- ধা | রা | বা | হি | ক রোব-e-বর্ণ
- ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩
মাটি ব্রতের আখ্যান । পঞ্চম পর্ব
দুই কবরা চিহ্নের মাঝখানে তেলভরা মস্ত চেরাগ জ্বলছে, পুড়ছে আগর, সারারাত ওই আলো আর খুশবু নিঃশেষ হবে না। চোত আসতে আর কদিন বাকি ! পিরসাহেবের খাস শাগিদ বাবা ইব্রাহিম মোজফফরের উরম পরব। হিন্দু গোয়ালাপাড়া থেকে বধুরা এসে কলসি কলসি দুধ ঢেলে মাজার ধুয়ে দেবে, মন্ত্র পড়ে পুজো করবে তাদের পুরুত... তারপর
অলঙ্করণ: দেব সরকার
ধা রা বা হি ক · উ প ন্যা স
॥ চাঁদের কফে রক্ত ॥
একরামধে তড়িঘড়ি জোগাড় করতে হয়েছে জনাচারেক ভলিন্টিরি। জয়নালের চেলা হিসাবে মুক্তোকান্দিতে ওরা দস্তুরমতো চেনামুখ। খাল ধরে হেড মাসটেরের ফেমিলিকে পাঠানো হবে, দ্রুত এই সিদ্ধান্তটা ওদের সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করেছে একরাস।
পেচরার খাল। হয়তো কোনো দূর অতীতে নদীই ছিলো। এই ভিটার দেশে মাটির গতরের কাঠামোটা বিচিত্র। এমন কত জলধারা যে আগে বয়ে যেতো, তার সুমারি আজ আর করা যাবে না। এখন খালে কোমর জল, হাঁটুজল, হোঁচট খেয়ে কোথাও গলাডুব। কিন্তু বর্ষার প্রথম ঢলেই ভিন চেহারা, তিরজল ছুটে যাচ্ছে তখন এতদিনের কোনবাঁধা বচুরিদামর ছুটি দিয়ে। তখন তাকে খাল বললে পেচারার মান যায়। মরা সোঁতা বললেও ইজ্জত বাঁচে। খালের এই অদ্ভূত চরিত্রের জন্য দু কিনারে ঢাল অববাহিকা ছড়ানো এলাকা জুড়ে। কোনো গ্রামকে মাঝখান দিয়ে দুভাগে চিরে, কোথাও দু গাঁয়ের সীমানা এঁকে পেচারা চলছে একেবারে ইছেমতী পর্যন্ত।
ইটিন্ডেঘাটের দিকে যাওয়া যাবে না। টাউনের দিকগুলোয় হিংসার বাজার তেজি। পুলিশের নিয়ন্ত্রণ বেসামাল হয়ে যাচ্ছে শহর নগরে। আপদকালে সংখ্যায় যতোটা পুলিশ দরকার, ততোটা নেই। গুজব এমনই যে পুলিশ নাকি ঠিকঠাক সামাল দিতে চাইছেও না।
একরামের মনে অনেকগুলি ধাঁধা একটু একটু করে জট পাকিয়ে ফেলেছে। যেমন সরকার লিগের হাতে। গুন্ডারা লিগের ঝান্ডা কাঁধে ঘুরে বেড়ায়। পুলিশ কার কথা শুনছে? সরকারের? নাকি ওই দুর্বৃত্তগুলোর? ওদের কথা কি পুলিশ মানতে বাধ্য হচ্ছে? নাকি এতদিন ধরে নানা ঘৃণার চাপ সইতে সইতে গুন্ডাদের চাওয়া আর পুলিশের চাওয়া এক হয়ে যাচ্ছে, বা গেছে? এইভাবে পুলিশও তার উর্দির আড়ালে পরিশীলিত গুন্ডা হয়ে যায় নাতো? মাথা ঝিমঝিম করে ওঠে একরামের, আর ভারতে গেলে সে ভয় পায়।
খালপাড়ে কাছিতে নোঙর ফেলে অপেক্ষা করছে জাবেদালি মাঝি, আর তার ভায়রা ভাই সুকুর মিয়াঁ। একরামরা যখন তাদের গিয়ে ধরেছিলো, কান্নায় হতাশ ভেঙে পড়েছিলো জাবেদ— আল্লা রহিম, শেষি আমারেই তুমি ই নাজেল কামখান ফয়সালে?
