- ধা | রা | বা | হি | ক রোব-e-বর্ণ
- অক্টোবর ৮, ২০২৩
চর >।পর্ব ১৪।
চিরকূটটা হাতে তুলে সফর আলি দেখল গোটা গোটা হাতের অক্ষরে লেখা কয়েকটি লাইন । সেটা কয়েকবার পড়ে বিছানার উপর ধপ করে বসে পড়ল সফর । রূপসী কোনো কিছু আড়াল রাখেনি । দু একটি কথায় সে অনেক কথা বলে ফেলেছে... তারপর

অলঙ্করণ: দেব সরকার
ধা রা বা হি ক · উ প ন্যা স
•২৭•
কী করে গ্রামে রটে গেল রূপসী আত্মহত্যা করেছে। তার পেটে যে সন্তান এসেছিল সেটি ছিল অবৈধ। সেটা জেনে ফেলেছিল বসির। তাই লজ্জার হাত থেকে রক্ষা পেতে সে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু কোথায় করেছে কেউ জানে না। হয়তো পদ্মার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে আত্মহত্যা করেছে। লাশ হয়তো সারারাত ধরে ভেসে গেছে কোথাও। এরমধ্যে কে যেন বলে গেল এখান থেকে প্রায় তিরিশ কিমি দূরে সীমান্তের ওপারে রাজশাহীর দক্ষিণ দিকে একটি লাশ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের বিডিআর এদেশের বিএসএফ কে খবর দিয়েছে। অনেকেই খবর নিতে ছুটল বিএসএফ ক্যাম্পে। না ক্যাম্পে এরকম কোনও খবর আসেনি। কে গুজব ছড়িয়েছে। এরমধ্যেই আবার খবর ছড়ালো আখরিগঞ্জের কাছে পদ্মার পাড়ে একটি মহিলার লাশ পাওয়া গেছে। অনেকেই অনুমান করছে সেই লাশটি রূপসীর। কিছু পরে আবার খবর ছড়ালো না, সেখানেও কোনও লাশ পাওয়া যায়নি। কে এইসব উড়ো খবর ছড়াচ্ছে, সেটাও জানা যাচ্ছেনা। সবাই বলছে তারা শুনেছে। কিন্তু যে বলেছে, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
সফর আলি আজ সকাল সকাল চেম্বারে বসেছে। গত কয়েকদিনের অশান্ত মনটাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে সে। ঠিক করেছে, বেশি কিছু সে ভাববেনা। যা ঘটবার ছিল তা ঘটে গেছে। তাতে তার বেশি হাত ছিলনা। এখন এসব নিয়ে ভাবলে নিজেকে বেশি জড়িয়ে ফেলা হবে। শরীর ও মন এখন আরাম চাইছে। একটু একা একা থেকে এতদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো থেকে মুক্ত হতে চাইছে। কিন্তু, চাইলেই তো পাওয়া যাচ্ছেনা। যতই সে রূপসীকে ভুলতে চাইছে, ততই রূপসী তার মনের মধ্যে এসে বাসা বেঁধে নিচ্ছে। একে সে বন্ধ করবে কী করে, ভেবে পাচ্ছিলনা সফর আলি। কিন্তু, এটা সে ভাবছিল ধীরে ধীরে নিজেকে গুছিয়ে নিতে হবে।
এমন সময় চেম্বারে এসে হাজির হল বসির। ইদানিং সে এত লম্বা করে দাড়ি ছেড়েছে যে তাকে চিনতে ভুল হচ্ছে। যে ছেলেটি এক সময় দু একদিন পর দাড়ি কাটত, সে এখন লম্বা করে দাড়ি রাখছে।
চেম্বারে ঢুকে বসির সফর আলিকে বলল, “সফর ভাই। তুমি কি রূপসীর খবর জান ?”
