Advertisement
  • পা | র্স | পে | ক্টি | ভ রোব-e-বর্ণ
  • এপ্রিল ২১, ২০২৪

আড্ডার সাতকাহন

কানাইলাল জানা
আড্ডার সাতকাহন

চিত্রকর্ম: মহম্মদ দেমারভি।সৌজন্য ইজিপ্ট টুডে

 
সাহিত্যের অয়োজিত, অনায়োজিত আড্ডা কি ক্রমশ কমছে? প্রশ্নটি তুলতে হল, লেখক আর কবিদের, এমনকী চিত্রকরদেরও কাজকর্ম নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলবার, তর্ক বিতর্কের ঝোঁক কমছে দেখে । রবীন্দ্রনাথন নানা মুহূর্তে কবি লেখকদের সঙ্গে বাড়িতে বসে কথা বলতেন। মতামত চাপিয়ে দিতেন না, যা বলবার সহজভাবে প্রকাশ করতেন, তাঁর প্রতি অনুরক্ত লেখকরা রবীন্দ্রনাথ নানা মুহূর্তে কবি লেখকদের সঙ্গে বাড়িতে বসে কথা বলতেন। মতামত চাপিয়ে দিতেন না, যা বলবার সহজভাবে প্রকাশ করতেন, তাঁর প্রতি অনুরক্ত লেখকরা রবীন্দ্রনাথের মতামত মেনে নিতেন। শনিবারের চিঠির আড্ডায় বিরুদ্ধ মতের ঝলক দেখা যেত। কল্লোল যুগে রবীন্দ্র বলয় থেকে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টা আমারা দেখেছি। জৈষ্ঠের ঝড় শীর্ষক গ্রন্থে নজরুলকে নিয়ে স্বতন্ত্র বৈদগ্ধের চিহ্ন ছড়িয়ে আছে অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের আবেগদীপ্ত কলমে। গত শতাব্দীর তিরিশ ও চল্লিশের দশকে সাহিত্য বিষয়ক আড্ডার অভিমুখ বদলে যায়। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে রাজনীতিও আলোচনার অন্তর্ভূক্ত হতে থাকে। ৭০ এর দশক পর্যন্ত ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে বাংলাদেশও দখল করে নেয় আড্ডার পরিসরকে। তখন উত্তরে প্রতি রবিবার সকালে অন্যান্য ছুটির দিনগুলিতে আড্ডা হত — পাইকপাড়ায় তারাশঙ্করের বাড়িতে, শ্যামবাজারে শঙ্খ ঘোষের বসার ঘরে, দক্ষিণে অমিতাভ চৌধুরির বৈঠকখানায়।গৌরকিশোর ঘোষের উদার মজলিসেও সাড়া দিতেন আড্ডাবাজরা।
 

কলেজ স্ট্রিট কফিহাউস। গৌর কিশোর ঘোষকে ঘিরে আড্ডায় তাঁর অনুরাগীরা

কলেজ স্ট্রিট কফি হাউস সহ কলকাতার অন্যান্য শাখায় মিলিত হতেন বহু পরিচিত মুখ । বাঙালির আড্ডার ইতিহাসে, দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে যেমন কফি হাউসের ভিড়, তেমনি শঙ্খ ঘোষ এর সান্নিধ্যে রচিত অয়োজিত সাহিত্য বাসরে রবিবাসরীয় মেজাজ ভুলে থাকা সম্ভব নয়।কফি হাউসের ধারাবাহিকতা এখনো স্রোত ছড়ায়, শনি ও রবি দুদিন, প্রতিদিন দুপুরে, বিকেলেও। প্যারিস, কায়রো, ইস্তাম্বুল ছাড়া এরকম দীপ্ত, জাগ্রত আড্ডাশালা, আর কোথায় আছে ? ইলিয়ট, অডেন, স্টিফেন স্যান্ডার ফ্যাবার অ্যান্ড ফ্যাবার অফিসে এজরা পাউন্ডরা একসময় জড়ো হয়ে কবিতা নিয়ে কথা বলতেন। সে সব স্মৃতি আজ ধূসর। কিন্তু কলকাতায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গনে, শাহবাগের আড্ডা মৃত্যুহীনের মতো উজ্জীবিত, স্পর্ধিত।
 

