- গ | ল্প রোব-e-বর্ণ
- মার্চ ১৭, ২০২৪
ফিকিরচাঁদের অন্তিম শিকার
চৌরঙ্গীদিঘির উত্তর পাড়ে জীর্ণ মন্দির । কতদিন এখানে মানুষের পা পড়েনি তা কে জানে ! শিবুর মতো তারাও হতবাক । যতই হোক মানুষ তো ! চাতালে সিঁদুর মাখানো একটা নতুন ত্রিশূল পোঁতা । তাদের কলরবে মন্দিরের ভেতর থেকে একজন সৌম্যকান্তি যুবক বেরিয়ে এলো
অলঙ্করণ: দেব সরকার
গাঁয়ের লোকের কাছে আরো কিছুদিন হয়তো চাপা থাকত । এদিকে খুব একটা কেউ আসে না । দেবী বিসর্জনের সময় বন কেটে সাফসুরোত করা হয় । অন্য সময় এ এক সুঁড়িপথ । দুপাশে কষাড় জঙ্গল । গাছপালায় সবকিছু অন্ধকার । সাপের ছোবল খেতে কতোক্ষণ !
কবে তার উদয় তা সঠিক বলা যাবে না । সেদিন যদি জঙ্গলে না ঢুকত শিবু ! মায়ের জন্যে সে পাগল । মেনকার সুগার হয়েছে । সাপখোপের ভয়কে পাত্তা না দিয়ে গুলঞ্চলতার খোঁজে সেদিন সূর্য ওঠার মুহূর্তে তার এখানে আসা । কাটারি দিয়ে আগাছা কেটে একটা মোটাসোটা গুলঞ্চের গোড়ায় পৌঁছেছে তখনো টের পায়নি। হেঁইও বলে টান মারতে অনেকটা জায়গা ফাঁকা করে দিল সাপের মতো মোটা সে লতা । তখন দৃশ্যমান হয় । আদ্যিকালের ভাঙা কালী তো জনশূন্য ! ভৌতিক ব্যাপার নাকি ? এ জঙ্গল, কালীমন্দির তার সামনে ঠাকুর বিসর্জনের চৌরঙ্গী দিঘি, সবই রহস্যময় । দিনেরবেলায়ও গা ছমছম করে । এগোতে সাহস পায় না শিবু । পা চালিয়ে ফিরে আসে।
গাঁয়ের মাঝখানে ভরতের চায়ের দোকান । সেখানে তখন রীতিমতো জটলা । তাকে হাঁপাতে দেখে ভজহরি বলে,কী ব্যাপার শিবু?
তোমরা বোধহয় আমার কথা বিশ্বাস করবে না ?
কী এমন অবিশ্বাস্য ? খগেনবুড়ো বলে ।
নিজের চোখে না দেখলে তোমরা বিশ্বাস করবে না ?
অলস সময় তাদের । তাহলে কৌতূহল চেপে রাখা কেন ? শিবুর সঙ্গে ছোটখাটো জটলা পা বাড়ায় ।
চৌরঙ্গীদিঘির উত্তর পাড়ে জীর্ণ মন্দির । কতদিন এখানে মানুষের পা পড়েনি তা কে জানে ! শিবুর মতো তারাও হতবাক । যতই হোক মানুষ তো ! চাতালে সিঁদুর মাখানো একটা নতুন ত্রিশূল পোঁতা । তাদের কলরবে মন্দিরের ভেতর থেকে একজন সৌম্যকান্তি যুবক বেরিয়ে এলো । আপাতত কারো মুখে কোন কথা নেই । গাঁয়ের মাতব্বর গোছের গোবিন্দ প্রথমে মুখ খোলে,বাবাজি ! এমন আঘাটায় ?
দাড়ি গোঁফের ফাঁক দিয়ে মৃদু হেসে বলে, কোন আপত্তি আছে ?
ভয় !
কীসের ভয় ?
ভজহরি চৌরঙ্গীর ঘাটের শেওলার দিকে তাকিয়ে বলে, সে এক আজবকথা !
বলুন ! শুনি ।
এ দিঘির গভীরে যখ্যিবুড়ি আছে । নির্জন ঘাটে উঠে মানুষের রক্ত চুষে খায় ।
হা হা করে হেসে ওঠে সে ।
গোবিন্দ আহত কণ্ঠে বলে,সে না হয় বিশ্বাস করলে না । কিন্তু সাপখোপের ভয় তো আছে ! তার চে গাঁয়ের ভেতর শিমূলতলায় জমজমাট মন্দির আছে সেখানে কোন অসুবিধে হবে না ।
কিন্তু আমি যে স্বপ্নাদেশ পেয়েছি !
তাই নাকি !