বসিরকে দেখে ভেতরে ভেতরে সফর আলি অস্বস্তিবোধ করছিল। উত্তর দিতে গিয়ে থতমত খেল সে। বলল, “না তো বসির। আমি রুপসীর কোনও খবর জানিনা।”
“তুমি মিথ্যে কথা বলছ সফর। রূপসী যেকোনও ব্যাপারে তোমার কাছে আসে। কেন আসে জানিনা। আর এখন সে কোথায় গেছে তুমি জাননা এটা হতে পারেনা।” খুব শান্তভাবে বলল বসির।
“তোমার মনে হতে পারে আমি মিথ্যা বলছি। কিন্ত আমি জানি যে সত্যিই বলছি। আমি রপসীর কোনও খবর জানিনা। তবে তুমি ঠিকই বলেছ। রূপসী মাঝে মাঝে আমার কাছে আসত। কখনো ওষুধ নিতে। কখনো তার মনের ভেতরের দুঃখ কষ্টের কথা বলতে। আচ্ছা আমিই যদি বলি রূপসী কোথায় গেছে বসির ? কারণ রূপসীর খবর তো তোমারই জানার কথা, তাইনা !” সফর আলি বলল।
“না। আমার জানার কথা নয়। বেশ কিছুদিন থেকে রূপসীর সাথে আমার মানসিক দূরত্ব বেড়ে গিয়েছিল। কোনও কথা হত না।”
“তাহলে আমিই বা কী করে রূপসীর কথা বলতে পারব ?” সফর আলি এমনভাবে বলল, যেন সত্যিই সে কিছু জানে না।
কোনও সময় না নিয়েই বসির খুব জোরের সঙ্গে বলল, “তোমার কোনও কথা বিশ্বাস করিনা সফর। রূপসীর খবর তুমিই বলতে পারবে।”
সামান্য থেমে সফর আলি বলল, “তুমি কি বিশ্বাস কর, আর কি বিশ্বাস কর জানিনা। জানার দরকারও নাই। শুধু আমিই জানি রূপসীর কোনও খবর আমি জানি না।”
“তাহলে যেদিন রূপসী ঘর ছেড়ে চলে যায়, সেদিন তুমি কোথায় ছিলে ? তুমি ঘাট পার হয়ে কোথায় গিয়েছিলে আমাকে বলতে পারবে?” সফরের দিকে তাকিয়ে বলল বসির।
সফর আলির মনে হল সে ধীরে ধীরে একটা জালের মধ্যে ঢুঁকে যাচ্ছে। সেই জাল থেকে বেরতে হবে। সে একবার ভাবল রূপসীর চিরকূট দেখিয়ে সব কথা বলে দেয়। পরক্ষণেই ভাবল, না, সেটা ঠিক হবেনা। তাতে জটিলতা আরও বাড়বে।
সে বলল, “তুমি ঠিকই ধরেছ বসির। সেদিন আমি বেলা দশটার দিকে ঘাট পার হয়ে বাজারে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে প্রমাণ হয়না, আমি রূপসী কোথায় গেছে সে সম্পর্কে সবকিছু জানি। সেদিন পরাণও তো গেছে। তাহলে কী তুমি বলবে পরাণ সবকিছু জানে?”
বসির যেন তৈরি হয়েই এসেছিল। বলল, “এখানে পরাণের কথা আসছে কেন সফর ? তুমি তো ঘাট পার হয়ে রেল ষ্টেশন পর্যন্ত গিয়েছিলে। তাই না ! তুমিই বলো কেন তুমি সেদিন রেল ষ্টেশনে গিয়েছিলে?”
সফর আলি দেখল বসির সমস্ত কিছু জেনেশুনে, খোঁজ খবর নিয়েই এসেছে। কেবল কী উদ্দেশ্যে এসেছে, সেটাই বোঝা যাচ্ছেনা। রপসীর পেটের বাচ্চা যে তারই, সেটাও সে হয়তো জানে বা সন্দেহ করছে। তাই ওর কাছে এখন কোনো চালাকী চলবে না। খুব সাবধানে এগোতে এবং কথা ঘুরাতে হবে।
সে বলল, “দেখ বসির তুমি হয়তো ঠিকই জান যে সেদিন আমি ঘাট পার হয়ে ষ্টেশনে গিয়েছিলাম। কেন গিয়েছিলাম সেটা আমি বলতে বাধ্য নই। তুমি শুধু বল, সেদিন আমার সাথে কোথাও, কোনো জায়গায়, বা ষ্টেশনে রূপসীকে কেউ দেখেছে ? বা তুমি দেখেছ ? আমি একটা বিশেষ কারণে ষ্টেশনে গিয়েছিলাম। তুমি যেভাবে আমাকে জেরা করছ, তাতে তোমাকে বলা ঠিক হবে না আমি কেন সেদিন ঘাট পার হয়ে ষ্টেশনে গিয়েছিলাম!”
“না। তুমি বাধ্য নও। কিন্তু তোমার কাছে রূপসী কেন এত আসত বলতো ! সেকি শুধু তার দুঃখের কথা বলতে ? নাকি আরও অন্য কিছু ?” বসির আবার বলল।
সফর আলি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তার ইচ্ছে করছিল বসিরকে চলে যেতে বলতে। কিন্তু তা বলতে পারল না। শুধু বলল, “তুমি তো ওর স্বামী বসির। তাহলে তোমারই তো সবকিছু জানার কথা। তাইনা!”