ধীরাজ চৌধুরির চিত্রে কফিহাউস

ঈশান বাংলার শিলচরের সেন্ট্রাল রোডের পিয়াসি রেস্তোঁরায়, পরে অন্যত্র আড্ডা দিতেন মহান উনিশের সন্তানেরা, যাঁর অতন্দ্র ও সাহিত্য পত্রিকার অনুজ আর অগ্রজ, কবিতা চর্চা করতেন। গল্প লিখতেন। কেউ কেউ আর ইহবাসী নন, পরলোকের পরবাসী। একাংশ জেগে আছেন শিলচরে, কলকাতায়, দিল্লিতেও। গুয়াহাটির পানবাজারের মধুমিতা, গুয়াহাটি ডায়রিতে দেখা যেত ষাট থেকে আশি দশক পর্যন্ত সুপরিচ্ত অসমিয়া বাঙালি লেখক কবি আর সাংবাদিকদের।তার মধ্যমণি ছিলেন বে অফ বেঙ্গলের হামদি বে, কবি নবকান্ত বরুয়া, কবি হীরেন ভট্টাচার্য, চিত্রকর নীলপবন বরুয়া, কদাচিৎ নীলমণি ফুকনের মতো নির্জনতার আগুণে জ্বলে ওঠা কবিকে দেখা যেত। ওইসব আড্ডার স্মৃতি দীপ্তিময় শিখার মতো জাগ্রত।
 
শঙ্খবাবুর মৃত্যুর পর তাঁর বাসভবনে গড়ে উঠেছে আর্কাইভ,তাঁর অনুরাগীরা কার্যত স্বজনহারা, অভিতাভ চৌধুরীর প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দক্ষিণ কলকাতার বাস্থস্থান পুরোপুরি আড্ডাশূণ্য, উত্তর পূর্ব কলকাতার বাড়িতে গৌরকিশোর ঘোষও বেঁচে আছেন স্মৃতি আর সত্তার ধারণশক্তির প্রণালীতে।
 
সময় সংশয়াচ্ছন্ন, লেখকরা, কবিরা, চিত্রকরেরা পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতায় সংক্রামিত, এরকম পরিস্থিতিতেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে আড্ডার মেজাজ টিঁকিয়ে রাখা কঠিন। এ কঠিনকেও হালহকিকতে বাঁচিয়ে রেখেছেন কেউ কেউ। এর নিকটতম দৃষ্টান্ত কবি কানাইলাল জানার বাড়ির আড্ডা । ৩ মার্চ, ২০২৪, তাঁর আয়োজিত বহমান সাহিত্যবাসর ৩৩ অনুষ্ঠিত হল কানাই-এর উদ্যোগে, তাঁরই বাসভবনে, জমজমাট আলাপে, কবিতাপাঠ আর স্মৃতিচারণে। কানাই তখন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের সুপার। আলিপুরে তাঁর সরকারি বাসভবনে শুরু হল সাহিত্যের আড্ডা। খবর পেয়ে চটে লাল প্রাক্তন কারামন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরি। তলব করলেন কারা সুপারকে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হৱ না, কেননা এ আড্ডায় যোগ দিয়েছেন সাহিত্য আর সাংস্কৃতিক বলয়ের সব পরিচিত মুখগুলি। চাকরি থেকে অবসর গ্রহনের পরেও ওই ইতিহাসের চাকা ঘটনা প্রবাহের মতো ছুটছে। জেগে আছেন, জাগিয়ে রেখেছেন কানাইলাল জানা। তাঁর বাড়ির সর্বশেষ আর ৩৩তম সাহিত্যসভা ও আড্ডার বিবরণ একটু শোনা যাক তবে !
 
আদিব হোসেন মঞ্জু

• • •

বরাবর সস্ত্রীক সৈয়দ কওসর জামাল সাহিত্য সভার গুণমুগ্ধ শ্রোতা। কখনো সখনো বিশিষ্ট এই কবি ও প্রাবন্ধিক একটু আধটু বলেন, এই যেমন একবার ঢাকার শেহবাগ অশান্তি নিয়ে আর একবার গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক নিয়ে। অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য নাম না করে একটি পত্রিকার বিকল্প ভাবনার প্রসঙ্গ তুলতেই তাতে সায় নেই ঋতব্রত মিত্র, ঋত্বিক ঠাকুর ও অন্যান্যদের। অমিত সরকার সহ অন্যদের মতামত বিকল্প আছে। সেখানে জামালদার প্রশ্ন, যদি থাকে, তাহলে কবি সুধীর দত্তকে কেন পুরস্কার পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল ? এখন যে কোনও লিটল ম্যাগাজিন ভাবে সুধীর দত্ত-র কবিতা থাকা অপরিহার্য। এই সম্মান কোনও লিটল ম্যাগাজিন বা সংস্থা তাঁকে দিতে পারেনি। রাজীব সিংহ-র বক্তব্য, সুধীর দত্ত তাঁর জায়গায় আছেন প্রথম থেকে একইরকম। গতবছর এখানেই, কবির সামনে রাহুল দাশগুপ্ত দাবি করে গেলেন, সুধীর দত্ত নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য এবং তাতে সায় দিলেন অমিতাভ গুপ্তের মতো কবিও। আশ্চর্যের বিষয়, বহু কবি ও লেখক এখন বাড়িতে কোনো কোনো পত্রিকা রাখেন না, তাঁদের অভিযোগ, মান পড়ে গেছে। আমাদের মনে হয়, এখনো উঁচুমানের লেখা বের হয়, ভবিষ্যতেও বের হবে। আসলে প্রায় প্রতিটি বিষয় থেকে বাঙালির শুরু হয়েছে পলায়ন মনোবৃত্তি। এর পরিণাম ভয়ঙ্কর!
 