এখানে মায়ের সেবা করব ।
তারা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে । পোড়ো মন্দিরে এসে মায়ের পুজো করবে ? তা পাগলামি হতে পারে । স্বপ্নাদেশ ব্যাপারটা হজম করা যায় না । গোবিন্দ তাকে সাবধান করেছে । সে যদি স্বেচ্ছায় মরতে চায় কে আর আটকাতে পারে ? বাবাজির বড়ো কাঁচা বয়েস । মুখখানি মায়াময় । এই বয়েসে সন্ন্যাসী ! জগতের লীলা বোঝা দায় ! মন তাদের ভারাক্রান্ত হয় । বাবাজি নিশ্চয় সাপের ছোবল খাবে না হয় রক্তচোষা যক্ষির কবলে পড়বে । তবে একটা ব্যাপারে সবাই একমত, তাদের টানাটানির সংসার, চাঁদাপত্তর কিছু দিতে পারবে না ।
কৌতূহল দমন করা দায় ! সপ্তাখানেক বাদে নিতাই আর বলরাম এসে হাজির । পালায়নি। ঠাকুরের বুকের পাটা আছে । তারা চারিদিক তাকিয়ে দেখছে । মন্দিরে যেন নতুন করে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে । চারিদিক ঝকঝক তকতকে । টগর আর জবার কয়েকটা চারা । মন্দিরের ভাঙা ছাদে মেরামতির চিহ্ণ । দিঘির ঘাটেও নিত্য ব্যবহারের ছাপ ।
মন্দিরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে ঠাকুর । দুহাতে কলাপাতার ঠোঙা । সে এগিয়ে দেয়,নিন !ধরুন !
দ্বিরুক্তি করতে পারে না তারা । এ যে মায়ের প্রসাদ ! মুখে দিয়ে তারা বোঝে, এ কোন সামান্য জিনিস না ! বাবাজির মহিমা আছে । এ প্যাঁড়া সন্দেশ এখানে কোথা থেকে এলো !
একটা দুটো করে গাঁয়ের লোকের চলাচলতি বাড়ে । সাঁজেরবেলা দু একজন কলকে টানার লোক জুটে যায় । সে এসেছিল ভাদ্দোরের শেষ লগ্নে । কালীপুজোর সময়ে সে এক কাণ্ড ! নতুন খাঁড়ায় পাঁঠা বলি দিয়ে সারা গাঁয়ে মাংস বিলি করে । বিনা চাঁদায় এমন প্রাপ্তিযোগ তাদের কোনদিন ঘটেনি । ভক্তিযোগের রস যেন বাধা মানতে চায় না, এবার ।
সন্ধ্যে নামলে পিতলের প্রদীপ ধরায় সে । পাথর প্রতিমার মুখে অনেক দিনের ধুলো ময়লার আস্তরণ । ঘঁষামাজা করে । ডানদিকের চিবুকে ছোট একটা ক্ষত । বারবার সেখানে হাত বুলিয়ে বিহ্বল হয়ে পড়ে । দূরের কোন ঝাপসা স্মৃতি মনের ভেতর বুজবুড়ি কাটে । তারপর কেটে যায় অনেক সময় । শুধু বসে থাকলে চলে না । রাতের রান্না সারতে হয় । রাত ভারি হয় । তখন মিনমিন করে শব্দ । মাথার ওপর বাদুড়ের ডানার ঝটপট । এই নিশুতিরাতেই তো তার মোবাইল ফোনের জেগে ওঠা । অনেক দূর থেকে কথা ভেসে আসে ।
ফিকিরচাঁদ । কেমন জাল ফেললি ?
সবে তো ঘাট বাঁধলুম !
বেশ ! বেশ !
আরো কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে কথা হয় ।
ফিকিরচাঁদের মাথায় অনেক রকম ছক খেলাতে হয়।কাজ উদ্ধারের জন্যে ঝুঁকি নিতে পিছুপা হয় না।জটাজুটের আড়ালে আসল মানুষ যে সে কে, তা এখানে কেউ জানে না
দিন কাটে । মাসের পর মাস যায় । হঠাৎ একদিন পালপাড়ার তারক এসে হাজির । ঠাকুর,তুমি হারানো জিনিস খুঁজে দিতে পারবে ?
গয়না তো—?
বয়স্ক মানুষ তারক যেন তার পায়ে পড়ে যায়, ঠাকুর ! তুমি অন্তর্যামী !
আহা ! করেন কী কাকা ! তাকে তুলে ধরে সে ।
তারক কাঁদতে কাঁদতে সব বৃত্তান্ত বলে । ছেলের বৌ আমাকে পুলিশে দেবে ।
গয়না তো সে হারিয়েছে । ফিকিরচাঁদ মৃদু হাসে।
সেকথা কে আর বিশ্বাস করে ?