‘রূপসীর পেটের ছেলে কার?’ – বসিরের এই জিজ্ঞাসা তার অন্তরে বার বার প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তার মনে হয়েছে বসিরকে বলে দেওয়ায় উচিত ছিল। আবার মনে হয়েছে, না বলাটাই ঠিক হয়েছে
“হয় তো তাই। কিন্তু সে তো আমাকে ঠিক ভরসা করত না, যতটা তোমাকে করত। তোমাকে ওর মনের কথা বলত। সে তো আমি জানি!” বসির গলার স্বর সামান্য নিচু করে বলল।
এবার সফর আলি বলল, “দেখ বসির ! তুমি যা জান হয়তো সবই ঠিক। আবার হয়তো কোনোটাই ঠিক না। রূপসী সবসময় একটা ভরসার জায়গা খুজেছে তোমাকে আশ্রয় করে। তুমি সেই জায়গাটা পূরণ করতে পারনি। তুমি সবসময় রূপসীর কাছ থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করেছ।”
বসির আবার গলার স্বর সামান্য নিচু করে বলল, “তুমি তো জান আমার একটা দূর্বলতা আছে।”
“এখানেই তুমি ভুল করেছ বসির। তোমার দূর্বলতা দোষের ছিলনা। রূপসী তোমার সেই দূর্বলতাকে হয়ত মেনেও নিয়েছিল। কিন্তু তুমি যেটা করেছ সেটা তোমার পৌরুষত্বের অযাচিত আস্ফালন। তুমি নিজে ভালভাবে জানতে তুমি কতটা অক্ষম। অথচ তোমার সেই দূর্বলতাকে তুমি কোনোদিনও স্বীকার করনি। উল্টে রূপসীর উপরেই দায় চাপিয়েছ। একটা মিথ্যাকে তুমি পৌরুষত্বের মিথ্যা দোহাই দিয়ে একটা মেয়ের উপর তুমি দিনের পর দিন অত্যাচার করেছ। তার মনের খবর তুমি নিতে চাওনি। আর আজ যখন সে সবকিছু ছেড়ে চলে গেছে, তখন তুমি আমার কাছে জানতে এসেছ রূপসীর খবর। আর স্বামীত্বের অধিকার ফলাতে এসেছ। বিয়ে করলেই কেউ স্বামী হয়না বসির। স্বামীত্বের অধিকারটাও অর্জন করতে হয়।”
বসির কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর বলল, “তুমি বলতে পারবে রূপসীর পেটে যে বাচ্চা এসেছে, সেটি কার?”
সফর আলি সামান্য চুপ থেকে বলল, “সে টি রূপসীকে জিজ্ঞাসা করলেই বেশি ভালো হয়।”
বসির কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকল। তারপর আর কিছু না বলে চুপচাপ বেরিয়ে পড়ল।
•২৮•
পরের দিন সকালে গ্রামের সবাই দেখল বসিরের বাড়ির দরজা, ঘর, ঘরের চালা সব ভাঙা। ওদিকে থানেও সবকিছু এদিক ওদিক বিশৃঙ্খল ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে সবকিছু ভেঙ্গেচুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছে। থানের আশেপাশে কেউ নেই।
কিন্তু বসিরকে কোনোদিকে দেখা যাচ্ছে না। বাড়িতেও না। থানেও না। বাড়ির আসবাবপত্র সব পড়ে আছে। থানেও তাই। কেউ কিছু নিয়ে যায়নি।
তাহলে বসির গেল কোথায় ? সেও কি রূপসীর মতো কোথাও চলে গেল ! কেউ তার খবর জানেনা। কেউ তার খবর বলতেও পারছেনা।
কথাটা সফর আলির কানেও গেল। সে চুপ করে বসে থাকল কিছুক্ষণ। গতকাল বসিরের সাথে কথা বলে তাকে কিছুটা উদ্বিগ্নই লাগছিল। তাবলে সে যে কোথাও চলে যেতে পারে, সেকথা তার মনে হয়নি। মনে হলে হয়তো তার খবর রাখা যেত। রাতের দিকে বসিরের কথা মনে এসেছিল তার। ‘রূপসীর পেটের ছেলে কার?’ – বসিরের এই জিজ্ঞাসা তার অন্তরে বার বার প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তার মনে হয়েছে বসিরকে বলে দেওয়ায় উচিত ছিল। আবার মনে হয়েছে, না বলাটাই ঠিক হয়েছে।