একরাম ঠিক করছে, নাওয়ে সে থাকবে। জেটা জেটিকে বসেরহাটের ডেঙায় নামিয়ে, একটা নিপদ আস্তানায় পৌঁছিয়ে দিয়ে তবে সে ফিরবে। বলা আছে ততক্ষণ দাবেদালি সুকুর মিয়াঁ ইছামতীর এ পার ঘেঁষে ভাসবে। কোনো বিপদ ভাবনায় একরাম আজ আর ডরাবে না। কৈশোরকালের কথা মনে জাগলো, একদিন আব্বুর কাছে জানতে চেয়েছিলো ‘মুসলমান’ শব্দের অর্থটা কী। আব্বাদান বলেছিলেন।- জ্যাটাড়ে জিগোবো। ও কতবড়ো পন্ডিত হইচে !
চন্দ্রমোহন সব শুনতে পেয়ে ছম্ম রেগেছিলেন— তোয়ের বাপ তোরে ওত্তরখান দেলো না ! কেরস পাজি। দেখলি। শোন, বাপ, উরে আবরি শব্দ, মানে সাচ্চা মানুষ।
ফিরে এসে বাবাকে সে যথা জানাতেই জয়েন উদ্দিন একগাল হেসে বলেছিলেন— দেখতি পালি, মানুষটে কুরান গুলি খাইছে। হয় বাপ, মোচলমান হতিছে ইমানদার। ইনসানিয়াতের জন্যি জানকবুল জিহাদী। উই যে মোল্লাগুলারে দেখতিছিস বাপ, উয়েরা মোচলমান না। উয়ে দেবরেল।
অজান্তেই চন্দ্রমোহনের দৃষ্টি নিচে চাঁদের ছিন্ন রেখাপুঞ্জের দিকে পড়েছিলো। দেখছিলেন তিনি স্থির পলকহীনতায়। মনে হলো তাঁর খকখক থুঃ থুঃ শব্দ হচ্ছে। কফ ফেলছে চাঁদ। অকস্মাৎ বিড়বিড় করে উঠলেন— রাহুগ্রস্তো ঘনগ্রস্তো পাপযুক্ত ভবান ভব। কলঙ্কী যক্ষাণেগ্রস্ত শশাঙ্ক…
তখন বাবার বাক্যগুলি ভালো করে বোঝেনি একরাম। এখন বুঝতে পারছে, বড়ো কষ্টে বুঝছে। আরো একটা কথা মনে আসছে তার। যারা বলেছিলেন— আমারে, তোমার আম্মিজানেরে যে চোখে দেখবা, জেটা জেটিরা সেই নজরে দেখবা। আমাগের কুনুদিন আলেদা কররা না। তালি দোজগেও তোমার জায়গা হবে নে, বাপ।
একরাম বেহেশত দোদখের, নমাজ হাসিলের পরোয়া করে না। বাবা মা জেটা জেটি তার মহানবী। হ্যাঁ, জান কবুল! মনে মনে বলে সে। কান্না ঠেলে আসতে চায়, বান ডাকে। দু চোখ হাতে আটকে দাঁড়ায়, ডলে, বুকের বেলুনে দম পুরে নেয়। ভাবে একরাম। আজ হোক, ডান হোড়, দেশ শান্ত হবে, হবেই। তখন চন্দ্ৰমোহন হেমশশীকে ফিরিয়ে আনবে মুক্তোকান্দিতে, নইলে তার আব্বুরে যে বাঁচাতে পারবে না। এখনও পর্যন্ত এ ভাবনা, এ পরিকল্পনায় বিন্দুবিসর্গও কাউকে জানতে দেয়নি একরাম।
এতক্ষণ ছায়ামূর্তিরা পেচারার ঢালজমি মুখে এসে পৌঁছেছে। দাঁড়ায় কিছুক্ষণ। দূর যাত্রার আগে বন্দরে রসদ ভবে নেয় জাহাজ, তেমনি ওরা যেন অনেক অনেক পাতা ও মাটির শ্বাস বুকের সিন্দুকে ভরে নিতে চাইছিলো। জলের ছোঁয়াতে আশপাশ অতিরিক্ত শীতল।
কুলসুম বেগম এখনও জড়িয়ে রেখেছেন হেমশশীকে, কিছু ছেড়ে দিতে চাইছে না তার মন। কোনো একটা জাদুই উলটখেল প্রার্থনা করছিলো তার হৃদয়। ঘটে তো এমন কতই। ওদিকে জয়েন উদ্দিনও শক্ত বাঁধনে এঁটেছেন চন্দ্রমোহনের বাহুমূল, কথা বলতে চাইছেন, ভেঙে গেলো স্বরমাত্রা— আচজ্জি! ইখানে আমারে একা করি …উখানে তুমি একা করি…উখানে তুমি একা হয়ি… এ তুমি কী করলা, ভাই!