আমার কাছে তাদের একবার আনা যাবে ? গয়নাও যেন সঙ্গে করে আনে ।
দেখি ! একবার বলে দেখি ।
পালপাড়া এখান থেকে খুব একটা দূর না । ঘন্টাখানেকের মধ্যে তিনজন এসে হাজির । আরতি তাকে দেখে চমকে ওঠে । পুরুষ মানুষের এমন রূপ হয় ! সে বোধহয় অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়েছিল । তপন ব্যাপারটা লক্ষ করে বিরক্ত হয়ে বলে, কী জন্যে ডেকে পাঠিয়েছো তাই বলো,ঠাকুর ?
গয়না কেউ নেয়নি ।
আরতি এবার বাস্তব জগতে নেমে আসে । বাবা !তুমি আমার শ্বশুরকে চেনো না । আমি হাড়ে হাড়ে চিনি।
সে যাই হোক ! মা জননি ! গয়না তুমি হারিয়েছো।
কথাটা হজম হয় না । তপন রূঢ় কণ্ঠে বলে,কে বলেছে ?
আমি বলছি । নরম গলায় বলে ফিকিরচাঁদ।
কানের দুল আঁচলে বেঁধে এনেছে আরতি । তা খুলে সে স্বামীর হাতে দেয় । তপন সামনে মেলে ধরে বলে,এ কি হারায় ? আমরা সাবধানে রাখি।
জলের ঢেউয়ে পুকুর ঘাটে তলিয়ে গেছে । গমগম কণ্ঠে বলে সে।
খুঁজে দিতে পারবে,বাবা ? আরতি বলে।
তা না হলে ডাকলাম কেন !
তারক উচ্ছ্বসিত হয় । তপনের চোখে সন্দেহ ঘোর হয় । না পারলে তোমার একদিন কী আমার একদিন !
ফিকিরচাঁদ এবার একটু চিন্তিত গলায় বলে, তবে একটা কাজ করতে হবে।
কী কাজ ?
সে একটু ইতস্তত গলায় বলে,এই জিনিসটা রেখে যেতে হবে।
কেন ? তপন প্রশ্ন করে।
মায়ের পায়ের নিচে রেখে একটু মন্তর পড়তে হবে ।
মনে মনে মন্ত্র পড়লে হয় না ?
সে ছবির নায়কের মতো মৃদু হেসে বলে,সব কিছু তো একভাবে হয় না।
তপন আর আরতি মুখ চাওয়াচাওয়ি করে । তপন ভাবে,এসব আবার কী !বুজরুকি নাকি ? আরতি মনে মনে বলে, এমন মানুষ ঠকালেও কোন খেদ নেই ! সে তপনকে চোখের ইশারা করে।
সারারাত তপন ঘুমোতে পারে নি।ভোরবেলা সে হাজির হয়ে দেখল,বাবাজি যেন তার জন্যে তেরি হয়ে আছে।মনে মনে সে একটু ধাক্কা খায়।হয়তো অন্যরকম কিছু ভেবেছিল।
তারকের চেয়ে তপন যেন বড়ো ভক্ত হয়ে উঠল । যাকগে সেসব কথা।ফিকিরচাঁদের মাথায় অনেক রকম ছক খেলাতে হয়।কাজ উদ্ধারের জন্যে ঝুঁকি নিতে পিছুপা হয় না।জটাজুটের আড়ালে আসল মানুষ যে সে কে, তা এখানে কেউ জানে না।
সেই ঘটনার পর গাঁয়ের বৌঝিরা সব আসতে শুরু করেছে । তারা পুজোর নৈবেদ্য আনে।দেবীকে প্রণাম করে।এক একদিন চৌরঙ্গীর ঘাটে সন্ধ্যে নামে।ফিকিরচাঁদ গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়।এভাবে জীবন কাটবে ? মুক্তি কোথায় ?
সেদিন সকালবেলা তারকের খিড়কির পুকুরে নেমেছিল সে।তাদের অবিশ্বাস্য চোখ বিস্মারিত হয়েছে।আধ ঘন্টা খোঁজাখুঁজির পর সে কাদামাখা কানের দুল তুলে এনেছে।ঘাটে ভিড় ছিল না।ফিকিরচাঁদও বারণ করেছে যেন পাঁচ কান না হয়।তার সাধনায় বিঘ্ন ঘটবে।এই সূক্ষ্ম চালে তা চারপাশের গাঁয়ে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে।
♦♦♦♦
কাকাদের পকেট থেকে চুরি করে আনা খুচরো টাকায় আর কতদিন চলে। সে হয়তো খেয়াল করেনি একটা ঝাঁকড়া চুলের মাথা তাকে নজরে রেখেছে । সকালবেলা একদিন সম্বলহীন হয়ে বিরাটি স্টেশানে দুনম্বর প্লাটফর্মের সিমেন্টের বেঞ্চিতে পা তুলে বসেছিল । ঝাঁকড়া চুলো লোকটা তার পাশে এসে বসে । তারপর মিষ্টি গলায় বলে,তোর নাম কী ?
সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া সে বলে,তোমার কী দরকার ?
তোর খিদে পেয়েছে ?
