- এই মুহূর্তে দে । শ
- অক্টোবর ১৯, ২০২৩
আর্ত সেবায় দেবীর আরাধনা, সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্কে শারদ উৎসবের ভিন্ন আয়োজন
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “…..জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।” দূর্গা পুজো যে শুধুই ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, সেটা কলকাতা ও জেলার বহু পুজো তাদের কাজের মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দেয়। ধর্মীয় আচার, পুজোর উপচারের মধ্যদিয়ে যেমন মাতৃ আরাধনা হয় তেমন কলকাতা ও জেলার কোনও কোনও দূর্গা পুজো কমিটি পুজোর ক’টা দিন আর্থিক ভাবে দুর্বল, অসহায় মানুষের সেবা করে, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে নজির গড়ে তোলে। কলকাতার সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্ক দুর্গোৎসব কমিটি ২০২৩-এর দূর্গা পুজোয় দেবীপূজোর পাশাপাশি এই রকমই মানব সেবার উদ্যোগ নিয়েছে। পুজোর পাঁচদিন অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল পরিবারের সহ-নাগরিক ও প্রান্তিক মানুষদের জন্য সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্ক দুর্গোৎসব কমিটি । এই কর্মসূচি চলবে ১৯ অক্টোবর, পঞ্চমী থেকে ২৪ অক্টোবর, দশমী পর্যন্ত, মাঝে নবমীর দিন এই জাতীয় কোনও কর্মসূচি রাখেননি উদ্যোক্তারা। পাঁচ দিন ধরে চলবে এই সহায়তা দেওয়ার কর্মসূচি। এর মধ্যে পঞ্চমীর দিন আর্থিকভাবে দুর্বল ১ থেকে ১২ বছরের শিশু ও ছোটদের নতুন পোশাক, লজেন্স, বিস্কুট, কেক ও মাস্ক দেওয়া হবে। ষষ্ঠীর দিন আর্থিক ভাবে দুর্বল পরিবারের পুরুষ ও মহিলাদের বস্ত্র, মিষ্টি, মাস্ক বিতরণ করা হবে। সপ্তমীর দিন নিম্ন আয়ের ও প্রান্তিক মানুষদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হবে। অষ্টমীর দিন অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে দেবীর মহাভোগ বিতরণ করা ও নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে পোলাও বিতরণ করা হবে। দশমীর দিন সমস্ত ধরণের মানুষের মধ্যে শুভ বিজয়ের মিষ্টি বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে পঞ্চমী ও ষষ্ঠীর দিনের সহায়তা যারা নিতে চান তাদের পুজো উদোক্তাদের কাছ থেকে কুপন সংগ্রহ করতে হবে। বাকি সপ্তমী, অষ্টমী ও দশমীর দিনের সহায়তা পেতে কোনও কুপন সংগ্রহের কোনও প্রয়োজন নেই।
সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্ক দুর্গোৎসব কমিটির পক্ষে দেবজ্যোতি দাস জানালেন, “দুর্গোৎসব বাঙালির সেরা উৎসব, প্রধান উৎসব। বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব। দুর্গোৎসবে শুধু আমরাই হাসিমুখে থাকবো না । আমাদের সঙ্গে, আমাদের পাশে, কাছে সারা বছর যাঁরা থাকেন তাদের সবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্যই প্রতি বছর আমরা দূর্গা পুজোয় সাধারণত আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের এই ধরণের সহায়তা দেওয়ার কাজ করে থাকি। এই বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমরা সমাজের সবাইকে নিয়ে উৎসব উদযাপন করতে, হাসিমুখে উৎসবের দিগুলো কাটাতে চাই। মানুষের সেবার মধ্য দিয়েই আমরা দেবী দুর্গার আরাধনা করতে চাই, এটাই আমাদের পুজোর প্রধান লক্ষ্য। আমরা থিমের পুজো করি কিন্তু থিমের পুজো করতে গিয়ে দুঃস্থ মানুষের কথা ভুলে না গিয়ে নিজেদের সাধ্য মতো উৎসবের দিনগুলিতে তাঁদের পাশে দাঁড়াই।”
ত্রিকোণ পার্ক দুর্গোৎসব কমিটির এবারের ভাবনা বা থিম হচ্ছে “সোপান”। সোপান অর্থাৎ সিঁড়ি, এই সিঁড়ির সাহায্যে আমরা প্রতিনিয়ত নানান প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে আমাদের এগিয়ে যাওয়াই এই ভাবনার মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন শিল্পী সঞ্জীব সাহা। করোনা মহামারির কথা আমাদের সবার স্মরণে আছে। কয়েক বছর আগে সারা বিশ্বজুড়ে মানব সভ্যতার ভিত কাপিয়ে দিয়েছিল করোনা ভাইরাস। স্তব্ধ করে দিয়েছিল চলমান সভ্যতার গতিকে । লকডাউনের প্রভাবে থমকে গিয়েছিল সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকা। আমূল বদলে গিয়েছিল সামাজিক প্রেক্ষাপট। সেই অবস্থা এখনও আমরা সম্পূর্ণরূপে কাটিয়ে উঠতে পারিনি। সারা রাজ্য তথা দেশ জুড়ে চলছে অস্বাভাবিক বেকারত্ব ও আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি। বহু মানুষ আজও কর্মহীন; সংকুচিত হয়েছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের আয়। দেশের নিম্ন আয়ের প্রস্তিক মানুষ আজ দিশাহীন।….তবু জীবন আবর্তিত হয়ে চলেছে তার নিজস্ব লক্ষ্যে, পথে। জীবন এগিয়ে যাবে তার নিজস্ব গন্তব্যে, এটাই স্বাভাবিক। দিশাহীন অসহায় মানুষ সময়ের “সোপান” বেয়ে একদিন ঠিক পৌঁছে যাবে তার অভিষ্ট লক্ষ্যে। এই ভাবনাটিকেই এবারের ত্রিকোণ পার্ক দুর্গোৎসব কমিটির পুজোয় তুলে ধরছেন শিল্পী সঞ্জীব সাহা। এখানকার প্রতিমা তৈরী করছেন কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী দীপঙ্কর পাল। ৭৪ বছরে পা রাখল এই পুজো। আগামী ১৭ অক্টোবর, তৃতীয়ার সন্ধ্যায় এই পুজো মণ্ডপের দ্বারোদ্ঘাটন, দেবী মূর্তির উন্মোচন হবে।
❤ Support Us