এই প্রথম রবীন বসু সাহিত্যসভায় এলেন। তাঁর কবিতা: ‘আমি আর শোক / পাশাপাশি শুয়ে থাকি নিকোনো উঠোনে …/
সে আমাকে দেখে, আমি তাকে / মাঝখানে আলোর বর্ষা / চোখ বিদ্ধ করে সুছাদ বিদ্বেষে’ …। যাওয়ার আগে দিয়ে গেলেন নিজের দুটি কাব্যগ্রন্থ। তখন মনে পড়ল আলিপুর সেন্ট্রাল জেল কোয়ার্টারে ‘কবিতা পাক্ষিক’ যে মাসিক কবিতা পাঠের আয়োজন করত, নব্বই দশকের প্রথমে সেখানে প্রথম কবিতা পড়েন কবি শ্যামলবরণ সাহা ও সঞ্চয়িতা কুন্ডু। শ্রোতা আলোক সরকার, কালীকৃষ্ণ গুহ, অনন্ত দাশ, প্রমোদ বসু প্রমুখ। যাওয়ার সময় তাঁরাও নিজেদের কাব্যগ্রন্থ দিয়ে গেছেন। বই অনেকেই দেন। যেমন মায়া সিদ্ধান্ত দিলেন ‘ইংল্যান্ডে দৈবের বশে’। তাঁর সৌভাগ্য হয়েছিল ১০৪ বছর বয়স্ক তান্ত্রিক লেখক তারাপ্রণব ব্রহ্মচারীর কাছে ইংল্যান্ডে গিয়ে টানা দুমাস থাকার। অসাধারণ অভিজ্ঞতা অর্জনের ভ্রমণ কাহিনী। টেকনোলজিস্ট কবি জয়িতা বসাকের কবিতা দানব সভ্যতার বিরুদ্ধে: ‘ঘুলঘুলি দিয়ে সেদিনও গমরঙা রোদ নামত / সেই একচিলতে আলোয় নৈবেদ্য সাজাতাম/ চন্দনকাঠের পিঁড়িতে জলছড়া ছিটিয়ে নিয়ে / পদ্মপাতায় বেড়ে দিতাম অক্ষরের পরমান্ন !
 

সাহিত্য কিংবা ছবি, অথবা চলচ্চিত্র বিষয়ক আড্ডা মারা গেছে, তার সার্বিক অবসান সমাগত, এরকম নেতিকে কখনো প্রশ্রয় দেব না; বরং বলব, ওইসব মজলিস জেগে আছে, জেগে থাকবে। প্রাণবন্ত বাঙালির যুক্তিসত্তা হারিয়ে যাবে না, ফিরে আসবে অন্য কোনো বর্ণে

 
এখন মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিংয়ে ঘুলঘুলি অপ্রাসঙ্গিক/ মার্বেলের মেঝে জুড়ে গুঁড়ো গুঁড়ো বাংলা হরফ / দেখি, হাতুড়ি দিয়ে কারা যেন আজ রোদ্দুর ভাঙছে ! বেদ ও উপনিষদে আছে ঋতব্রত মিত্র-র গভীর জ্ঞান। ডাক্তার-কবি বিশ্লেষণ করলেন সেখানে কোথায় কিভাবে আছে আধুনিক চিকিৎসার ইঙ্গিত । রাজীব সিংহ পড়লেন আসন্ন বসন্তের কবিতা: ‘ওইদুটি হাত ছোঁবো ওই দুটি চোখ / সোনাঝুরি গাছে গাছে হারিয়েছে শোক ।
 