কেন ?
মুখ শুকনো দেখছি।
খেতে দেবে নাকি ?
তোর ভালোর জন্যে বলছি। আজকে রেল পুলিশের রেড হবে । স্টেশানে যাকে পাবে তাকে তুলে নিয়ে যাবে।
আমি তো কিছু করিনি । ভয়ে ভয়ে বলে সে।
তুই তো বাড়ি থেকে পালিয়েছিস।
তাহলে কোথায় যাব ?
আমার সঙ্গে চল।
তোমার সঙ্গে—? একটা আতান্তরে পড়ে । জন্মের দুবছরের মাথায় তার বাবা পথ দুর্ঘটনায় মারা যায় । কাকাদের সংসারে মানুষ। মায়ের সঙ্গে সে জীবন যেন অসহ্য । তাই তো পালিয়ে আসা।
বাড়িতে নিয়ে যাবে নাতো ?
পাগল নাকি ! তোকে কাছ ছাড়া করব না।
রূপচাঁদ ইতস্তত পায়ে তার সঙ্গে অচেনা পথে পাড়ি দেয়।
তার অলীক কথা দূর থেকে দূরান্তরে ছড়িয়ে গেছে । সবাই মোটামুটি তাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করে । ছদ্মবেশে সে তো গঞ্জের মদন স্যাকরার দোকানে গিয়েছিল । কেউ তাকে চিনতে পারেনি ।
কদিন পর সরকার পাড়ার সুবলের মা এসে হাজির । শিবু তাকে সঙ্গে করে এনেছে । বিধবা সৌদামিনীর একমাত্তর সন্তান দিল্লিতে কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে । তার কথা শুনে গম্ভীর হয় ফিকিরচাঁদ । তারপর বলে,বুঝেছি । নখদর্পণ করতে হবে।
তোমার যা ইচ্ছে,ঠাকুর ।
কিন্তু একটা কাজ করতে হবে । ইতস্তত করে বলে সে।
কী কাজ ? শিবু জিজ্ঞেস করে।
পরশু মঙ্গলবার এখানে দশ পনেরোজন বৌঝিকে আনতে হবে ।
কেন ? অবাক হয়ে বলে শিবু ।
তুলোরাশির বামা হাত লাগবে । তাতে নখদর্পণ হবে ।
ঠিক আছে । তোমার কাজ তুমি করবে ঠাকুর।
তারা চলে যায় । দিঘির ঘাটে বসে পুরোনো দিনের মালা গাঁথে সে। ঝাঁকড়া চুলো লোকটা একা না। তার সঙ্গে আরো দু’চার জন আছে । তাদের সাথে খায় দায় ঘুরে বেড়ায় । মাঝেমাঝে শুধু মায়ের জন্যে মন কেমন করে । তারপর একসময় সে স্মৃতিও ঝাপসা হয়ে পড়ে । তারা কখনো এক জায়গায় থাকে না । কী যে তাদের কাজকারবার তাও ঠিক বুঝতে পারে না । বেশ কয়েক বছর পর যখন সে কৈশোরের খোলস ত্যাগ করছে তখন তারাই সব খোলসা করল । রাবণ বলে,তুই আমাদের তুরুপের সাহেব !
তার মানে ? রাবণের সেই ঝাঁকড়া চুলের দিকে তাকিয়ে বলে রূপচাঁদ ।
মা তার চাঁদ মুখের দিকে তাকিয়ে এমন নাম রেখেছে । রাবণ আর কোন কথা বলে না । আস্তে আস্তে তাকে তুখোড় করে তোলে বিভীষণ আর মেঘনাদ । রাবণের ডান হাত বাঁ হাত । মেঘনাদ গম্ভীর গলায় বলে,তোর রূপে মেয়েরা ভুল করবে।
বিভীষণ কান এঁটো করা হাসি হেসে বলে,তোকে দিয়ে আমরা টোপ ফেলব।তোর নাম পাল্টে হবে ফিকিরচাঁদ।
মঙ্গলবার দুপুরের পর তারা এসে হাজির।সূ্র্য একটু পশ্চিমে হেলে গেছে।পুবের চাতালে ছায়া পড়েছে। একটা অজিনের ওপর কমণ্ডলু নিয়ে তার আসন। সামনে বৌঝিয়েরা অর্ধবৃত্তাকারে বসে পড়ে।চোখ বন্ধ করে ফিকিরচাঁদ ধ্যানস্থ হয়।ঘন্টাখানেক বাদে চোখ খোলে।এখন সে অন্য মানুষ।তার চোখে মুখে যেন অলীক ছাপ।সবাই ভক্তিতে একবার প্রণাম করে।এবার কাজে নামে সে।মেলে ধরা হাতের দিকে তার চোখ থাকলেও মন অন্যদিকে। একসময় হতাশ হয়ে বলে,তুলো কোথায় ?তোমাদের হাতে সব কাদামাটি।