ভলান্টিয়ারেরা এসে তাড়া দিচ্ছে। কারফু। একশো চল্লিশ দফা ভাঙছে তারা। যদিও গ্রামের ভিতরে। তবু বলা তো যায় না। পুলিশের নজরে পড়লে শিয়রে শমন।
হেমশশী স্বামীর হাত ধরলেন। কান্নার রোল উঠলো। পা বাড়াবেন এবারে। পা রাখবে। খালের দু তটে জাম, জারুল, আঁশফলের বড়ো বড়ো গাছের সারি। চাঁদের বুকশলা দুধ-আলো পাতার ভিড়ে বাধা পেয়ে। পিছলে পিছলে, টুকরো টুকরো ছিঁড়ে এসে পড়ছে পাড়ে শুকনো কালো সাদায়, খানের থির জলে। অাটকে থাকা ভাসন্ত কচুরিপানার ফোটাফুলের মাথায়।
চন্দ্রমোহন নৌকোর পাটাতনে বসে পড়েছেন, মুখোমুখি হেমশশী, তার পাশে সাধন-সে একটা লম্বা পাকা বাঁশের লাঠি শুইয়ে রেখেছে ধরে। চন্দ্রমোহনের এই অবস্থাতেও হাসি এলো। এই সামান্য লাঠির জোরে, এই সরল ছেলেটা ওর খুড়ো খুড়িমাকে কীভাবে বিপদ থেকে রক্ষা করবে! নিজেকেই বা বাঁচাবে কোন উপায়ে।
কখন যে অজান্তেই চন্দ্রমোহনের দৃষ্টি নিচে চাঁদের ছিন্ন রেখাপুঞ্জের দিকে পড়েছিলো। দেখছিলেন তিনি স্থির পলকহীনতায়। মনে হলো তাঁর খকখক থুঃ থুঃ শব্দ হচ্ছে। কফ ফেলছে চাঁদ। অকস্মাৎ বিড়বিড় করে উঠলেন— রাহুগ্রস্তো ঘনগ্রস্তো পাপযুক্ত ভবান ভব। কলঙ্কী যক্ষাণেগ্রস্ত শশাঙ্ক…।
হেমশশীর আর লজ্জা রাখলে চলে না, আছড়ে পড়লেন স্বামী বুকে— থামেন! থামেন! এমুন কচ্ছেন কেন? কথা শোনেন আমার! পাগুল হবেন না। থামেন আপনি।—হাউহাউ করে কাঁদছেন হেমশশী।
ফ্যাসস আওয়াজে রাতের উলুকটি যেন জানয়ে দিলো জিরো আওয়ার।
একরাম গোপন ঢাকা ভাবনাটিকে বাবার কাছে জানাবে । জাননো দরকার। নইলে গুণাহর পাত্র হবে। একদিন আব্বাজান সবটা জানতে পারবেন, তখন কী চোখে দেখবেন আত্মজকে? সে মুক্তোকান্দির বুজুর্গ শিক্ষক জয়েন উদ্দিনের আওলাদ। এক গভীর অহঙ্কার একরামকে এই বেদনার বাতাবরণেও পূর্ণ করে তোলে। দ্রুত সে ঢালের চড়াই ভেঙে উপরে উঠে গেলো।
একই সময়ে এক ভলান্টিয়ার উতরাই বেয়ে নিচে নামছে ছুটে।
সেই যে কুকুরটা দীর্ঘপথের সহযাত্রী, সেটা এর মাঝে কোথায যে চলে গেছে কেউ টের পায়নি।
ভলান্টিয়ারটি লাফ মেড়ে নামে নৌকোয়, যানটি হঠাৎ দুলে ওঠে, দাঁড়ায় সে কোমরে হাত দিয়ে। তাকে যেমন উদভ্রান্ত দেখায়, প্রবল উত্তেজনা চেপে রাখতে ব্যর্থ চেষ্টায় সে যেন ঝোড়ে কাক, গলা ভারসাম্যে থাকে না বুঝি, হেমশশীকে বললো— তায়লে খুড়ি মা। আপনাগেরি তবে আপনাশের দেশ, হেঁদুগের দেশি ভালোয় ভালোয় পাঠায়ে দেলম। এখন আমার তো কিছু পাওনা হয় নাকি?