কিন্তু, বসির যে কোথাও চলে যেতে পারে, সেটা তার মনে আসেনি।
সফর আলি চেম্বারে কয়েকটি রোগী দেখে উঠে গেল রাস্তার দিকে। তারপর হাঁটতে হাঁটতে বসিরের ঘরের কাছে এগিয়ে গেল। দেখল ঘরের চালাটাকে ইচ্ছে করেই কে যেন ভেঙে রেখেছে। মাসখানেক হল বন্যা নেমেছে। বাড়িঘর এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি। কেবল চালাটা তুলে ভাঙা মেঝে ঠিক করে থাকার মতো করেছিল বসির। কিন্তু সেই ঘর আর থাকল না। এই ঘর ছেড়ে রূপসী আগেই চলে গেছে। এবার বসিরও চলে গেল। কোথায় গেল কেউ জানেনা।
হঠাৎ করেই সফর আলির মনের ভেতরে কেমন যেন হয়ে গেল। তার মনে হল এখানে এইখানে বসে থাকি কিছুক্ষণ। এখানেই তো বসে, রূপসী চেয়ে থাকত তার দিকে। যদিও সেকথা কোনোদিন বলেনি সে। কিন্তু সফর আলি জানত রূপসী ঘরে বসে আছে একমাত্র তার জন্যই। যদিও সে জানত সফর আলি কোনোদিনই তার সাথে দেখা করতে আসবেনা। তবু এখানে বসেই সে তাকিয়ে থাকত সফর আলির দিকে। সে কোথায় যাচ্ছে, কোনদিকে যাচ্ছে, সব এখানে বসেই সে খেয়াল রাখত।
এমন সময়ে সেখানে এসে হাজির হল আনসার আলি। সফর আলিকে সে বলল, “এখানে কী করছ সফর ভাই?”
আনসার আলিকে হঠাৎ সামদ দেখে একটু থতমত খেল সফর আলি। তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “এই এদিকে এলাম ভাই। শুনলাম বসিরের বাড়ি-ঘর সব ভাঙা। তাই একটু দেখতে এলাম।”
আনসার আলি বলল, “আমিও তো সেজন্যই এলাম। শুনলাম সকালের দিকে বসির নাকি সবকিছু ভেঙে দিয়ে একটা ব্যাগ হাতে করে কোথায় বেরিয়ে গেছে ! তাই আমি তাড়াতাড়ি এলাম ব্যাপারটা কী দেখতে।”
“বেরিয়ে গেল মানে ? কখন বেরল ? কোন দিকে গেল ? কে দেখল ?” সফর আলি উদ্বিগ্নের মতো তাড়াতাড়ি প্রশ্নগুলি করে গেল।
“সে তো জানিনা। বাড়িতেই সব বলাবলি করছিল। আমি আর কিছু না জেনে তাড়াতাড়ি চলে এলাম।” আনসার আলিও কিছুটা উদ্বিগ্নের মতো বলল কথাগুলি।
“আরেকটু জানা উচিত ছিল।” খুব ছোট্ট করে বলল সফর আলি।
আনসার আলি বলল, “কেউ যদি দেখে থাকে তাহলে হয়তো ভোরের দিকেই হতে পারে। ওর একটু খোঁজ নেওয়া উচিত সফর ভাই। অন্তত ঘাট পর্যন্ত গিয়ে যদি খোঁজ নেওয়া যেত।”
“সে তো ঠিক আনসার ভাই। আমি ভাবছি ওর সাথে থানে যারা থাকত, তারা কিছু জানেনা তো?” বলল সফর আলি।
আনসার আলির কথা শুনে সফর আলি কেমন চুপ করে গেল। ‘কথা তো আর চাপা থাকে না। ঠিক সময়ে বেরিয়ে যায়।’ এ তো মারাত্মক কথা। তার মনটা কেমন ভয়ে সঙ্কুচিত হয়ে গেল।
“হ্যাঁ। সে তো ঠিকই। কিন্তু তুমি জাননা বোধহয় কিছুদিন আগে ওর সাথে ঝামেলা করে ওর সাথী দুইজন চলে গেছে। কয়েকদিন থেকে তারাও তো আর থানে আসেনা।” আনসার আলি ধীরে ধীরে বলল কথাগুলি।
আনসার আলির কথা শুনে সফর কিছুটা চুপ করে থাকল। তারপর বলল, “কেন? ওদের মধ্যে ঝামেলা হল কেন?”