তাহলে কী হবে ? কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে সুবলের মা।
আর কী হবে—! কমণ্ডলু নিয়ে উঠে পড়ে ।
সৌদামনী যেন হঠাৎ ক্ষেপে যায়।সে হাত পা ছুঁড়ে চীৎকার করে,তুই একটা ঠক !জোচ্চোর !ভাঁওতাবাজ !ভেক ধরেছিস।তোকে পুলিশে দোব।
অপ্রস্তুত হয়ে সে মনে মনে ধাক্কা খায়।শিবু তাকে আশ্বস্ত করে,ঠাকুর ! কিছু মনে করো না।ছেলে হারিয়ে ওর মাথাটা গেছে।
কিছুদিন পর আসল নকলের ফারাক ঘুচে যায় । নকল জটাজুট থান ইঁট বেঁধে দিঘির জলে ডুবিয়ে দিয়েছে । তবে যত দিন যাচ্চে একটা অস্বস্তি জেগে উঠছে । কাকে সে প্রতারণা করছে ? শেষবার সিউড়িতে যখন ছিল তখন এমনটা মনে হয়নি । হাত দেখার ছলে তাকে অনেক কথা বলেছে । রেহানা তার সব কথা গোগ্রাসে গিলেছে । সে তখন এক নির্জন দরগায় মুসলমান ফকির । তার সঙ্গে আজমির শরিফ দরগায় গেলে সব মনোবাসনা পূরণ হবে । রেহানা সে কথা অবিশ্বাস করে নি। ফিকিরচাঁদ বলেছিল,বাপ মা যেন টের না পায় । পর্দায় সে বিখ্যাত নর্তকী হবে।
সবটটাই তার মিথ্যে— তন্ত্র মন্ত্র পুজো পাঠ ! কিন্তু মিথ্যের মধ্যে কখনো সখনো সত্যি উঁকি দেয়। প্রতিমার দিকে অবহেলার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে পারে না । মালা দিতে গিয়ে আপনা থেকে মাথা নত হয়ে আসে । পাষাণ প্রতিমার মুখে সেই ক্ষত চিহ্ন বড়ো জীবন্ত হয়ে ওঠে । রাতেরবেলা ফোন আসে,আর কতদিন এক জায়গায় পড়ে থাকবি ?
গুরু ! সওদার মাল না পেলে জাল গুটোই কী করে ?
তোর গলা এমন কেন ? কোন প্রেম ট্রেমে পড়েছিস নাকি ?
কী যে বলো ! সে জানে রাবণ কী সাংঘাতিক লোক ! এ পেশায় দয়া নেই মায়া নেই।কোন অনুভূতি নেই।
বছর পার হয়ে এল।আবার ভাদ্দোর মাস।ঘাটে বসে ভরা দিঘিতে পাখির মেলা দেখছিল।বেলা দশটা হবে।হঠাৎ হৈচৈ।দিঘির জলে ঢেউ ওঠে।কয়েকটা পানকৌড়ি ডানা ঝাপটে উড়ে যায়।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নারী পুরুষের একটা জটলা।কাকে যেন ধরাধরি করে চাতালে এনে শুইয়ে দিল।তাদের মধ্যে চেনা ভজহরি এগিয়ে এলো,ঠাকুর ! আমার শালির মেয়ে।
কী হয়েছে ?
এখনকার মেয়েদের বোঝা ভার !পাশের গাঁয়ে থাকে।এখান থেকে খুব একটা দূর না।
শিবুর কথা শুনতে শুনতে ঘাট থেকে উঠে আসে।চাতালে এসে চমকে যায়।যাকে খুঁজে বেড়িয়েছে এক বছর ধরে সে যেন নিজে থেকে ধরা দিয়েছে। গাম্ভীর্যের আড়ালে মনের ভাব গোপন করে। একটা সতেরো আঠারো বছরের মেয়ে পান পাতার মতো মুখ। ফর্সা নয় তবু যেন প্রতিমার মতো ঘুমিয়ে আছে সবটুকু মাধুর্য নিয়ে।
তার ইতিহাস গড়গড় করে বলে একজন মধ্য বয়েসি মহিলা । কণ্ঠ উদ্বেগে ভরা । আজ কয়েকদিন ধরে মেয়েটার ফিটের ব্যামো চাগিয়েছে । ডাক্তার বদ্যি অনেক করা হয়েছে । জেলা হাসপাতাল থেকে ওষুধ দিয়েছে।কিন্তু মন তাদের ভালো বলে না।
মা হবে বোধহয়।বাকি কথা এখন থাক।ফিকিরচাঁদ এবার মোহন বাঁশিতে সুর দেয়।মায়াবি কণ্ঠে বলে, তোমার নাম কী ?
মেয়েটা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।কোন জবাব দেয় না।কিন্তু তার জবাব সে পেয়ে গেছে।এর জন্যে তো তার এখানে এত প্রতীক্ষা !
