Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • অক্টোবর ২৬, ২০২৩

রেশন বন্টন দুর্নীতিকাণ্ডে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের সল্টলেকের দুই বাড়িতে ইডির তল্লাশি, মন্ত্রীর আপ্তসহায়কের নাগের বাজারের দুটো ফ্ল্যাটে ইডির হানা, একসঙ্গে চলছে ৮টি জায়গায় তল্লাশি

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
রেশন বন্টন দুর্নীতিকাণ্ডে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের সল্টলেকের দুই বাড়িতে ইডির তল্লাশি, মন্ত্রীর আপ্তসহায়কের নাগের বাজারের দুটো ফ্ল্যাটে ইডির হানা, একসঙ্গে চলছে ৮টি জায়গায় তল্লাশি

পুজো মিটতেই রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সল্টলেকের দুটি বাড়িতে রেশন দুর্নীতিকাণ্ডের জেরে ইডির তল্লাশি চলছে। পাশাপাশি খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালীন জ্যোতিপ্রিয়র আপ্ত সহায়ক অমিত দের নাগেরবাজারের দুটি বাড়িতে হানা দিয়েছে ইডি। রাজ্যে রেশন বন্টণ দুর্নীতিকাণ্ডের মামলায় ধৃত বাকিবুর রহমানকে জেরায় উঠে এসেছিল রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম। আর সেই সূত্র ধরেই বৃহস্পতিবার সাতসকালে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী ও বর্তমান বনমন্ত্রীর সল্টলেকের বাড়িতে হানা দিয়েছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র আধিকারিকেরা। ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে, রেশন দুর্নীতি মামলায় বাকিবুর রহমানের গ্রেফতারির পরেই জ্যোতিপ্রিয়র নাম উঠে এসেছিল। সেই সূত্র ধরেই জ্যোতিপ্রিয়র সল্টলেকের বিসি ব্লকে পাশাপাশি দু’টি বাড়িত, বিসি ২৪৪ এবং বিসি ২৪৫-এ  বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই  তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে ইডি।

জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়ির পাশাপাশি তাঁর আপ্তসহায়ক অমিত দের নাগেরবাজারের ফ্ল্যাটেও সকালেই পৌঁছেছে ইডি। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ সেখানে পৌঁছয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দল। নাগেরবাজারে অমিতের দু’টি ফ্ল্যাটে পৌঁছেছে ইডি। একটি ফ্ল্যাট রয়েছে ভগবতী পার্ক এলাকায় এবং দ্বিতীয় ফ্ল্যাটটি রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দ রোডে। দু’টি ফ্ল্যাটেই পালা করে অমিত দে থাকেন। তবে দু’টি ফ্ল্যাটই তালাবন্ধ অবস্থায় রয়েছে। তাই ইডি সেই তালাবন্ধ ফ্লাট দুটিতে তল্লাশি না করে সেই ফ্লাট দুটিকে ইডির আধিকারিকরা তালাবন্ধ করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ ইডি চাইছে অমিত দের উপস্থিতিতে তাঁর দুটো বাড়িতে তল্লাশি চালাতে চাইছে। ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে অমিত দে এখন পুরীতে রয়েছেন।

এই বিষয়ে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, “বাকিবুর রহমানের এই বাড়বাড়ন্ত প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের জন্যই হয়েছে। করোনার সময় রাজ্যে খাদ্য দুর্নীতি হয়েছে। খাদ্য দফতর দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠছিল।” এদিকে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “জ্যোতিপ্রিয় ধরা পড়লেই চলবে না। জ্যোতিপ্রিয়র মাথায় যে কালীঘাট আছে সেখানে ইডির পৌঁছতে হবে।”
এদিকে এই প্রসঙ্গে তৃণমূলনেত্রী ও রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “দুর্গাপুজো সবে শেষ হয়েছে। এর মধ্যেই খুব শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবেই ইডি রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে নেমে পড়েছে। লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে এসব ততোই বাড়বে।”

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আটটি জায়গায় তল্লাশি অভিযানে নেমেছেন ইডির আধিকারিকেরা। মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বাকিবুরের সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয়ের কী সম্পর্ক, তা নিশ্চিত ভাবে জানতেই তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি। জ্যোতিপ্রিয়র দুটো বাড়িই বাইরে থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘিরে রেখেছে। বাইরের কাউকে বাড়িতে প্রবেশ করতে বা বাড়ি থেকে কাউকে বার হতে দেওয়া হচ্ছে না।

রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে গত বুধবার সকাল থেকে বাকিবুরের কলকাতার কৈখালির ফ্ল্যাটে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছিল ইডি। বাকিবুরের ফ্ল্যাট থেকে ১০০-র বেশি সরকারি দফতরের সিলমোহর বা স্ট্যাম্প মিলেছে বলে ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে। খাদ্য সরবরাহ সংক্রান্ত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ১০৯টি স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়েছে। সাড়ে ৫৩ ঘণ্টা তল্লাশির পর গত শুক্রবার বাকিবুরকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর ফ্ল্যাট থেকে বেরোয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তার পর আরও ১১ ঘণ্টা জেরার পর শনিবার সকালে তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। সোমবার বাকিবুরকে আদালতে পেশ করবে ইডি।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, বাকিবুরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-সহ যে নথিগুলি উদ্ধার হয়েছে, তা থেকে প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে বাকিবুরের বিভিন্ন সংস্থায় ৫০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ ঢুকেছে। একাধিক হোটেল, রিসর্ট, পানশালা সহ ৯৫টি সম্পত্তি রয়েছে বাকিবুরের। তার পাশাপাশি রয়েছে বেশ কয়েকটি রাইস মিলও।

বাকিবুরের পাশাপাশি, তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুচরের বাড়িতেও তল্লাশি চালায় ইডি। বাকিবুরের ওই ঘনিষ্ঠের নাম অভিষেক বিশ্বাস। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্পর্কে বাকিবুরের শ্যালক হন অভিষেক। তাঁর বাড়ি চিনার পার্কে। সেখানে গিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা তল্লাশির পাশাপাশি, জিজ্ঞাসাবাদও করেন অভিষেককে। অভিষেক এবং বাকিবুরের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁরা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন যে, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করেছিলেন বাকিবুরই। যা থেকে তদন্তকারী সংস্থাটি মনে করছে, পরিবারের সদস্যদের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার লেনদেন চালিয়েছিলেন বাকিবুর।

গত বুধবার ইডি গিয়েছিল নদিয়ার বিভিন্ন রেশন দোকান এবং দোকানের মালিকের বাড়িতে। একই দিনে সল্টলেক এবং নিউ টাউনের অনেকগুলি জায়গাতেও তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি।

জানা গিয়েছে, বাংলার বাইরে আরও তিনটি রাজ্যে বাকিবুরের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ রয়েছে। বছর তিনেক আগে খাদ্যবীজের দুর্নীতির সূত্রে প্রথম বাকিবুরের নাম প্রকাশ্যে এসেছিল। সেই দুর্নীতিতে উদ্ধার হওয়া খাদ্যবীজের বস্তায় বাকিবুরের সংস্থার নাম ছিল বলে খবর। ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, বাকিবুর বাম জমানা থেকেই রেশনের চাল, গম নিয়ে খোলা বাজারে কারবার করতেন। বামফ্রন্ট সরকারের এক মন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে দাবি অনেকের।

এদিকে বাকিবুর গ্রেফতার হওয়ার পরেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দও অধিকারী একটি ছবি দেখিয়ে বলেছিলেন, এই রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জড়িত। তবে জ্যোতিপ্রিয় এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
বৃহস্পতিবার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ইডি আধিকারিকরা জিজ্ঞাসা করছে তাঁর কোথায় কোথায় সম্পত্তি রয়েছে, কোন ব্যাঙ্কে কত অর্থ আছে। এদিকে ইডি সূত্রে জানা গেছে অমিত দের তিনটি বাড়িতে ইডি তল্লাশি চালাতে পারছে না। কারণ অমিত দে বর্তমানে পুরি আছেন। ইডির আধিকারিকরা পুরীতে অমিত দের খোঁজ শুরু করেছে। অমিত দে তৃণমূলের একজন সাধারণ কর্মী ছিলেন। অতি সাধারণ জীবনযাপন ছিল তাঁর। তবে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আপ্ত সহায়ক হওয়ার পরই তাঁর সম্পত্তির পরিমান বাড়তে থাকে, বদলে যেতে থাকে তাঁর জীবনযাপন।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!