বাতাসের পিছু পিছু উড়ে আসা মুখ / কুড়োয় ফাগুনফুল আর কিংশুক।
শালফুল উড়ে আসে ছাতিমের ঘ্রাণ /পুরনো মেলার মাঠে বিষাদের গান’…
 
সুপুরুষ অমর সেন এলেন বেশ দেরিতে। বহু গুণের অধিকারী দাদাগিরি চ্যাম্পিয়ন অমরদা হ্যান্ড শ্যাডোতে এশিয়া সেরা। হাতের মুঠো দিয়ে মনীষীদের, বিভিন্ন পশু পাখির ছায়া শিল্প অসাধারণ। সস্ত্রীক শ্যামল বিশ্বাস এবারও শুধুমাত্র দর্শক। জয়ন্ত ভট্টাচার্য পড়লেন একটি উজ্জীবিত গদ্য। ‘প্রিয় বসুন্ধরা’-র সম্পাদক বিশ্বনাথ পালের উচ্চারণ: ‘অনেকই তো পেতে চাই- অর্থ মান যশ / থাকুক হৃদয় আর বিবেকের দায় / জীবন সার্থক হোক প্রাণবন্ত, স্বপ্নের আশ্রয় / কখনো মাটিতে না মাথা যেন গড়ায়..। অনুবাদক ও কবি সুপ্তশ্রী সোমের কবিতার লাইন: একটি মেপল পাতার মধ্যে / রেখে দিয়েছি বিকেল / একটি মেপল পাতার মধ্যে কিছুটা সুখ / অথচ পাতাটা ঝরে পড়ল একরাশ দু:খ নিয়ে..( আমেরিকায় বেড়াতে গিয়ে লেখা )।
 
প্রতিবার আড্ডার শেষ কবি, অসীম ধৈর্যশীল প্রেমিক সুমিতাভ ঘোষাল:
‘তাহলে শালিখপাখি এখন আমি কার সহচর / যে খায় ব্যাঙের চুমু , যার চুমু খায় অজগর …
তাহলে শালিখপাখি আমার আহার ? / সুপক্ক মিথ্যাবাক্য আর তিক্ত ব্যবহার /
শেষ প্রশ্ন অতএব আমার পরিচয় ? / কবি শুধু, দিকভ্রান্ত, জন্ম অপচয়’…
 

প্রসঙ্গত বলতে ভুলে গেছি যে, আরম্ভ পত্রিকাকে ঘিরে প্রায়ই, প্রাণবন্ত মজলিস হত, তার অফিসের সভাঘরে এই শতকের দু দশক জুড়ে।আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা খুব দীর্ঘ। শঙ্খ ঘোষ থেকে প্রকাশ কর্মকার, বিজন চৌধুরী, সুনীল দাস, ধীরাজ চৌধুরী, রবীন মন্ডল, জহর সেনগুপ্ত, অমিতাভ দাশগুপ্ত, গৌতম ঘোষ, শাহাবুদ্দিন, মুর্তজা বশির, ইশা মহম্মদ, অনীতা রায় চৌধুরী, সুদীপ বন্দোপাধ্যায়, অঞ্জন ভট্টাচার্য, সৌরীন ভট্টাচার্য, কওসর জামাল, রণবীর পুরকায়স্থ সহ দেশ-বিদেশের বহু সাহিত্যিক, কবি, চিত্রশিল্পী, চলচ্চিত্র পরিচালক, গায়ক, নাট্যকার।একবার, কাগজে বেরিয়ে গেল, আরম্ভ-র আড্ডায় ছবি এঁকেছেন কবি শঙ্ঘ ঘোষ। খবরটি পড়ে ক্ষুব্ধ শঙ্খবাবু বললেন, এতসব স্বনামধন্য আঁকিয়েদের পাশে আমার নাম ? আমি তো আকিনি, সই করেছি। সইটিও ছবির মতো মনোহর, নান্দনিকতায় পরিপূর্ণ। সাহিত্য কিংবা ছবি, অথবা চলচ্চিত্র বিষয়ক আড্ডা মারা গেছে, তার সার্বিক অবসান সমাগত, এরকম নেতিকে কখনো প্রশ্রয় দেব না; বরং বলব, ওইসব মজলিস জেগে আছে, জেগে থাকবে। প্রাণবন্ত বাঙালির যুক্তিসত্তা হারিয়ে যাবে না, ফিরে আসবে অন্য কোনো বর্ণে। ভিন্নতর প্রাঙ্গণে সে খুলে দেবে দ্বার, অনেক অনুপস্থিতি অনুভব করেও আক্ষেপ করবে না, কইরে আগের মানুষ কই ।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!