একটা ধুতি হাফ শার্ট পরা লোক এগিয়ে আসে,আমার একমাত্তর মেয়ে শ্যামলী । টুয়েলভে পড়ে । কিন্তু কিছু বলার জো নেই ।
কেন ?
শুধু মোবাইল আর মোবাইল । পড়াশুনোয় মন নেই।
বাকিটা জানা হয়ে গেছে।সে বলে,এখানে হবে না।ভেতরে নিয়ে চলো।মায়ের সামনে সে একা একা মনের কথা খুলে বলবে।
সেই মাঝ-বয়েসি মহিলা তার মা কমলা একটু আমতা আমতা করে।ভজহরি তাকে আশ্বস্ত করে বলে,ঠাকুর আমাদের সত্যিকারের ঠাকুর ! তোমার কোন চিন্তা নেই।
কিছু খেলা আড়ালে হয় । কিছু খেলা সবার সামনে । এবার তাকে আবার ধরাধরি করে,মন্দিরের ভেতরে । চারিদিকে বড়ো বড়ো গাছপালার জন্যে মন্দিরের মধ্যে ঠিকমতো আলো ঢোকে না । আলো আঁধারিতে সে এক অন্য খেলা। রাবণের বারণ আছে। আমরা যাই করি না কেন নারীদেহ কলঙ্কিত করা যাবে না । সব খুলে বলেনি তার মা বাপ। তবে আইবুড়ো পিসি লীলা রাখঢাক করেনি। দাঁতে দাঁত পিষে বলেছে,ভাইজি,ওইটুকুন হলে কী হবে একেবারে হাড় বজ্জাত ! রাতদিন শুধু ফোন আর ফোন । ধিঙ্গিপনায় দড় ! দুনিয়ার যত ছেলে বন্ধু সব । কোনদিন কারো হাত ধরে পালিয়ে যাবে । মায়েরও ষড় আছে । বাপ মোবাইল কেড়ে নিয়েছে । তারপর থেকে এই।
সার কথা বুঝে নিয়েছে ধুরন্ধর ফিকিরচাঁদ । সে শ্যামলীর কানে কানে অনেক কথা বলে । তার শেষ কথা শুনে হাসতে হাসতে উঠে বসে শ্যামলী ।
তারা যখন বাইরে এলো তখন সবাই আরেকবার ঠাকুরের নামে জয় ধ্বনি দেয় । শ্যামলী তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলতে বলতে চলে গেল । আজকে শনিবার । শুধু মঙ্গলবার স্কুলে যাওয়ার আগে এক বাটি পায়েস মায়ের ভোগের জন্যে আনবে। একা এলেও কোন অসুবিধে নেই । এতে কেউ কোন অবিশ্বাসের কিছু দেখে না।
এবার সে নিজে ফোন করে,গুরু ! এ মায়ার খেলা আর কতদিন ?
কেন ?
এখানের কাজ তো শেষ হতে চলল।
রাবণ খুশি খুশি গলায় বলে, প্রথমদিন দেখে তোকে চিনেছি।তুই আমাদের সোনার হরিণ।তোর অসাধ্যি কিছু নেই।
আরো হয়তো কিছু বলতে চেয়েছিল সে।কিন্তু তাকে থামিয়ে দিয়ে ফিকির বলে, আমার একটা কথা আছে।
কী কথা ?
আমি এবার মুক্তি চাই।
হঠাৎ একথা ? নিজে ব্যবসা খুলবি নাকি ? রাবণের গলায় হিস হিস শব্দ।
ভয় নেই ! একদিন রাস্তা থেকে আমাকে ঠাঁই দিয়েছো।তোমার সঙ্গে বেইমানি করব না।
তবে ?
ভেক ধরতে ধরতে বড়ো ক্লান্ত।এবার আমি নিজের পরিচয়ে বাঁচতে চাই।
আমি ছাড়লেও পুলিশ তোকে ছাড়বে না।
একদিন নাএকদিন তো ছাড়বে !
ফোন রেখে সে পায়চারি করে।এই তার শেষ কাজ।নরকের এই জগত ছেড়ে চলে যাবে দূরে কোন অচেনা পথে।মা হয়তো বেঁচে নেই।তার আবার পিছু টান কী ?