আনসার আলি বলল, “সঠিক কিছু জানিনা। লোকে বলাবলি করছিল, কয়েকদিন থেকে নাকি থানের মালিকানা নিয়ে ঝামেলা চলছিল ওদের মাঝে। কানা ফকির নাকি একাই অর্ধেক চাইছিল। সফর আর ওর সাথে যে লোকটি থাকত, ওরা দুজনকে অর্ধেক দিতে চাইছিল। তাই নিয়ে ঝামেলা।”
সফর আলি জিজ্ঞাসা করল, “বসির কী চাইছিল?”
“শুনেছি বসির চাইছিল তিনজনের সমান সমান। কানা ফকির সেটা মানতে চাইনি। তারপর কয়েকদিন হল বসির নিজের হাতে লাঠি ধরে সবাইকে তাড়িয়ে দিয়েছে।”
একথা শুনে সফর আলি বলল, “এতবড়ো সব ঘটনা ঘটেছে। কই আমিতো কিছুই শুনতে পাইনি!”
আনসার আলি বলল, “এইসব ওদের ভেতরে ভেতরে হয়েছে। আমরা কি সব জানি? ওরাও তো কাউকে বলতে আসেনি। লোকে বাইরে বাইরে বলছে এসব কথা। কথা তো আর চাপা থাকেনা। ঠিক সময়ে বেরিয়ে যায়।”
আনসার আলির কথা শুনে সফর আলি কেমন চুপ করে গেল। ‘কথা তো আর চাপা থাকে না। ঠিক সময়ে বেরিয়ে যায়।’ এ তো মারাত্মক কথা। তার মনটা কেমন ভয়ে সঙ্কুচিত হয়ে গেল। কিন্তু কষ্ট করে মুখে একটা কৃত্রিম হাসি এনে আনসার আলিকে বলল, “তুমি দারুণ কথা বলেছ আনসার ভাই ! কথা তো আর চাপা থাকেনা। ঠিক সময়ে বেরিয়ে যায়।”
“না সফর ভাই। আমি তো আর ভেবে কিছু বলিনি। এমনি এমনিই বলে ফেলেছি। আসলে চারিদিকে যা ঘটছে, আর যা যা শুনছি – কোনটা যে ঠিক আর কোনটা যে ভুল, ধারনা করায় কঠিন।”
আবার একটা কঠিন কথা বলল আনসার। ‘আসলে চারিদিকে যা ঘটছে, আর যা যা শুনছি’ মানে ! কী কথা শুনছে আনসার ? সে কী রূপসী সম্পর্কে, রূপসীর পেটের বাচ্চা সম্পর্কে কিছু শুনেছে ? তাহলে সে এমন কথা বলছে কেন ?
সফর আলির ইচ্ছে হল আনসার আলিকে জিজ্ঞাসা করে সে কী সব শুনেছে ? কিন্তু সাহস হল না। যদি কোন কথায় কোন কথা চলে আসে!
সে আনসার আলিকে বলল, “ঠিকই বলেছ আনসার ভাই। আমরা যা শুনি, আর যা ঘটে সবই কি ঠিক ? কোনটা ঠিক কোনটা ভুল অত ভাবার দরকারই বা কী ? তুমি বরং একবার আখরীগঞ্জের ঘাট থেকে ঘুরে এসো। বসিরের যদি কোনও খোঁজ পাওয়া যায়।”
আনসার আলি বলল, “সে তো যেতেই হবে। কিন্তু তার আগে তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি !”
আনসারের কথা শুনে সফর আলির ভেতরটা ধড়াস করে উঠল। তবু মুখে বলল, “বল।”
“কালকে তো বসির তোমার সাথে অনেকক্ষণ বসে ছিল। কোথাও চলে যাবার কথা কিছু বলেছিল নাকি ?” আনসার সফর আলির মুখের দিকে তাকিয়ে কথাটি জিজ্ঞাসা করল।
আনসার আলির প্রশ্ন শুনে সফর আলির মনটা কিছুটা হালকা হল। বলল, “না। সেরকম কিছু বলেনি। ও রূপসীর কথা জানতে চাইছিল। তা আমি তো রূপসীর খবর জানি না। তাই বললাম। আর কিছু না।”
“ও! তাই!”
আনসার আলি এ বিষয়ে আর কোনও কথা বলল না। শুধু সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর কী একটা ভেবে বলল, “ঠিক আছে সফর ভাই। আমি ঘাট থেকে খোঁজ নিয়ে আসছি।”
আনসার আলি চলে গেলে সফর আলিও নিজের ঘরের দিকে রওনা দিল।
ক্রমশ…
♦—♦♦—♦♦—♦♦—♦
পূর্ববর্তী পর্ব পড়ুন : চর >।পর্ব ১৩।
❤ Support Us