- দে । শ
- মে ১৯, ২০২৩
শহিদ স্মরণে শিলচরে জন জোয়ারের পথ চলা। আগরতলা, শিলং, কলকাতায় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। স্লোগান, হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, চেতনায় উনিশ

নব চেতনায় জেগে উঠল শহিদ দিবস। বাঙালির ভুবন জুড়ে, ১৯৫২-র ২১ ফেব্রুয়ারির পাশে, ৬১ সালের ১৯ মে যে অনিঃশেষ ক্ষত তৈরি হয়েছিল, একাদশ শহিদের আত্মবিসর্জন যে অহঙ্কারের জন্ম দিয়েছিল, তার স্মরণে ভৌগোলিক সীমা পেরিয়ে আজ জাগ্রত বঙ্গ বিশ্বের নানা প্রান্ত। শিলং, শিলচর, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি, আগরতলা, কলকাতা, শিলিগুড়ি মিশে গেল বহুমুখী সভা আর মিছিলে। ১৬ মে থেকে শিলচরে শুরু হয়েছে দুই দফার পথ চলা। চলবে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী পর্যন্ত। বলেছেন শহিদ স্মরণ সমিতির সভাপতি ডা. রাজীব কর। সমিতি দীর্ঘদিন থেকে তারাপুর স্টেশনের নাম বদলে ভাষা শহিদ স্টেশন করার দাবি পেশ করছে। রাজি হয়নি রেল কর্তৃপক্ষ। তেমনি শহিদ স্মরণ সমিতিও সঙ্কল্পে ঐক্যবদ্ধ, শহিদের রক্তস্নাত স্টেশনের নামকরণ ভাষা শহিদ স্টেশন করতেই হবে। সমিতির উদ্যোগে, কয়েকবছর আগে তারাপুরে তৈরি হয় বর্ণমালার বোধিবৃক্ষ।বাংলা হরফের অদ্বিতীয় স্থাপত্য কর্ম। এরই পাশে দাঁড়িয়ে্ সমবেত জনতা প্রণতি জানায় শহিদদের প্রতি, স্লোগান তোলে, চেতনায় উনিশ। সে চেতনাকে সম্মান জানিয়ে স্টেশনের নাম বদলাতে হবে। হাজার মানুষের স্বাক্ষরিত আবেদন পরে আছে রেলের সদর দফতরে। কবে ওদের টনক নড়বে কে জানে। এরকম একাধিক দাবি নিয়ে আজ বরাকের তিন জেলায় গর্জে উঠল গণজোয়ার। গানে গানে, কথা আর কবিতায় ভোর থেকে শুরু প্রভাত ফেরি। কিশোর কিশোরী থেকে ছাত্র যুবক আর বয়োজেষ্ঠরা ছুটছেন শ্মশান ঘাটের দিকে, শহিদদের স্মৃতিতর্পণের উদ্যোশে। সম্মিলিত সাংস্কূতিক মঞ্চ আর ৩৫টি এনজিওর ডাকে স্তরে স্তরে জনতা শিলচরে হাঁটছে, পুষ্পার্ঘ অর্পন করছে গান্ধিবাগের শহিদ বেদিতে। ১৬ মে থেকে শুরু তাঁদের ‘পথ চলা’।প্রবল ঝড় বূষ্টি উপেক্ষা করে বুধবার পথে পথে হেঁটেছেন অশীতিপর সৌরীন্দ্র ভট্টাচার্য, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য, বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী, উত্তর করিমগঞ্জের নির্বাচিত জন প্রতিনিধি কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ এবং বহু শিল্পী সাহিত্যিক, নাট্য আর সংস্কূতিকর্মীরা। বূহস্পতিবারও পথচলার বিরাম নেই। শুক্রবার ভেরা থেকে আকাশের ঘনমেঘ আর মাটির গণ আবেগ একাকার হয়ে গেল। অনুষ্ঠানের পর অনুষ্ঠান, গান্ধিবাগে, শিলচরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক মঞ্চে। বিকেলে, শহিদ স্মরণে উচ্চারিত গান আর কবিতার বৃহদাকারের সঙ্কলন প্রকাশিত হবে।গান্ধিবাগে। সঙ্কলনটির সম্পাদক কবি দিলীপ কান্তি লস্কর লিখেছেন বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে ছিযিয়ে থাকা লেখক ও কবিরা। উনিশের স্মৃতিতে এত বড়ো সঙ্কলন আগে কখনো প্রকাশিত হয়নি। দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দিলীপ। ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে।
শহিদ স্মরণে একভাবে সরব আজ কলকাতা। গগনেন্দ্র সভাগৃহে আলোচনা সভা আর বই প্রকাশ কর্মসূচির আয়োজন করেছে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের কলকাতা চ্যাপটার। বলবেন, রণবার পরুকায়স্থ, মনোতোষ চক্রবর্তী এবং বাহার উদ্দিন। এসভার মঞ্চে প্রকাশিত হবে শান্তনু গঙ্গারিডি সম্পাদিত লিটল ম্যাগ ১৯ মে।
অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয় আর পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি আজ নানা ধরণের সঙ্কটের সম্মুখীন। বাঙালির জাতিসত্তায় ফাটল তৈরিতে ব্যস্ত বিভাজনের রাজনীতি। উনিশের স্মূতি দিয়ে, গৌরব দিয়ে, ঘোষিত অঙ্গীকার দিয়ে বিভ্রান্তি আর দুর্বোধ্য ষড়যন্ত্র রুখতে চাইছে বঙ্গ জনতা। উনিশকে সামনে রেখে সম্ভবত বাঙালি জাতিসত্তা এনআরসির সাম্ভাব্য নৈরাজ্যের বিরুদ্ধেও সঙ্কলিত সংগ্রাম ঘোষণা করবে। এবার, শহিদ দিবসের বহুমাত্রিক আয়োজন ভেসে উঠছে এই নির্নীত, পরিকল্পিত চালচিত্রে।
❤ Support Us