বাইরে বৃষ্টি আরো প্রবল হয়েছে । সঙ্গে ঝড়ের দাপট বেড়েছে । পৃথিবী যেন লয় হবে । ঘোর কাটে তার । ভেতরে একটা প্রশান্তি জাগে। মুক্তি ? মুক্তি তো তার সামনে
ভাদ্দোর মাসের সংক্রান্তি কাল।আজ দুদিন ধরে বর্ষা নেমেছে।স্যাকরার দোকানের রসিদ ছিঁড়ে কুটিকুটি করে দিঘির জলে ভাসিয়ে দিয়েছে।মোবাইলের কাগজপত্তরও সব বানের জলে ডুবিয়ে দেয়।আকাশের মুখ ভার হয়ে আছে।শ্যামলী কি আসবে ?স্কুলে ছুটি দিয়ে দেয় নি তো ? তারও স্কুল জীবন ছিল।এমন বাদলায় ছুটি দিত।স্কুলে ছুটি থাকলে বাড়ির লোক বেরোতে দেবে ? তার তন্ময়ভাব কেটে যায়।জলকাদার ভেতর সাইকেলের শব্দ।তাকে দেখে সে খুশি হয় না।মনে মনে গজরায়।হারামজাদি মেয়ে!ঝড় বাদলায় এমন নির্জন পথে একা একা বেরিয়েছিস ! কিন্তু মুখে তা বলতে পারে না।কাছাকাছি মোড়ের মাথায় গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে বিভীষণ আর মেঘনাদ।তার সঙ্কেত পেলে দুজনে চলে আসবে।
এই নাও ঠাকুর ! প্লাস্টিকের পায়েসের বাটি বের করে।ততক্ষণে সাইকেল থেকে নেমে পড়েছে।এখন অবশ্য বৃষ্টি একটু ধরেছে।
তার কথায় ধীর পায়ে এগোয়।তারপর হাত বাড়িয়ে বলে,পায়েস এনেছিস দে।কিন্তু পুজোর এখন দেরি আছে।
কত দেরি হবে ?
সন্ধ্যে হয়ে যাবে।তোর বাড়ির লোক খোঁজ করবে।
আমি বাড়িতে বলে এসেছি।স্কুল হোক বা না হোক বেলপুকুর বান্ধবীর বাড়ি যাব।ফিরতে দেরি হবে।
আনন্দে তার বুকটা নেচে ওঠে।কার মুখ দেখে উঠেছে !পরিস্থিতি সব কিছু তার অনুকূলে।বাদলা পথঘাট নির্জন।দিনের আলো তাড়াতাড়ি নিভে যাবে।
ঠাকুর !
চমকে ওঠে সে।তারপর রক্তচক্ষু বের করে বলে, একটু দাঁড়া।
এখনো বৃষ্টি থমকে আছে।পায়েস নিয়ে মন্দিরে ঢোকে।পায়েস ভরা পাত্রের ঢাকনা খোলে তারপর তার হিসেব মতো কাজ সারে।নতুন কেনা বেশ দামি মোবাইল আর পায়েস পাত্রে একটা চামচ লাগিয়ে বাইরে বেরোয় সে।
এই নে ধর ! মোবাইল এগিয়ে দেয় তার দিকে।
খুশি হওয়ার বদলে অবাক হয় শ্যামলী।এ তো অনেক দাম, ঠাকুর !
পড়াশুনোটাও মন দিয়ে করবি।
তুমি যা বলবে তাই করব,ঠাকুর।
তাহলে মায়ের প্রসাদ খেয়ে নে।
কিন্তু তুমি বললে,পুজোর দেরি আছে ?
এ শুধু তোর জন্যে-।মায়ের কাছ থেকে মিনতি করে আনা।চামচ ভরা পায়েস তোলে ফিকিরচাঁদ।এমন সময় তার মোবাইল বেজে ওঠে।প্রতিমার পায়ের কাছে পড়ে আছে।মন্দিরে ঢুকে তা তুলতে গিয়ে দেবীর মুখোমুখি হয়।রাবণ ফোন করেছে।কোন বাধা বিঘ্ন পড়ছে নাতো ?সে জবাব দেয়,সব কিছু চমৎকার।
হঠাৎ সে যেন কার কন্ঠস্বর শুনতে পায় । প্রতিমার ঠোঁট দুটো কী নড়ে উঠলো । এসব কী করছিস, তোকে আশ্রয় দিলুম যে । থমকে যায় ফিকির । একী শুনছে, সে কিছুক্ষণ থম মেরে যায় । নিজের দিকে তাকায় । একোন দৈববাণী । এতদিনের নিজের অচেনা সত্তাকে যেন চিনতে পারে । সে নিজেক আর ধরে রাখতে পারে না । বাইরে ছুটে আসে ।
বাইরে বেরিয়ে দেখে মেয়েটা মোবাইল হাতে তেমনি দাঁড়িয়ে আছে । গাঁজার নেশা তার ছুটে যায় । সে এবার চীৎকার করে বলে,শয়তান মেয়ে ! এখনও দাঁড়িয়ে আছিস !