—কী দেবো, বাপ, আজ তুমারে? কও। আমার আর তো কিছু নাই।
—ও দোটো দেন।
চকিতে হেমশশী কানে হাত ছিলেন।
ঢালের উপরে সামান্য সমতলে সিলুমেট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেন জোড়াবৃক্ষ। অনিয়ন্ত্রিত ফুঁপিয়ে চলেছেন কুলসুম বেগম। আজ জয়েন উদ্দিন। স্তম্ভিত পাষাণবক্ষটি চৌচির হয়ে ভেঙে পড়ছে। কী প্রবল রক্তস্রাবের প্রদাহ
সেদিন চতুর্দশী নববধূ ঢুকছে আচার্যবাড়িতে। কত্তামা তাঁর ঘরে, মেঝেতে সতরঞ্চি , পা ছড়িয়ে বসে আছেন। প্রণাম শেষ হলে স্বজনবিচ্ছিন্ন হেমের ম্রিয়মান নোনাজল ভেজা চিবুকটি হাতে তুলে ধরে চুমো খেলেন, বললেন— আমার তো সাহায় সোমপাওি নাই রে, লাতবউ। এটাই দেলাম। রাখ। মুখদেখানি। ইচ্ছি হলি পড়িস, না হলি কৌটোয় রাখি দিস। আমার আর কয়দিন! যখন থাকবায় না। তখন আমারে মনে পড়বে।
হালকা সাদামাটা একজোড়া মাকড়ি ছিলো সেটা। সযত্নে বাখা সেই আশীর্বাদ চিহ্নটিকে আজকের এই বিপদযাত্রার পথে শুভকরী পথে শুভকরী তুক মনে করে কানে পড়েছিলেন তিনি।
—জলদি করেন। শেবিলায় এই খালের পানিতে রায়োট লাগি গেলি আমার কিছু করার নাই।
সাধন প্রথম থেকেই সন্দেহের চোখে তাকিয়েছিলো। এবার ওর চোখে আগুন জ্বললো, লাঠিটা ধরলো মুঠোয়, উঠে দাঁড়বে এবার।
—হেম! – কঠিন কন্ঠস্বর, – বাম্পাভুল হেমশশী বজ্রনির্দেশ শুনতে পেলেন।
সে ভলিন্টিয়ার ছোকরা গয়নাটি হাতের মুঠোর পুরে উর্ধ্বশ্বাসে উপরে উঠতে থাকে। দুবার সে পিছলে পড়ে যায়।
একরাম নিচে নেমে দেখতে পেলো হেমশশী রূদ্ধস্বরে অভিশাপ ওগরাচ্ছেন—গলায় রক্ত উঠি মরবি তুরা সকলে কয়ে দিলাম। তুয়েগেরি রক্তে তুয়েরা ভাসি যাবি। কেউ বাঁচাতি পারবেনে।
—কী হইছে, জেটিমা?
চন্দ্রমোহন তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন— ও কিছু না, বাপ। তুমি জাবেদেরে এইবার নাও ছাড়তি কও।
জাবেদালি পারে দাঁড়িয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে কাঁদছিলো তখন।
ঢালের উপরে সামান্য সমতলে সিলুমেট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেন জোড়াবৃক্ষ। অনিয়ন্ত্রিত ফুঁপিয়ে চলেছেন কুলসুম বেগম। আজ জয়েন উদ্দিন। স্তম্ভিত পাষাণবক্ষটি চৌচির হয়ে ভেঙে পড়ছে। কী প্রবল রক্তস্রাবের প্রদাহ। কতদিন ধরে ভাবীজানকে জানাতে চেয়েছিলেন কথাটা। গোপনে রাখা অতিগোপন সে সংবাদ। তাঁর হেডমাস্টার তাঁকে কমস খাইয়েছিলেন, – তোমার ভাবীজানেরে এই সাচাট কখনও কবা না। ও সহ্য করতি পারবেনে না। ওরে মিথ্যি নিয়ে থাকতি হবে।
বুক হালকা করতে চেয়েছিলেন জয়েন উদ্দিন। চন্দ্ৰমোহন শেষমুহূর্তেও বাদ সাধলেন। ইচ্ছে হয়েছিলো অস্বীকার করবেন হেডমাসটারি দৌরাত্ম্য, তবু পারলেন না তিনি। চন্দ্রমোহন কী কঠিন।
চন্দ্রমোহনের চেয়েও গোপন সত্য আরো কঠিন। নীলু বউকে নিয়ে মালদা যাওয়ার সময় চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে গেছে।
দুহাত উর্ধ্বাকাশে এমাধিত করে, চাঁদে জীবনরসহীন চোখ, অমহায় এক প্রাণীবিশেষ, জয়েন উদ্দিন চিৎকার করলেন– আ… ল … লা…
সত্যধর্ম স্থাপনের লড়াইয়ে পরাজিত মহানবী হজরত মহম্মদ মক্কা ছেড়ে মদিনা যাওয়ার আগে শীতল বালু পর্বতের শিখরে দাঁড়িয়ে সেই রজনীতেও এমনি করেই, বোধহয়, ঈশ্বরের নামে কেঁদেছিলেন।
পেচারার খাল ধিরে প্রতিধ্বনি বেজে উঠলো, – লা….লা…
কাছিতে টান পড়েছে।
বইঠা পড়লো জলে।
ছপাত…
ক্রমশ…
আগের পর্ব পড়ুন: পর্ব ৪
❤ Support Us