শিবভোলার দেশ শিবখোলা
শিবখোলা পৌঁছলে শিলিগুড়ির অত কাছের কোন জায়গা বলে মনে হয় না।যেন অন্তবিহীন দূরত্ব পেরিয়ে একান্ত রেহাই পাবার পরিসর মিলে গেছে।
সৌরেনির উঁচু শিখর ।
সৌরেনি নামটি যত মিষ্টি, তার চেয়ে বেশি সুন্দর চা-বাগান, ছোটো জনপদ আর পাহাড়ঘেরা এই অঞ্চল । শিলিগুড়ি-দার্জিলিং বিকল্প পথে মিরিকের কিমি. সাতেক আগে সৌরেনির একাধিক মাথায় (চার থেকে পাঁচ হাজার ফিট উঁচু) নজরকাড়া দৃশ্যের আয়োজন । এক এক উচ্চতা থেকে রূপের নানা দিক ধরা দেয় । মনে হয়, কোনো শিল্পি পরম যত্নে সাজিয়ে দিয়েছে এমন করে ।আকর্ষক সব ঢাল বেয়ে সবুজ বুটিদার চা-বলয় বুঝি পিছলে নেমে আসেব ।পশরা মেলা বুগিয়ালের চেহারা বলে ভুল হয় কোথাও ।আর তার মাঝে কাটাকুটি খেলা পাকা পথের পাশে সারি দেওয়া দেবদারুর অবিশ্বাস্য কালচে-হরিৎ সূচিমুখ নকশিকাঁথার মা্ঠ তৈরি করে । টিলার বুক কেটে উঠে যাওয়া কাঁচা সরু চড়াই সম্পূর্ণ করে প্রসাধন ।
এমন দুর্লভ রূপসী বাগানের নামকরণ হয়েছে সৈার গোত্রের গাছ আর (উপত্যকার) রানী শব্দ জুড়ে । দার্জিলিঙে চা পত্তনের সময় ইংরেজরা নেপালি সর্দার ডকমন রাইকে বিশাল জমি দেয় যার এলাকা সৌরেনি, ফুগুরি আর সামরিপানি জুড়ে ছিল । তার ছেলে ভউজিৎ রাই সৌরেনি নতুন চারা লাগিয়ে চা বাগন তৈরি করে ওই সৈার গাছ লাগায় । পরে অবশ্য আরও হাতবদল হয়েছে । যত্নে লালিত ঝকঝকে উপত্যকা প্রশংসনীয়। তবে এর মনোহরতম শীর্ষে সৌরেনি-টিংলং ভিউ পয়েন্ট হতবাক করে দেয়, যা সারা উত্তর-পূর্ব ভারতে বিখ্যাত । কাছাকাছি থাকা মেচি, ফুগুরি, টিংলিং, সিঙবুল্লি, গয়াবাড়ি আর মিলিকথং চাবাগানও চোখ টানে । কিন্তু এই ভিউ পয়েন্ট অতুলনীয়, এক ঝাঁকুনি দিয়ে তিন দিকের চায়ের সাথে আলাপচারিতায় মজিয়ে দেয় । ওই রকম এলোমেলো দেবদারুশোভিত রাস্তাও যেন ঝুলনের খেলাঘর হয়ে ওঠে । অন্য দিকে পাহাড়ের দেওয়াল জুড়ে গাছেদের সারি দোলে । সৌরেনি বস্ত অঞ্চলে বেশ কিছু কমলালেবুর বাগান আছে ।
সৌরেনির উঁচু শিখর থেকে এক দিকে কার্শিয়াং আর উত্তরবঙ্গের সমতল দেখা যায় । অন্য প্রান্তে মাথা তুলে থাকে নেপালের শৈলমালা, বিশেষ করে অন্তুদারার পরিচিত চূড়া দেখা যায় ।
তরাই অঞ্চলের এত চা-সাম্রাজ্যের মাঝে সৌরেনি কেন অনন্য, তার উত্তর লুকিয়ে আছে এর ভূসংস্থানে । পাহাড়ের ঢাল আছে কিন্তু তা বেশি উঁচু নয়। জনপদ দূরে বলে নির্জনতা বাড়িত মাত্রা আনে ।এখানে চা ঝোপের মাঝে মেঠো শুঁড়িপথে বা ঢেউ খেলানো সড়ক ধরে হেঁটে আকণ্ঠ নিসর্গ-সুধা পান করা যায় । আবার যে কোনো মাথা থেকে চারপাশের সব ধরা দেয় । অনেক নিচে কুয়োর মতো জমিতে গ্রামের ছবি থেকে শুরু করে পাহাড়ের মাথার রোঁয়ার মতো পাইনের সারি চা-মসৃণ চালচিত্রে বৈচিত্র আনে ।
টিংলিং চূড়া কিছুক্ষণের আরাম দেবে বলে চা-কফি-খাবারের দোকান ও রেস্তোরাঁ বসিয়েছে । বসে রাজকীয় ভাবে চারদিকের বৈশিষ্ট্য আরেক বার বিচার করে চোখ ও ক্যামেরা ভরে নমুনা নেওয়া যায় । স্থানীয় শিল্পীর তৈরি কাঠের খেলনার পশরা থাকে । রেস্তোরাঁর ছাদের অবারিত বারান্দার মাহাত্ম্য দেখে এক পর্যটক বলে, এ যে ব্যবিলনের শূন্য উদ্যান! নিচে ডান দিকে চাবাগানের দপ্তর ও পরে অপূর্ব এক অতিথিশালা । অন্যান্য চাবাগেও থাকার ভালো ব্যবস্থা আছে ।
পাশের ফুগুরি বাগানে ঘাসজমিতে বসে বিশ্রাম নেবার সময় খুব কাছে একটি বার্কিং ডিয়ার চলে আসে । মানুষ দেখে সে ভয়ে ডাক পেড়ে ছন্দোময় লাফে নিমেষে দিগন্তে গিয়ে ফিরে দেখার সময় গাছের পাতার মতো কান দোলায় । আগাছা তোলা একা মহিলা চা-কর্মী বলে, মাঝেমধ্যে ময়ূরও দেখা যায় । চায়ের মাঝে পায়ে চলার ফাঁক দিয়ে এগিয়ে ঢালের মাথায় পৌঁছলে আরেক দিগন্ত খুলে যায় । বিদ্যুতের দানব-মিনার মেঘের মাথা ঝাঁকিয়ে দিলে কাদম্বিনীর মুখ কালো হয়ে যায় । তখন এপারে তুমি ছায়া, ওপারে আমি মিহিরকিরণ। মাঝে পথনদীতে দুধসাদা গাড়ি বহে রে! দেশ-বিদেশ একাকার হয়ে যায় । মিরিকে তো অনেকেই বেড়াতে যান, এক রাত এখানে কাটিয়ে গেলে অভিজ্ঞতার ঝুলিতে অদলবদল হয়ে যাবে ।
এমন সব প্রতি পলে পাল্টে যাওয়া প্রচ্ছদের পেটেন্ট নেওয়া বলে সৌরেনি এত মোহিনী ।
শিবখোলা পৌঁছলে শিলিগুড়ির অত কাছের কোন জায়গা বলে মনে হয় না।যেন অন্তবিহীন দূরত্ব পেরিয়ে একান্ত রেহাই পাবার পরিসর মিলে গেছে।
মিরিক নামটি এসেছে লেপচা ভাষার “মির-ইওক” শব্দ থেকে, যার অর্থ আগুনে পুড়ে যাওয়া জায়গা।
15:34
মন দ্বিখন্ডিত হলে কি তবে স্কিৎজোফ্রেনিয়া ?