বাহ্ ! তুমি তো বললে,মায়ের প্রসাদ দেবে।
মিথ্যে ! সব মিথ্যে ! পায়েসের চামচ দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
ঠাকুর ! তুমি কি পাগল হলে ?এই তো কেমন মিষ্টি করে কথা বলছিলে।
তাই নাকি ! আমার ভুল হয়ে গেছে।সে চামচটা কুড়িয়ে নিয়ে দিঘির জলে ভালো করে ধোয়।পায়েসের বাটি ভেতরে রাখা।
মন্দিরে ঢুকতে ঢুকতে সে স্বগোক্তির মতো বলে, আমি কি ভুল করছি ! তোর জন্যে আমি এতদিন ধরে সাপখোপ আর যখ্যিবুড়ির আস্থানায় পড়ে আছি । এক চামচ পায়েস খাইয়ে দিলে কাজ আমার শেষ । তুই তখন কোন অজানা স্বপ্নের দেশে পাড়ি দিবি ।
আবার পায়েস নিয়ে বেরিয়ে আসে । চারিদিকে ঘন মেঘ । গাছপালার ছায়া আরো গাঢ় । শ্যাম বর্ণের মেয়েটা মোবাইল নিয়ে একমনে নাড়াচাড়া করছে । হঠাৎ বিদ্যুত চমকায় । মেয়েটার মুখে আলো চলকায় । ফিকিরচাঁদের প্রতীজ্ঞা ভেঙে যায় । সে ছুটে গিয়ে তার পা জড়িয়ে ধরে । শ্যামলী যেন বিদ্যুতস্পৃষ্টের মতো চকিতে সরে দাঁড়ায় । তারপর হাতজোড় করে, ঠাকুর! এ কী করছ ! আমার যে পাপ হবে !
হতচ্ছাড়ি ! পাপ পুণ্যের তুই কী বুঝিস ! উঠে দাঁড়িয়ে পায়েসের চামচ সে মাঝ-দিঘিতে ছুঁড়ে ফেলে দেয় ।
ঠাকুর করো কী ! শ্যামলী তাকে বাধা দিতে যায় ।
হ্যাঁ রে ! আমার ভুল হয়ে গেছে।সে যেন একটু শান্ত হয়।তারপর আবার ক্ষেপে যায়।ফিকিরচাঁদ তাকে ধাক্কা মেরে বলে,চলে যা হারামজাদি ! নইলে খাঁড়া দিয়ে দু টুকরো করব।
ঝুপ ঝুপ করে আবার বিষ্টি নেমেছে।সঙ্গে এবার ঝোড়ো হাওয়া । মন্দিরে ঢুকে খিল এঁটে দেয় । প্রতিমার মুখের দিকে তাকিয়ে সেই দাগটা আলো আঁধারিতে কথা বলে ওঠে,আমাকে ফেলে চলে যাবি ?এতো অতি পরিচিত সেই পুরোনো কণ্ঠস্বর।কাকাদের হাত থেকে বাঁচার জন্যে সে ছুটে বেরিয়ে পড়েছিল । একান্ত আপনজনের কথা ভাবেনি । প্রতিমার পায়ের কাছে পড়ে সে হুমড়ি খেয়ে কাঁদতে থাকে । তাকে ফিরে পেয়ে আবার হারাবে ?
কতক্ষণ এভাবে পড়ে ছিল তা কে জানে ! ওদিকে তার ফোন বারবার বেজে যায় ।ঘোর কাটে না । বাইরে বৃষ্টি আরো প্রবল হয়েছে । সঙ্গে ঝড়ের দাপট বেড়েছে । পৃথিবী যেন লয় হবে । ঘোর কাটে তার । ভেতরে একটা প্রশান্তি জাগে। মুক্তি ? মুক্তি তো তার সামনে । কোণে রাখা হাতবাক্সটা টেনে বের করে। এখনো বেশ কিছু ঘুমের ওষুধ রয়ে গেছে।সেগুলো সব হাতে নেয়।পায়েসের বাটিতে আরেকবার মেশায় কড়া ডোজের সে ওষুধ।
পরদিন সকালবেলা পৃথিবীর লয় কেটে গেছে।সকালবেলা ঝলমলে রোদ।গুলঞ্চলতা কাটতে এসে শিবুর কেমন সন্দেহ হয়।এ রকম সময়ে রোজ চাতালে এসে বসে থাকে ঠাকুর।সে মন্দিরের কাছে এসে এদিক ওদিক তাকায়।চারপাশটা খেটেখুটে সাফসুরোত করেছে ঠাকুর।অনেক সময় সেখানে পায়চারি করে।কোথাও নেই।মন্দিরের দরজায় ধাক্কা দেয় ।ভেতর থেকে বন্ধ।কোন সাড়া শব্দ নেই।এক সময় খিল ভেঙে ফেলে সে।তার চোখের সামনে মেঝেতে ঘুমিয়ে আছে ঠাকুর।গায়ে হাত দিয়ে ডাকতে গিয়ে চমকে ওঠে শিবু।পাষাণের মতো ঠান্ডা ।সে ভেবে পায় না ঠাকুরকে কে খেলো—বিষধর সাপ না রক্তচোষা যখ্যি ?
♦–♦♦–♦♦–♦♦–♦♦–♦
❤ Support Us