই দু’দিন এবং চার দিনের কথা জ্যোতিপ্রিয় কেন বললেন, তা অবশ্য স্পষ্ট হয়নি।
এদিকে তৃণমূলের তরফে রাজ্যের দুই মন্ত্রী শশী পাঁজা ও পার্থ ভৌমিক বলেন, তৃণমূলের মন্ত্রী-নেতাদের বিরুদ্ধে যে ভাবে ইডি-সিবিআই সক্রিয় সেভাবে বিজেপি নেতামন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সক্রিয় নয়। পার্থ ভৌমিক বলেন, “আদালতের উপর আমাদের আস্থা রয়েছে। আমরা চাই বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করুক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এখনও সারদা মামলার কোনও নিস্পত্তি হয়নি। মামলাম চলাকালীন তাপস পাল, সুলতান আহমেদ মারা গেলেন। এটা কি ধরণের তদন্ত?”
❤ Support Us